ডামুড্যায় পৌর বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ
Published: 13th, April 2025 GMT
শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌরসভা বিএনপির কমিটি বাতিলের দাবিতে আজ রোববার উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলটির এক পক্ষের নেতা–কর্মীরা। মিছিলকারীদের অনেকের হাতে ঝাড়ু দেখা যায়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন পৌর বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেন। এরপর গত ৭ মার্চ ১১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটি ঘোষণার পর থেকে দলের একটি পক্ষ এর বিরোধিতা করে আসছিল। পক্ষটি আজ রোববার বিক্ষোভের আয়োজন করে।
ডামুড্যা পৌরসভা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাক মাঝি ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাহের বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন।
আবদুর রাজ্জাক মাঝি প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে পৌরসভা নির্বাচন করার অভিযোগে ২০২১ সালে আলমগীর হোসেন দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তাঁকেই পুনরায় পৌরসভা বিএনপির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কৃত একজন নেতাকে যদি দল সংগঠিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাহলে তৃণমূলের কর্মীরা সেটা মানবেন না। আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণার আগে তৃণমূলের কোনো মতামত জেলা কমিটি নেয়নি। আমরা তৃণমূলের অসন্তুষ্টির কথা কেন্দ্রীয় নেতাদের জানিয়েছি। গত এক মাসেও তাঁরা কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাই স্থানীয় নেতারা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছেন।’
ডামুড্যা পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন মাদবর প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বিএনপির নতুন কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাঁরা মূলত আওয়ামী লীগের দোসর। বিএনপির কমিটিতে থেকেও তাঁরা দলীয় প্রতীকের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালে অবস্থান নিয়েছিলেন। এখন দলের সুদিন আসছে ভেবে বিশৃঙ্খলা করে দলে ভালো পদ নেওয়ার জন্য এমন করছেন। তাঁরা কখনো বিএনপিতে পদ পাবেন না।
জানতে চাইলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, একটা কমিটি গঠন করার পর পদবঞ্চিতরা একটু তৎপর হন। ডামুড্যার ক্ষেত্রেও তা–ই ঘটেছে। যখন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হবে, তখন অনেকেই যোগ্যতা অনুযায়ী পদ পাবেন। এ জন্য দলীয় সিদ্ধান্ত মানতে হবে, ধৈর্য ধরতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমাদের কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে মানুষ: মির্জা ফখরুল
জনগণ বিএনপির কাছে এসে সমস্যার কথা বলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে এসে ভিড় করছে লোকজন, যে আমাদের সমস্যা হচ্ছে। আগে তো এমপি ছিল, মেয়র ছিল, তাঁরা কথা বলতে পারত, এখন কিন্তু তারা কথা বলতে পারছে না। এই যে বিষয়টা, এটা সবাইকে অনুধাবন করতে হবে।’
সবাইকে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একজন সাধারণ চেতনার মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সেটা হয় না। কারণ, আমাদের বাংলাদেশে এখন একটা প্রবণতা দেখা দিয়েছে যে লিবারেল ডেমোক্রেসিকে এখন কিছুটা নিচে নেমে যেতে হচ্ছে। একটু পরাজিত হতে হচ্ছে পপুলিস্টদের কাছে রিসেন্ট টাইমে। এটা বাস্তবতা। এটা কেন হচ্ছে, গবেষকেরা বলতে পারবেন।’
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় এ কথাগুলো বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জাতীয় প্রেসক্লাবের উদ্যোগে জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা প্রকৃতপক্ষে মুক্তি পেয়েছি ১৯৪৭ সালের ব্রিটিশ কলোনি থেকে। তারপরে পাকিস্তানি গোলামি শুরু হয়, তারপর বাংলাদেশি প্রভুদের গোলামি শুরু হয়েছে। এই গোলামিতেই আছি আমরা। আমরা একটা মুক্ত সমাজ চাই, আমরা একটা মুক্ত রাষ্ট্র নির্মাণ করতে চাই, আমরা মানুষের মধ্যে মানুষের ভালোবাসা তৈরি করতে চাই।’
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে আশুলিয়ায় পাঁচজন হত্যার ঘটনার স্মরণে গতকাল বুধবার বিএনপি একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব। গণ–অভ্যুত্থানে স্বামী হারানো এক নারীর কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সেই অনুষ্ঠানে এক মা তাঁর ১৪ মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে এসে বলেন, ‘আমার স্বামীকে এখানে হত্যা করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। আমি জানি না, এই শিশুকে নিয়ে এখন কী করে বাঁচব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই বোনের কথা যখন আমি শুনি, তখন আমার মনে প্রশ্ন জাগে যে, আসলে রাষ্ট্রটা কী? রাষ্ট্র কার জন্য? যাঁরা এখন দায়িত্বে আছেন রাষ্ট্র পরিচালনার, তাঁরা এই এক বছরেও কি তাঁদের খুঁজে পেলেন না?’
২০২৪ সালের আগস্টে গণ–অভ্যুত্থানের পর পল্টনে বিএনপির সভা থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তখন আমার খুব সমালোচনা হয়েছিল। আপনারা বলেছিলেন যে বিএনপি ও মির্জা ফখরুল ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এত অস্থির হয়ে গিয়েছে কেন? এখন আপনারাই বলছেন যে ব্যাপারটা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়, যার শক্তি, যার ক্ষমতা, যার মালিকানা, তার হাতেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।’
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় এরই মধ্যে ১২টি বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে বলেন মির্জা ফখরুল। বাকি বিষয়েও ঐকমত্যে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি হলেও সেটার একটা সীমা থাকা দরকার বলে মনে করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোয় পারস্পরিক একটা বোঝাপড়া থাকতে হবে। সেটা না হলে এই কাদা–ছোড়াছুড়ি ভবিষ্যতে রাজনীতিকে আরও কলুষিত করে।
আলোচনা সভায় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের সময়ে নির্যাতিত পাঁচ সম্পাদককে বিশেষ অবদানের জন্য সম্মাননা দেওয়া হয়। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক যায়যায়দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, মানবজমিন পত্রিকার সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ সম্পাদক নুরুল কবির ও দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আবুল আসাদ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন দৈনিক মানবজমিনের সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, উত্তরায় শহীদ জাবির ইব্রাহিমের বাবা কবির হোসেন ও জুলাই শহীদ আবদুল্লাহ বিন জাহিদের মা ফাতেমাতুজ জোহরা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘জুলাই বাংলাদেশ’ নামে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক আবদুল হাই শিকদার।