অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একবারই টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত সিরিজের দুটি ম্যাচই ইনিংস ব্যবধানে জিতেছিল স্বাগতিকরা। কিয়ারা নদীতে গত ২২ বছরে অনেক জল গড়ালেও বাংলাদেশকে টেস্ট খেলতে আমন্ত্রণ জানায়নি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। কারণ হিসেবে সিএ কর্মকর্তারা দেখান বাংলাদেশ দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে না পারা এবং আর্থিক ক্ষতির।
ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডেরও (ইসিবি) একই কথা। এই আর্থিক ক্ষতি রোধেই বাংলাদেশকে টেস্ট খেলতে আমন্ত্রণ জানায় না সিএ ও ইসিবি। বিসিবিকেও ভবিষ্যতে একই কৌশল নিতে হতে পারে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলার ক্ষেত্রে। অথবা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে হোমে টেস্ট খেলতে হতে পারে জিম্বাবুয়ে-আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে।
এবার যেমন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজের আর্থিক ক্ষতি মেনে নিতে হবে বোর্ডকে। কারণ এই সিরিজের টিভি সম্প্রচার স্বত্ব কিনতে রাজি হচ্ছে না দেশের কোনো টিভি চ্যানেল। তাই শেষ ভরসা বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড।
২০ থেকে ২৪ এপ্রিল সিলেটে হবে প্রথম টেস্ট। ২৮ এপ্রিল থেকে ২ মে চট্টগ্রামে হবে দ্বিতীয় টেস্ট। বছরের প্রথম টেস্ট সিরিজ খেলার জন্য গতকাল থেকে সিলেটে অনুশীলন শুরু করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। সিরিজ শুরু হতে বাকি মাত্র ছয় দিন। অথচ এখন পর্যন্ত টিভি চ্যানেলে খেলা দেখানোর নিশ্চয়তা পায়নি বিসিবি।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খেলা সম্প্রচার পার্টনার টি-স্পোর্টসকে মৌখিকভাবে বোর্ড থেকে প্রস্তাব করা হয়েছিল টেস্ট সিরিজের খেলা দেখাতে। গতকাল পর্যন্ত চ্যানেলটির কাছ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে টি-স্পোর্টসের সিইও ইশতিয়াক সাদেক বলেন, ‘এই সিরিজটি আমাদের পক্ষে দেখানো সম্ভব হবে না। আইপিএল ও পিএসএল আগে থেকে কেনা। টেস্ট ম্যাচ দেখালে আইপিএল দেখাতে পারব না। এ ছাড়া সামনে দীর্ঘ মেয়াদে জাতীয় দলের সিরিজ টেন্ডার করা হবে। সেখানে অংশগ্রহণ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। আর্থিক ক্ষতি করে এ মুহূর্তে জিম্বাবুয়ে সিরিজ নেওয়ার সুযোগ দেখছি না।’
গাজী টিভিও জাতীয় দলের খেলা কেনার পক্ষে না। বিপণনের কথা চিন্তা করে কনসোর্টিয়ামও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। একপ্রকার বাধ্য হয়ে বিটিভি ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষের কাছে যেতে হচ্ছে বিসিবিকে। বিসিবি মার্কেটিং বিভাগের কর্মকর্তা আসিফুল ইসলাম বিলাস জানান, সরকারি চ্যানেলে খেলা দেখানোর বিষয়টি একপ্রকার নিশ্চিত। সম্মান বাঁচাতে বিনা মূল্যে সম্প্রচার স্বত্ব দেওয়া হতে পারে রাষ্ট্রীয় চ্যানেলকে। টিভি প্রডাকশনের খরচও বহন করতে হবে বিসিবিকে।
দুঃখজনক হলো টিভি সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রি করে কনসোর্টিয়ামের কাছ থেকে টাকাও তুলতে পারছে ক্রিকেট বোর্ড। টি-স্পোর্টসের কাছে ৩২ কোটি টাকা পাওয়া যাবে বলে জানান বিসিবির এক পরিচালক। এ বছরের বিপিএলের ২৮ কোটির সঙ্গে আগের চার কোটি বকেয়া রয়েছে।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের খেলা সম্প্রচারে বেসরকারি টিভি চ্যানেলের অনাগ্রহের কারণ জানতে চাওয়া হলে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার নেতিবাচক প্রচারণাকে দায়ী করেছেন। তাঁর মতে, ‘এই খারাপ পরিস্থিতির জন্য আমরাই দায়ী। বেশ কয়েক বছর ধরে সামাজিক মাধ্যমে লেখালেখি হচ্ছে, কারও সঙ্গে জিততে না পারলে জিম্বাবুয়েকে ডাক। ক্রিকেটারদের ফর্মে ফেরাতে হলে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে খেলো। বাস্তবতা হলো জিম্বাবুয়ে কিন্তু খারাপ খেলে না। তাদের কাছে টেস্ট ম্যাচ হেরেছি। জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট সংস্কৃতি আমাদের চেয়ে সমৃদ্ধ। আমাদের আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করেছে তারা। এর পরও নেতিবাচক প্রচারণাই আজ জিম্বাবুয়ে সিরিজের টিভি স্বত্ব বিক্রির অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আমি নিশ্চিত, কোনো না কোনো চ্যানেল টেস্ট সিরিজটি দেখাবে এবং দেশের মানুষ সিরিজটি আগ্রহ নিয়ে দেখবে।’
সম্প্রতি জাতীয় দল তারকাশূন্য হয়ে পড়াও বাংলাদেশের ক্রিকেট বিপণনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকতে পারে বলে মনে করেন বাশার।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: জ ত য় দল
এছাড়াও পড়ুন:
কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন
টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।
এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।
গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।
প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।