নানাবিধ প্রতিবন্ধকতা ও চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতিকে সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তিনি বলেন,  কমিশন ‘স্লো অ্যান্ড স্টেডি’ নীতি অনুসরণ করে এগিয়ে চলছে।

নির্বাচন কমিশন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ শুরু করেছে। আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তৃতীয় দিনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন বলেন, কমিশন প্রবাসী, সরকারি কর্মকর্তা ও কারাগারে থাকা ব্যক্তিদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসীদের ভোটের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে ‘হাইব্রিড মডেল’। যেখানে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন ও ডাকযোগে ভোট প্রদান হবে।

সিইসি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আচরণবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আচরণবিধির খসড়া নিয়ে জনগণের মতামত নেওয়া হয়েছে এবং প্রাসঙ্গিক বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ভোটারদের ওপর রাজনৈতিক দলের প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ, তাই দলগুলো নিজেদের প্রভাব ব্যবহার করে ভোটারদের সচেতন করতে সাহায্য করবে। এতে একটি নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত হবে।

সংলাপে জাকের পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার কমিশনের স্বাধীনতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, কালোটাকা ও পেশিশক্তির প্রভাব নির্মূল না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তরুণ ভোটারদের ভোট উৎসবমুখর এবং অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। ২৫ লাখ টাকার ব্যয়সীমা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ ও প্রয়োজনে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন জরুরি। আচরণবিধি মেনে চলার বিষয়ে জাকের পার্টি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির চেয়ারম্যান এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম নির্বাচনী আচরণবিধি, প্রচারণা ও ভোট প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, কমিশনকে বিলবোর্ড, ব্যানার, স্টিকার ও পোস্টারের ব্যবহার, প্রিসাইডিং ও পুলিং কর্মকর্তাদের নিরাপদ থাকার ব্যবস্থা, ভোটা গ্রহণ পর্যবেক্ষণ, অস্ত্র জমা ও প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রবাসী ও সরকারি কর্মকর্তাদের ভোটাধিকার এবং গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালট কার্যকর বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরেন।

বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুস সামাদ নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও দৃঢ়তা নিশ্চিত করার গুরুত্বের ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু করতে কমিশনকে স্বাধীনভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রার্থী ও দলের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে উচ্চকক্ষের ভোটে ছোট দলগুলোর প্রতীক বরাদ্দ রাখা জরুরি। তিনি আশা করেন, এই নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে উদাহরণ স্থাপন করবে।

খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মুহাম্মদ মুনতাছির আলী নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরাপদ ভোট প্রক্রিয়া ও প্রিসাইডিং-পুলিং কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি স্বচ্ছ নির্বাচন নিশ্চিত করতে তফসিল ঘোষণার দিন থেকেই যৌথ বাহিনী মাঠে থাকার প্রয়োজনীয়তা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, প্রবাসী ভোটারদের প্রভাবিতকরণ এবং গণভোট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যালটের সঠিক বাস্তবায়নের দাবি জানান।

জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সহসভাপতি ও দলীয় মুখপাত্র রাশেদ প্রধান বলেন, ‘বড় রাজনৈতিক দলের জন্য নির্বাচন করাটা সহজ। বিভিন্ন ছোট দল এবং যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান, তাঁদের জন্য সবকিছু কঠিন। আমরা যেটা জানতে পেরেছি, জামানতের জন্য ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গ্রাম অঞ্চলে অনেক মানুষ স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে চান। তাঁদের কথা বিবেচনা করে বিবেচনা করে জামানত আগের মতো ২০ হাজার টাকা করলে ভালো হয়। গণভোট প্রদান বাধ্যতামূলক করারও আহ্বান জানান রাশেদ প্রধান।

আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ নির্বাচনের বাস্তবসম্মত কাঠামো, ভোটার সচেতনতা ও প্রচারণার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কমিশনের বিধিমালা প্রার্থী ও দলকে লক্ষ্য করে হলেও ভোটারদের প্রতি যথেষ্ট নজর নেই। প্রচারণার জন্য নিরাপত্তা, অর্থের ব্যবহার, ভ্রাম্যমাণ প্রচারণা, সামাজিক ও অনলাইন মিডিয়ায় কার্যকর নিয়ন্ত্রণ প্রয়োজন। কমিশনকে বাস্তব পরিস্থিতি অনুযায়ী কাঠামো ঠিক করতে হবে, যাতে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব হয়।

সংলাপে অন্যদের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো.

সানাউল্লাহ, তাহমিদা আহমেদ, কমিশন জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ এবং রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন শ চ ত করত র জন ত ক দল র স ব ধ নত ন শ চ ত কর কর মকর ত আচরণব ধ র জন য প রব স র ওপর দলগ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রার্থীদের লাগবে ডোপ টেস্ট, অনলাইনে ব্যক্তি আক্রমণ ও গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (শাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী হতে ডোপ টেস্ট করাতে হবে। একই সঙ্গে ভোটার ও প্রার্থীদের নিয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণাত্মক ও গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশনের মনিটরিং সেল।

গতকাল রোববার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত শাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের আচরণবিধি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

আচরণবিধির ‘মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, দাখিল ও প্রত্যাহার’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রার্থী নিজ উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগে ডোপ টেস্টের স্যাম্পল দেওয়ার পর প্রাপ্ত রসিদটি মনোনয়নপত্রের সঙ্গে জমা দেবেন। নির্বাচন কমিশন কার্যালয় সব প্রার্থীর ডোপ টেস্টের প্রতিবেদন সংগ্রহ করবে। ডোপ টেস্টের ফলাফল ‘পজিটিভ’ হলে প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল বলে গণ্য হবে। প্রয়োজনে ডোপ টেস্ট রিপোর্ট সম্পর্কে নির্বাচন কমিশন গঠিত রিভিউ কমিটির চূড়ান্ত মতামত নেওয়া হবে।

অনলাইনে প্রচার-প্রচারণার নিয়ম ও তা লঙ্ঘনের বিষয়ে আচরণবিধির অনুচ্ছেদ-৫-এ বলা হয়েছে, অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার-প্রচারণা চালানো যাবে, তবে তা অবশ্যই আইনসিদ্ধ ইতিবাচক পদ্ধতিতে হতে হবে। দেশের প্রচলিত আইনে নিষিদ্ধ এমন কোনো কাজ অনলাইন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে করা যাবে না।

এতে আরও বলা হয়, নির্বাচনী প্রচারণা ও প্রচারপত্রে কিংবা প্রিন্ট মিডিয়া, ইলেকট্রনিক মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ, চরিত্র হনন, গুজব, মানহানিকর আচরণ, অশালীন উক্তি, উসকানিমূলক কোনো কথা কিংবা কারও বিরুদ্ধে কোনো অসত্য তথ্য ছড়ানো, কোনো ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক দল বা সংশ্লিষ্ট কারও অনুভূতিতে আঘাত হানে এমন কোনো কিছু করা যাবে না। নির্বাচন কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো প্রচারণা করা যাবে না।

এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, নির্বাচনের জন্য ক্ষতিকর যেকোনো অনলাইন সাইট বা গ্রুপ বন্ধ, কনটেন্ট ডিলিট এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কমিশনের মনিটরিং সেল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে। আচরণবিধিতে এমনটাই উল্লেখ করা আছে।

আচরণবিধি লঙ্ঘনে শাস্তি কী, সে বিষয়ে উল্লেখ আছে অনুচ্ছেদ-১৮ তে। এতে বলা হয়েছে, ‘কোনো প্রার্থী বা তাঁর পক্ষে কেউ বা কোনো ভোটার নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করলে ২০ হাজার টাকা জরিমানা, প্রার্থিতা বাতিল অথবা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা অথবা রাষ্ট্রীয়/বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী অন্য যেকোনো দণ্ডে দণ্ডিত হবে। নির্বাচনসংক্রান্ত যেকোনো বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রার্থীদের লাগবে ডোপ টেস্ট, অনলাইনে ব্যক্তি আক্রমণ ও গুজব ছড়ালে ব্যবস্থা
  • চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ন্ত্রণ কোনোভাবেই বিদেশি সংস্থার হাতে দেওয়া যাবে না
  • দলগুলোর সহযোগিতা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়: সংলাপে সিইসি
  • আমরা কারও পক্ষে কাজ করতে পারব না: সিইসি
  • ইসির সংলাপে ইসলামী ঐক্যজোটের দুপক্ষে তর্ক, একাংশকে বের হয়ে যেতে বলা হলো
  • সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব দলের সহযোগিতা চাইলেন সিইসি