স্যার ফজলে হাসান আবেদের ৮৯তম জন্মদিন আজ
Published: 27th, April 2025 GMT
বিশ্বের শীর্ষ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের ৮৯তম জন্মদিন আজ রোববার (২৭ এপ্রিল)। স্যার ফজলে হাসান আবেদ ১৯৩৬ সালের এই দিনে হবিগঞ্জের বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে।
ব্র্যাকের জনসংযোগ বিভাগের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৯৬২ সালে ফজলে হাসান আবেদ লন্ডনে অ্যাকাউন্ট্যান্সি বিষয়ে পড়াশোনা করেন এবং কস্ট ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট হন। পাকিস্তানে একটি বিলাতি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থাকাকালে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ নাটকীয়ভাবে তাঁর জীবনের দিক পরিবর্তন করে দেয়। যুদ্ধ শুরুর পর তিনি চাকরি ছেড়ে লন্ডনে চলে যান। সেখানে মুক্তিযুদ্ধে সহায়তার জন্য ‘অ্যাকশন বাংলাদেশ’ ও ‘হেলপ বাংলাদেশ’ নামে দুটি সংগঠন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে সুনামগঞ্জের দুর্গম এলাকা শাল্লায় ফিরে আসা শরণার্থীদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জন্য ৩৬ বছর বয়সে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন স্যার ফজলে হাসান আবেদ। তখন দেশের অর্থনীতি সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত। ভারত থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীর জন্য জরুরিভাবে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার প্রয়োজন ছিল। সংগঠিত করার মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের দক্ষতা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন ঘটিয়ে তাদের জীবনমানের পরিবর্তন ঘটানো ছিল ব্র্যাকের মূল লক্ষ্য।
সুবিধাবঞ্চিত মানুষকে স্বাবলম্বী করে তোলার লক্ষ্যে ব্র্যাক একটি সমন্বিত উন্নয়নকৌশল গড়ে তোলে, যার আওতায় রয়েছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ক্ষুদ্রঋণ, দক্ষতা উন্নয়ন, কৃষি ও খাদ্যনিরাপত্তা, কুটির শিল্প, মানবাধিকার, সড়ক নিরাপত্তা, অভিবাসন এবং নগর উন্নয়নের মতো বিভিন্ন কর্মসূচি।
ব্র্যাক এখন বিশ্বের সর্ববৃহৎ এনজিও। প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম বাংলাদেশসহ এশিয়া ও আফ্রিকার ১৪টি দেশে পরিচালিত হচ্ছে। প্রভাব, উদ্ভাবন ও টেকসই বৈশিষ্ট্যের বিবেচনায় জেনেভাভিত্তিক গণমাধ্যম সংগঠন ‘এনজিও অ্যাডভাইজার’ ২০২০ সালে টানা পঞ্চমবারের মতো ব্র্যাককে বিশ্বের শীর্ষ ৫০০ এনজিওর মধ্যে প্রথম হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন।
অন্যান্য স্বীকৃতি ও সম্মাননাসামাজিক ক্ষেত্রে অনন্যসাধারণ অবদানের জন্য স্যার ফজলে হাসান আবেদ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য পুরস্কারগুলোর মধ্যে রয়েছে—শিক্ষা উন্নয়নে বিশ্বের সর্বোচ্চ পুরস্কার ইদান প্রাইজ (২০১৯), নেদারল্যান্ডসের রাজা কর্তৃক রয়্যাল নাইটহুড উপাধি (২০১৯), লেগো অ্যাওয়ার্ড (২০১৮), লাউদাতে সি’অ্যাওয়ার্ড (২০১৭), হোসে এডগারডো ক্যাম্পোস কোলাবোরেটিভ লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০১৬), টমাস ফ্রান্সিস জুনিয়র মেডেল অব গ্লোবাল পাবলিক হেলথ পুরস্কার (২০১৬), ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ (২০১৫), ট্রাস্ট উইমেন হিরো অ্যাওয়ার্ড (২০১৪), অর্ডার অব সিভিল মেরিট (অর্ডেন ডেল মেরিটো সিভিল, ২০১৪), লেভ তলস্তয় স্বর্ণপদক (২০১৪), ওপেন সোসাইটি প্রাইজ (২০১৩), শিক্ষার জন্য ওয়াইজ প্রাইজ (২০১১), এন্ট্রাপ্রেনিউর ফর দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৯), ডেভিড রকফেলার ব্রিজিং লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৮), ক্লিনটন গ্লোবাল সিটিজেনশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৭), হেনরি আর ক্রাভিস প্রাইজ ইন লিডারশিপ (২০০৭), দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সামাজিক উন্নয়নে অবদানের জন্য পল্লীকর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) কর্তৃক আজীবন সম্মাননা (২০০৭), মানব উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ইউএনডিপি মাহবুবুল হক অ্যাওয়ার্ড (২০০৪), গেটস অ্যাওয়ার্ড ফর গ্লোবাল হেলথ (২০০৪), গ্লেইটসম্যান ফাউন্ডেশন পুরস্কার (২০০৩), দ্য শোয়াব ফাউন্ডেশন সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ অ্যাওয়ার্ড (২০০৩), ওলফ পামে অ্যাওয়ার্ড (২০০১), ইন্টারঅ্যাকশন হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়াার্ড (১৯৯৮), অ্যালানশন ফেইনস্টেইন ওয়ার্ল্ড হাঙ্গার পুরস্কার (১৯৯০), ইউনেসকো নোমা পুরস্কার (১৯৮৫) এবং কমিউনিটি লিডারশিপের জন্য র্যামন ম্যাগসাইসাই অ্যাওয়ার্ড (১৯৮০)।
‘অশোকা’ ফজলে হাসান আবেদকে অন্যতম ‘গ্লোবাল গ্রেট’ স্বীকৃতিতে ভূষিত করেছে। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের ‘গ্লোবাল একাডেমি ফর সোশ্যাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ’-এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দারিদ্র্য হ্রাসে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ ক্রাউন ২০০৯ সালে তাঁকে ‘দ্য মোস্ট ডিস্টিংগুইশড অর্ডার অব সেন্ট মাইকেল অ্যান্ড সেন্ট জর্জ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। বিশ্বের স্বল্পোন্নত দেশগুলোয় সহায়তার ক্ষেত্রে জাতিসংঘ মহাসচিবকে পরামর্শ প্রদানে নিযুক্ত ‘বিশ্বের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ’ তালিকায় ২০১০ সালে স্যার ফজলে হাসান আবেদ অন্তর্ভুক্ত হন। ২০১৪ ও ২০১৭ সালে ‘ফরচুন ম্যাগাজিন’ কর্তৃক বিশ্বের ৫০ জন সর্বশ্রেষ্ঠ নেতার তালিকায় তাঁর নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।
স্যার ফজলে হাসান আবেদ বহু সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব লজ’ (২০১৪), যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব লেটার্স’(২০০৯), যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টর অব লজ’(২০০৮) এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইয়েল ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ডক্টরেট অব হিউমেন লেটার্স’(২০০৭) উল্লেখযোগ্য।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউন ভ র স ট স য র ফজল ন র জন য প রস ক র অবদ ন র প র ইজ
এছাড়াও পড়ুন:
বেসরকারি খাত পিপিপিতে আকৃষ্ট নয়, বরাদ্দ ৫ হাজার কোটি টাকা
অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) পদ্ধতি সারা বিশ্বেই ব্যাপক জনপ্রিয়। কিন্তু এ মডেল এখনো বাংলাদেশের বেসরকারি খাতকে তেমন আকৃষ্ট করতে পারছে না। হাতে গোনা যে কয়েকটি প্রকল্প আলোর মুখ দেখেছে, সেগুলো হচ্ছে মূলত সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ের সিদ্ধান্তে। ফলে প্রকৃত পিপিপির স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত রয়েছে বাংলাদেশ। চার-পাঁচটি প্রকল্প হতে চললেও এগুলোর বেসরকারি অংশীদারদের প্রায় সবাই বিদেশি।
পিপিপি মানেই হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের বিষয়। সরকারি ভাষ্য হচ্ছে, দেশের বড় পুঁজির মালিক বা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ব্যাপারে ধৈর্য কম। এদিকে বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ হচ্ছে, সরকার নিজেই একটা সমস্যা। কারণ, সরকার এমন কোনো নীতি পদক্ষেপ নিয়ে রাখেনি, যাতে বিনিয়োগকারীরা পিপিপি প্রকল্পে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগে আকৃষ্ট হবেন।
এমন টানাপোড়েনের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে পিপিপির জন্য ৫ হাজার ৪০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন। ২ জুন তিনি এই বাজেট ঘোষণা করেন। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৪ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা এবারের বাজেট বক্তব্যে বলেছেন, দেশে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হলে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি। বিনিয়োগকারীদের দ্রুত ও সহজে সেবা দিতে ওয়ান–স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) পোর্টাল চালু করেছে। এই পোর্টালে ৪৩টি সংস্থার ১৩৪টি সেবা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ব্যবসা সহজীকরণের অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতায় চালু করা হয়েছে ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো’ (বিএসডব্লিউ)’। এর মাধ্যমে একটি প্ল্যাটফর্মে আবেদন গ্রহণ, প্রক্রিয়াকরণ ও সেবা প্রদান করা যাচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি ‘ইনভেস্টমেন্ট পাইপলাইন’ তৈরি করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগগুলোকে কার্যকর বিনিয়োগে পরিণত করার প্রক্রিয়া সহজ হবে।
পিপিপির সার্বিক বিষয় দেখভালের জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পিপিপি কর্তৃপক্ষ গঠন করে। পিপিপি কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রথম বছর ৩৪টি ও পরেরবার ৪০টি প্রকল্প চিহ্নিত করা হলেও বর্তমানে পিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়নের জন্য বর্তমানে ৮১টি প্রকল্পের একটি তালিকা তৈরি রয়েছে পিপিপি কর্তৃপক্ষের হাতে।
মুনাফার সুযোগ না থাকলে তো বেসরকারি খাত আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর দেশে তো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগই নেই। গ্রিন ফিল্ড কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ দেয় পাঁচ বছরের জন্য। পিপিপির পর্ষদে নেই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব। বললেই তো পিপিপিতে বিনিয়োগ আসবে নাআবুল কাসেম খান, সাবেক সভাপতি, ঢাকা চেম্বার।এর মধ্যে ২০টি আছে শনাক্তকরণ পর্যায়ে, যেগুলো সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের অপেক্ষায় রয়েছে। আর উন্নয়ন পর্যায়ে আছে ২৯টি। এ পর্যায়ে থাকার অর্থই হচ্ছে এদের সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে মাত্র। ১৪টি প্রকল্প আছে দরপত্র ডাকার পর্যায়ে অর্থাৎ চুক্তির কাগজপত্র তৈরি হয়ে আছে। আর ১৮টি রয়েছে বাস্তবায়ন পর্যায়ে।
পিপিপি হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারি ব্যবস্থা, যেখানে জনগণকে সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে বেসরকারি খাত বিনিয়োগ করে থাকে। এতে সরকারের সঙ্গে বেসরকারি খাতের চুক্তি হয় বা সেবা তৈরির জন্য বেসরকারি খাতকে সরকার নিবন্ধন দিয়ে থাকে। নির্মাণ, মালিকানা, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওওটি); নির্মাণ, পরিচালনা ও হস্তান্তর (বিওটি) এবং নির্মাণ, মালিকানা ও পরিচালনা (বিওও)—পিপিপির এই তিন পদ্ধতিই প্রচলিত।
জানতে চাইলে পিপিপি কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র মো. আলী আজম আল আজাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পিপিপির মাধ্যমে চিকিৎসাসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সাড়া পড়ার বাস্তবতা আছে দেশে। কিন্তু বিষয়টি নতুন হওয়ায় একটু গতি কম। নীতিনির্ধারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে গতি বাড়ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পিপিপির ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি আছে।’ আলী আজম আল আজাদ অবশ্য বিশ্বাস করেন, এ খাতে বিনিয়োগ ভবিষ্যতে বাড়বেই।
এ এম এ মুহিতের যে উদ্যোগ
তুরস্ক, চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশে সাফল্যের উদাহরণ সামনে রেখে ২০০৯ সালে অবকাঠামো উন্নয়নে পিপিপির দিকে নজর দেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।
পিপিপির মাধ্যমে দেশের অবকাঠামো খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হবে, এমন আশাই করেছিলেন প্রয়াত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসার ৬ মাসের মাথায় যখন ২০০৯-১০ অর্থবছরের বাজেট ঘোষিত হলো, তখন ‘নব উদ্যোগ বিনিয়োগ প্রয়াস’ নাম দিয়ে আবদুল মুহিত পিপিপির জন্য বরাদ্দ রাখেন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা।
বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান; নদী, সমুদ্র ও বিমানবন্দর; সাধারণ ও বিশেষায়িত হাসপাতাল; সড়ক ও রেলপথ এবং বড় বড় সেতু নির্মাণ দরকার। কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এগুলো করা কঠিন। তখন এসব কথাই বলেছিলেন আবদুল মুহিত।
শুধু কথা বলেই অবশ্য দায়িত্ব সারেননি মুহিত। ১০ বছর ধরে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালে তিনি বিনিয়োগ আকর্ষণে পিপিপি আইন, নীতিমালা, বিধিমালা সবই করেছেন। প্রতি অর্থবছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দও করতেন। কিন্তু বেসরকারি খাতের অনাগ্রহের কারণে এ খাতের জন্য বরাদ্দ করা পুরো টাকাই পড়ে থাকত। তবে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের (ফিজিবিলিটি স্টাডি) জন্য প্রতিবারই অবশ্য সামান্য অর্থ খরচ হতো, এই যা।
পিপিপির মাধ্যমে চিকিৎসাসহ অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে ব্যাপক সাড়া পড়ার বাস্তবতা আছে দেশে। কিন্তু বিষয়টি নতুন হওয়ায় একটু গতি কম। নীতিনির্ধারকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। এ কারণে গতি বাড়ছে। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হওয়ায় দেশীয় বিনিয়োগকারীদের পিপিপির ব্যাপারে আগ্রহের ঘাটতি আছেমো. আলী আজম আল আজাদ, মুখপাত্র, পিপিপি কর্তৃপক্ষ।যেসব প্রকল্প হচ্ছে
বর্তমানে বাস্তবায়ন পর্যায়ে থাকা পিপিপি প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এ প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর। প্রকল্পটির আংশিক উদ্বোধন হলেও এখনো কাজ বাকি আছে। ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেড হচ্ছে এ প্রকল্পের বেসরকারি বিনিয়োগকারী।
ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। জিটুজি পর্যায়ে এটি বাস্তবায়নে মোট খরচ হবে ২১ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা। প্রকল্পের সিংহভাগ অর্থ দেবে ঋণদাতা সংস্থা জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)। কাজ করছে জাপানের মিতসুবিশি ও ফুজিতা করপোরেশন এবং কোরিয়ার স্যামসাংয়ের জয়েন্ট ভেঞ্চার ‘অ্যাভিয়েশন ঢাকা কনসোর্টিয়াম’।
হাতিরঝিল-রামপুরা-আমুলিয়া-ডেমরা সড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের জন্য চীনের নির্মাণপ্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (সিসিসিএল) সঙ্গে চুক্তি সই হয়েছে।
ঢাকা বাইপাস প্রকল্পের কাজও হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরকে বাইপাস করে উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলকে সরাসরি যুক্ত করার জন্য নির্মিত হচ্ছে এটি। প্রায় ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মহাসড়কের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। চীনের সিচুয়েন রোড অ্যান্ড ব্রিজ গ্রুপ করপোরেশন লিমিটেড, বাংলাদেশের শামীম এন্টারপ্রাইজ এবং ইউডিই কনস্ট্রাকশন লিমিটেড হচ্ছে এটির যৌথ অংশীদার। কিছু অংশ ইতিমধ্যে চালু হয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী হিসেবে এ এম এ মুহিত যখন ২০০৯ সালে বিষয়টি নিয়ে এলেন, আমি তখন ঢাকা চেম্বারের সভাপতি। তাঁকে খুবই সমর্থন করেছিলাম। সৈয়দ আফসর এইচ উদ্দিন ছিলেন পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রথম প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। তিনি আমাকে একপর্যায়ে বললেন, ভালো প্রকল্পগুলো নেওয়া হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি), অগুরুত্বপূর্ণগুলো পাঠিয়ে দেয় পিপিপিতে। এভাবে তো পিপিপি হবে না।’
আবুল কাসেম খান আরও বলেন, মুনাফার সুযোগ না থাকলে তো বেসরকারি খাত আসবে না, এটাই স্বাভাবিক। আর দেশে তো দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নের সুযোগই নেই। গ্রিন ফিল্ড কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আসতে দেওয়া হচ্ছে না। ব্যাংক ঋণ দেয় পাঁচ বছরের জন্য। এদিকে পিপিপির পর্ষদে নেই বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব। বললেই তো পিপিপিতে বিনিয়োগ আসবে না, আগে নীতি সমস্যা দূর করতে হবে।