বৈদ্যুতিক গোলযোগে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ
Published: 26th, April 2025 GMT
বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সূত্র বলছে, বিজয় সরণি এলাকায় মেট্রোরেল বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।
ঢাকার মেট্রোরেল পরিচালনায় নিয়োজিত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা চলছে। দ্রুতই ট্রেন চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, বিজয় সরণি সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শাহবাগ থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল চলাচলের সুযোগ নেই। ফলে পুরো পথেই মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।
মেট্রোরেলে দুভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ডিএমটিসিএল সূত্র আরও জানায়, স্টেশনের বাতি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কাজ চালানো হয় অক্সিলারি বা সহযোগী বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। আর বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে মেট্রো ট্রেন চালানোর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিজয় সরণিতে মূল লাইনেই সমস্যা হয়েছে, যা দিয়ে ট্রেন চালানো হয়।
মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো একটি সাবস্টেশন থেকে সাধারণ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে অন্য সাবস্টেশন থেকে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরবরাহ করা হয়। এতে মেট্রোরেলের চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটে না। কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক কারণে, অর্থাৎ কারিগরি ত্রুটি কিংবা সার্কিট পুড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে অন্য সাবস্টেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। কারণ, এতে বড় দুর্ঘটনা বা অন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য অস্বাভাবিক কোনো কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তা স্বচক্ষে দেখে পুনরায় চালু করা হয়।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, বিজয় সরণি সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন বন্ধ হয়ে গেছে তা দেখতে কর্মকর্তারা সেখানে গেছেন। স্বচক্ষে দেখার জন্য কর্মকর্তাদের সড়ক পথে উত্তরা ডিপো থেকে আসতে হয়। এ জন্যই কিছুটা সময় লাগে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। রাজধানীর শাহবাগসহ কয়েকটি স্টেশনে টিকিট ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। কিছু স্টেশনের মূল ফটকও বন্ধ রাখা হয়েছে।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মিরপুর যাওয়ার জন্য কারওয়ান বাজার স্টেশনে ছিলেন কামরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কখন ট্রেন চালু হতে পারে, সেই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না স্টেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র সরবর হ ক
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার বসার দাবি উচ্ছেদ হওয়া হকারদের
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকা থেকে সম্প্রতি উচ্ছেদের শিকার হকাররা আবারও আগের জায়গায় বসার দাবি জানিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে শাহবাগে বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশন ভবনের ২ নম্বর কক্ষে জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ ও ভুক্তভোগী হকারদের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন মাশরুমচাষি ও ক্যাম্পাসে হকারদের কাছে মাশরুম সরবরাহকারী রুবি আক্তার। সঞ্চালনা করেন জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ঢাকা জেলার আহ্বায়ক শবনম হাফিজ। এতে বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ, ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, ঢাকা জেলা কমিটির সদস্য ইকবাল কবির ও আঁখি মনি এবং ভাসমান উদ্যোক্তা নুরুজ্জামান কমলসহ উচ্ছেদের শিকার কয়েকজন হকার।
মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শবনম হাফিজ। তিনি বলেন, টিএসসি, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও আশপাশের এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক হকার কাজ করতেন। গত অক্টোবরে মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগ এনে ডাকসুর সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহায়তায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। এতে অসংখ্য হকার বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন।
শবনম হাফিজ আরও বলেন, এই মানুষগুলোকে উচ্ছেদের নামে হয়রানি করা হলো, জিনিসপত্র নষ্ট করা হলো। এই ক্ষতির জবাবদিহি চাই, ক্ষতিপূরণ চাই এবং তাঁদের যেন সসম্মানে কাজের সুযোগ দেওয়া হয়, সেটি চাই। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষ যেন তাঁদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্থা করে দেয়।
আয়োজকেরা বলেন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন ও ভুক্তভোগী হকাররা উচ্ছেদের পর নিজেদের কার কী পরিস্থিতি ও কীভাবে তাঁদের বর্তমান জীবন চলছে, তা জানতে একটি জরিপ পরিচালনা করছেন। এর আওতায় এ পর্যন্ত তাঁরা ৫০ জনের বিস্তারিত সাক্ষাৎকার নিতে পেরেছেন। এর মধ্য দিয়ে যে চিত্র বেরিয়ে এসেছে, তা তুলে ধরার লক্ষ্যেই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে রুবি আক্তার নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, করোনাভাইরাসের মহামারির সময় স্বামীর গাড়ি ভাড়ার ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে তাঁরা মাশরুম চাষ শুরু করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় চাহিদার ওপরই নির্ভর ছিল তাঁদের সংসার। হকার উচ্ছেদের পর সেই বাজার প্রায় হারিয়ে গেছে।
রুবি আক্তার বলেন, ‘একজন হকারের সঙ্গে আরও অনেকের আয় জড়িয়ে থাকে—সরবরাহকারী, পানিওয়ালা ও সবজিওয়ালা। একজনের আয় বন্ধ হলে বহু পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই, হকারদের কাজের জায়গা আবারও ফিরিয়ে দেওয়া হোক, বসতে দেওয়া হোক আগের জায়গায়। তাতে আরও অনেক পরিবার বেঁচে যাবে।’
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, হকার উচ্ছেদ ডাকসুর দায়িত্ব নয়। এটি মানবিক বা ন্যায়সংগত কোনো পদক্ষেপ নয়। হকারদের সম্মানজনক ব্যবসার ব্যবস্থা করা সরকারের দায়িত্ব। এ বিষয়ে যথাযথ পরিকল্পনা করা সম্ভব।
ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম বলেন, জনগণের মৌলিক অধিকার ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা অন্যায় ও অমানবিক বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও কয়েকজন হকার নিজেদের বর্তমান সংকটের কথা জানান।
চার দফা সুপারিশঅনুষ্ঠানে আয়োজকেরা চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন। এগুলো হলো উচ্ছেদ করা হকারদের আগের কাজের জায়গায় ফেরার সুযোগ দেওয়া; কিছুদিন পরপর উচ্ছেদের নামে হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করা এবং যাঁরা এই নির্যাতন করেছেন, তাঁদের বিচার করা; প্রয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা সিটি করপোরেশন বা নিজেদের সমবায় বা ট্রেড ইউনিয়নের পরিচয়পত্র ব্যবহার করার ব্যবস্থা করা এবং কয়েক দফায় ভাসমান উদ্যোক্তাদের হাঁড়িপাতিল ও অন্যান্য যে মালামাল প্রক্টরিয়াল টিম নিয়ে গেছে, তা দ্রুত ফেরত দিতে হবে।