রাজধানীর হাতিরপুলের একটি বাসা থেকে পিনাক রঞ্জন সরকার (২৪) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রেমে ব্যর্থতার কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করছে পুলিশ।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকালে ময়নাতদন্তের জন্য পিনাক রঞ্জন সরকারের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া জানিয়েছেন, খবর পেয়ে সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে হাতিরপুল ফ্রি স্কুল স্ট্রিটের ৩৮৭/৫ নম্বর বাড়ির ৯ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে পিনাক রঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরো জানান, দুই রুমের ফ্ল্যাটে পিনাক এবং তার সহপাঠী জাহিদ হাসান থাকতেন। সন্ধ্যায় রুমমেট ফ্ল্যাটে ঢুকে পিনাক রঞ্জনের কক্ষটি ভিতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাসায় গিয়ে দরজা ভেঙে কক্ষের ভিতর ঢুকে দেখতে পায়, ফ্যানের হুকের সঙ্গে গামছা পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে আছেন তিনি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তার মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এক সহপাঠীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল পিনাক রঞ্জন সরকারের। এক মাস আগে তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটে। সে কারণে তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার রুম থেকে একটি ডায়েরিতে ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়’ লেখা নোট পাওয়া গেছে। ফেসবুকেও একই কথা লিখেছিলেন পিনাক রঞ্জন সরকার।
পিনাক রঞ্জন সরকার সোমবার সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিট থেকে ৭টা ২০ মিনিটের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে পিনাকের সহপাঠী ও রুমমেট জাহিদ হাসান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গতকাল সন্ধ্যায় তিনি অফিস থেকে বাসায় ফিরে পিনাকের কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ দেখতে পান। তিনি অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করেন। কোনো সাড়া-শব্দ না পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সহপাঠীদের ও প্রক্টরিয়াল টিমকে বিষয়টি জানান এবং জাতীয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে থানায় খবর দেন।
জাহিদ আরো জানান, তাদেরই এক সহপাঠীর সঙ্গে পিনাকের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মাসখানেক আগে তাদের মধ্যে বিচ্ছেদ হয়। কয়েকদিন তার মন খারাপ থাকলেও পরে তাকে দেখে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল।
পিনাক রঞ্জন সরকারের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলায়। ঢাবির চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রায়ন বিভাগে পড়ার পাশাপাশি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন শেখাতেন তিনি। প্রতি সপ্তাহে শুক্র ও শনিবার সেখানে শিশু ছাড়াও বিভিন্ন বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্লাস করাতেন পিনাক রঞ্জন সরকার।
ঢাকা/সৌরভ/বুলবুল/রফিক
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র মরদ হ সহপ ঠ
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?