বাংলাদেশে বিপ্লব সফল করতে না পারায় তরুণদের দায় রয়েছে বলে মনে করেন লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। ‘কৃষকের মুক্তি ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব: ভাসানীর সাধনা’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটে ডেইলি স্টার সেন্টারের এ এস মাহমুদ সেমিনার হলে ‘ইতিহাস আড্ডা’ সিরিজের এ আলোচনার আয়োজন করে ডেইলি স্টার।

গত বছরের ৮ আগস্ট বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ নেওয়ার বিষয়টিকে ইঙ্গিত করে লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার বলেছেন, ‘৮ আগস্টে একটা কী হয়েছে? একটা রেজিম চেঞ্জ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এবং এখন যা কিছু ঘটছে, সবই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ঘটছে।’ এ ঘটনাকে বাঘ তাড়াতে গিয়ে কুমির আনার মতো ঘটনা উল্লেখ করে উপমহাদেশের ভূরাজনৈতিক চরিত্র বদলের দিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

জুলাই সনদের প্রসঙ্গ তুলে ফরহাদ মজহার বলেন, ঐক্য ধ্বংস করার জন্য ঐকমত্য কমিশন হয়েছে। এ কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে প্রণীত জুলাই জাতীয় সনদের বাস্তবায়ন আদেশ রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে করার সমালোচনাও করেন তিনি। পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশনে জনগণের প্রতিনিধিত্ব না হয়ে লুটেরা, মাফিয়া শ্রেণিদের ঐক্য হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

জুলাই সনদের সমালোচনা করে ফরহাদ মজহার বলেন, ‘পুরোনো সংবিধান রয়ে গেছে, সেই সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট (রাষ্ট্রপতি), তিনি আপনাদের ঐকমত্য কমিশনের দাবি স্বাক্ষর করেছেন। অতএব শেখ হাসিনা স্বাক্ষর করেছে।’

জনগণ সব ক্ষমতার অধিকারী এবং জালিম সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা ন্যায়সংগত—এসব শিক্ষা মাওলানা ভাসানীর জীবন থেকে শিখতে হবে বলে পরামর্শ দেন এই ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, সরকার, করপোরেশন অন্যায় করলে তাদের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। পাশ্চাত্যকে গ্রহণ করতে গিয়ে নিজস্ব কৃষ্টি-সংস্কৃতি ফেলে না দেওয়ার দুর্দান্ত উদাহরণ মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। আগামী দিনেও তিনি প্রাসঙ্গিক থাকবেন।

ফরহাদ মজহার বলেন, মাওলানা ভাসানীকে ঘিরে দেশে দুই ধরনের ব্যাখ্যা প্রচলিত। একদল তাঁকে কেবল ‘লাল ভাসানী’ হিসেবে দেখেন, যিনি বাম ও সমাজতান্ত্রিক রাজনীতির পথিকৃৎ। আরেকদল তাঁকে ‘সবুজ ভাসানী’ একজন পীর ও ধর্মীয় নেতৃত্বের ধারক হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। তিনি আরও বলেন, ‘এই দ্বৈত বিভাজন আমাদের সমাজের বাইনারি রাজনীতিরই প্রতিফলন—ইসলাম বনাম ধর্মনিরপেক্ষতা।’

আলোচনায় কৃষিব্যবস্থা সংস্কারের পাশাপাশি ভূমি সংস্কারের ওপর জোর দেন লেখক ও চিন্তক ফিরোজ আহমেদ। তিনি বলেন, মাওলানা ভাসানী তাঁর রাজনীতির মধ্যে সব সময়ই ভূমিসংস্কারের প্রশ্নটা রেখেছিলেন। পাশাপাশি কৃষকের মুক্তি এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক বিষয়ে মাওলানা ভাসানীর একটি কঠোর রাজনৈতিক অবস্থান ছিল।

বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম, স্বাধীনতার পর ভূরাজনৈতিক নীতির সমকালীন তাৎপর্য, কৃষকের ওপর রাষ্ট্রের শোষণ নীতির বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর দর্শনগুলো তুলে ধরে বর্তমানে তাঁর প্রাসঙ্গিকতায় গুরুত্ব দেন ফিরোজ আহমেদ।

মাওলানা ভাসানীর জীবনীর ওপর আলোকপাত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক মোশাহিদা সুলতানা বলেন, মাওলানা ভাসানী অসাম্প্রদায়িক একটি সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং এ লক্ষ্যেই তিনি নিপীড়িত মানুষের পক্ষে, তাঁদের অধিকার রক্ষার জন্য সংগ্রাম করে গেছেন।

মোশাহিদা সুলতানা বলেন, ‘মাওলানা ভাসানী তাঁর জীবনকালে যতটুকু প্রাসঙ্গিক ছিলেন, তার থেকে এখন আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়েছেন। ১০০ বছর আগে মাওলানা ভাসানী যা বলেছেন, কৃষকের অবস্থা আসলে সেখান থেকে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি। আমাদের কৃষিব্যবস্থা বদলেছে, কিন্তু কৃষকের প্রতি যে দৃষ্টিভঙ্গি, তা বদলায়নি। জুলাই অভ্যুত্থানের পরও এ অবস্থার পরিবর্তন না হওয়া এবং কৃষি কমিশন গঠন না করারও সমালোচনা করেন তিনি।

অসাম্প্রদায়িক চিন্তা এবং তৎকালীন সরকারের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে মাওলানা ভাসানীর অবস্থান তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলেন, ‘তিনি (মাওলানা ভাসানী) কিন্তু ধর্মকে ব্যবহার করেননি কোনো এলিট গ্রুপের স্বার্থে। তিনি আসলে তাঁদের (কৃষক) মনের শক্তি জুগিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেন, মাওলানা ভাসানী নিজে ধার্মিক ছিলেন; কিন্তু আবার একই দিক থেকে তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। উদাহরণ হিসেবে আওয়ামী মুসলিম লীগের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দেওয়ার দিকটি তুলে ধরেন।

এ ছাড়া মাওলানা ভাসানীর জীবনকালের নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মানুষের ঐক্য বজায় রাখা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা এবং কৃষকের অধিকার রক্ষায় ভারত সরকারের আগ্রাসী নীতির দিকগুলোও উঠে আসে মোশাহিদা সুলতানার বক্তব্যে।
ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিক ইমরান মাহফুজের সঞ্চালনায় আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন ডেইলি স্টার–এর সাংবাদিক শামসুদ্দোজা সাজিন। এ ছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন কবি ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র র জন ত অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়

রাজনৈতিক দলগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থানের মধ্যেই অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা অনুমোদন করেছে। রাষ্ট্রপতির আদেশের মাধ্যমে তা ইতিমধ্যে আইনি ভিত্তি পেয়েছে। প্রধান দলগুলোর সবাই খুশি না হলেও দৃশ্যত তারা এটি মেনেই নিয়েছে। ফলে সংস্কার নিয়ে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তার আপাত সুরাহা হয়েছে বলা চলে। তবে ভবিষ্যৎ সংস্কার পুরোপুরি নির্ভর করছে গণভোটের ফলাফলের ওপর। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ এর পরিবর্তে ‘না’ জয়ী হলে কী হবে—সেই প্রশ্ন সামনে এসেছে। ঐকমত্য কমিশনের নয় মাসের আলোচনা, রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা এবং অন্তর্বর্তী সরকারের চেষ্টা ভেস্তে যাবে? আপাতত এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর কারও কাছেই নেই।

‘না’ ভোট জয়ী হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী দল জুলাই সনদ মেনে সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নে বাধ্য থাকবে না। পরবর্তী সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের ইচ্ছার ওপরই সংস্কার নির্ভর করবে। ২০২৩ সালের ১৩ জুলাই ‘সংবিধান ও রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার’ এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ‘রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা’ ঘোষণা করে বিএনপি। সেই আলোকেই দলটি ভবিষ্যৎ সংস্কার এগিয়ে নিতে পারে। তা আবার জামায়াতে ইসলামীসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর চাওয়ার সঙ্গে মেলে না। অবশ্য জামায়াত জুলাই সনদের প্রায় সবগুলো সংস্কার প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। গণভোটে ‘না’ জয়ী হলেও কি জুলাই সনদ মেনে সংস্কার করবে, নাকি নিজেদের মতো করে নতুন ফর্মুলা সামনে আনবে, তা সময়ই বলে দেবে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ আলোচনায় ৬টি সংস্কার কমিশনের ৮৪টি প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হয়েছে জুলাই জাতীয় সনদ। এর মধ্যে ৪৮টি প্রস্তাব সংবিধান-সংক্রান্ত। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রস্তাবে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের ভিন্নমত আছে। ভিন্নমত সত্ত্বেও বিএনপি, জামায়াতসহ অধিকাংশ দল গত ১৭ অক্টোবর সনদে সই করে।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় গণভোটের মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে ঐকমত্য হয়। কিন্তু সনদ ও গণভোটের আইনি ভিত্তি, সময় ও পথ-পদ্ধতি নিয়ে দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থেকে যায়। গত ২৮ অক্টোবর সনদ বাস্তবায়নে দুটি বিকল্প সুপারিশ সরকারকে দিয়েছিল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে গণভোটের সময় নিয়ে সিদ্ধান্তের ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়।

এরপর ১৩ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রকাশ করে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট হবে একই দিনে। চারটি বিষয়ের ওপর একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। চারটি বিষয় হলেও আসলে এর মধ্যে সংবিধান সম্পর্কিত ৪৮টি সংস্কার প্রস্তাবই আছে। গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়ী হলে আগামী সংসদ হবে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে (পিআর পদ্ধতি) ১০০ সদস্য নিয়ে উচ্চকক্ষ গঠিত হবে। অর্থাৎ এসব সংস্কার করতে হলে অবশ্যই ‘হ্যাঁ’ ভোট জয়ী হতে হবে।

জুলাই সনদ প্রণয়নে গঠিত ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রথম আলোকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি গণভোটে ‘হ্যাঁ’ জয়যুক্ত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদী মনোভাব দেখান, আবার প্রত্যাখ্যান হলে তা মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন।

আলী রীয়াজ বলেছিলেন, ১৭৯০ থেকে শুরু করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীতে ৮০০ শতাধিক গণভোট হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে গণভোট ‘ফেল’ করেছে। তিনি আরও বলেন, শঙ্কাটা অন্য জায়গায়। এত দিনের চেষ্টা, এত বিষয়ে ঐকমত্য হলো। তারপর জনগণের কাছ থেকে সেটা প্রত্যাখ্যান হয়ে গেল। সেটা মেনে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা দরকার।

আরও পড়ুনজাতীয় নির্বাচন ও গণভোট একই দিনে: প্রধান উপদেষ্টা১৩ নভেম্বর ২০২৫চার প্রশ্নের উত্তর একটি, ঝুঁকি

৪৮টি সংবিধান-সম্পর্কিত প্রস্তাব নিয়ে গণভোট হবে। প্রস্তাবগুলোকে চারটি বিষয়ে ভাগ করে একটি প্রশ্নে হবে গণভোট। গণভোটের প্রশ্নটি হবে এ রকম: ‘আপনি কি জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ এবং জুলাই জাতীয় সনদে লিপিবদ্ধ সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত নিম্নলিখিত প্রস্তাবগুলোর প্রতি আপনার সম্মতি জ্ঞাপন করছেন?’

ক. নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে।

খ. আগামী সংসদ হবে দুই কক্ষবিশিষ্ট। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে এবং সংবিধান সংশোধন করতে হলে উচ্চকক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের অনুমোদন দরকার হবে।

গ. সংসদে নারী প্রতিনিধি বৃদ্ধি, বিরোধী দল থেকে ডেপুটি স্পিকার ও সংসদীয় কমিটির সভাপতি নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ সীমিতকরণ, রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি, মৌলিক অধিকার সম্প্রসারণ, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন বিষয়ে যে ৩০টি প্রস্তাবে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে আগামী নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলো বাধ্য থাকবে।

ঘ. জুলাই সনদে বর্ণিত অন্যান্য সংস্কার রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিশ্রুতি অনুসারে বাস্তবায়ন করা হবে।

আরও পড়ুনযে চার বিষয়ে হবে গণভোট, একটি প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ দিয়ে মতামত১৩ নভেম্বর ২০২৫

‘গণভোটের দিন এই চারটি বিষয়ের ওপর একটিমাত্র প্রশ্নে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ ভোট দিয়ে মতামত জানাতে হবে। এখানেই মূল জটিলতাটা রয়ে গেছে। চারটি প্রশ্নের কোনো কোনোটিতে বিএনপি ও সমমনাদের আপত্তি আছে। জামায়াত ও সমমনাদের আপত্তি আছে অল্প কিছু বিষয়ে। ফলে রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝামাঝি অবস্থান নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হয় জুলাই সনদ অনুসারে সংস্কার এগিয়ে নেওয়ার স্বীকৃতি দিয়ে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিতে হবে। নতুবা ‘না’ ভোটের মাধ্যমে প্রত্যাখ্যান করতে হবে। এর ফলে ‘না’ ভোট জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেওয়া যাচ্ছে না।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারদের মত হচ্ছে—কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সফল হওয়ার সুযোগ দেবে বলে মনে হয় না। ফলে তাদের সমর্থক ও ভোটারেরা ‘না’ ভোটের দিকে ঝুঁকতে পারে।

অন্যদিকে সংস্কার প্রস্তাবগুলোর মধ্যে পিআর পদ্ধতিতে উচ্চকক্ষ গঠন, উচ্চকক্ষের ক্ষমতা, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও সাংবিধানিক পদে নিয়োগের বিষয়ে বিএনপির ভিন্নমত বেশি। ফলে দলটির সমর্থকদের অনেকে ‘না’ ভোট দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। এর মধ্যে গত শুক্রবার নোয়াখালীর নিজ নির্বাচনী এলাকায় এক কর্মসূচিতে গণভোটে ‘না’ ভোট দিতে আহ্বান জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক।

আরও পড়ুনজুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি করলেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন১৩ নভেম্বর ২০২৫সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের কী হবে

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী, গণভোটের প্রশ্নের প্রথম বিষয় হলো: ‘নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান জুলাই সনদে বর্ণিত প্রক্রিয়ার আলোকে গঠন করা হবে’।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ সব দলই একমত। তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের যে প্রক্রিয়া জুলাই সনদে রয়েছে, এর কয়েকটি ধাপ নিয়ে ভিন্নমত আছে বিএনপির।

এই পরিস্থিতিতে গণভোটে ‘না’ জয়ী হলে এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা গঠনের প্রক্রিয়া কীভাবে গ্রহণ করে, সেটা দেখার বিষয়। এ ছাড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে উচ্চ আদালতের রায় অপেক্ষমাণ আছে। রায়ের নির্দেশনা মানার একটা বাধ্যবাধকতা আছে। ফলে জুলাই সনদ জনগণের রায় না পেলেও উচ্চ আদালতের রায়ের বিষয়টি থাকবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে গত ১৭ অক্টোবর জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধিরা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সফল নির্বাচন হলে গণতান্ত্রিক উত্তরণের অর্ধেকপথ পার করা সম্ভব হবে: মান্না
  • কী হবে যদি গণভোটে ‘না’ জয়ী হয়