ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য বানানো দুটি মোটিফ আগুনে পুড়েছে। কে কোন উদ্দেশ্যে আগুন লাগিয়েছে, এ নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে।

নববর্ষের শোভাযাত্রার জন্য বানানো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’ ও ‘শান্তির পায়রা’ মোটিফ দুটি শনিবার (১২ এপ্রিল) ভোরে পুড়ে যায়। এর মধ্যে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি মোটিফটি পুরোপুরি পুড়ে যায় এবং শান্তির পায়রা মোটিফটি আংশিক পুড়ে যায়।

অনেকে বলছেন, অন্য মোটিফগুলো ঠিক থাকলেও ওই দুটি মোটিভ কীভাবে পুড়ল? নিশ্চয়ই কেউ ইচ্ছে করে শুধু ওই দুটি মোটিফে আগুন দিয়েছে। 

এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর। 

চারুকলা অনুষদের সহযোগী অধ্যাপক মো.

ইসরাফিল রতন গণমাধ্যমকে বলেছেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, শনিবার ভোরে জিন্স প্যান্ট ও কালো টি-শার্ট পরা এক যুবক চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে। তার মুখে মাস্ক ছিল, চেহারা বোঝা যাচ্ছিল না। তার মধ্যে কোনো ধরনের চাঞ্চলতা বা উদ্বেগ দেখা যায়নি। সে খুব ধীর-স্থিরভাবে প্রতিকৃতিতে আগুন লাগায়। 

শনিবার দুপুরে শাহবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) খালিদ মনসুর রাইজিংবিডিকে বলেছেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছি। কীভাবে আগুনের সূত্রপাত, তা আমরা খুঁজে বের করব।”

সিদ্দিকবাজার ফায়ার স্টেশনের কর্মকর্তা রুহুল আমিন মোল্লা বলেছেন, শোভাযাত্রার জন্য অনেক মোটিভ তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু, টি নির্দিষ্ট মোটিফে আগুন লাগে, যা নিঃসন্দেহে রহস্যজনক। এ বিষয়ে তদন্ত করছি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শোভাযাত্রার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে বিভিন্ন ধরনের ও আকৃতির মোটিফ তৈরি করা হয়েছিল। সেখানে অনেক রাত পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা কাজ করেছেন। আগুন লাগলে তখনো তো লাগতে পারত। অথচ, খুব ভোরে মানুষজন যখন ঘুমিয়ে ছিল, তখনই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনাস্থল এবং আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে পারেনি।

শনিবার ভোর ৫টা ৪ মিনিটে চারুকলা অনুষদে আগুন লাগার খবর পায় ফায়ার সার্ভিস। দ্রুত ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে আসেন।

ঢাকা/এমআর/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ভ য ত র র জন য চ র কল

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা