কিস্তি নিয়ে সমঝোতা ছাড়াই ঢাকা ছাড়ল আইএমএফ
Published: 17th, April 2025 GMT
ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের জটিলতার বিষয়ে সমঝোতা ছাড়াই ঢাকায় শেষ হয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সফররত মিশনের বৈঠক। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো এবং টাকা-ডলার বিনিময় হার ইস্যুতে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি দু’পক্ষ। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে শুরু হতে যাওয়া আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। ঐকমত্য হলে আগামী জুনে সংস্থাটির পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে। দুই সপ্তাহের ঢাকা সফর শেষে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফ মিশনপ্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে তাদের আলোচনা শেষ হয়নি, চলমান।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, চলমান ঋণ কর্মসূচির শর্ত পর্যালোচনায় এর আগে তিনবার সফরে এসেছিল আইএমএফ মিশন। প্রতিবারই কর্মকর্তা পর্যায়ের সমঝোতা হলেও এবারই প্রথম দু’পক্ষ সব বিষয়ে একমত হতে পারেনি। বিশেষত, আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সময় নিতে চাচ্ছে। এ কারণে ওয়াশিংটনে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশের শর্ত পূরণ পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য সংস্থার এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগের কর্মকর্তা ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের মিশন ২ এপ্রিল ঢাকায় আসে। তারা প্রায় দুই সপ্তাহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে করে।
আইএমএফের চলমান কর্মসূচি শুরুর পর এ পর্যন্ত তিন কিস্তিতে প্রায় ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তিতে ১১৪ কোটি থেকে ১৩০ কোটি ডলার ছাড় নিয়ে আলোচনা চলছে। এর আগে গত ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির শর্ত পর্যালোচনা শেষে কর্মকর্তা পর্যায়ে ঐকমত্য হয়। তখন ধারণা দেওয়া হয়েছিল, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আইএমএফের পর্ষদের বৈঠকে চতুর্থ কিস্তি ছাড় হবে। তবে চতুর্থ কিস্তি পায়নি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ২০২৩ সালে যে বাস্তবতায় আইএমএফের সঙ্গে ঋণচুক্তি সই হয়েছিল, সরকার পতনের পর অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। সুশাসনকেন্দ্রিক সমস্যা কমে গেছে। আগে খেলাপি ঋণ কম দেখানো হতো। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেশি দেখানো হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বিষয়ে সংস্কার করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আইএমএফের মিশনপ্রধান বলেন, বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার ভালো সময় যাচ্ছে। কেননা, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল আছে। আবার ব্যাংক এবং খোলাবাজারে ডলারের দরে ব্যবধান কমেছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় বাড়ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত অনেক কম। বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় অনেক বেশি। আবার ভিন্ন ভিন্ন করহার রয়েছে। এসব বিষয়ে সংস্কার আনতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর খেলাপি ঋণ বাড়ছে। আদায় ও তদারকি
ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।
প্রসঙ্গত, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। অবশ্য গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর লুকিয়ে রাখা খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রকাশ করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে করে খেলাপি ঋণ এক বছরে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে গত ডিসেম্বরে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় ঠেকেছে। মোট ঋণের যা ২০ দশমিক ২০ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫ দশমিক ৬০ শতাংশ। আর রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৪২ দশমিক ৮৩ শতাংশে উঠেছে।
মিশনের সুপারিশ
আইএমএফ মিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ তুলে ধরে কিছু সুপারিশ করা হয়। এতে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশে নেমেছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে যা ছিল ৫ দশমিক ১০ শতাংশ। গত বছরের জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭০ শতাংশে উঠেছিল। সেখান থেকে কমে গত মার্চে ৯ দশমিক ৪ শতাংশে নামার বিষয়টি ইতিবাচক। যদিও বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ৫ থেকে ৬ শতাংশের তুলনায় তা এখনও অনেক বেশি।
মিশন বলেছে, ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক অর্থায়ন ঘাটতি মোকাবিলা এবং ধারাবাহিকভাবে মূল্যস্ফীতি কমানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে নিকট মেয়াদে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে। বিনিময় হারের নমনীয়তা পণ্যের দর প্রতিযোগিতামূলক করা এবং রিজার্ভ বাড়াতে সহায়ক হবে। কর প্রশাসন এবং কর নীতিকে পৃথক করতে হবে। আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য আর্থিক খাতের সংস্কার অপরিহার্য। বিদেশি বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে আকর্ষণ করতে হবে। একই সঙ্গে রপ্তানি বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ র কর মকর ত পর য য় দশম ক সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন দেশের ১৮ কোটি মানুষের দাবি বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘এই সনদ নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে জারি করা হোক এবং প্রয়োজনে গণভোটের আয়োজন করা হোক। তবে এই গণভোট অবশ্যই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই হতে হবে, নির্বাচনের পরে নয়।’
আজ বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে জুলাই সনদের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে তৃতীয় ধাপে তৃতীয় দিনের আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রফিকুল ইসলাম খান। এ সময় উপস্থিত ছিলে জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ।
জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ স্বাভাবিকভাবেই আবারও রাস্তায় নেমে আসবে বলে মন্তব্য করেন রফিকুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পর সে সময়কার দলগুলোর ঐকমত্য থাকা সত্ত্বেও ক্ষমতায় থাকা দলগুলো সেটি (তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা) যথাসময়ে বাস্তবায়ন করেনি। পরে আন্দোলনের মাধ্যমেই তা সংবিধানে যুক্ত হয়।
জামায়াতের এই নেতা আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হয়েছিল বিচারপতি খায়রুল হকের রায়ের মাধ্যমে। আদালতের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এ রায় দেওয়ানো হয়েছিল। তাই বিচার বিভাগকে আবার বিতর্কের মুখে না ফেলে সংবিধানিক আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পক্ষে জামায়াত।
জামায়াতের আরেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ঐকমত্য কমিশন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে চারটি বিকল্প নিয়ে কাজ করেছে, যার মধ্যে কমিশন সংবিধানিক আদেশের প্রস্তাবটি সমর্থন করেছে। এই আদেশের মাধ্যমে জুলাই সনদের ২২টি আর্টিকেল বাস্তবায়িত হতে পারে। এটি আইনিভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী ভিত্তি।
এক প্রশ্নের জবাবে হামিদুর রহমান বলেন, সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন করার এখতিয়ার সংসদের নেই, এবং এ ধরনের পরিবর্তন করতে হলে অবশ্যই গণভোটের প্রয়োজন হয়।
জামায়াতে ইসলামী জনগণের অভিপ্রায়কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয় উল্লেখ করে জামায়াতের এ সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, জনগণের ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে দেশের সর্বোচ্চ আইন।
জুলাই সনদের যে আদর্শ ও চেতনা, তা বাস্তবায়ন হওয়া উচিত এবং যারা এই আদর্শের পথে হাঁটবে না, জনগণ তাদের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলে মনে করেন হামিদুর রহমান আযাদ। উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়লাভ এটি প্রমাণ করে যে এ দেশের তরুণসমাজ ও জনগণ নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা চায় এবং জুলাই বিপ্লবের যোদ্ধাদের পক্ষেই রয়েছে।