গাজীপুরের টঙ্গীতে দুই ভাইবোন মালিহা আক্তার (৬) ও মো. আবদুল্লাহকে (৪) তাদের মা আলেয়া বেগম হত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত শুক্রবার বিকেলে ঘরে থাকা বঁটি দিয়ে তাদের কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তবে কেন বা কী কারণে আলেয়া সন্তানদের হত্যা করেছেন, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি পুলিশ।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের টঙ্গী জোনের উপকমিশনার এনএম নাসির উদ্দিন বলেন, হত্যার সময় মায়ের হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে দুই শিশু। এ সময় আলেয়ার দুটি আঙুলে দাগ পড়ে। এই সূত্র ধরে হত্যার রহস্য উন্মোচন হয়েছে।

টঙ্গীর পূর্ব আরিচপুরের রূপবানের টেক এলাকার আটতলা ভবনের তৃতীয় তলার একটি বাসা থেকে শুক্রবার দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মালিহা ও আব্দুল্লাহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তাতুয়াকান্দি গ্রামের আব্দুল বাতেন ও আলেয়া বেগম দম্পতির সন্তান। ঘটনার পর তাদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ফরিদুল ইসলাম বলেন, ওই ভবনের আশপাশে কয়েকটি সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। এসব ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, শুক্রবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার আগে-পরে তাদের ভাড়া বাসায় আলেয়া ছাড়া কেউ যাতায়াত করেননি। ঘটনার পর তিনি পাশের বাড়ি থেকে দুই দেবরকে ডেকে আনেন। তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় সন্ধ্যায় পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়। ওই সময় আলেয়ার হাতে কাটা দাগ দেখে পুলিশের সন্দেহ বাড়ে। এক পর্যায়ে মধ্যরাতে তিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। এ ঘটনায় আব্দুল বাতেন মামলা করেছেন।

আব্দুল বাতেন বলেন, ‘আমার স্ত্রীর একটু সমস্যা আছে। সে কাউ কাউ (ঝামেলা) পছন্দ করত না। ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। সে মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগছিল। মানসিক সমস্যা আছে কিনা, এ বিষয়ে ডাক্তার কিছু বলতে পারেনি।’

জানা গেছে, আব্দুল বাতেনের তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে ছিল নানাবাড়িতে। শুক্রবার দুপুরে বাসায় থাকা শিশুদের বাবা, মা ও দাদি একসঙ্গে খাবার খান। এর পর আলেয়া একটি কক্ষে ঘুমিয়ে পড়েন। দাদি ওপর তলার ফ্ল্যাটে বেড়াতে যান এবং বাবা তাদের ঘরে রেখে বাইরে যান। কিছু সময় পর আলেয়ার চিৎকারে তাদের দাদি ওপর তলা থেকে নেমে আসেন। রক্তাক্ত দুই শিশুকে দেখে তিনি বাতেনকে খবর দেন। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ক রব র

এছাড়াও পড়ুন:

২২ ক্যাডার নিয়ে চলতেন স্বেচ্ছাসেবক দলের জিতু

বগুড়ায় মেয়েকে উত্ত্যক্ত ও বাবাকে খুনে অভিযুক্ত জিতু ইসলাম দলীয় প্রভাবে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। কথায় কথায় যাকে-তাকে অহেতুক মারধর করতেন। চলতেন ২২ জনের ক্যাডার বাহিনী নিয়ে। তারা সবাই নানা অপকর্মে জড়িত এবং একাধিক মামলার আসামি। তাঁর আয় চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসা থেকে। গতকাল রোববার এলাকায় গিয়ে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা যায়, জিতু ফুলবাড়ী কারিগরপাড়ার মৃত সেকেন্দার আলীর ছেলে। ২০০৩ সালে এলাকায় বালু ব্যবসা নিয়ে প্রতিপক্ষ রবিউল ইসলামকে খুন করেন। সেই মামলায় তাঁর ১৪ বছর সাজা হয়। সাজা খেটে তিন বছর আগে বের হন। এর পর এলাকায় গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। তাঁর বাহিনীতে যে ২২ জন সদস্য, তারা কেউ রাজনৈতিক দলের পদ-পদবিতে নেই। হত্যা মামলা ছাড়াও জিতুর বিরুদ্ধে একটি মাদক ও একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

ফুলবাড়ীর এক মুদি দোকানি বলেন, জিতু মাঝেমধ্যে তাঁর দোকান থেকে বাকি নিতেন। দু’বছরে বাকির পরিমাণ প্রায় ৪৮ হাজার টাকা হয়। তখন একদিন টাকা চান। এ কারণে জিতু তাঁকে মারধর করে নাকে খত নেন।
বৃন্দাবন এলাকার আরেক ব্যবসায়ী বলেন, মাঝেমধ্যে জিতু তাঁর বাহিনী নিয়ে হাজির হতেন। মোটা অঙ্কের চাঁদা চাইতেন। চাঁদার কমপক্ষে অর্ধেক দিয়ে তবে নিস্তার পাওয়া যেত। এ ছাড়া ঈদে সেলামির নামে মোটা অঙ্কের চাঁদা দিতে হতো তাঁকে।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জানান, তাঁর কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা চান জিতু। না দেওয়ায় দোকানে ককটেল হামলা করেন। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকায় আগস্টের পর জিতু বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। এলাকার একাধিক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা নিয়ে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে। ছোট ভাই মিতুলও তাঁর বাহিনীর সদস্য।

জিতু গত ১৯ ফেব্রুয়ারি জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটির সহসাধারণ সম্পাদকের পদ পান। সন্ত্রাসী হয়ে দলের পদ পাওয়ায় এলাকায় তাঁকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পদ পেয়ে তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।

এলাকার এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘জিতুর কারণে আমরা মুখ খুলতে পারি না। সে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার মাধ্যমে এলাকা অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের পদ-পদবি পেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশতের কম হবে না। তার বখাটেপনার কারণে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হতো না।’
এক বছর আগে থেকে ফুলবাড়ির পাশেই শহরের শিববাটি এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতে থাকেন জিতু। সেই এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক শাকিল হোসেন। শাকিলের মেয়ে স্থানীয় ভান্ডারী সিটি বালিকা বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। এক মাস আগে ৫২ বছর বয়সী জিতু বিয়ের প্রস্তাব দেন শাকিলের মেয়েকে। বিষয়টি শাকিল জেনে রাগ করেন। জিতুর ওপর চড়াও হন। কিছুতে রাজি না হলে নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকেন জিতু। তাঁর মেয়েকেও উত্ত্যক্ত করতেন। এরই এক পর্যায়ে শনিবার বিকেলে শাকিলকে পিটিয়ে খুন করেন জিতু ও তাঁর বাহিনী।
এ হত্যার ঘটনায় জিতুকে এক নম্বর আসামি করে ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে গতকাল রোববার বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন শাকিলের স্ত্রী মালেকা খাতুন। পুলিশ শনিবার রাতেই জিতু ও তাঁর সহযোগী মতি এবং বিপ্লবকে আটক করে।

সন্ত্রাসীকে দলের পদ দেওয়ার বিষয়ে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সরকার মুকুল বলেন, ‘আমি জানতাম না, সে দলের নাম ভাঙিয়ে এসব অপকর্ম করছে। আমরা তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছি।’ শনিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসানের সই করা বিবৃতিতে জিতু ইসলামকে বহিষ্কার করা হয়। সেই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ জানানো হয়।

বগুড়া সদর থানার ওসি হাসান বাসির বলেন, ‘এ মামলার অন্য আসামিদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ফুলবাড়ী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক জোবায়ের খান জানান, গতকাল জিতুসহ তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এদিকে হত্যার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম জেলা শাখা। গতকাল বিকেলে শহরের সাতমাথায় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট দিলরুবা নূরী এতে সভাপতিত্ব করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ