কলকারখানার দূষিত পানিতে ফসল নষ্টের শঙ্কা
Published: 25th, April 2025 GMT
গাজীপুরের কালীগঞ্জে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে এই ফলনে স্থানীয় কৃষকের মুখে চওড়া হাসি থাকার কথা থাকলেও কপালে পড়ছে চিন্তার ভাঁজ। বেলাই পাড়ের জেলার টঙ্গী, সদর ও শ্রীপুর এলাকার বিভিন্ন শিল্প কলকারখানার নির্গত দূষিত পানি সরাসরি গিয়ে পড়ছে বিলে। ফলে বিলের পানি হয়ে পড়েছে চরমভাবে দূষিত ও কৃষিকাজের জন্য অনুপযোগী।
ধান কাটার মৌসুমে এসে এই দূষণের ফলে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ শ্রমিক সংকট। আর শ্রমিক সংকটের কারণে উৎপাদিত বোরো ধান নষ্টের আশঙ্কা দিন কাটছে কৃষকের।
এই মৌসুমে এমনিতেই কৃষি কাজের শ্রমিকের সংকট থাকে। কিন্তু ফলন ভাল হওয়ায় কৃষক অতিরিক্ত মজুরীতে শ্রমিক রাখলেও তারা ১/২ দিন কাজ করে চলে যাচ্ছে। বিলের পানিতে নেমে ধান কাটতে গিয়ে শ্রমিকদের হাতে, পায়ে ও শরীরে দূষিত পানির কারণে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর কালীগঞ্জ উপজেলায় মোট ৯৮১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান ২৮৭৫ হেক্টর ও উফশী জাতের ধান ৬৯৩৫ হেক্টর। নমুনা শষ্য কর্তনের হিসাব অনুযায়ী গড়ে উফশী জাতের ধান বিঘা প্রতি ২১ মণ ও হাইব্রিড বিঘা প্রতি ২৬ মণ উৎপাদন হয়েছে
তবে ব্রিধান-২৮ জাতের তুলনায় স্বল্প মেয়াদী ব্রিধান-৮৮, ব্রিধান-৯৬, ব্রিধান-১০০ ও অন্যান্য জাতের মত স্বল্প জীবনকাল এবং বেশি ফলনশীল ও কম ঝুঁকিপূর্ণ জাতের দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এছাড়া এ উপজেলায় ব্রিধান-১০২, ব্রিধান-১০৪, ব্রিধান-১০৫, ব্রিধান-১০৮ নতুন জাতের চাষ হচ্ছে।
কৃষকরা জানান, এবার বাম্পার ফলন হলেও ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিলেও যারা আসছেন, তারা এক-দুদিন কাজ করার পরই চলে যাচ্ছেন। কারণ, পানিতে নামার পর তাদের হাতে-পায়ে চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও চর্মরোগ দেখা দিচ্ছে।
উপজেলার বক্তাপুর ইউনিয়নের উত্তর খৈকড়া গ্রামের হাশেম খন্দকার নামের সত্তোর্ধ একজন স্থানীয় কৃষক বলেন, “আমার তিন বিঘা জমির ধান পাকছে। দুজন শ্রমিক পেয়ে কাজ শুরু করেছিলাম কিন্তু তারা একদিন পরই জানায় পানিতে নামা যায় না, গা জ্বালা করে, ফুসকুড়ি উঠে যায়।”
কথা হয় একই গ্রামের সত্তোর্ধ শুক্কুর আলী, ষাটোর্ধ মিলন মিয়া ও গিয়াসউদ্দিন বাগমার ও চল্লিশোর্ধ আসাদ খন্দকারের সাথে।
তারা বলেন, “বিলে কলকারখানার দূষিত পানি পড়া বন্ধ না হলে ধান কাটা তো দূরের কথা, ভবিষ্যতে এখানে চাষাবাদই করা যাবে না। তাই তারা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ কর্মীদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
শ্রমিকদের অভিযোগ, দূষিত পানিতে কাজ করতে গেলে হাতে-পায়ে পানি কামড় দেয়, পরে ফোসকা পড়ে এবং চুলকানি সহ্য করা যায় না। তাই তারা বাধ্য হয়ে কাজ ছেড়ে দিচ্ছেন।
জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ থেকে আসা চল্লিশোর্ধ শ্রমিক মনজু মিয়া বলেন, “কয়েকদিন হয় এখানে এসেছি, কাজ করছি। হাতে-পায়ে ঘা ধরছে, তাই কাজ করতে পারছি না। বিলের পানি ভাল না। পানি খুব কালো, নষ্ট হয়ে গেছে।”
বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রহমান আরমান বলেন, “এই পরিস্থিতি শুধু কৃষি নয়, জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি। অবিলম্বে শিল্পবর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি এবং আইন প্রয়োগ না করলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।”
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, “বেলাই বিলে বড় একটি সমস্যা হচ্ছে আশপাশের এলাকা বিশেষ করে টঙ্গী, গাজীপুর সদর ও শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন শিল্প-কারখানার অপরিশোধিত বর্জ্য সরাসরি বিলে ফেলা হয়। এতে করে ধান কাটার সময় দেখা যায় ধান অনেক সময় পানিতে তলিয়ে যায়। আবার অনেক সময় দূষিত পানির কারণে শ্রমিকরা মাঠে নামতেই চায় না। তারা বলে শরীরে চুলকানি ও চর্মরোগ হয়।”
তিনি আরও জানান, এই অবস্থায় শ্রমিকরা অতিরিক্ত মজুরী দাবি করে। অনেক সময় উচ্চ মজুরিতেও কাজ করতে আগ্রহ দেখায় না, দু-একদিন পরই কাজ ছেড়ে চলে যায়। ফলে কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
কৃষিবিদ ফারজানা বলেন, “এই সমস্যা নিয়ে আমি জেলা অফিসের মিটিং, সার্বিক মনিটরিং কমিটি এবং উপজেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বারবার বিষয়টি তুলে ধরেছি। কিন্তু এখনো স্থায়ী সমাধানের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।”
পরিবেশ অধিদপ্তর গাজীপুরের উপ-পরিচালক মো.
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “বেলাই বিলের সাথে গাজীপুর সদর, টঙ্গী, শ্রীপুরের কিছু অংশ রয়েছে। ওই সকল এলাকার জেলার বেশির ভাগ শিল্প কারখানা গড়ে উঠেছে। সেই সব শিল্প কারখানা দূষিত পানিগুলো বিভিন্ন খালের মাধ্যমে কালীগঞ্জে বেলাই বিলের কৃষি জমিগুলোতে এসে পড়ছে। আমি ইতিমধ্যে গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরকে বিষয়টি জানিয়েছি। তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে কোন কোন শিল্প কারখানা দূষিত পানি বেলাই বিলের পানি দূষিত করছে, সেটার তালিকা তৈরির কাজ তারা শুরু করেছেন। তো সেই তালিকা হাতে পেলেই জেলা পরিবেশ অধিদফরের মাধ্যমে তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।”
ঢাকা/রফিক/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক জ কর চ লক ন উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের
বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।
আরো পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প
জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।
উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।
ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।
রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে।
বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।
উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।
ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।
ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।
এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।
ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।
যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।
বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।
যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে।
ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ঢাকা/ফিরোজ