ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির ‘একরোখা নেতা’ হিসেবে পরিচিত দিলীপ ঘোষ আজ নিজের চিরকুমারের তকমা ঘোচাবেন। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনের বাসভবনে বিয়ে হবে। এ বিয়ে হবে অনাড়ম্বরভাবে। পাত্রী তাঁর দল বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী রিঙ্কু মজুমদার।

দিলীপ ঘোষের বাড়ি ঝাড়গ্রামে। এখন তিনি থাকছেন কলকাতার সল্টলেকের নিউটাউনের আবাসিক এলাকায়। বিয়ের অনুষ্ঠানে কিছু বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজনকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

গ্রামের বাড়ি ঝাড়গ্রাম থেকে সপ্তাহখানেক আগে দিলীপের মা চলে এসেছেন কলকাতায়। ছেলের সংসার গুছিয়ে তিনি পরে ফিরে যাবেন তাঁদের ঝাড়গ্রামের বাড়িতে।

বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন, দিলীপ ঘোষ দেখিয়ে দিলেন রাজনৈতিক জীবনের মতো তিনি ব্যক্তিগত জীবনেও একই রকম ‘কালারফুল’। তিন কাউকে রেয়াত দিয়ে কথা বলেন না। দিলীপ ঘোষ তিন মাস ধরে প্রেমে হাবুডাবু খাচ্ছিলেন।

দিলীপ ঘোষ বহু বছর আগে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ বা আরএসএসে নাম লিখিয়েছিলেন। তখন শপথও নিয়েছিলেন তিনি ‘অকৃতদার’ থাকবেন।

আরএসএস অবশ্য ২০১৪ সালে দিলীপ ঘোষকে বিজেপিতে পাঠায়। ২০১৫ সালেই পেয়ে যান পশ্চিমবঙ্গের বিজেপির রাজ্য সভাপতির পদ। ২০২১ সালে তাঁর নেতৃত্বেই বিজেপি রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে লড়ে। পেয়ে যান ৭৭টি আসন। নতুন এক রেকর্ড গড়েন দিলীপ ঘোষ। দিলীপ ঘোষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হয়েছেন, লোকসভার সংসদ সদস্য হয়েছেন। হয়েছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম নেতা।

এই বিয়ে নিয়ে দিলীপ ঘোষ মুখ না খুললেও তাঁর হবু স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দিলীপদাকে বহুদিন ধরে চিনি। ওকে ভালোও লাগে। মনের কথা খুলে বলা যায়। গত সেপ্টেম্বরে তাঁকে প্রপোজ করেছিলাম। তিনি তিন মাস সময় চেয়েছিলেন। তারপর সেই সময় এসে গেল কিছুটা বিলম্বে।’

বিজেপির মহিলা মোর্চার রাজ্য শাখার সাবেক সভাপতি সংঘমিত্রা চৌধুরী বলেছেন, ‘দিলীপদাকে অনেক শুভেচ্ছা। ওর দাম্পত্যজীবন অনেক সুখের ও সুন্দর হোক।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে সরব মোদি কেন শেষ পর্যন্ত চুপসে গেলেন

ভারতের নির্বাচন কমিশন ও তার কাজ–সম্পর্কিত পাঁচটি প্রশ্ন তুলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে মুখোমুখি বিতর্কে বসার চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন লোকসভার বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী। কিন্তু অমিত শাহ তা গ্রহণ করলেন না। নির্বাচন ঘিরে কমিশনের (ইসি) এখতিয়ার এবং ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন পদ্ধতি (এসআইআর) নিয়ে বিরোধীদের তোলা প্রশ্নের উত্তরগুলো তাই অনুচ্চারিতই রয়ে গেল।

এসব প্রশ্নের কোনো উত্তর আজ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন দেয়নি। লোকসভার দুই দিনের বিতর্ক শেষেও তা পাওয়া গেল না। বিতর্ক ঘিরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর জবাব কার্যত রাজনৈতিক হয়ে রইল।

লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনের শুরু থেকেই বিরোধীরা এসআইআর নিয়ে আলোচনার দাবি তুলেছিলেন। অন্যদিকে সরকার চাইছিল জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’–এর সার্ধশতবর্ষ উদ্‌যাপন উপলক্ষে আলোচনা করতে। বিরোধীরা সরকারের দাবি মেনে নেওয়ায় সরকারও বাধ্য হয় বিরোধীদের দাবি মানতে।

তবে আলোচনা শুধু ‘এসআইআর’–এর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সরকার ঠিক করে, বিতর্কের বিষয়বস্তু হবে ‘নির্বাচনী সংস্কার’। সরকার জানায়, প্রথমে আলোচিত হবে ‘বন্দে মাতরম’, পরে নির্বাচনী সংস্কার।

বিরোধীরা বলেন, আরএসএসের সদর দপ্তর ও শাখাগুলোতেও ‘বন্দে মাতরম’ গান গাওয়া হয়নি। এমনকি বহু বছর আরএসএস শাখা ও সদর দপ্তরে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকাও তোলা হয়নি।

বিজেপি ও সরকার ‘বন্দে মাতরম’ বিতর্কে কোণঠাসা করতে চেয়েছিল প্রধানত কংগ্রেসকে। তাদের অভিযোগ ছিল, কংগ্রেস নেতৃত্ব প্রধানত জওহরলাল নেহরু ‘বন্দে মাতরম’ গানের অঙ্গচ্ছেদের জন্য দায়ী এবং সেটি তিনি করেছিলেন মুসলিম লিগ ও মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর চাপে। তাদের মতে, ওটা ছিল কংগ্রেসের ‘মুসলিম তোষণের’ বড় প্রমাণ।

কিন্তু লোকসভা ও রাজ্যসভার বিতর্কে দেখা গেল, সব বিরোধী দল ‘বন্দে মাতরম’ প্রশ্নে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়াল, এমনকি বিজেপির শরিক জেডিইউ পর্যন্ত। প্রত্যেকেই তথ্য দিয়ে জানাল, ‘বন্দে মাতরম’–এর প্রথম দুই স্তবক রেখে বাকিগুলো না গাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল খোদ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তাঁর সঙ্গে পূর্ণ সহমত হয়েছিলেন মহাত্মা গান্ধী, সরদার বল্লভভাই প্যাটেল, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, বাবাসাহেব আম্বেদকরেরা।

দ্বিতীয়ত, প্রত্যেক বিরোধী বক্তা এই বিতর্কে বিজেপিকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করান, স্বাধীনতা সংগ্রামে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) বিন্দুমাত্র ‘ইতিবাচক ভূমিকা’ না থাকার অপরাধে। এই অভিযোগেও বিজেপিকে বিদ্ধ হতে হলো যে তারাও বহু বছর পর্যন্ত ‘বন্দে মাতরম’ উচ্চারণ করেনি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভাষণ, যিনি ‘বন্দে মাতরম’-এর স্রষ্টা বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে ‘বঙ্কিমদা’, বিপ্লবী পুলিনবিহারী দাসকে ‘পুলিন বিকাশ’ ও সূর্য সেনকে ‘মাস্টার’ বলে অভিহিত করে ক্ষীণ ‘ইতিহাসজ্ঞানের’ পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি নিজেকে হাস্যাস্পদও করে তুলেছেন।

বিরোধীরা বলেন, আরএসএসের সদর দপ্তর ও শাখাগুলোতেও ‘বন্দে মাতরম’ ওই গান গাওয়া হয়নি। এমনকি বহু বছর আরএসএস শাখা ও সদর দপ্তরে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকাও তোলা হয়নি। একের পর এক বিরোধী নেতা বরং বলেছেন, কংগ্রেস নেতা–কর্মীরা যখন ‘বন্দে মাতরম’ গাইতে গাইতে ফাঁসির মঞ্চে এগিয়ে গেছেন, আরএসএস তখন ব্রিটিশ শাসকদের ‘পক্ষে’ কাজ করেছে।

অমিত শাহ ভোট চুরির অভিযোগ তুললেন জওহরলাল নেহরু, ইন্দিরার বিরুদ্ধে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘বন্দে মাতরম’ নিয়ে সরব মোদি কেন শেষ পর্যন্ত চুপসে গেলেন