জাহিদুল হত্যা নিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালাচ্ছে ছাত্রদল: উমামা ফাতেমা
Published: 20th, April 2025 GMT
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেছেন, প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম (পারভেজ) হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছাত্রদল পরিকল্পিত বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা শুরু করেছে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে সাধারণ ছাত্রদের ন্যায্য দাবি ও গণ–অভ্যুত্থানের প্ল্যাটফর্মকে কলঙ্কিত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে ছাত্রদল।
রোববার রাতে রাজধানীর বাংলামোটরে রূপায়ণ টাওয়ারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উমামা ফাতেমা এই অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘এই অপবাদ আমরা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করি। আমরা স্পষ্ট করে জানাতে চাই, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংগ্রামকে সন্ত্রাস আখ্যা দিয়ে যারা দমন করতে চায়, তারাই প্রকৃত অর্থে সহিংসতার পৃষ্ঠপোষক।’
এর আগে রোববার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম অভিযোগ করেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী ও প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলামকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা জড়িত। ছাত্রদলের এমন অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাতে জরুরি সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে ‘ইঙ্গিতপূর্ণ’ হাসাহাসিকে কেন্দ্র করে জাহিদুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জাহিদুল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২২৩ ব্যাচের ছাত্র ছিলেন। ২২ বছর বয়সী এই শিক্ষার্থীর বাড়ি ময়মনসিংহে। এ হত্যার ঘটনায় পাঁচজনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা হয়েছে। ছাত্রদলের ভাষ্য, জাহিদুল ইসলাম তাদের সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা তাঁকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল একটি ঘৃণ্য রাজনৈতিক অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছে। হত্যার প্রকৃত কারণ, প্রকৃত অপরাধী ও ক্যাম্পাসে সহিংসতা ছড়ানোর পেছনে থাকা বাস্তব চিত্রকে আড়াল করে তারা ঘটনার রাজনৈতিক ব্যবচ্ছেদে মনোযোগী হয়েছে। এমনকি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে গণ–অভ্যুত্থানের প্লাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে এই হত্যার মদদদাতা হিসেবে অভিযুক্ত করে যাচ্ছে। আমরা এই রাজনৈতিক অপচেষ্টার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুনজাহিদুল হত্যা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতাকে দায়ী করলেন ছাত্রদল সভাপতি৭ ঘণ্টা আগেহত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে গিয়ে, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে বিচারের আওতায় আনতে হবে উল্লেখ করে উমামা ফাতেমা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে বিচার নিশ্চিত করতে হবে, একই সাথে এটাও নিশ্চিত করতে হবে যেন কোনো নিরীহ শিক্ষার্থী রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বা মিডিয়া ট্রায়ালের শিকার না হয়। তদন্ত হতে হবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ এবং প্রমাণভিত্তিক, যেখানে কোনো রকম রাজনৈতিক চাপ বা প্রভাব খাটানো যাবে না।
যেহেতু ক্যাম্পাসে এক শিক্ষার্থী হত্যার মতো গুরুতর অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপস্থিত সকলকে তা তারা যে সংগঠনেরই হোক, তদন্তের আওতায় আনা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জুলাই গণ–অভ্যুত্থান সেলের সম্পাদক হাসান ইমাম, নির্বাহী কমিটির সদস্য সিনথিয়া জাহিন, সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক এম জে এইচ মঞ্জু প্রমুখ।
আরও পড়ুনহাসাহাসিকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে হত্যা১৯ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ হ দ ল ইসল ম ক ন দ র কর ছ ত রদল র র জন ত ক
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামের এক তরুণ আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। গুলির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে আহত রাব্বির মা জোহরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গুলিবিদ্ধ রাব্বি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাব্বি পরিবারের সঙ্গে নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নবীনগর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান (৪৮), জাহিদ মিয়া (১৯), জুবায়েদ মুন্সী (১৯), মো. আহসান উল্লাহ (৪৪) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪৪)। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. সানি (২০) ও একই পাড়ার মো. জিসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও তর্ক হয়। একপর্যায়ে ঝগড়ার সময় সানি জিসানকে ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ সালিস ডাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার কালীবাড়ি মোড়ের জমিদারবাড়ির মাঠে সানিসহ তাঁর লোকজন ও জিসানসহ তাঁর লোকজন সালিসে বসেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রাব্বি সানির পক্ষের সমর্থক। তবে সালিসের রায়ে সানি ও তাঁর লোকজন সম্মত হননি। সালিস ছেড়ে ওঠার সময় জিসানসহ তাঁর লোকজন সানির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে জিসান বন্দুক বের করে গুলি করেন। এতে রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় সানি আহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাব্বিকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তরুণের বুকের বাঁ পাশের পাঁজরে গুলি লেগেছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।