ময়লা উপচে পড়েছে নালায়। বেশির ভাগ নালার ওপর নেই ঢাকনা, পানিতে ভনভন করছে মশা। ছোট শিক্ষার্থীরা ফুটপাত দিয়ে চলতে গিয়ে অনেক সময় নালার ময়লায় পড়ে যায়। আবার যেসব নালায় ঢাকনা আছে সেখানে দোকান তৈরি করা হয়েছে। অল্প বৃষ্টিতে নালার ময়লা পানি ছড়িয়ে পড়ে সড়কে। এই চিত্র ১৫০ বছরের পুরোনো নোয়াখালী পৌরসভার। 
পৌরসভার সব নালা পরিষ্কার করতে অন্তত ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে সেই তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা কম। নাগরিকদের অভিযোগ, নোয়াখালী পৌরসভা দেশের অন্যতম প্রাচীন ও প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও সেবার মান তৃতীয় শ্রেণিরও নিচে। দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিষ্কার না করায় পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। 
১৮৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত নোয়াখালী পৌরসভার আয়তন ১৭ দশমিক ২ কিলোমিটার। ৯টি ওয়ার্ডে বাস করেন ১ লাখ ৩২ হাজার ১৮৫ জন মানুষ। হোল্ডিং সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৬১টি। নালা আছে ৬৩ কিলোমিটার। 
সরেজমিন পৌরসভার অভিজাত আবাসিক এলাকা হাউজিং, নতুন হাউজিং (বালুর মাঠ), হাসপাতাল সড়ক, প্রধান সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, নালা ও খাল দখল করে দোকানপাট তৈরি করা হয়েছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় অবৈধভাবে দোকান তৈরি করা হলেও উচ্ছেদে উদ্যোগ নেই। 
জানা যায়, পৌর এলাকায় ৬৩ কিলোমিটার নালা বেশির ভাগ অংশেরই এখন নাজুক অবস্থা। প্রথম পর্যায়ের নর্দমা (প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি খাল) রয়েছে ১৭ কিলোমিটার। ২য় পর্যায়ের নর্দমা রয়েছে ১৩ দশমিক ১৬ কিলোমিটার। তৃতীয় পর্যায়ের নর্দমা ৩২ দশমিক ৮৬ কিলোমিটার। 
পৌর বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মনিরুল ইসলাম মুকুল বলেন, ‘পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অপরিকল্পিত। যে ব্যবস্থা রয়েছে তারও সংস্কার হচ্ছে না দীর্ঘদিন ধরে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতে নালার পানি প্রবাহিত হতে পারে না। অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে জলাবদ্ধতা হয়। এতে করে ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা চরম দুর্ভোগে পড়েন।’
তিনি আরও বলেন, ‘পৌরবাসী প্রতিবছর পৌরসভাকে মোটা অঙ্কের কর দিলেও তেমন কোনো সেবা পাচ্ছেন না। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগেই পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে নালা পরিষ্কার ও নালার ওপর ঢাকনা বসানো জরুরি।’
মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ফজলুল হক বাদল বলেন, ‘পৌরসভার বকসী মিজির পোল থেকে গাবুয়া খাল পর্যন্ত যে নালা নির্মাণ করা হয়েছে তা অপরিকল্পিত। পৌর বাজার থেকে দত্তের হাটের পূর্ব পাশ দিয়ে নোয়াখালী খালের সঙ্গে সংযুক্ত খালটি দীর্ঘদিন পরিষ্কার করা হয়নি। ফলে বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।’
হাউজিং এলাকার বাসিন্দা মফিজুর রহমান বলেন, ‘প্রতিবছর পৌরসভাকে মোটা অঙ্কের কর দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু কোনো সেবা পাচ্ছি না। সড়কে চলতে গেলে দুর্গন্ধ নাকে আসে। নালাগুলো দীর্ঘ এক যুগ ধরে পরিষ্কার করা হচ্ছে না। নালার ওপর নেই কোনো ঢাকনা। ছোট শিক্ষার্থীরা অনেক সময় নালার ময়লায় পড়ে যায়।’ 
 ব্যবসায়ী শহীদ উল্যাহ বলেন, ‘পৌরসভা কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার বেহাল দশা হয়েছে। টানা এক ঘণ্টা বৃষ্টি হলে শহরের বিভিন্ন স্থানে পানি জমে জলাবদ্ধতা হয়। এতে দুর্ভোগে পড়েন পৌরবাসী। নালা দখলকারীদের দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে।’ 
নাগরিক অধিকার আন্দোলন নোয়াখালী জেলা শাখার সদস্য সচিব সাংবাদিক জামাল হোসেন বিষাদ বলেন, ‘নোয়াখালী পৌরসভা জেলার প্রাচীতম প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেভাবে উন্নত ও নাগরিক সুবিধা সংবলিত হওয়ার কথা ছিল সেটা হয়নি। পৌরসভায় রয়েছে অসংখ্য অপরিকল্পিত অবকাঠামো। ড্রেনেজ ব্যবস্থা আরও বেশি অপরিকল্পিত। শহরের প্রধান সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলছে ধীরগতিতে। সব মিলিয়ে শহরের এখন হযবরল অবস্থা।’ 
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহম্মেদ পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘এক মাস আগে আমি এই পৌরসভায় যোগদান করেছি। পৌরসভার জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন খাল ও নালার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। ইতোমধ্যে ১৩টি পয়েন্ট শনাক্ত করা হয়েছে। পৌরবাসী যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় নালা ভরাট হয়ে গেছে। এর ফলে পানি নিষ্কাশন হতে পারে না, বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা হয়।’
নালার ওপরে ঢাকনা না থাকার বিষয়টি পুরোপুরি স্বীকার করেননি নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বলেন, ‘অনেক জায়গায় নালার ঢাকনা চুরি গেছে। নালার ওপর লোহার রড দিয়ে ঢাকনা দেওয়া হলে মাদক সেবনকারীরা সেগুলো রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যায়।’
আগামী বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই নালা পরিষ্কার ও পানি প্রবাহের উপযোগী করা হবে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী বেলাল আহম্মেদ। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বোরো ধান কাটার মৌসুম হওয়ায় শ্রমিক সংকট রয়েছে। ফলে কাজ করতে একটু বিলম্ব হচ্ছে। পৌরসভার সবগুলো নালা পরিষ্কার করতে ৫০০ কোটি টাকা প্রয়োজন। এখানে তহবিলেরও সংকট রয়েছে।’
পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আলা উদ্দিন বলেন, ‘শহরের ছাগলমারা খালের দৈর্ঘ্য ৩ কিলোমিটার। শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের এটি অন্যতম মাধ্যম। খালটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’ 
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও নোয়াখালী পৌরসভার প্রশাসক জালাল উদ্দিন বলেন, ‘বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে খুব শিগগিরই পৌরসভার নালা ও খাল পরিষ্কার কার্যক্রম শুরু করা হবে।’
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহম্মদ বলেন, ‘পৌরসভার খাল ও নালা পরিষ্কার করার জন্য পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা কিছু কাজও করেছে। অর্থ সংকটের কারণে কাজে বিলম্ব হচ্ছে।’ 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রসভ পর ষ ক র ক ন ল র ওপর ব যবস থ প রসভ র র ময়ল শহর র

এছাড়াও পড়ুন:

নিয়োগবিধির প্রজ্ঞাপন : প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ পদোন্নতিতে

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা, ২০২৫–এ পরিবর্তন এনেছে সরকার। নতুন সংশোধন অনুযায়ী, প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা ও বয়সসীমায় কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের পরামর্শক্রমে এই সংশোধনী জারি করা হয়েছে গতকাল রোববার (২ নভেম্বর)।

নতুন বিধিমালায় বলা হয়েছে, প্রধান শিক্ষক পদে ৮০ শতাংশ নিয়োগ পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ২০ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে হবে। পদোন্নতির জন্য প্রার্থীকে সহকারী শিক্ষক পদে অন্তত ১২ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং মৌলিক প্রশিক্ষণ ও চাকরি স্থায়ীকরণ সম্পন্ন করতে হবে।

আরও পড়ুনইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত ৪ ঘণ্টা আগে

সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক—উভয় পদেই প্রার্থীদের কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্তত দ্বিতীয় শ্রেণি বা সমমানের সিজিপিএসহ স্নাতক বা স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি থাকতে হবে। শিক্ষাজীবনের কোনো পর্যায়ে তৃতীয় বিভাগ বা সমমানের ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে না। এ ছাড়া তফসিল–২ অনুযায়ী গৃহীত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক উভয় পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৩২ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনকুয়েতে ডেপুটেশনে নিয়োগ দেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বেতন ৩ লাখ ৪৮ হাজার টাকা০২ নভেম্বর ২০২৫

নতুন বিধিমালার মাধ্যমে ‘অন্যান্য বিষয়ে’ শব্দের পরিবর্তে ‘বিজ্ঞানসহ অন্যান্য বিষয়ে অন্যূন’ শব্দটি যুক্ত করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে বিজ্ঞান বিষয়ের প্রার্থীরাও সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংশোধিত বিধিমালার ফলে শিক্ষক নিয়োগের মান আরও উন্নত হবে এবং বিজ্ঞান শিক্ষায় দক্ষ প্রার্থীরা সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে সরকার প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে নতুন ধারা আনতে চায়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ