অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পের (ইজিপিপি) কাজ হঠাৎ করে স্থগিত হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন দেওয়ানগঞ্জের ২ হাজার ৮৫৩ শ্রমিক। একই সঙ্গে বন্ধ রয়েছে প্রকল্পের আওতাধীন গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাজ।
উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেওয়ানগঞ্জ উপজেলায় ৫৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। এতে আর্থিক সুবিধা পায় ২ হাজার ৮৫৩ জন অতিদরিদ্র এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয় আটটি ইউনিয়নের। যার মধ্যে ডাংধরা ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৪৭৫ জন, চরআমখাওয়া ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৪৬৩ জন, পাররামরামপুর ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ৪৪৮ জন, হাতিভাঙ্গা ইউনিয়নে ৬টি প্রকল্পে ২৪৩ জন, বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নে ৯টি প্রকল্পে ৪৮৬ জন, চিকাজানী ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ২৯৭ জন, চুকাইবাড়ী ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ১৭২ জন এবং সদর ইউনিয়নে ৫টি প্রকল্পে ২৬৯ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক কাজ করেন।

তারা একটি পর্বে ৪০ দিন মেয়াদে প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে মজুরি পান। সেই হিসাবে প্রত্যেক শ্রমিক ৪০ দিনে মজরি পান ১৬ হাজার টাকা। একটি পর্বে ৪০ দিন মেয়াদে ২ হাজার ৮৫৩ জন শ্রমিক ৪ কোটি ৫৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকার সুবিধা ভোগ করেন। এই প্রকল্প অতিদরিদ্র পরিবারে আর্থিক সহায়তা প্রদান ও গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার নামে দুটি উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এসে হঠাৎ চলমান প্রকল্পটির দুটি পর্ব স্থগিত হয়ে যায়। এতে বিপাকে পড়েন প্রকল্পের আওতাধীন ২ হাজার ৮৫৩ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক। বন্ধ হয়ে যায় বন্যায় বিধ্বস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার কাজ।
প্রকল্পের নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রথম পর্বে অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৪০ দিন এবং দ্বিতীয় পর্বে মার্চ থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ৪০ দিন; অর্থাৎ একই অর্থবছরে প্রত্যেক শ্রমিক ৮০ দিন কাজ করে মজুরি পেয়েছেন ৩২ হাজার টাকা। এ টাকা তাদের জীবনযাত্রাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বেকারত্বে ভুগছেন অনেকে।
একাধিক ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেওয়ানগঞ্জ নিচু অঞ্চল। প্রতিবছর বন্যায় এখানকার রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রকল্পের সুবিধাভোগী বাহাদুরাবাদ ইউনিয়নের পোল্যাকান্দি নামাপাড়া গ্রামের কাপাসী বেগম। তিনি বলেন, ‘কয়েক বছর থেকে ৪০ দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করছি। অভাবী সংসার, দ্রব্যমূল্য বাড়তি। এই বাজারে স্বামীর একার আয়ে সংসার চালানো কঠিন। ওই প্রকল্পের কাজ করে সংসারের অভাব কিছুটা দূর হয়েছিল। কিন্তু প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে যাওয়াতে আমরা দুশ্চিন্তায় আছি। আমাদের মতো অতিদরিদ্র পরিাবরের অভাবের কথা চিন্তা করে প্রকল্পটি চালু করা জরুরি।’

চিকাজানী ইউনিয়নের পূর্ব কাজলাপাড়া আদর্শ গ্রামের হাসেন আলী জানান, কয়েক বছর ধরে ৪০ দিনের প্রকল্পে কাজ করছেন তিনি। ওই টাকায় সংসার বেশ ভালোই চলছিল। হঠাৎ করে প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার অবস্থা হয়েছে। পরিবার নিয়ে অতিকষ্টে দিন পার করতে হচ্ছে।
চরআমখাওয়া ইউপি সদস্য বাবুল আকতারের ভাষ্য, গ্রামীণ অবকাঠানো সংস্কার ও অতিদরিদ্রদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ইজিপিপি প্রকল্পের গুরুত্ব অপরিসীম। এই প্রকল্পের মাধ্যমে একদিকে অতিদরিদ্র পরিবারে আর্থিক সহায়তা দেওয়া যায়, অন্যদিকে গ্রামের কাঁচা সড়ক সংস্কার করা যায়। কিন্তু প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তাঁর মতো জনপ্রতিনিধিরা। কারণ প্রতিদিন তাদের কাছে দৌড়ঝাঁপ করছেন সুবিধাভোগীরা। সব দিক বিবেচনায় প্রকল্পটি আবার চালু করা প্রয়োজন।
পাররামরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মিয়া জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাঁর ইউনিয়নে ইজিপিপির আওতায় ৫টি প্রকল্পে ৪৪৮ জন অতিদরিদ্র শ্রমিক কাজ করেছেন। তাদের পরিবারে এই প্রকল্পে অর্জিত অর্থ বিরাট মাত্রায় প্রভাব ফেলেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে প্রকল্পটি স্থগিত হওয়ায় অতিদরিদ্র শ্রমিকদের পরিবারে নেমে এসেছে দৈন্যদশা। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন কাঁচা সড়ক রয়েছে সংস্কারহীন। ওইসব সড়ক মেরামতের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে সরকারি কোনো তহবিল নেই। সবদিক বিবেচনায় প্রকল্পটি আবার চালু করা প্রয়োজন।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) খবিরুজ্জামান খান বলেন, ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান প্রকল্পটি (ইজিপিপি) কেন স্থগিত রয়েছে, তা জানি না। এ বিষয়ে কোনো নির্দেশনা পাইনি। তবে প্রকল্পটি চালুর নির্দেশনা পেলে গ্রামীণ জীবনমান উন্নয়নে কাজ শুরু করা হবে।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প গ র ম ণ অবক ঠ দ র পর ব র ন প রকল প প রকল প র অবক ঠ ম ৪০ দ ন ক জ কর ইজ প প

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরে ১০ দিনে প্রবাসী আয় ১২৯ কোটি ডলার

চলতি ডিসেম্বর মাসের ১০ দিনে দেশে বৈধ পথে ১২৯ কোটি মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় যা ১৫ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা) অতিক্রম করেছে। প্রতিদিন গড়ে দেশে আসছে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা এক হাজার ৫৭৩ কোটি ৮০ লাখ টাকার প্রবাসী আয়।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা জানান, অর্থপাচারে বর্তমান সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে।এ কারণে হুন্ডিসহ বিভিন্ন অবৈধ চ্যানেলে টাকা পাঠানো কমে গেছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স আহরণ বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরের নভেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৫৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ২৬৮ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, আগস্ট মাসে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার, জুলাই মাসে ২৪৭ কোটি ৭৯ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছিল। অর্থবছরের জুলাইয়ে ১৯১ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার ডলার রেমিট্যান্স এসেছে, আগস্টে এসেছে ২২২ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বরে ২৪০ কোটি ৪১ লাখ মার্কিন ডলার, অক্টোবরে ২৩৯ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ২১৯ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলার, ডিসেম্বর মাসে ২৬৩ কোটি ৮৭ লাখ মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে ২১৮ কোটি ৫২ লাখ মার্কিন ডলার এবং ফেব্রুয়ারিতে এসেছে ২৫২ কোটি ৭৬ লাখ মার্কিন ডলার, মার্চে ৩২৯ কোটি ৫৬ লাখ, এপ্রিলে ২৭৫ কোটি ২৩ লাখ ডলার, মে মাসে ২৯৭ কোটি মার্কিন ডলার এবং জুন মাসে ২৮২ কোটি ১২ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।

ঢাকা/নাজমুল/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ড্রাগন ফল বিক্রি করে কারও আয় ১০ লাখ, কারও ১৫ লাখ টাকা
  • ডিসেম্বরে ১০ দিনে প্রবাসী আয় ১২৯ কোটি ডলার