কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর বাগমারা বিল থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করায় চারজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদণ্ড দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাহমুদুল হাসান। এতে তাঁর ওপর ক্ষেপে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়েছেন নাগেশ্বরী পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম ওরফে ইসরায়েল।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কারাদণ্ড পাওয়া বালু ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য এসি ল্যান্ডের কাছে তদবির করেন কাউন্সিলর আশরাফুল। এতে সাড়া না দিয়ে দণ্ড দেওয়ায় তিনি ক্ষেপে যান। পরে নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘সাত কর্মদিবসের মধ্যে ফ্যাসিবাদের দোসর দুর্নীতিগ্রস্ত বদমেজাজি নাগেশ্বরী উপজেলার এসি ল্যান্ডকে প্রত্যাহার ও বিচারের আওতায় আনতে হবে।’

এদিকে ওই পোস্টের স্ক্রিনশট ব্যবহার করে এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান তাঁর ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘অবৈধ বালু তোলা ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা যদি অপরাধ হয়, তবে আমাকে কালই প্রত্যাহার করুন। গরিবের জমি রক্ষায় পাশে দাঁড়ানো যদি দোষ হয়, আমাকেও দোষী মানুন। সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কথা বললে যদি আমি বদমেজাজি হই, তবে বিচার করুন।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দুটি অনেকের নজরে এসেছে। নাগেশ্বরীর একাধিক ব্যক্তি লিখেছেন, একজন দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে সাবেক এই কাউন্সিলর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন পোস্ট দিয়েছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নাগেশ্বরী পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাগমারা বিলে দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে একটি চক্র। অভিযোগ পেয়ে ২০ এপ্রিল বেলা তিনটার দিকে অভিযান পরিচালনা করেন এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বালু ব্যবসায়ী আশরাফুল আলম (৩৪), আলমগীর হোসেনকে (৩৭) ৩ দিন এবং আবদুল লতিফ (৩৮) ও মনিরুজ্জামানকে (৪০) বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইনের ধারা লঙ্ঘন অপরাধে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এ সময় বালু তোলার পাইপ ভেঙে দেওয়া হয়।

সাবেক কাউন্সিলর আশরাফুল ইসলাম ফেসবুকে পোস্ট করার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণ আদালত চলাকালে আমি ঘটনাস্থলে গেলে এসি ল্যান্ড আমাকে লাঞ্ছিত করেন। বিষয়টি ডিসি, ইউএনওকে মৌখিকভাবে অভিযোগ করি। ইউএনও মহোদয় বিষয়টি জানার পর আমার কাছে দুঃখপ্রকাশ করেন।’

এসি ল্যান্ড মাহমুদুল হাসান বলেন, সাবেক কাউন্সিলরকে লাঞ্ছিত করার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তিনি লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে যে অভিযোগটি করেছেন, তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় ওই সাবেক কাউন্সিলর বিলের ওপার থেকে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের ছেড়ে দিতে বলেন। সেই সঙ্গে তিনি ড্রেজার না ভাঙার জন্য অনুরোধ করে বলেন, ‘আটক ব্যক্তিদের ছেড়ে দিন। ড্রেজার কিছুক্ষণ পর সরিয়ে নেওয়া হবে। সেগুলোর ক্ষতি করিয়েন না।’ কিন্তু উপস্থিত বিক্ষুব্ধ জনগণ ড্রেজার ও পাইপ ভেঙে ফেলেন। এতেই তিনি ক্ষুব্ধ হন। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা চলে আসেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন গ শ বর আশর ফ ল ফ সব ক ব যবস উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ