ই-কমার্সের বিস্ময়কর উত্থান বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। তবে এই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে প্রয়োজন সুসংগঠিত নেতৃত্ব, সময়োপযোগী নীতিমালা ও কার্যকর প্ল্যাটফর্ম। বিশ্বজুড়ে ই-কমার্স খাত আজ নীতিনির্ধারক সংগঠনের সুশাসন ও নেতৃত্বের ওপর নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব)–এর সামনে এখন এই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ দুটিই সমানভাবে উপস্থিত।

বর্তমান বাস্তবতা: কোথায় দাঁড়িয়ে আছে ই-ক্যাব

২০১৫ সালে যাত্রা শুরু করা ই-ক্যাব আজ প্রায় দুই হাজারের বেশি সদস্যের সংগঠন। সরকারের নীতিমালা প্রণয়নে পরামর্শ, উদ্যোক্তাদের সেবা, সচেতনতা তৈরি—এসব ক্ষেত্রেই ই-ক্যাব একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে; কিন্তু অনেক সদস্যের অভিযোগ রয়েছে—

* সদস্য সেবার ঘাটতি।

* অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা।

* সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বচ্ছতার অভাব।

* এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ পরিকল্পনার অভাব।

নতুন নেতৃত্বের প্রয়োজনীয়তা

একটি সফল সংগঠনের প্রাণ হচ্ছে নেতৃত্ব। নতুন নেতৃত্বের কাছে সদস্যদের প্রত্যাশা হলো—

* সদস্যদের সমস্যার দ্রুত সমাধান।

* নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে শক্তিশালী ভূমিকা।

* উদ্যোক্তা উন্নয়নমূলক প্রকল্প

* বৈশ্বিক গ্লোবাল কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি

প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সংগঠনের কার্যক্রমকে স্মার্ট করা

আরও পড়ুনক্রস বর্ডার ই-কমার্স ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা২৫ এপ্রিল ২০২৫নীতির নতুন দিগন্ত

* ডিজিটাল ভোক্তা অধিকার আইন বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা।

* ই-কমার্স ব্যবসার জন্য এক্সপ্রেস লাইসেন্সিং সিস্টেম চালু করার দাবি।

* অনলাইন লেনদেনে প্রতারণা প্রতিরোধে আইন প্রণয়নে সহায়তা।

* ক্রস বর্ডার ই-কমার্স উন্নয়নে বিশেষ নীতিমালা প্রণয়ন।

উন্নত প্ল্যাটফর্মের রূপরেখা

* ই-ক্যাব মেম্বারস পোর্টাল চালু করা যেখানে সদস্যরা নিবন্ধন, নবায়ন, অভিযোগ দাখিল, প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

* ভেরিফায়েড সেলার সার্টিফিকেশন সিস্টেম চালু।

* ডিজিটাল সদস্য পরিচয়পত্র চালু।

* জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে আঞ্চলিক হাব চালু করে দেশব্যাপী উপস্থিতি নিশ্চিত করা।

আরও পড়ুনফিনটেক ও ই-কমার্স ইকোসিস্টেম: বাংলাদেশের নতুন বাণিজ্যবিপ্লব২৪ এপ্রিল ২০২৫আন্তর্জাতিক যোগাযোগ

* বিশ্ব ই-কমার্স সংগঠনের সদস্যপদ অর্জন।

* বাংলাদেশি ই-কমার্স ব্র্যান্ডের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী আয়োজন।

* উন্নত দেশের ই-কমার্স চেম্বারের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষর।

আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতা

চীন: চায়না ই–কমার্স অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে নীতি ও সদস্যসেবা সমন্বয়।

ভারত: কনফেডারেশন অব অল ইন্ডিয়া ট্রেডার্সের (সিএআইটি) উদাহরণ যেখানে এমএমই ই-কমার্সে শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে।

ভবিষ্যতের লক্ষ্য ২০২৫-৩০

* পাঁচ হাজারের বেশি নতুন ই-কমার্স উদ্যোক্তার সদস্যপদ লাভ।

* বাংলাদেশের ই-কমার্সের রপ্তানি আয় ২০০ কোটি ডলার ছোঁয়া।

* গ্রাম-শহর সমন্বিত ই-কমার্স নেটওয়ার্ক গঠন।

* ই-ক্যাবকে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা ই-কমার্স সংগঠনে পরিণত করা।

(শেষ)

ড.

মোহাম্মদ নূরুজ্জামান: ড্যাফোডিল ফ্যামিলির গ্রুপ সিইও ও গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশের কোষাধ্যক্ষ

আরও পড়ুনই-কমার্সে ডিজিটাল নিরাপত্তা ও গ্রাহক আস্থা২৩ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুনবাংলাদেশের ই-কমার্স: কোথায় আছি, কোথায় যেতে চাই২২ এপ্রিল ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ই কম র স স গঠন র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব হিসেবে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা পদায়নের দাবি

উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশের চূড়ান্ত খসড়ার কিছু অংশে আপত্তি জানিয়ে মতামত দিয়েছে ঢাকার বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন। প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে লোকবল নিয়োগের শর্ত নিয়ে তাদের এই আপত্তি। গতকাল রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তারা এই আপত্তি জানিয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনটি সাতটি বিষয়ে নিজেদের মতামত প্রকাশ করেছে। উল্লেখ্য, ১৭ এপ্রিল উপদেষ্টা পরিষদের সভায় রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদিত হয়।

গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন অধ্যাদেশের যেসব বিষয়ে নিজেদের মতামত দিয়েছে, সেগুলো হলো—এক, বিসিএস (কর) অ্যাসোসিয়েশন ও বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিষয়ে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মরত কর্মকর্তাদের মধ্য হতে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব নিয়োগের মতামত প্রদান করেছিল। কিন্তু খসড়ার অনুচ্ছেদে (৪২৩) ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে’ রাজস্ব নীতি বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব নিযুক্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এতে রাজস্ব নীতি প্রণয়নে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যক্ষভাবে কাজ করার অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়নি মর্মে প্রতীয়মান। রাজস্ব নীতি প্রণয়নে কর রাজস্ব আহরণের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে রাজস্ব নীতি বিভাগের শীর্ষ পদে পদায়ন করা হলে রাজস্ব বিভাগকে পৃথক করার মূল উদ্দেশ্য অর্জনে সহায়ক হবে।

দুই, রাজস্ব নীতি বিভাগের মৌলিক পদগুলো বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ও বিসিএস (কর) ক্যাডার থেকে পূরণের প্রস্তাব করা হলেও খসড়ায় আয়কর, কাস্টমস, ভ্যাট, অর্থনীতি, ব্যবসায় প্রশাসন, গবেষণা পরিসংখ্যান, প্রশাসন, নিরীক্ষা, আইনসংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তা থেকে পূরণের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। রাজস্ব আহরণ, ব্যবস্থাপনা ও নীতি প্রণয়নে বাস্তব অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের রাজস্ব নীতি বিভাগে সুনির্দিষ্টভাবে পদায়নের সুযোগ রাখা হয়নি।

তিন, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৯-এ রাজস্ব নীতি বিভাগে জনবল পদায়নের সুপারিশের লক্ষ্যে একটি কমিটির কথা উল্লেখ থাকলেও ধারা ৪(৪)–এ এমন কোনো কমিটির উল্লেখ নেই। উক্ত কমিটির গঠন উল্লেখ করা প্রয়োজন।

চার, খসড়ায় রাজস্ব নীতি বিভাগের কার্যপরিধিতে কর আইন প্রয়োগ ও কর আহরণ পরিস্থিতি পরিবীক্ষণ যুক্ত করা হয়েছে। এ বিধান রাখায় নীতি বিভাগকে ব্যবস্থাপনা বিভাগের কার্যক্রম তদারকির সুযোগ থেকে যায়। এক বিভাগের কার্যক্রম সমমর্যাদাসম্পন্ন অপর বিভাগ কর্তৃক পরিবীক্ষণের বিধান রাখা হলে তা আইনের দৃষ্টিতেও সাংঘর্ষিক বিবেচিত হয়।

পাঁচ, খসড়ার অনুচ্ছেদ ৭(৩)–এ বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারের কর্মকর্তাদের থেকে রাজস্ব আহরণে ন্যূনতম ২০ বছরের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মকর্তাকে পালাক্রমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সিনিয়র সচিব বা সচিব হিসেবে নিয়োগ প্রদান—এই ধারা পরিবর্তনে রাজস্ব আহরণে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোনো সরকারি কর্মকর্তাকে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব বা সিনিয়র সচিব হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার প্রদানের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এতে কর-রাজস্ব আহরণে দীর্ঘদিনের অর্জিত বিশেষায়িত জ্ঞান ও দক্ষতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ সীমিত করবে।

ছয়, খসড়ায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রশাসনিক পদে প্রশাসন ক্যাডার থেকে পদায়ন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে বিসিএস (কর) ও বিসিএস (কাস্টমস ও এক্সাইজ) ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তারা পদস্থ রয়েছেন, যা তাঁদের নির্ধারিত পদ।

সাত, সরকার গঠিত রাজস্ব সংস্কারবিষয়ক পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন অন্য সংস্কার কমিশনের মতো জনসমক্ষে প্রকাশ করা সমীচীন বলে বিসিএস (কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট) অ্যাসোসিয়েশন মনে করে।

এর আগে ২৬ এপ্রিল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) মাল্টিপারপাস হলে বিসিএস কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অ্যাসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভা (ইজিএম) অনুষ্ঠিত হয়। অ্যাসোসিয়েশনের আমন্ত্রণে সভায় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ও রাজস্ব কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ কাস্টমস অ্যান্ড ভ্যাট অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাকাএভ) নির্বাহী কমিটির একটি প্রতিনিধিদল উপস্থিত ছিল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হারিয়ে যাওয়া ভাষা সংরক্ষণের তাগিদ পার্বত্য উপদেষ্টার
  • কর অব্যাহতির রাস্তা সামনে কঠিন হবে
  • দেশের সব পলিটেকনিকে ইনস্টিটিউটে শাটডাউন কর্মসূচি
  • নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করল কারিগরি শিক্ষার্থীরা
  • চট্টগ্রামে হকারদের পুনর্বাসন ও ট্রেড লাইসেন্সের দাবি
  • ‘সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন ছাড়া সড়ক সংস্কার সম্ভব নয়’
  • প্রস্তাবিত রাজস্ব নীতি বিভাগে সচিব হিসেবে শুল্ক ও কর কর্মকর্তা পদায়নের দাবি