সরকার পুঁজিবাজারের সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছে: আনিসুজ্জামান
Published: 17th, April 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, সরকার পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার নিশ্চিত করতে বিদ্যমান সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান করার চেষ্টা করছে। প্রধান উপদেষ্টা দেশের উন্নয়ন ও সংস্কার তথা পরিবর্তনের জন্য কাজ করছেন। পুঁজিবাজারের উন্নয়ন না হলে দেশ এগোতে পারবে না।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির মাল্টিপারপাস হলে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড.
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সভায় ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী মতবিনিময় সভা আয়োজন ও সফল করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। তিনি পুঁজিবাজারের বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত মতামত এবং প্রস্তাব তুলে ধরার জন্য বিএসইসি ও বাজার অংশীজনদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন, সংস্কার ও প্রতিবন্ধকতাগুলোর বিষয়ে সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাব আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিটির কাছে পাঠানোর অনুরোধ জানান তিনি।
ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শুধু বিদেশি অনুদাননির্ভর না হয়ে দেশের উন্নয়নের জন্য যে ফান্ড বা বিনিয়োগ প্রয়োজন, তা দেশের মধ্যে থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। সেজন্যই দেশের পুঁজিবাজারের উন্নতি দরকার। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। সবাই একসঙ্গে পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য কাজ করব।
দেশের কল্যাণের স্বার্থে পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কার নিশ্চিত করার আশ্বাস দেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অধিকতর শক্তিশালী করা এবং দেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও সংস্কারে সহায়তার অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি প্রয়োজন। দেশের পুঁজিবাজার গত ১৫ বছরে ভালো কোম্পানি পায়নি। ভালো কোম্পানিকে বাজারে নিয়ে আসাও চ্যালেঞ্জ। ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তির জন্য বিএসইসি চেষ্টা চালাচ্ছে। পুঁজিবাজার সংস্কার টাওফোর্সের সুপারিশের আলোকে খুব দ্রুতই পাবলিক ইস্যু রুলসের সংস্কার করা হবে, যা ভালো কোম্পানির তালিকাভুক্তি নিশ্চিত করতে সহায়ক হবে।
তিনি দেশের অর্থনীতিকে পুঁজিবাজারমুখী করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
সভায় পুঁজিবাজারের অংশীজনরা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, টার্নওভারের ওপর উৎসে কর কমানো, তালিকাভুক্ত ও অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহারের পার্থক্য বৃদ্ধি, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে নেগেটিভ ইকুইটির সমাধান, ভালো ও মৌলভিত্তিসম্পন্ন সরকারি ও বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা, পণ্যে বৈচিত্র্য আনা, কমোডিটি এক্সচেঞ্জ বাস্তবায়ন, বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের বাজার কাঠামো আধুনিকায়ন, সিসিবিএলের বাস্তবায়ন, সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয় বৃদ্ধি, ডিমিউচুয়ালাইজেশন আইন রিভিউ, বিভিন্ন প্রণোদনা বা সুবিধার মাধ্যমে কোম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে আগ্রহী করা, পুঁজিবাজারে অনিয়ম ও কারসাজি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, লভ্যাংশ আয়ের ওপর কর রেয়াত বৃদ্ধি, মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগে রিবেট সুবিধা বৃদ্ধি, মিউচুয়াল ফান্ডের আইপিও কোটা বৃদ্ধি, বিনিয়োগ নীতিমালা প্রস্তুত করা, পুঁজিবাজারে সকল পর্যায়ে অটোমেশন বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি সরকারের নীতি সহায়তার বিষয়ে সভায় প্রস্তাব রাখেন।
সভার প্রথমাংশে বিএসইসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালকগণ, পরিচালকগণ ও কমিশন সচিব সভার এ অংশে অংশ নেন। কমিটির সদস্য সচিব ও বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ সভার সূচনা করেন এবং সকলকে স্বাগত জানান। এ সময় বিএসইসি'র পরিচালক মো. আবুল কালাম একটি প্রেজেন্টেশন দেন। এ সময় বিএসইসির সামগ্রিক কর্মকাণ্ড ও পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সাম্প্রতিক সময়ে বিএসইসির পদক্ষেপগুলো সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীকে অবহিত করা হয়। এছাড়াও বিএসইসির অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন বিষয়সহ বিএসইসি ও পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার পথে বিদ্যমান চ্যালেঞ্জগুলোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করেন কমিটির সভাপতি ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
সভার দ্বিতীয়াংশে পুঁজিবাজারের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। এ সময় পুঁজিবাজার অংশীজন হিসেবে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (ডিএসই) চেয়ারম্যান মো. মোমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) চেয়ারম্যান এ কে এম হাবিবুর রহমান, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল মোতালেব, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আ স ম খায়রুজ্জামান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সাইফুদ্দিন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন, অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি আন্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের (এএএমসিএমএফ) সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির (এসিআরএবি) সভাপতি এন কে এ মবিন এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি রূপালী হক চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/এনটি/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসইস র র অ শ জন কম ট র প রস ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির নীতিমালা প্রণয়নে কমিটি গঠন
দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বা তালিকাভুক্ত হতে চাওয়া কোম্পানিগুলোর নিরীক্ষা সম্পন্ন করা যোগ্য নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তির জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
এরই ধরাবাহিকতায় দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, যাদের অতিরিক্ত আরো ত্রিশ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম কমার শীর্ষে মেঘনা পেট্রোলিয়াম
ডিএসইতে সাপ্তাহিক দাম বাড়ার শীর্ষে জিল বাংলা সুগার মিলস
সম্প্রতি এই বিষয়ে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠন করার নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্যানেল অব অডিটরস অ্যান্ড অডিট ফার্মস তালিকাভুক্তির জন্য নীতিমালা’-এর বিদ্যমান খসড়ায় প্রয়োজনীয় সংশোধন এবং ‘আইপিওর জন্য উপযুক্ত এবং যথাযথ তালিকাভুক্তির মানদণ্ড’-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সুপারিশ অনুসারে নীতিমালা পুনর্নির্মাণ করতে বলা হয়েছে।
তাই কমিশন দুই সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটির দায়িত্ব পালন করবেন বিএসইসির প্রধান হিসাব রক্ষক কামরুল আনাম খান এবং বিএসইসির সহকারী পরিচালক তন্ময় কুমার ঘোষ।
কমিশন এই কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ত্রিশ কার্যদিবস বৃদ্ধি করেছে। আদেশের অন্যান্য শর্তাবলি অপরিবর্তিত থাকবে। এই আদেশ যথাযথ অনুমোদনের সঙ্গে জারি করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি অথবা কোনো কোম্পানি যখন তালিকাভুক্ত হতে চায়, তখন বিএসইসির নির্দিষ্ট তালিকা থেকে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষা করতে হয়। এর বাইরে অন্য কোনো নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে নিরীক্ষা করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। ইতোমধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও রুলসেরে নতুন বিধিমালার খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বর্তমানে অংশীজনদের সঙ্গে আইপিও আইনের মতামত নিয়ে আলোচনা চলমান রয়েছে। তাই এই আইনের সঙ্গে যোগ্য নিরীক্ষক বা নিরীক্ষা ফার্মের নতুন তালিকা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত তালিকা কার্যকর হলে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও আইপিও প্রক্রিয়ায় আর্থিক প্রতিবেদন নিরীক্ষার মান আরো উন্নত হবে। এতে করে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়বে এবং বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা সহজ হবে।
বিএসইসি জানিয়েছে, কমিটির প্রতিবেদন জমা দেওয়ার সময়সীমা আরো ৩০ কর্মদিবস বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে এ আদেশের অন্যান্য শর্তাবলি অপরিবর্তিত থাকবে। যথাযথ অনুমোদন সাপেক্ষেই এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে বলেও কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, নিরীক্ষক ও নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি স্পষ্ট ও মানসম্মত তালিকা প্রণয়ন হলে আর্থিক অনিয়ম কমবে এবং করপোরেট গভর্ন্যান্স জোরদার হবে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে দেশের পুঁজিবাজার আরো শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/এনটি/রাসেল