বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের সূত্র বলছে, বিজয় সরণি এলাকায় মেট্রোরেল বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন থেকে বিকেল সোয়া পাঁচটার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ট্রেন চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়।

ঢাকার মেট্রোরেল পরিচালনায় নিয়োজিত ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) জনসংযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ত্রুটি মেরামতের চেষ্টা চলছে। দ্রুতই ট্রেন চালুর আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

ডিএমটিসিএল সূত্র বলছে, বিজয় সরণি সাবস্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে শাহবাগ থেকে শেওড়াপাড়া পর্যন্ত অংশে মেট্রোরেল চলাচলের সুযোগ নেই। ফলে পুরো পথেই মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে আছে।

মেট্রোরেলে দুভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়। ডিএমটিসিএল সূত্র আরও জানায়, স্টেশনের বাতি, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য কাজ চালানো হয় অক্সিলারি বা সহযোগী বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার মাধ্যমে। আর বিশেষ ব্যবস্থার মাধ্যমে মেট্রো ট্রেন চালানোর বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। বিজয় সরণিতে মূল লাইনেই সমস্যা হয়েছে, যা দিয়ে ট্রেন চালানো হয়।

মেট্রোরেল পরিচালনায় যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো একটি সাবস্টেশন থেকে সাধারণ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে অন্য সাবস্টেশন থেকে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সরবরাহ করা হয়। এতে মেট্রোরেলের চলাচলে কোনো বিঘ্ন ঘটে না। কিন্তু কোনো অস্বাভাবিক কারণে, অর্থাৎ কারিগরি ত্রুটি কিংবা সার্কিট পুড়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলে অন্য সাবস্টেশন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যায় না। কারণ, এতে বড় দুর্ঘটনা বা অন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। এ জন্য অস্বাভাবিক কোনো কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে তা স্বচক্ষে দেখে পুনরায় চালু করা হয়।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ডিএমটিসিএল কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে বলেছেন, বিজয় সরণি সাবস্টেশনে বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন বন্ধ হয়ে গেছে তা দেখতে কর্মকর্তারা সেখানে গেছেন। স্বচক্ষে দেখার জন্য কর্মকর্তাদের সড়ক পথে উত্তরা ডিপো থেকে আসতে হয়। এ জন্যই কিছুটা সময় লাগে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

এদিকে মেট্রোরেলের চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। রাজধানীর শাহবাগসহ কয়েকটি স্টেশনে টিকিট ফেরত নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, টিকিট বিক্রি বন্ধ রয়েছে। কিছু স্টেশনের মূল ফটকও বন্ধ রাখা হয়েছে।

সন্ধ্যা ছয়টার দিকে মিরপুর যাওয়ার জন্য কারওয়ান বাজার স্টেশনে ছিলেন কামরুল হাসান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, কখন ট্রেন চালু হতে পারে, সেই বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না স্টেশনের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত র সরবর হ ক

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়