দেশের পুঁজিবাজারে বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ৩৬০। নতুন নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কোম্পানির বোর্ড তথা পরিচালনা পর্ষদে একজন করে স্বতন্ত্র নারী পরিচালক রাখার কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ১৩৮টি প্রতিষ্ঠান নিয়মটি পরিপালন করেছে। যদিও ৩১ ডিসেম্বর এ বাধ্যবাধকতার সময় শেষ হতে চলেছে।

নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে বাকি কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সতর্ক করে দিয়েছেন পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার ফারজানা লালারুখ।

আজ বৃহস্পতিবার ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) এবং ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) যৌথভাবে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে দেন। কোম্পানির বোর্ড তথা পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র পরিচালক রাখার বিষয়ে বৈঠকটির আয়োজন করা হয়। ঢাকার কারওয়ান বাজারের সিএ ভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আইসিএবির সভাপতি এন কে এ মবিন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইসিএবির জেন্ডার ইনক্লুশন অ্যান্ড লিডারশিপ কমিটির চেয়ারপারসন জেরীন মাহমুদ হোসেন।

গোলটেবিলে আইসিএবির করা একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরেন এ কাসেম অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা অংশীদার ও আইসিএবির জিআইএলসির সদস্য সানজিদা কাসেম। তিনি জানান, বর্তমানে নয়টি খাতে ২১ জন নারী চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বোর্ড সদস্য হিসেবে কাজ করছেন। বাংলাদেশে কোম্পানির বোর্ডে বা পরিচালনা পর্ষদে স্বতন্ত্র নারী পরিচালক রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ। সার্বিকভাবে পরিচালক ধরে হিসাব করলে এই হার প্রায় ২০ শতাংশ।

আইএফসির ইএসজি অফিসার লোপা রহমান কোম্পানি পর্ষদে নারীর অংশগ্রহণের বৈশ্বিক চিত্র তুলে ধরেন। বৈশ্বিক তথ্য অনুসারে, এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারীদের বোর্ডে অংশগ্রহণ গড়ে ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৪ শতাংশ ও যুক্তরাজ্যে ৩৭ শতাংশের বেশি। বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় বাজারে এটা ৩৩ থেকে ৪০ শতাংশ।

আইসিএবির জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে আরও ১৩৪ জন নারী এফসিএ রয়েছেন, যাঁরা স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারেন। অর্থাৎ ভবিষ্যতের জন্য শক্ত পাইপলাইন রয়েছে। এ ছাড়া ৭৫ শতাংশ নারী আইসিএবি সদস্য স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, যা পেশাগত দক্ষতা ও প্রস্তুতির অবস্থা জানান দেয়। তাই নারী পরিচালক বাড়ানোর সুযোগ তৈরির আহ্বান জানানো হয় প্রতিবেদনে।

কোনো কোনো কোম্পানির বোর্ডে দেখা যায় ৭ জনই এক পরিবারের সদস্য। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক কোনো কথা বলতে পারেন না। তাই বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়ার বিষয়টি আমরা করপোরেট সুশাসনের অংশ হিসেবে দেখছি। কমপ্লায়েন্স না থাকা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের অনেক সময় চলে যাচ্ছে।ফারজানা লালারুখ, কমিশনার, বিএসইসি

সেমিনারে আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় শাসনব্যবস্থার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কথা বলেন লোপা রহমান। তিনি লিঙ্গবৈচিত্র্যপূর্ণ নেতৃত্ব কীভাবে শক্তিশালী বোর্ড কার্যকারিতা এবং উন্নত ব্যবসায়িক কর্মক্ষমতা অর্জনে অবদান রাখে, তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী গবেষণা প্রমাণ করে যে নেতৃত্বে নারীর প্রতিনিধিত্ব বেশি এমন কোম্পানিগুলো মূল আর্থিক ও শাসনব্যবস্থার সূচকগুলোতে বেশি ভালো পারফর্ম করে।

বিএসইসির কমিশনার ফারজানা লালারুখ বলেন, ‘কোনো কোনো কোম্পানির বোর্ডে দেখা যায় ৭ জনই এক পরিবারের সদস্য। সে ক্ষেত্রে স্বতন্ত্র পরিচালক কোনো কথা বলতে পারেন না। তাই বোর্ডে স্বতন্ত্র পরিচালক দেওয়ার বিষয়টি আমরা করপোরেট সুশাসনের অংশ হিসেবে দেখছি। কমপ্লায়েন্স না থাকা প্রতিষ্ঠান নিয়ে আমাদের অনেক সময় চলে যাচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর কোম্পানি সচিব নিয়োগ দিচ্ছে না। আমরা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা এখন বেবিসিটার হয়ে যাচ্ছি। তাই আমরা আর দায়িত্ব নিতে চাচ্ছি না।’

স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিএসইসির অনুমোদনে বিলম্ব হয় বলে জানান মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) সৈয়দ মাহবুব রহমান। তিনি এ–সংক্রান্ত অনুমোদনের শর্ত শিথিলের আহ্বান জানান। তবে তিনি এ কথাও বলেন, যোগ্য প্রফেশনাল কম থাকায় স্বতন্ত্র পরিচালক পাওয়া চ্যালেঞ্জের।

মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এমসিসিআই) সভাপতি কামরুন টি রহমান বলেন, সব পরিচালকের জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য থাকা উচিত। কারণ, অনেকেরই নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকে না।

গোলটেবিলে অংশ নিয়ে এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বলেন, বোর্ডে নারী পরিচালক থাকলে তা প্রতিনিধিত্বমূলক ও বৈচিত্র্যময় হয়। তবে এখানে নেতৃত্বের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ।

বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) স্বতন্ত্র পরিচালকদের ভূমিকা রাখার সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানান ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশের (আইসিএসবি) সভাপতি হোসেন সাদাত। তিনি বলেন, বোর্ডে অনেক সময় দিতে হয়, তাই তাঁদের সম্মানী বাড়ানো উচিত।

গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্সের এমডি ও সিইও ফারজানা চৌধুরী বলেন, যাঁরা পারিবারিক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের নেতৃত্বের দক্ষতা থাকে। তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা কম হতে পারে, কিন্তু তাঁদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তাই স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে তাঁদের জন্য বিশেষ সুযোগ সংরক্ষণ করা উচিত।

আইসিএবির সভাপতি এন কে এ মবিন বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায়, নিরীক্ষার অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিরীক্ষা কমিটির প্রধান হয়ে যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ায় দেখেছি, টেলিনরের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে (সিইও) বোর্ড সদস্য হিসেবে তিন তিনের বাধ্যতামূলক প্রশিক্ষণ নিতে হয়েছে। আমাদের দেশেও এমন নিয়ম করা যেতে পারে।’

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএ) সভাপতি দৌলত আখতার, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষদ সদস্য শাহারিয়ার সাদাত প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ক সময় ব যবস থ ব এসইস রহম ন সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের বোনাস লভ্যাংশে বিএসইসির সম্মতি

পুঁজিবাজারে জ্বলানি ও বিদ‌্যুৎ খাতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারি পিএলসির ঘোষিত ৯ শতাংশ স্টক লভ্যাংশে অনুমতি দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ওয়েবসাইট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এর আগে সোমবার (৮ ডিসেম্বর) বিএসইসি এক চিঠিতে কোম্পানিকে এই তথ্য জানিয়েছে।

তথ্য মতে, গত ২৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে সর্বশেষ হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও অনুমোদনের পর শেয়ারহোল্ডারদের ২০ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ছিল ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ, বাকি ৯ শতাংশ বোনাস।

বিধি অনুসারে, কোনো কোম্পানি বোনাস তথা স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করলে এর যৌক্তিকতা তুলে ধরে বিএসইসির কাছে আবেদন করতে হয়। বিএসইসি অনুমোদন করলেই কেবল ওই লভ্যাংশ বিতরণ করা যায়।

বোনাস শেয়ার প্রাপ্তির এখতিয়ার নির্ধারণে আগামী ১৭ ডিসেম্বর রেকর্ড তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ওইদিন যাদের কাছে কোম্পানিটির শেয়ার থাকবে তারাই কেবল বোনাস পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবেন।

২০২৫ সালের ৩০ জুন সর্বশেষ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সিভিও পেট্রোকেমিক্যাল রিফাইনারির শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৩.৮২ টাকা। আগের হিসাব বছরের একই সময়ে ইপিএস ছিল ২.৩৪ টাকা।

আলোচ্য হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি ক্যাশ ফ্লো ছিল ৭.৬৫ টাকা। আগের হিসাব বছর ক্যাশ ফ্লো ছিল ২.৭৭ টাকা।

গত ৩০ জুন, ২০২৫ তারিখে কোম্পানিটির পুনর্মুল্যায়নসহ শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদ মূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ৩০.২৯ টাকা।

আগামী ১০ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় হাইব্রিড পদ্ধতিতে কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে। এর জন্য রেকর্ড তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩০ অক্টোবর।

ঢাকা/এনটি/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হিমাদ্রির বোনাস লভ্যাংশ প্রদানে বিএসইসির অসম্মতি
  • ৩১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিরীক্ষকের মতামতে বিএসইসির উদ্বেগ
  • স্টার অ্যাডহেসিভের বোনাস লভ্যাংশে বিএসইসির সম্মতি
  • ‘আইপিওর নতুন রুলস কোম্পানির প্রাইসিং-ভ্যালুয়েশন নিশ্চিত করবে’
  • সিভিও পেট্রোকেমিক্যালের বোনাস লভ্যাংশে বিএসইসির সম্মতি