সুদানের আধা সামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) দারফুর অঞ্চলের দুর্ভিক্ষকবলিত শরণার্থীশিবিরে টানা দুই দিন হামলা চালিয়েছে। এতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ২০ জন শিশু ও ৯ জন ত্রাণকর্মী।

জাতিসংঘের সুদানে নিযুক্ত মানবিক সমন্বয়কারী ক্লেমেনটাইন এনকুয়েটা-সালামি জানান, আরএসএফ এবং তাদের মিত্র মিলিশিয়ারা উত্তর দারফুরের প্রাদেশিক রাজধানী এল-ফাশের এবং তার আশপাশের জমজম ও আবু শোরুক শিবিরে হামলা চালায়।

জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, শরণার্থীশিবির দুটিতে সাত লাখের বেশি বাস্তুচ্যুত মানুষের বসবাস। ওই অঞ্চলে অতীতের সংঘাতগুলোতে বাস্তুচ্যুত হয়ে তারা সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন।

এনকুয়েতা-সালামি বলেন, গত শুক্রবার ও গতকাল শনিবার দুই দিন এই হামলা চলে। জমজম শিবিরে হাতে গোনা কয়েকটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিতে কাজ করার সময় ৯ জন ত্রাণকর্মী নিহত হন। তাঁদের মধ্যে রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার কর্মীরাও আছেন।

‘যাঁরা এ ধরনের কাজ করছেন, আমি তাঁদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানাই—অবিলম্বে এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করুন’, বলেন এনকুয়েতা-সালামি।

জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা নিহত ত্রাণকর্মীদের নাম উল্লেখ করেননি। তবে সুদানের ডক্টরস ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে জানায়, রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল সংস্থার ছয় চিকিৎসাকর্মী শুক্রবার জমজমে তাঁদের হাসপাতালে আরএসএফের হামলায় নিহত হন।

সংগঠনটি জানায়, নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক মাহমুদ বাবাকার ইদরিস এবং সংস্থাটির আঞ্চলিক প্রধান আদম বাবাকার আবদুল্লাহ। সংগঠনটি এই হামলাকে ‘অপরাধমূলক ও বর্বর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে এবং এর জন্য আরএসএফকে দায়ী করেছে।

রিলিফ ইন্টারন্যাশনাল নিশ্চিত করেছে যে তাদের ৯ জন কর্মী নিহত হয়েছেন। এই হামলা ছিল ‘সার্বিক স্বাস্থ্য অবকাঠামোর ওপর পরিকল্পিত হামলা’। সংস্থাটি জানায়, জমজম শিবিরের মূল বাজার ও শত শত অস্থায়ী ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়েছে।

বৈশ্বিক খাদ্যনিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ সংস্থা আইপিসি সুদানের যে পাঁচ এলাকায় দুর্ভিক্ষ শনাক্ত করেছে, তার মধ্যে অন্যতম জমজম ও আবু শোক। চলমান যুদ্ধ সুদানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানবিক সংকট তৈরি করেছে। সেখানে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষ-অর্থাৎ দেশের অর্ধেক জনগণ-চরম খাদ্যসংকটে রয়েছে।

সেনাবাহিনী গত মাসে জাতীয় রাজধানী খার্তুম পুনর্দখল করার পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরএসএফ এল-ফাশের শহরে হামলা জোরদার করেছে। এটি দারফুরে একমাত্র প্রাদেশিক রাজধানী, যা এখনো আরএসএফের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।

এই মাসের শুরুতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে আরএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে তারা নারী ও কিশোরীদের ওপর ‘ভয়াবহ’ যৌন সহিংসতা ও গণধর্ষণ চালিয়েছে, যা সুদানের গৃহযুদ্ধে তাদের কৌশলের অংশ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে

কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে পতিত ফ্যাসিস্ট আমলের পুরোনো চক্র ও সিন্ডিকেট সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলন। এই সিন্ডিকেট ও চামড়াশিল্প ধ্বংসের দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সংগঠনটি আয়োজিত ‘চামড়া শিল্পের নৈরাজ্য ও সিন্ডিকেট রুখো’ শীর্ষক মানববন্ধনে এসব কথা বলা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মির্জা শরিফুল আলম। সভায় বক্তব্য দেন সংগঠনটির চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, কলামিস্ট মীর আবদুল আলীম, রাজনীতিবিদ নুরুজ্জামান হীরা, মানবাধিকারকর্মী আব্দুল্লাহ আল-মামুন প্রমুখ।
কয়েক বছর ধরে কাঁচাচামড়ার দাম কমছে। দাম না পেয়ে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়া নদী বা খালে ফেলে দিয়েছেন কিংবা মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন– এমন ঘটনাও ঘটছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চলতি বছর ৮৫ থেকে ৯০ লাখ পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ট্যানারি মালিকদের। এর ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ সংগ্রহ হয় কোরবানির সময়। 

জাতীয় ভোক্তা অধিকার রক্ষা আন্দোলনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান বলেন, এবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। কিছু ক্ষেত্রে বর্গফুটের হিসাবে চামড়ার দাম আরও কম পড়েছে। কোরবানিদাতাদের থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকায় গরুর চামড়া কিনেছেন। সেসব চামড়া আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের কাছে বিক্রি করেছেন ৫০০ থেকে ৮০০ টাকায়। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করলেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। সিন্ডিকেটের কারণে চামড়ার দাম পড়ে গেছে তলানিতে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবছরের মতো এবারও বেশির ভাগ ছাগলের চামড়া নষ্ট হয়েছে। বিদেশি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের ফ্যাসিস্ট সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। দেশে ও বিশ্ববাজারে চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। অথচ কোরবানির চামড়া শিল্প নিয়ে গভীর চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র চলছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, বিদেশি চক্রান্তে দেশের সোনালি আঁশখ্যাত পাট শিল্পকে সুকৌশলে ধ্বংস করা হয়েছে। এবার আরেক সম্ভাবনাময় চামড়া শিল্পকে শেষ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রে পা দিয়ে অসাধু ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেট কৌশলে চামড়ার দাম কমিয়ে লাভবান হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের চামড়া শিল্প। গত বছরের মতো এবারও কম দামে সব ধরনের চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। এতে করে গরিব-অসহায় মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান বক্তারা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবারও জমজমাট চাঁদপুর লঞ্চঘাট, দিনে পারাপার অর্ধ লক্ষ যাত্রী
  • তারুণ্যের ভাবনায় লাল সবুজ সোসাইটি
  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • ‘রক্ত দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায়, তা আর অন্য কিছুতেই নেই’
  • দেড়শ বছর টিকে আছে বালিকান্দি চামড়ার হাট
  • চামড়াশিল্প ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
  • ‘চরকা বানডি’ থেকে ‘রামদা নৃত্য’—ফুলবাড়িয়ায় জমজমাট লাঠিখেলা
  • ঢাকায় সাফের মঞ্চে খেলবে না ভারত, আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ
  • নড়াইলে অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে বৈষম্যবিরোধী তিন নেতাকে শোকজ