দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় ভবেশ চন্দ্র রায় (৫৫) নামের এক কৃষকের ‘রহস্যজনক’ মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর ‘পান–বিড়ি খেয়ে অসুস্থতার’ খবর জানানো হয় পরিবারকে। স্থানীয় বাজার থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা ভবেশকে মৃত ঘোষণা করেন।

ভবেশ চন্দ্র রায় দিনাজপুরের বিরল উপজেলার শহরগ্রাম ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় কৃষক ছিলেন। ‘পান–বিড়ি খেয়ে’ কীভাবে একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে মারা যেতে পারেন, সেই প্রশ্ন তুলেছে পরিবার। পুলিশ বলছে, নিহত ভবেশের শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

ভবেশের পরিবারের সদস্যরা বলছেন, গতকাল বিকেল পাঁচটায় মো.

রতন (৩২) ও আতিক (৩৩) নামের স্থানীয় দুই যুবকসহ চারজন দুটি মোটরসাইকেলে করে ভবেশের বাড়িতে আসেন। এরপর বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে ফুলবাড়ী বাজারে যাওয়ার কথা বলে ভবেশকে তাঁদের মোটরসাইকেলে তুলে নেন। এরপর রাতে তাঁর অসুস্থতার খবর পায় পরিবার।

ভবেশের ছেলে স্বপন চন্দ্র দিনাজপুর সরকারি কলেজ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে সদ্য স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। শহরের কালীতলা এলাকায় থেকে তিনি ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করেন। আজ শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে স্বপন চন্দ্র প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৫৭ মিনিটে বাবার ফোন থেকে আমার সঙ্গে কথা বলেন রতন ভাই। তিনি আমাকে বলেন, ‘‘তোমার বাবা নাড়াবাড়িতে আছে, পান-বিড়ি খেয়েছে। অসুস্থ হয়ে এখন বমি করতেছে।’’ সে সময় আমি বলি, তাহলে একটা ভ্যানে তুলে দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। কিছুক্ষণ পর আবারও ফোন দিয়ে বলেন, ‘‘তোমার বাবার অবস্থা খুবই খারাপ বাড়িতে পাঠানো যাবে না, তুমি অ্যাম্বুলেন্স পাঠাও।’’ পরে অ্যাম্বুলেন্সে বাবাকে নিয়ে রাত সোয়া নয়টায় মেডিকেলে ভর্তি করাই। তিনতলায় উঠে ডাক্তার ইসিজি করে বাবাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ভবেশের স্ত্রী সান্ত্বনা রানীর ভাষ্য, ভবেশকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাওয়া যুবক মো. রতন একই ইউনিয়নের আবদুস সাত্তারের ছেলে এবং অপরজন হলেন বাসুদেবপুর গ্রামের আবদুল কাদেরের ছেলে আখতারুল ইসলাম ওরফে আতিক। তবে অপর দুজনের নাম বলতে পারেননি সান্ত্বনা রানী। তিনি প্রশ্ন রাখেন, পান আর সিগারেট খেয়ে কীভাবে একটা সুস্থ মানুষ মারা যেতে পারেন?

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মাসুদ রানা বলেন, হাসপাতালে পৌঁছার আগেই ভবেশ চন্দ্রের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও কর্তব্যরত চিকিৎসক ইজিসি করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বিরলের নাড়াবাড়ি ও ফুলবাড়ী বাজার এলাকায় অনেকেই দাদন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে ওই এলাকা ভারতীয় মাদক চোরাচালানের পথ। ভবেশের মৃত্যুর সঙ্গে এগুলোর যোগসূত্র থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

ঘটনার পর থেকে রতন ও আতিক নামের ওই দুই যুবক গা ঢাকা দেওয়ায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিরল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুস সবুর বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টায় পরিবার থেকে আমাদেরকে ফোনে জানানো হয়। বাড়িতে গিয়ে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন পাওয়া যায়নি। পরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। পরিবার থেকে অভিযোগ পেলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

আজারবাইজানে ৩০ সামরিক কর্মী নিহত: গভর্নর

ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে শনিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৩১ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩০ জন সামরিক কর্মী ও একজন ইরানি রেড ক্রিসেন্টের সদস্য রয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছেন ওই প্রদেশের গভর্নর বাহরাম সারমাস্ত। তিনি জানান, হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৫ জন আহত হয়েছে। খবর-বিবিসি

আধা-সরকারি সংবাদ সংস্থা তাসনিম জানিয়েছে, শুক্রবার ভোরে শুরু হওয়া এই হামলায় ১৯টি ভিন্ন স্থানে ৫৫ জন আহত হয়েছেন। 
যেসব স্থানে হামলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে প্রাদেশিক রাজধানীর একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ ও পরিবহন কেন্দ্র তাবরিজ বিমানবন্দর। ঘটনাস্থলের ভিডিও ফুটেজে আকাশে ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে। 

ইরানি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, নিকটবর্তী শহীদ ফাকৌরি সামরিক বিমানঘাঁটি এবং সংলগ্ন রেলওয়ে নেটওয়ার্কের কিছু অংশে অতিরিক্ত ক্ষতি হয়েছে।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, তেহরানের একটি ভবনে ইসরায়েলি হামলায় ২০ জন শিশুসহ ৬০ জন নিহত হয়েছেন। এখনও পর্যন্ত হতাহতের মোট সংখ্যা প্রকাশ করেনি ইরান।

ইরানি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের উত্তর-পশ্চিমে হামলায় একটি অ্যাম্বুলেন্সে দু’জন নিহত হয়েছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত শনিবার জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি হামলায় ৭৮ জন নিহত ও ৩২০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ