Risingbd:
2025-05-01@05:00:25 GMT

গতি কমিয়ে সাফল্য চূড়ায় মিরাজ

Published: 21st, April 2025 GMT

গতি কমিয়ে সাফল্য চূড়ায় মিরাজ

সব মিলিয়ে ১২ ইনিংস। দেশের মাটিতে সংখ্যাটা আরো বেশি, ১৪ ইনিংস। লম্বা অপেক্ষার পর মেহেদী হাসান মিরাজ পেলেন ৫ উইকেট। এর মাঝে যে ভালো বোলিং করেননি বিষয়টি তেমন নয়। তবে মাইলফলক ছোঁয়া হয়নি তার। 

সোমবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৫ উইকেটে নিয়ে ক্যারিয়ারে ১১তম বারের মতো ফাইফারের স্বাদ পেলেন। তার এই বোলিং কীর্তিতে বাংলাদেশ দারুণভাবে ম্যাচে ফিরেছে। প্রথম দিন প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯১ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। আজ বোলারদের নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়েকে ২৭৩ রানে আটকে রাখে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দিন শেষ পর্যন্ত ২৫ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ।

দিনের সেরা তারকা দলের প্রতিনিধি হয়ে এসেছিলেন সংবাদ সম্মেলনে সেখানে নিজের বোলিং নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন মিরাজ। গতকাল প্রথম সেশনে ৩ ওভার হাত ঘুরিয়েছিলেন। সাফল্য মেলেনি। বরং বোলিং হয়েছিল আঁটসাঁট। আজ সকালের সেশনে ৪ ওভার হাত ঘুরিয়েও মেলেনি সাফল্য। দিয়েছিলেন ১৬ রান। হজম করেছেন ছক্কা। 

দ্বিতীয় সেশনে মিরাজ খুঁজে পান নিজেকে। আগের ৭ ওভারে জোরের ওপর বোলিং করেছিলেন। এবার মিরাজ বলের গতি কমিয়ে দেন। তাতেই মেলে সাফল্য।ড্রেসিংরুমে কোচদের থেকে পরামর্শ পেয়ে মিরাজ বোলিংয়ে পরিবর্তন আনেন। দ্বিতীয় সেশনে তার প্রথম শিকার শন উইলিয়ামস। তার হাওয়ায় ভাসানো বল এগিয়ে এসে উড়াতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন। এরপর মিরাজ শেষ সেশনে নেন লেজের ৪ উইকেট।

নিজের বোলিং নিয়ে মিরাজ বলেছেন, ‘‘আমরা খেলার ভেতরে থাকি… আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি যে আমাদের… এই উইকেটে কীভাবে বল করতে হয়। কোচদের একটা ম্যাসেজ ছিল যে এই উইকেটে পেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিভাবে… পেসটা কমিয়ে নিতে পারি। তারা আমাকে সেভাবেই গাইড করেছে। এখানে আমাদের ভিডিও ফুটেজ আছে… আমি প্রথম স্পেলে যখন বল করছিলাম আমার গতিটা বেশি ছিল। এই স্পিডে বল করলে তেমন কঠিন হবে না ব্যাটসম্যানের জন্য। আপনি আসলে গেলেই উইকেট পাবেন না। ব্যাটসম্যান যেন কষ্ট করে খেলে বা রান না বের করতে পারে তখনই একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়… আউট হবে। সো… ঐ কাজটা যেন করাতে পারি ঐ মানসিকতা ছিল, সেজন্য হয়তো উইকেটগুলো পেয়েছি।’’

নিজের ৫ উইকেট নিয়ে মিরাজের উচ্ছ্বাস ফুটে উঠল কথায়, ‘‘অবশ্যই উইকেট পেলে তো সবারই ভালো লাগে। চেষ্টা ছিল ঠিক জায়গা বল করা। দলকে ভালো সাপোর্ট করা। আর… ৫ উইকেট পেতে হলে তো অবশ্যই ভালো জায়গায় বল করতে হবে। একই সঙ্গে ভাগ্যও থাকতে হয়।’’

টেস্ট ক্রিকেটে মিরাজ সবশেষ ৫ উইকেট পেয়েছিলেন পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে। বিদেশের মাটিতে নিজের নাম অনার্স বোর্ডে তুলেছিলেন। দেশে তেমন কিছু নেই। অনার্স বোর্ড বরাবরই ক্রিকেটারদের সাফল্য মনে করিয়ে দেয়। দেশে অনার্স বোর্ড থাকলে ভালো অনুভূতির সৃষ্টি হবে বলে মনে করছেন মিরাজ, ‘‘প্রত্যেকটা মানুষের অর্জন একটা কিন্তু ভালো লাগার বিষয়। অর্জন কিন্তু…একদিনে আসে না। কষ্ট করতে হয়, তারপর অর্জনটা আসে। রাওয়ালপিন্ডিতে ওখানে… ৫ উইকেট পেয়েছিলাম। নাম দেখেছি, ভালো লেগেছে, যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফি খেলতে গেছি। বাংলাদেশে… আমার কাছে যেটা মনে হয় যে এই সংস্কৃতিটা চালু করা উচিৎ। আর যারা এখন বর্তমানে আছেন, আশা করি তারা এটা নিয়ে চিন্তা করবে।’’

২০১৬ সালে টেস্ট অঙ্গনে পা রাখা মিরাজ ৫২ টেস্টে ৯০ ইনিংসে ১৯৫ উইকেট পেয়েছেন। দুইশ উইকেট থেকে ৫ উইকেট থেকে দূরে। সাকিব ও তাইজুলের পর বাংলাদেশের তৃতীয় বোলার হিসেবে এই কীর্তি ছোঁয়ার হাতছানি তার। 

সিলেট/ইয়াসিন

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৫ উইক ট প ই উইক ট স ফল য প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীর কৃষকেরা কেন হাইব্রিড ধানবীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন

দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন, যা বাজারে থাকা যেকোনো হাইব্রিড ধানের চেয়ে বেশি।

নিজের খেতে চোখজুড়ানো সোনালি ধান দেখে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত কৃষক মোস্তফা। কারণ, বাজার থেকে কেনা হাইব্রিড ধান থেকে বীজ করা যায় না। কিন্তু ব্রি উদ্ভাবিত এই ধান থেকে অনায়াসে বীজ তৈরি করতে পারবেন তিনি। এতে থাকবে না বীজ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সেই সঙ্গে ধানগুলো জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের জিংকের ঘাটতিও দূর হবে। মোস্তফা বলেন, আগামী দিনে তিনি আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই ধান চাষ করবেন।

মোস্তফার মতো একই এলাকার আরেক কৃষক ওমর ফারুকও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ব্রি-৯২ চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। বীজ ও সারসহ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। খেতের ধান এরই মধ্যে পাকা শুরু করেছে। ফলনের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে, একরে ফলন হবে কমপক্ষে ১৭০ মণ। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি।

ওমর ফারুকের খেতে ব্রির এই উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ দেখে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক যোগাযোগ করেছেন বীজ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাঁরা হাইব্রিড চাষ করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না। নিজের বীজে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন হতে চান। তাই ওমর ফারুক ঠিক করেছেন, উৎপাদিত ধান থেকে ২৫ মণ রেখে দেবেন বীজের জন্য। এই বীজ বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাঁর।

শুধু কৃষক হাজি মোস্তফা কিংবা ওমর ফারুকই নন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। পাচ্ছেন হাইব্রিড ধানের চেয়েও বেশি ফলন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মাহফুজা বেগম ও আশরাফ হোসেন দম্পতির খেতে চাষ করা ডায়াবেটিক রোগীদের সহনীয় ব্রি-১০৫ জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ২ টন, যা বাজারের হাইব্রিড বীজের সমান। এই ধানেরও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা।

চলতি বোরো মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে নতুন জাতের ব্রি ধানের ৪৯০টি প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীতে ব্রি উদ্ভাবিত ৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধানগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।

কৃষকেরা জানান, এত দিন তাঁরা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড ও দেশীয় উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানের বীজ কিনে আবাদ করে আসছেন। এবার এসবের বাইরে ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ ধান আবাদ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে হাইব্রিড বীজের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ব্রির উফশী ধানের বীজ ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি একর জমিতে চাষ করতে হাইব্রিড ধানের বীজ লাগে ৬ কেজি এবং উফশী জাতের বীজ লাগে ১০ কেজি। এসব বীজের মধ্যে হাইব্রিড প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৯০ মণ, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ উৎপাদন হয় ৭০-৭৫ মণ।

পিকেএসএফের কৃষি ইউনিট পরিচালিত সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ কৃষক বোরো মৌসুমে মূলত বাজারের হাইব্রিড ধানের ওপর নির্ভর থাকেন। আর দেশীয় উদ্ভাবিত ব্রি ধান জাত আবাদ করেন মাত্র ৫ শতাংশ কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, হাইব্রিড ধান রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-ধানগুলোর ফলন হাইব্রিডের মতো ফলন দেয় এবং কিন্তু রোগবালাই নেই বললেই চলে। এতে কৃষকের খরচ কমে। লাভ হয়, আর বীজও থাকে নিজের হাতে।

ব্রির উচ্চফলনশীল জাতের নতুন জাতের ধান চাষের কথা বলতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ধানগুলো চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে তাঁরা ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো, এসব ধান চাষ করলে একদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকেরা নিজেরা নিজেদের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তা ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত এসব ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হাইব্রিডের তুলনায় কম এবং ফলন হাইব্রিডের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড থেকেও বেশি।

এ বিষয়ে ব্রির ফেনীর সোনাগাজীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রি এ পর্যন্ত ১১৫টি জাত আবিষ্কার করেছে। আগে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যের অভাব দূর করা, ফলন বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা। খাবার যাতে পুষ্টিমানসম্পন্ন হয়। অধিকাংশই আমিষ ও ভিটামিনের উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল। কিন্তু এসব সবাই কিনে খেতে পারেন না। যেহেতু ভাত প্রধান খাদ্য, এখন আমাদের যে জাতগুলো, এগুলো উদ্ভাবনে পুষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ নতুন জাতগুলো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই সঙ্গে হাইব্রিডের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ