দুই স্তরে দাম কমছে ইন্টারনেটের, কতটা সাশ্রয় হবে গ্রাহকের
Published: 27th, April 2025 GMT
সরবরাহব্যবস্থার দুটি স্তরে ইন্টারনেটের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। দাম কমানোর হার ১০ থেকে ২০ শতাংশ। প্রশ্ন উঠেছে, গ্রাহক এর কী সুফল পাবেন, কতটা পাবেন।
অপারেটররা বলছে, ইন্টারনেটের দাম কমানো নির্ভর করে একাধিক বিষয়ের ওপর। শুধু দুই স্তরে ব্যান্ডউইথের মূল্য কিছুটা কমলেই ইন্টারনেটের দাম কমবে, এমন আশা করা যায় না।
ব্যান্ডউইথের দাম কমানোর প্রথম ঘোষণা আসে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল পিএলসি (বিএসসিপিএলসি) কাছ থেকে। তারা গত ২২ মার্চ ঘোষণা দেয়, তাদের সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ দাম কমবে। দেশের প্রায় অর্ধেক ব্যান্ডউডইথ আসে এই কোম্পানির মাধ্যমে।
অবশ্য তখন গ্রাহক পর্যায়ে সেবাদানকারীরা তখন বলেছিলেন, বিএসসিপিএলসি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের (আইটিসি) চেয়ে বেশি দাম রাখে। ফলে তারা দর কিছুটা কমালেও খুব একটা সুফল পাওয়া যাবে না।
সাবমেরিন কেবল কোম্পানির পর ইন্টারনেট সেবাদাতা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ফাইবার অ্যাট হোমও দাম কমানোর কথা জানায়। তারা ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিয়াল কেবল (আইটিসি) পর্যায়ে ১০ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) পর্যায়ে ১০ শতাংশ ও নেশনওয়াইড টেলিকমিউনিকেশন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এনটিটিএন) পর্যায়ে ১৫ শতাংশ দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সর্বশেষ ২২ এপ্রিল ইন্টারনেট সেবাদাতা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সামিট কমিউনিকেশনসও নিজেদের সেবার দাম কমানোর কথা এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে। তারা বলেছে, সরকারি উদ্যোগকে সমর্থন করতে এবং ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে (আইএসপি) সাশ্রয়ী দামে উন্নত মানের ইন্টারনেট দিতে ইন্টারনেটের দামে ১০ শতাংশ আর এনটিটিএনের দামে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ ছাড় দেওয়া হবে।
দাম কমানোর এসব ঘোষণার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব ২১ এপ্রিল নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে বলেন, ইন্টারনেট-সেবায় লাইসেন্সের ধাপে ধাপে মোট তিন থেকে চারটি স্তরে দাম কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি মোবাইল অপারেটরদের দেওয়া একাধিক সুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, বেসরকারি মোবাইল কোম্পানিগুলোর ইন্টারনেটের দাম না কমানোর কোনো ধরনের যৌক্তিক কারণ কিংবা অজুহাত অবশিষ্ট থাকে না। সরকার তাদের নীতিগত সহায়তা দিয়েছে।
ইন্টারনেট-সেবার ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে ব্যান্ডউইডথ আসে সাবমেরিন কেব্ল ও আইটিসির (ইন্টারন্যাশনাল টেরেস্ট্রিরিয়াল কেবল) মাধ্যমে। সেখান থেকে আইআইজির মাধ্যমে মোবাইল অপারেটর ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদাতারা ব্যান্ডউইডথ নেয়। ব্যান্ডউইডথ সঞ্চালনের তার বা অপটিক্যাল ফাইবার কেব্ল স্থাপন করে এনটিটিএন অপারেটররা। এসব স্তরেই দাম কমানোর ঘোষণা এসেছে।
যা বলছে আইএসপিএবিদেশে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক বেশি। তারপর রয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্রুয়ারি শেষে মোবাইল ইন্টারনেটের গ্রাহক দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৬০ লাখ। আর ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারদের (আইএসপি) ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গ্রাহক ১ কোটি ৪০ লাখ।
আইএসপিদের সংগঠন আইএসপিএবি ১৯ এপ্রিল জানায়, তারা ৫০০ টাকায় ১০ এমবিপিএস (মেগাবিট পার সেকেন্ড) গতির ইন্টারনেট দেবে, যা আগে ছিল ৫ এমবিপিএস। অবশ্য গতির অন্যান্য স্তরে তারা দাম কমানো বা গতি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়নি।
আইএসপিএবির সভাপতি মো.
এনটিটিএন পর্যায়েও বাজারমূল্যের চেয়ে বেশি দাম ধরে বিটিআরসি রাজস্বের ভাগ নেয় দাবি করে ইমদাদুল হক বলেন, দাম কোন পর্যায়ে কমছে এবং গ্রাহক স্বার্থ রক্ষিত হচ্ছে কি না, তা পরবর্তী মাসের ইনভয়েস (পণ্য বা সেবার মূল্য পরিশোধের নথি) পেলে বোঝা যাবে।
আরও পড়ুনইন্টারনেটের দাম ৩ স্তরে কমছে: ফয়েজ আহমদ২১ এপ্রিল ২০২৫‘শুধু একটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়’বিএসসিপিএলসি ২২ মার্চ ব্যান্ডউইডথের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়ার পর সরকারি মোবাইল অপারেটর টেলিটক পবিত্র ঈদুল ফিতর থেকে ১০ শতাংশ মূল্যছাড়ের দিয়েছিল।
টেলিটকের গ্রাহক কম, মাত্র ৬৫ লাখ ৫০ হাজার (মুঠোফোন গ্রাহক)। গ্রাহক বেশি গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা ও বাংলালিংকের।
জানতে চাইলে গ্রামীণফোনের হেড অব কমিউনিকেশনস শারফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ইন্টারনেটের দাম শুধু একটি বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়। এখানে তরঙ্গ, টাওয়ার, ফাইবার, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন বিষয় যুক্ত। এগুলোর সম্মিলিত খরচের ভিত্তিতে চূড়ান্ত দাম নির্ধারিত হয়। তবে গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে গ্রামীণফোন বিষয়টি সামগ্রিকভাবে মূল্যায়ন করছে।
আরও পড়ুনকথা বলা ও ইন্টারনেট সেবায় মধ্যস্বত্বভোগী কমবে, গ্রাহকের লাভ কী২৩ এপ্রিল ২০২৫ইন্টারনেটের দাম বেশি হওয়ার সঙ্গে উচ্চ হারে করের প্রসঙ্গ টেনে গ্রামীণফোনের এই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাত দীর্ঘদিন ধরে অযৌক্তিকভাবে উচ্চ হারে করের আওতাভুক্ত। এটি গ্রাহক কর ও করপোরেট কর—দুয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ইন্টারনেটের দাম কমিয়ে আনতে সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে রবি আজিয়াটার চিফ করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অফিসার সাহেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন স্তরে খরচ কমানোর প্রতিফলন মোবাইল ইন্টারনেটের মূল্যে দেখা যাবে এবং তার সুফল গ্রাহকেরাও পাবেন। তিনি বলেন, দাম কমানোর প্রকৃত সুফল পেতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খরচ কমে এলে ইন্টারনেটের দাম অবশ্যই কমে আসবে।
সাহেদ আলম বলেন, ঘোষণা দিয়ে দাম কমানোর চেয়ে কার্যকর মূল্যহ্রাসের ওপর বেশি জোর দেওয়া উচিত।
আরও পড়ুনকর না কমালে সুলভ মূল্যে ইন্টারনেট দেওয়া সম্ভব নয়১৬ জানুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র দ ম কম ন র ব ট আরস ব সরক র স ফল প পর য য় প এলস প রথম র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষ, নিহত ৭১
পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চলমান উত্তেজনার মাঝেই পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছেন সন্ত্রাসীরা।
রোববার গভীর রাতে ওই সীমান্তে পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ১৭ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন। এক দিন আগেই একই সীমান্তে কমপক্ষে ৫৪ সন্ত্রাসীকে হত্যার দাবি করে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
সোমবার পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানিয়েছে। সূত্র: জিও নিউজ।
এতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী গত ২৫ ও ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত নর্থ ওয়াজিরিস্তান জেলার হাসান খেলের পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক সফল অভিযান পরিচালনা করেছে। এই সীমান্তে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী অনুপ্রবেশের চেষ্টাকারী কমপক্ষে ৭১ সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে।
পাকিস্তানের খাইবারপাখতুনখাওয়া প্রদেশের নর্থ ওয়াজিরিস্তান জেলার হাসান খেল সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের সময় দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে ওই সন্ত্রাসীরা নিহত হয়েছেন।
দেশটির সামরিক বাহিনীর জনসংযোগ পরিদপ্তর বলেছে, আগের অভিযানের ধারাবাহিকতায় রোববার রাতেও নর্থ ওয়াজিরিস্তান জেলার হাসান খেলের আশপাশের এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। এর আগের দুদিনের অভিযানে ৫৪ জন নিহত হয়েছেন। এরপর রোববার ও সোমবারের অভিযানে নতুন করে আরও ১৭ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তানের আইএসপিআর বলেছে, গত দুই রাতের অভিযান পরিচালনার সময় আরও ১৭ সন্ত্রাসী নিহত হয়েছেন; যারা ‘‘তাদের ভারতীয় প্রভুদের নির্দেশে কাজ করছিলেন।’’
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিহত সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। গত তিন দিনে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত সন্ত্রাসীদের সংখ্যা বেড়ে ৭১ জনে দাঁড়িয়েছে।
এর আগে, রোববার পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, সন্ত্রাসীদের অনুপ্রবেশের এই চেষ্টা এমন এক সময়ে ঘটেছে, যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে ভারত। এতে পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, সন্ত্রাসীরা কাদের নির্দেশ পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের করছে। এই ধরনের পদক্ষেপ রাষ্ট্র ও এর নাগরিকদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ এবং বিশ্বাসঘাতকতার শামিল।
আফগানিস্তানের সঙ্গে পাকিস্তানের প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। প্রতিবেশী দুই দেশের এই সীমান্তের বিশাল অংশ উন্মুক্ত এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। দুই দেশের সীমান্ত এলাকায় প্রায় অনুপ্রবেশের চেষ্টার সময় সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তের উত্তর ওয়াজিরিস্তান জেলার সীমান্তে দিয়ে পাকিস্তানে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে একদল সন্ত্রাসী। এ সময় পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৮ সন্ত্রাসী নিহত হন।