৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক বিল তুলে ঠিকাদার লাপাত্তা
Published: 20th, April 2025 GMT
বগুড়ার দুপচাঁচিয়া ও আদমদীঘি উপজেলার গ্রামাঞ্চলের মানুষের মধ্যে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। সে লক্ষ্যে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের মাধ্যমে কমিউনিটিভিত্তিক পানি সরবরাহ নামে পাইলট প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। কিন্তু কাজ মাঝপথে ফেলে রেখে লাপাত্তা হয়ে গেছেন ঠিকাদার। এতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ফলে প্রায় ৫ হাজার পরিবার বিশুদ্ধ পানির সুবিধা পাবে কিনা, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়।
এখন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য স্থানীয় লোকজন চেয়ারম্যানদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। এতে বিপদে পড়েছেন জনপ্রতিনিধিরাও। এলাকার পানিতে প্রচুর আয়রন আছে জানিয়ে দুপচাঁচিয়ার আলতাফনগর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, এ পানি পান করে অনেকে নানান রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। সরকারের এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আয়রনমুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানির সুবিধা পাবেন বলে আশা ছিল তাদের। কিন্তু ঠিকাদার কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে তারা হতাশ। কাজটি হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয়ে আছেন।
প্রকল্পটির আওতায় দুপচাঁচিয়ার ছয়টি ইউনিয়নের মধ্যে দুপচাঁচিয়া সদর, গুনাহার ও গোবিন্দপুরকে বেছে নেওয়া হয়। এ তিন ইউনিয়নে পরীক্ষামূলকভাবে ১৮টি ট্যাঙ্ক স্থাপন করে দুই হাজার পরিবারকে পানি সরবরাহ করা হবে। সে জন্য ৬২ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করা হয়। আদমদীঘির ছয়টি ইউনিয়নের তিন হাজার পরিবার এ সুবিধা পাবেন। সে জন্য ব্যয় ধরা হয় ৭৭ লাখ টাকা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পানি সরবরাহ ইউনিট স্থাপন কাজের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে দরপত্র আহ্বান করা হয়। দুই উপজেলার জন্য ঢাকার পুরানা পল্টন এলাকার মেসার্স আমান অ্যান্ড কেয়া ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজ পায়। ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ১৮ মাসের মধ্যে কাজটি শেষ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ২০২২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর শুরুর সময় ঠিক হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করে।
জানা গেছে, দুপচাঁচিয়ার ১৬টি ইউনিটের মধ্যে দেবড়াশন, আলতাফনগর, চৌমুহনী বাজার, আমষট্ট, শেরপুর, কেউৎ ও বাজারদীঘির আটটি ইউনিটে বোরিংসহ কয়েকটির অবকাঠামো নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। আর কাজ করেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৪০ শতাংশ কাজ করে বরাদ্দের অর্ধেক টাকা (বিল) তুলে নিয়েছে তারা। এর পর দেড় বছর ধরে লাপাত্তা ঠিকাদার।
প্রকল্পের কাজ শুরু হলে এলাকার মানুষ খুশি হয়েছিলেন বলে জানান দুপচাঁচিয়ার গুনাহার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ আবু তাহের। তাঁর ভাষ্য, মাঝপথে কাজ বন্ধ করায় এলাকার মানুষ বলছে, প্রকল্পের টাকা চেয়ারম্যানরা মেরে খেয়েছে। এ কারণে কাজ হচ্ছে না। তিনি বলেন, দ্রুত কাজ শেষ করতে হবে। অন্যথায় কর্তৃপক্ষকে এলাকায় গিয়ে মানুষকে ব্যাখ্যা দিতে হবে, কেন কাজ হচ্ছে না।
দুপচাঁচিয়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ঠিকাদারকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার জন্য কয়েকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাড়া
দিচ্ছেন না। উপজেলার মাসিক সমন্বয় সভায় চেয়ারম্যানরা কাজের অগ্রগতি না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সভার সিদ্ধান্তে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। এ সিদ্ধান্তও ঠিকাদারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
একই অবস্থা আদমদীঘিতেও। এ উপজেলায় একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ৪০ শতাংশ কাজ করে অর্ধেক টাকা তুলে নিয়েছে। এখানে ২৬টি ইউনিটের মাধ্যমে তিন হাজার মানুষকে সুবিধা দেওয়ার কথা। কিন্তু ছয়টি ইউনিয়নে ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে ১২টি। আদমদীঘি সদর, নসরৎপুর, চাপাপুর, দুর্গাপুর, কুন্দ্রগ্রাম ও ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নে এসব স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ মাঝপথে আটকে থাকায় এলাকার মানুষ চেয়ারম্যানদের চোর অপবাদ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন নসরৎপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তাফা। তিনি বলেন, ‘আমরা এলাকায় যেতে পারছি না। দোষ করছে একজন, নাম হচ্ছে আরেকজনের।’
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী সুলতান মাহামুদ বলেন, ‘চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা আমাদের কটু কথা শোনান এ প্রকল্প নিয়ে। আমরা ঠিকাদারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি।’ অভিযোগের বিষয়ে বক্তব্য জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমান অ্যান্ড কেয়া ট্রেডার্সের কর্ণধার আমান উদ্দিনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। তিনি ফোন বন্ধ রেখেছেন।
বগুড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, ঠিকাদারকে বারবার প্রকল্পটির কাজ বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দিয়ে অবগত করা হয়েছে। কিন্তু তিনি যোগাযোগ করছেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত কাজ শেষ না করলে কার্যাদেশ বাতিল করে বিকল্প উপায়ে প্রকল্পটি সম্পন্ন করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক র ম প রকল প আদমদ ঘ সরবর হ র জন য ক জ কর ইউন ট উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নিলামে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলার সরবরাহ বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি ব্যাংক থেকে নিলামে ২০২ মিলিয়ন ডলার কিনেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার কারণে বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর ) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, বাজারে বর্তমানে ডলারের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি। এ কারণেই রিজার্ভ থেকে বিক্রি না করে বাজার থেকেই ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাজার স্থিতিশীল রাখতে ভবিষ্যতেও এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে ২০২ মিলিয়ন ডলার কেনা হয়েছে। নিলামের বিনিময় হার ছিল ১২২ টাকা ২৯ পয়সা পর্যন্ত। এই প্রাইসে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নিলামে ডলার কেনার ফলে বাজারে তারল্য বাড়ছে, রিজার্ভে যোগ হচ্ছে নিলামে কেনা ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মোট দুই হাজার ৫১৪ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। এসব ডলার দেশের ব্যাংকগুলো থেকে মাল্টিপল অকশন পদ্ধতিতে কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১০ দফা ডলার কিনেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ গত ১৪ অক্টোবর ৬টি ব্যাংক থেকে ৩৮ মিলিয়ন ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) ও রপ্তানি আয়ের প্রবাহ বাড়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা এসেছে। দেশের ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বেড়েছে, চাহিদা কমেছে। এ কারণে ডলারের দাম কিছুটা কমেছে। ডলারের দাম আরও কমে গেলে রপ্তানিকারকরা একদিকে সমস্যায় পড়বেন, অপরদিকে রেমিট্যান্স আয় বৈধ পথে আসা কমে যাবে। এমন পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনার পর ডলারের বিনিময় মূল্য নির্ধারণে নতুন পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকে ব্যাংক ও গ্রাহক নিজেরাই ডলারের দর নির্ধারণ করছে।
ঢাকা/নাজমুল//