পার্বত্য চট্টগ্রামের বনে কি আসলে বাঘ আছে
Published: 21st, April 2025 GMT
বাংলাদেশের সুন্দরবন এলাকায় সীমাবদ্ধ হয়ে পড়া বেঙ্গল টাইগার বা ডোরাকাটা বাংলার বাঘের একসময় বিচরণভূমি ছিল পার্বত্য চট্টগ্রাম। পাশাপাশি ছিল চিতা বাঘও। নানা ঐতিহাসিক দলিল ও বইপত্রেও পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঘের উপস্থিতির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে।
এর মধ্যে সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী বিবরণ রয়েছে ১৯০৬ সালে কলকাতার ‘দ্য বেঙ্গল সেক্রেটারিয়েট বুক ডিপো’ থেকে প্রকাশিত তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামের ইংরেজ প্রশাসক আর এইচ স্নেইড হাচিনসনের ‘এন অ্যাকাউন্ট অব দ্য চিটাগং হিল ট্র্যাক্ট’ বইয়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বাঘের মুখোমুখি হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে হাচিনসন লিখেছেন, ‘১৯০১ সালের বড়দিন ছিল সেদিন। আমি জঙ্গলে ঢুকেছি বনমোরগ শিকারে। হঠাৎ দেখলাম যেখানে দাঁড়িয়ে আছি আর কিছু দূরেই পাহাড় থেকে একটি বাঘ নেমে আমার দিকেই আসছে। এটি ১৫০ ফুটের মধ্যে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আমি শটগান রেখে রাইফেল নিয়ে গুলি ছুড়লাম। এর আগে আরও একদিন বাঘের মুখোমুখি হয়েছি।’
২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা ‘টাইগার কান্ট্রি? সায়েন্টিস্ট আন কভার ওয়াইল্ড সারপ্রাইজ ইন ট্রাইবাল বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি সচিত্র অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করে। জেরেমি হেন্সের লেখা ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের অজ্ঞাত একটি বনে (সংরক্ষণের স্বার্থে বনটির নাম উল্লেখ করা হয়নি) গবেষকদের চালানো বন্য প্রাণী জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়।
ক্রিয়েটিভ কনজারভেশন অ্যালায়েন্স (সিসিএ) পরিচালিত ওই জরিপে গাছের গায়ে ক্যামেরা ফাঁদ লাগিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহায়তায় বন্য প্রাণীদের ছবি ও বিচরণের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়েছে, এমন অনেক প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায় সেই গবেষণায়। গাউর, মার্বেল ক্যাট, সম্বর হরিণ, গয়াল, সূর্যভালুক, ঢোল (বন্য কুকুর), আরাকান ফরেস্ট টার্টল নামের বিরল কচ্ছপের সন্ধান পেয়েছিলেন ওই গবেষণায়।
প্রতিবেদনটিতে বন্য প্রাণী গবেষক ও সিসিএর সহপ্রতিষ্ঠাতা শাহরিয়ার সিজার রহমান, ইশতিয়াক সোবাহান ও বাঘবিশেষজ্ঞ মনিরুল এইচ খানের বক্তব্য নেওয়া হয়। গবেষণার একপর্যায়ে গবেষক দল ১৩ সেন্টিমিটারের বাঘের পায়ের ছাপ দেখতে পায়। পায়ের ছাপের ছবি বাঘবিশেষজ্ঞদের কাছে পাঠিয়ে তাঁরা সে বিষয়ে নিশ্চিতও হন।
গবেষক মনিরুল এইচ খান ‘গার্ডিয়ান’-এ বলেছিলেন, তাঁর ধারণা, ওই এলাকায় ১৫টির মতো বাঘ এখনো বিচরণ করছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি বনে স্থানীয় বনজীবীদের সহায়তায় বন্যপ্রাণী শনাক্তে গাছের গায়ে লাগানো হচ্ছে ক্যামেরা ফাঁদ। ২০১৬ সালের ১ মার্চ শাহরিয়ার সিজার রহমানের তোলা এই ছবিটি প্রকাশিত হয় যুক্তরাজ্যের দা গার্ডিয়ান পত্রিকায়।.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবিতে নম্বরপত্র-সনদ উত্তোলনে অনলাইন সেবা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অবশেষে শিক্ষার্থীদের সনদ, নম্বরপত্র, ট্রান্সক্রিপ্ট ও সত্যায়নপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে দীর্ঘদিনের পুরনো প্রক্রিয়া থেকে সরে এসে আধুনিকায়নের পথে হাঁটছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে সম্প্রতি service.du.ac.bd লিংক চালু করা হয়েছে, যেখানে একাডেমিক ই-মেল ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসেই এসব সেবার জন্য আবেদন করতে পারবেন।
শিক্ষার্থীরা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ে না গিয়েই নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাদের চাহিদামতো ডকুমেন্টসের অনুরোধ করতে পারবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয় তা শিক্ষার্থীদের দেওয়া ঠিকানায় পাঠাবে। একইসঙ্গে আবেদনকৃত ডকুমেন্ট প্রস্তুতির অগ্রগতিও অনলাইনে দেখা যাবে।
আরো পড়ুন:
ডাকসু ভবন ও তিন হলের প্রবেশপথে মাটিতে পাকিস্তান-ভারতের পতাকা
সাদিক কায়েম সাইবার মামলা করায় ছাত্রদলের নিন্দা
আইসিটি সেলের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফলাফল ডিজিটাল রূপে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে, বিবিএ ও আইবিএ প্রোগ্রামের ফলাফল প্রক্রিয়াজনিত বিলম্বের কারণে তাদের সব তথ্য এখনো ডিজিটালাইজ করা সম্ভব হয়নি। খুব দ্রুতই আরো পাঁচ বছরের ফলাফল ডেটা সিস্টেমে যুক্ত করা হবে।
আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোসাদ্দেক আলী কামাল তুষার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “সম্প্রতি পাস করা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা ২০১৬ সাল পর্যন্ত ডেটা ডিজিটালাইজ করেছি। সার্টিফিকেট গ্রহণের সময় শিক্ষার্থীদের হলে কোনো বকেয়া টাকা আছে কি না, তা অনলাইনেই হল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে যাচাই করা হবে। টাকা বকেয়া থাকলে শিক্ষার্থীকে অনলাইনেই জমা দিতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “এই প্রযুক্তি বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিরিক্ত কোনো ব্যয় হয়নি। আমরা নিজেরাই আমাদের রুটিন দায়িত্বে এটি সম্পন্ন করেছি। যে শিক্ষার্থী অনলাইনে আবেদন করবেন, সেই শিক্ষার্থীর নিজস্ব হলে অনলাইনের মাধ্যমেই নোটিফিকেশন পাঠানো হবে এবং জানতে চাওয়া হবে, ওই হলে তার কোনো টাকা বকেয়া আছে কি না? বকেয়া থাকলে তাকে অনলাইনে হলের টাকা পরিশোধ করতে হবে।”
পরিচালক বলেন, “বর্তমানে সেবাটি ট্রায়ালে আছে; অতি দ্রুত আমরা এটি অফিসিয়ালি উন্মুক্ত করব। প্রযুক্তিতে কিছু সমস্যা আছে। শিক্ষার্থীরা যত ব্যবহার করছেন ততই আমরা সমস্যাগুলো পাচ্ছি, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করছি। পূর্ণাঙ্গভাবে উন্মুক্ত করার পর আরো উন্নতভাবে সমস্যাগুলো শনাক্ত করতে পারব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. হিমাদ্রি শেখর চৌধুরী জানান, অনলাইনে আবেদন করতে কত টাকা ফি দিতে হবে, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো কাগজপত্রগুলো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে বাকি সব ডকুমেন্টসও ধাপে ধাপে ডিজিটালাইজ করা হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের সময়, খরচ ও ভোগান্তি কমানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ঢাকা/সৌরভ/জান্নাত