সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির পাশাপাশি রাসায়নিক দূষণের কারণে প্রবালপ্রাচীর ব্লিচিং বা রংহীন হয়ে যায়। ইন্টারন্যাশনাল কোরাল রিফ ইনিশিয়েটিভ (আইসিআরআই) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে তীব্র ব্লিচিং বা রং হারানোর কবলে পড়েছে প্রবালপ্রাচীর। বিশ্বের বিভিন্ন মহাসাগরে থাকা প্রায় ৮৪ শতাংশ প্রবালপ্রাচীর এই ব্লিচিংয়ের শিকার হয়েছে।

আইসিআরআই সংস্থাটি প্রবাল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। ১০০টির বেশি দেশের সরকার, বেসরকারি সংস্থা ও বিজ্ঞানীদের জোট এটি। সংস্থাটি জানিয়েছে, ১৯৯৮ সালের পর থেকে সাম্প্রতিক সময়ে চতুর্থবারের মতো বিশ্বব্যাপী ব্লিচিংয়ের মতো মারাত্মক ঘটনা দেখা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি ২০১৪-১৭ সালের ব্লিচিংকের ঘটনাকেও ছাড়িয়ে গেছে। তখন প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রবালপ্রাচীর ঝুঁকির মধ্যে পড়েছিল। সাম্প্রতিক ব্লিচিংয়ের ঘটনা ২০২৩ সালে শুরু হয়েছে। কখন শেষ হবে তা এখনো স্পষ্ট নয়।

ইন্টারন্যাশনাল কোরাল রিফ সোসাইটির সচিব মার্ক ইকিন বলেন, ‘ব্লিচিংয়ের এমন ঘটনা বিশ্বব্যাপী ঘটেছে। এমন তাপমাত্রার ঘটনা এর আগে দেখা যায়নি। আমরা এমন কিছু দেখছি, যা আমাদের গ্রহের চেহারা ও মহাসাগরের জীবন–জীবিকা টিকিয়ে রাখার ক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে দিচ্ছে।’

২০২৪ সাল ছিল পৃথিবীর উষ্ণতম বছরের একটি। উষ্ণতার কারণে বেশির ভাগ তাপ সমুদ্রে প্রবেশ করেছে। মেরু অঞ্চল থেকে দূরে সমুদ্রের গড় বার্ষিক পৃষ্ঠের তাপমাত্রা ছিল রেকর্ড ২০.

৮৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রা প্রবালের জন্য মারাত্মক। এতে সামুদ্রিক খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা ও উপকূলরেখার ক্ষয় বাড়বে। প্রবালপ্রাচীরকে সমুদ্রের বনভূমি বলা হয়। এসব বনভূমিতে নানা ধরনের জীববৈচিত্র্য দেখা যায়। প্রায় ২৫ ভাগ সামুদ্রিক প্রজাতি প্রবালপ্রাচীর এলাকায় বসবাস করে। তাপমাত্রা বাড়ার কারণে এসব এলাকার ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্রবাল উজ্জ্বল রং ধারণ করে ভেতরে বসবাসকারী রঙিন শৈবালের কারণে। দীর্ঘস্থায়ী উষ্ণতা শৈবালকে বিষাক্ত যৌগ নিঃসরণ করতে বাধ্য করে। এতে ফ্যাকাশে সাদা কঙ্কালের মতো হয়ে যায় প্রবালপ্রাচীর।

সূত্র: এপি

আরও পড়ুনপ্রবালপ্রাচীর রক্ষায় অভিনব উদ্যোগ  ২১ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রব ল

এছাড়াও পড়ুন:

১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা

ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে এই মামলা করেছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট।

আরো পড়ুন:

নাফিসা কামালসহ ৮ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অর্থপাচারের মামলা

সাজিদ হত্যার তদন্তে সিআইডিকে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমোদন 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণ পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তিনি অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে মর্মে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

জসীম উদ্দিন খান জানান, ২০১০ সালে জাহাঙ্গীর ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। কিন্তু এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি ও ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন জানান, জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন করতেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে তাদের বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের কোনো সরকারি অনুমোদন না পাওয়া গেলেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ মেলে।

অনুসন্ধানে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপরাপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ঢাকা/মাকসুদ/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১০০ কোটি টাকার পাচারের অভিযোগ, জাহাঙ্গীরের নামে মামলা