রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়ি সুন্দর মহলকে ‘দালাল মহল’ ঘোষণার দাবি
Published: 23rd, April 2025 GMT
ময়মনসিংহে জাতীয় পার্টির কার্যালয় হিসেবে পরিচিত ভবনের নাম সুন্দর মহল। সম্প্রতি রাজনৈতিক কার্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করে রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টের কাছে। আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ভবনটির সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার ব্যানারে মানববন্ধন করে সুন্দর মহলকে দালাল মহল ঘোষণার দাবি জানানো হয়েছে।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী ফ্যাসিস্টদের সহচর রওশন এরশাদের সুন্দর মহলকে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না। তারা ভবনটিকে রেস্টুরেন্টের কাছে ভাড়া দিয়েছে। জাতীয় পার্টির নেতারা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ সরকারকে গণহত্যায় পুরোপুরি সমর্থন দিয়েছে। এখন তারা গা বাঁচাতে সুশীলদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সুশীলতার আড়ালে তারা আওয়ামী লীগকেই পুনর্বাসন করতে চায়।
ময়মনসিংহে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম নেতা আবদুল্লাহ আল নাকিব জানান, অভ্যুত্থানে ময়মনসিংহে যাদের অবদান ছিল, তাদের একটি অংশ আজকে (বুধবার) দালাল মহলের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। বিগত সরকারের আমলে যতগুলো বিনা ভোটে নির্বাচন হয়েছে, সবক’টিতেই রওশন এরশাদ সমর্থন জানিয়েছেন শেখ হাসিনাকে। গণতন্ত্র হত্যাকারীদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদ ওলি বলেন, ছাত্র-জনতার পর আপনাদের নির্দেশে গুলি চলেছে। এখন আপনারা গর্তে লুকিয়েছেন। গর্ত থেকে আপনারা ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন। তাদের প্রতিহত করার জন্য ছাত্র-জনতা সবসময় প্রস্তুত রয়েছে। এই দেশকে আপনারা চাইলেও আর পেছনে নিয়ে যেতে পারবেন না। ছাত্র-জনতাকে আর কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না।
সুন্দর মহলের ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক কার্যালয় ও ভেতরে অবস্থিত কেয়ারটেকার থাকার বাসাটি ভাঙা। সামনে দ্বিতীয় তলার বারান্দায় টানানো হয়েছে কুটুমবাড়ি রেস্টুরেন্টের সাইনবোর্ড। দেয়াল ভাঙার ইটগুলোর পলেস্তারা খুলে পরিষ্কার করা হয়েছে। সুন্দর মহল লেখাটি এখনও জ্বলজ্বলে থাকলেও সঙ্গে ভবনের বিভিন্ন অংশে ‘দালাল মহল’ লিখে রেখেছে ছাত্র-জনতা। সরকার পতনের দিন ভবনটি ভাঙচুরও করা হয়েছে।
মহানগর জাতীয় পার্টির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক আবদুল আউয়াল সেলিম জানান, সুন্দর মহলের সীমানাপ্রাচীরের ভেতরে রওশন এরশাদের মায়ের স্মৃতিবিজড়িত কবর রয়েছে। অনেকে এখন কারণে-অকারণে বাড়িটি ক্ষতিগ্রস্ত করতে চায়। দলের অবস্থা এখন ভালো না। রওশন এরশাদের নির্দেশে বাড়িতে অবস্থিত দলীয় কার্যালয়টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরিবারের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি রেস্টুরেন্টের কাছে মাসিক চুক্তিতে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ১২ বছরের জন্য তারা এখানে থাকতে পারবেন। মাসিক ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ টাকা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ রওশন এরশ দ ছ ত র জনত দ ল ল মহল
এছাড়াও পড়ুন:
এই অদম্য মেয়েদের আমরা হারিয়ে যেতে দিতে পারি না
অবহেলিত মেয়েরা কঠিন একটি কাজ সম্পন্ন করেছেন। অনেকের কাছে এখনো অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। অসাধ্য এক অর্জনকে বাস্তবের জমিনে নামিয়ে এনেছেন আমাদের বাঘিনীরা। সাফ পর্যায় জয় করে নারীদের ফুটবলকে এশীয় পর্যায়ে নিয়ে গেলেন। বিশ্বকাপও খেলে ফিরতে পারেন এই অদম্য বাঘিনীরা।
এখন বলাই যায়, নারী ফুটবলের বিশ্ব পর্যায়ে কড়া নাড়ছেন আমাদের মেয়েরা। ফুটবলকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাঁরা। শুধু ফুটবলই নয়, আমাদের নারী জাগরণের নতুন দিশা হতে পারে মেয়েদের এই সাফল্য। এই মেয়েরা সারা দেশের মেয়েদের জন্য উদাহরণ। নারী অধিকার, নারী ক্ষমতায়নের নতুন দিনের আলোকবর্তিকা আমাদের নারী ফুটবল দল।
ফুটবলে মেয়েদের এই সাফল্যের পেছনে আছে দীর্ঘদিনের লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাস। সফলতা খুব সহজে আসেনি। নানা প্রতিবন্ধকতা পার করে কঠিন এক সংগ্রামের ফসল মেয়েদের আজকের এই অর্জন। ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্যন্ত পল্লি থেকে কোহাটি কিষ্ক, কলসিন্দুরের মারিয়া মান্দা, শামসুন্নাহার, তহুরা খাতুন, সানজিদা আক্তার বা রাঙামাটির দুর্গম গ্রাম মগছড়ি থেকে ঋতুপর্ণা চাকমাদের আজকের এই পর্যায়ে আসার ইতিহাসটা আমরা কমবেশি সবাই জানি।
এই পথচলায় সামাজিক বিধিনিষেধ ছিল। ছিল আর্থিক টানাপোড়েন, অনিশ্চয়তা। জীবনের এমন কোনো সংকট নেই, যা তাঁদের সামনে আসেনি। কিন্তু হিমালয়সম সেই বাধাকে সাহসিকতার সঙ্গে পেছনে ঠেলে আজকে তাঁরা এশীয় পর্যায়ে নিজেদের উন্নীত করেছেন।
তাঁদের অর্জনের তুলনায় রাষ্ট্র দিতে পেরেছে খুবই কম। বলতে গেলে, তাঁরা পেটেভাতে দেশের জন্য খেলে দিচ্ছেন। যেন খেলার বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি চলছে কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচির আদলে। যৎসামান্য যে বেতন দেওয়া হয়, সেটাও অনিয়মিত। যেকোনো সাফল্যের পর যখন মেয়েদের কাছে শুনতে চাওয়া হয়, ‘আপনারা কী চান?’ উত্তরে মেয়েরা জানান, ‘নিয়মিত বেতনটা চাই। আর বেতনটা বাড়ালে আরও ভালো হয়।’ ২০২৫ সালে এসে এটা মেনে নেওয়া কঠিন।
দেশে মেয়েদের নিয়মিত লিগ হয় না। অন্য কোনো টুর্নামেন্টও হয় না নিয়মিত। নিয়মিত খেলার জন্য আমাদের মেয়েদের ভুটান লিগে খেলতে যেতে হয়। কেবল আবাসিক ক্যাম্পের প্রশিক্ষণ ও কিছু প্রস্তুতিমূলক ম্যাচ খেলেই মেয়েদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রতিযোগিতামূলক খেলায় নামতে হয়। সেই সব খেলায় তাঁরা নিয়মিত লিগ খেলা দলগুলোকে বলে-কয়ে হারাচ্ছে।
আমাদের খেলাধুলাকে রাজধানীকেন্দ্রিক না রেখে প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। শুধু নারী ফুটবল নয়, সব ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করতে হবে তৃণমূল থেকে। তবেই নতুন নতুন প্রতিভাবান খেলোয়াড় বেরিয়ে আসবে। ঢাকাকেন্দ্রিক খেলার কুফল কী হতে পারে, তার বড় উদাহরণ আমাদের ছেলেদের ফুটবল। সারা দেশে নিয়মিত প্রতিযোগিতামূলক লিগ না হওয়ার কারণে নতুন নতুন ফুটবলার বেরিয়ে আসছেন না।কী পরিমাণ প্রতিভার অধিকারী হলে ন্যূনতম সুবিধা না পেয়েও এ পর্যায়ে সাফল্য অর্জন করা যায়, তা এককথায় অবিশ্বাস্য। ভারত ও নেপালে নিয়মিত মেয়েদের খেলা হয়, লিগ হয়। আর আমরা তাদের এখন নিয়মিতই হারাই। এখন সাফের বাইরের দলগুলোকেও আমরা হারাতে শুরু করেছি।
এই মেয়েদের প্রচেষ্টা ও সাহস নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রচণ্ড রকম ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে তাঁরা খেলতে নামেন। ভয়হীন ফুটবল খেলেন। সব থেকে বড় কথা, খেলার যেকোনো ধরনের ট্যাকটিকসের সঙ্গেই তাঁরা দ্রুত মানিয়ে নিতে পারেন। আগে আমাদের মেয়েরা কিছুটা রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলতেন। রক্ষণ সামলে প্রতি-আক্রমণে যেতেন। এবার এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে মেয়েরা পুরো খেলার ধরন বদলে ফেলেছেন।
আমাদের মেয়েরা এবার হাই প্রেসিং ফুটবল খেলেছেন। এই দল আগের থেকে দ্রুতগতিসম্পন্ন ফুটবল খেলে। বল পায়ে রাখতে পারে। তাদের বল ডিস্ট্রিবিউশন আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। পাসিংও ভালো। পজিশন সেন্স চমৎকার। বিশেষ করে বল হারালে দ্রুত নিজেরা অবস্থান নিতে পারে।
এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে পুরো টুর্নামেন্টজুড়ে হাই লাইন ডিফেন্স করে গেছে দুর্দান্তভাবে। আর বাহরাইনের সঙ্গে শামসুন্নাহার জুনিয়র যেভাবে গতি সঞ্চার করে ডিফেন্স থেকে বেরিয়ে ওয়ান টু ওয়ানে গোলরক্ষককে পরাজিত করলেন ঠান্ডা মাথায়, তা আমাদের পুরুষ দলের স্ট্রাইকার বা উইঙ্গাররাও করতে পারেন না। নিয়মিত খেলার মধ্যে না থাকা একটি দলের কাছে এর বেশি আশা করা উচিত নয়। কিন্তু তাঁরা আমাদের সেই আশাকে ছাড়িয়ে গেছেন। তাঁরা পরিস্থিতি বুঝে মাঠে খেলাটা তৈরি করতে পারেন।
মেয়েদের এই লড়াইকে ধরে রাখতে হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সিরাত জাহান স্বপ্না বা আঁখি খাতুনের মতো খেলোয়াড়দের আর্থিক অনিশ্চয়তার কারণে ফুটবল থেকে হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না। মেয়েদের প্রতিযোগিতামূলক লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে হবে। এর পাশাপাশি জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে লিগের আয়োজন করতে হবে।
‘সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা গেলে এই মেয়েরা আমাদের ফুটবল নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন।’