সততা-আবেগ নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন দেখি: সুনেরাহ
Published: 27th, April 2025 GMT
সুনেরাহ বিনতে কামাল। অভিনেত্রী ও মডেল। মডেলিংয়ের মাধ্যমে তাঁর শুরুটা হলেও বর্তমানে তিনি অভিনয়ে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন। ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত নতুন সিনেমা ‘দাগি’। এই সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন বাকপ্রতিবন্ধী লিখন চরিত্রে। এ চরিত্রে অভিনয় আর অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–
‘দাগি’ সিনেমায় ‘লিখন’ চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
লিখন চরিত্রটি আমার জন্য খুবই আলাদা। কারণ, সে একদিকে প্রতিবাদী, আবার অন্যদিকে তার ভেতরে গভীর এক অনুভূতির টানাপোড়েন আছে। চরিত্রটা শুধু প্রেমিকা নয়–সে একটি গল্প, একটি যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। এই দ্বৈততা আমাকে খুব টেনেছিল। এই চরিত্র আমাকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়েছে। কথা বলতে না পারার যন্ত্রণাটা বোঝাতে গিয়ে, আমাকে শব্দহীন আবেগে ডুবে যেতে হয়েছে। লিখনের প্রতিটি অনুভূতি, প্রতিটি অভিব্যক্তি সবকিছুর প্রকাশ ছিল শুধুই দৃষ্টি, অঙ্গভঙ্গি আর হৃদয়ের স্পর্শে। লিখন আমাকে শিখিয়েছে, শব্দের চেয়েও গভীর একটি ভাষা আছে, অনুভবের ভাষা।
লিখনের মধ্যে কী ছিল, যা আপনাকে আকর্ষণ করেছিল?
লিখনের নীরব পৃথিবী আমাকে মানুষের ভেতরের নীরব কান্না, লুকানো সাহস আর নিঃশব্দ ভালোবাসাকে নতুন করে চিনতে সাহায্য করেছে। তার সাহসী মনোভাব আমাকে দারুণ আকর্ষণ করেছে। প্রত্যেক মানুষের একটি না বলা গল্প থাকে। লিখন সেই সব ‘চুপ থাকা’ মেয়েদের প্রতিনিধি, যাদের কণ্ঠ নেই, কিন্তু হৃদয়ে ঝড় বইছে। সে আমাকে শিখিয়েছে, কখনও কখনও নীরবতা সবচেয়ে গভীর ভাষা। এ চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে সূক্ষ্ম আবেগের স্তরগুলো ধরতে হয়েছে, এজন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল।
সিনেমাটি নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন দেখছেন?
কথা বলতে না পারা চরিত্রটি নিয়ে দর্শক বেশ পছন্দ করেছেন। এটি আমার জন্য অনেক বেশি আনন্দের। সিনেমাটি যারা দেখেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই লিখনকে অনুভব করতে পেরেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্রটি নিয়ে লিখছেন, চরিত্রটির মায়ায় পড়ে গেছেন তারা। সিনেমা হলে গিয়ে ‘দাগি’ দেখেছি। খুব কাছ থেকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছি, আরেকবার দর্শকের দিকে। দেখেছি আমার চরিত্রটির সঙ্গে দর্শকরা নিজেদের মেলাতে পারছেন। লিখনের সুখে হেসেছেন, তার দুঃখে; কখনও হাসিয়েছেন, কখনও ভাবিয়েছেন। সত্যি বলতে কী, যখন কাজটি করছিলাম, তখন মনে হয়েছিল দর্শকরা চরিত্রটি পছন্দ করবেন। দর্শকদের এতটা পছন্দ হবে ভাবিনি।
দর্শকরা লিখন চরিত্র থেকে কী শিখতে পারেন বলে আপনি মনে করেন?
প্রত্যেক মানুষের একটা না বলা গল্প থাকে। অনেক সময় যারা কম কথা বলেন, আমরা তাদের অনুভব করি না। লিখন সেই ‘চুপ থাকা’ মেয়েদের প্রতিনিধি, যাদের কণ্ঠ নেই, কিন্তু হৃদয়ে ঝড় বইছে। লিখন আমাকে এমন এক ‘চুপ থাকা’ মেয়ের চোখে পৃথিবী দেখতে শিখিয়েছে, যে শব্দ না করে অনেক কিছু বলে দেয়।
সত্যি বলতে কী, আমরা যারা অভিনয়শিল্পী, তাদের বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। তবে সবার অভিনয় জীবনে এক্সপেরিমেন্টাল ধরনের কাজ খুব কমই আসে জীবনে। যেসব চরিত্রে শুধু অভিনয় নয়, একটা অনুভবের জগতে নিয়ে যায়।
‘ন ডরাই’-এর আয়েশা, ‘অন্তর্জাল’-এ প্রিয়াম, ‘দাগি’তে লিখন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কোন চরিত্রটি আপনার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল?
আমি বলব ন ডরাই সিনেমার আয়েশার কথা। কারণ এ আয়েশা দিয়ে আমার বড়পর্দায় অভিষেক হয়। আয়েশা শুধু একটি চরিত্র ছিল না, ছিল প্রতিবাদের প্রতীক। এ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে সার্ফিং শিখতে হয়েছিল, সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল, যেমন আয়েশাকে নিজের জীবনের প্রতিটি বাঁকে যুদ্ধ করতে হয়। এ চরিত্র আমাকে সাহসী করেছে, আমাকে শিখিয়েছে নিজের স্বপ্নের জন্য দাঁড়াতে হয়, কথা বলতে হয়, কখনও কখনও নীরব থেকেও প্রতিবাদ করতে হয়।
আপনাকে হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রে পাওয়া গেছে। সিনেমা কম করার কারণ…
আমি সংখ্যার চেয়ে মানের ওপর বিশ্বাসী। সব প্রস্তাবে কাজ করতে চাই না। নিজের মনের সঙ্গে যেখানে সংযোগ তৈরি হয়, গল্প আর চরিত্র যেখানে সত্যিকার অর্থে আমাকে নাড়া দেয়, কেবল সেখানে নিজেকে নিঃশর্তভাবে উজাড় করে দিতে চাই। তাই সময় নিয়ে বেছে কাজ করি। ভালো গল্পের অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনেক সময় হয়তো কাজের প্রস্তাব আসে, কিন্তু নিজের মন থেকে ‘হ্যাঁ’ বলা হয়ে ওঠে না। আমি চাই, যখন কোনো চরিত্র করব, সেটি যেন শুধু পর্দায় নয়, দর্শকের মনেও রেশ ফেলে যায়।
অভিনয় নিয়ে স্বপ্নটা কেমন?
আমার কাছে অভিনয় মানে শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নয়– এটি একটা ভ্রমণ। আমি চাই চরিত্রের ভেতর পুরোপুরি হারিয়ে যেতে, এমনভাবে যে দর্শকরা আমাকে না দেখে কেবল সে চরিত্রকেই অনুভব করে। স্বপ্ন দেখি এমন সব গল্পের অংশ হতে, যেগুলো মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে, যেগুলো দেখার পর কেউ হয়তো একটু ভিন্নভাবে জীবনকে দেখবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের ইচ্ছে আছে। তার চেয়েও বড় স্বপ্ন হলো–নিজের প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে সততা আর আবেগ নিয়ে বাঁচা। অভিনয় আমার কাছে শিল্পের সবচেয়ে মানবিক প্রকাশ। এই পথচলায় আমি শিখতে চাই, ভাঙতে চাই, আবার নিজেকে নতুন করে গড়তে চাই।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন র হ ব নত ক ম ল এ চর ত র ন চর ত র কর ছ ন হয় ছ ল
এছাড়াও পড়ুন:
অলসতা মোকাবিলার আধ্যাত্মিক কৌশল
সকাল হয়েছে, কিন্তু বিছানা ছাড়তে মন চাইছে না—এমন দিন কি আপনারও আসে? হয়তো ঘুম থেকে ওঠার আগেই মনে হচ্ছে শরীরটা একেবারে নিস্তেজ। জোর করে বাথরুম পর্যন্ত যাচ্ছেন, আর ক্যালেন্ডার বা কাজের তালিকা দেখার কথা মনে আসতেই আবার লেপের নিচে সেঁধিয়ে যেতে ইচ্ছা করছে। ইচ্ছে করে শুয়ে থাকি, আর কিছুই না করি।
এই অনুভূতিটার সঙ্গে আমরা প্রায় সবাই পরিচিত।
যাদের আমরা অত্যন্ত কর্মঠ বা ‘প্রোডাক্টিভ মুসলিম’ বলে মনে করি, তাদের জীবনেও এমন দিন আসে। আমরা এর আগে আলাপ করেছিলাম, অক্ষমতা নিয়ে। অর্থাৎ, সেই অনুভূতি—যখন আপনি ভালো কিছু করতে চান, কিন্তু কাজ করার ক্ষমতাটুকু অনুভব করেন না। মানে ‘আমি চাই, কিন্তু পারছি না’। আজ আলোচনা করব তার নিকটাত্মীয় আলস্য নিয়ে। একে আরবিতে বলে ‘কাস্ল’। মানে ‘আমি চাই, কিন্তু আমার মন সায় দিচ্ছে না’ বা ‘আমার করতে ইচ্ছে করছে না’।
আলস্য কেবল একটি শারীরিক বা মানসিক জড়তা নয়; এর গভীরে থাকে বেশ কিছু কারণ, যার মধ্যে আধ্যাত্মিক কারণও রয়েছে। আলস্যকে জয় করতে হলে প্রথমে এর উৎসটি জানা জরুরি। কারণ, সব আলস্য এক ধরনের হয় না এবং এর সমাধানও উৎসভেদে ভিন্ন।
আলস্যের উৎস কোথায়আলস্য মোকাবিলা করার আগে বুঝতে হবে, এটি ঠিক কোথা থেকে আসছে। আলস্যের মূল কারণের ওপর নির্ভর করে এর প্রতিকার:
১. এটি কি সাময়িক ক্লান্তি
কখনও কখনও আলস্য কেবলই আমাদের শরীর ও আত্মার একটি সহজ বার্তা, “এখন বিশ্রাম প্রয়োজন।” আপনি হয়তো একটানা খুব বেশি পরিশ্রম করেছেন, দু’দিক থেকে মোমবাতি জ্বালিয়েছেন (অর্থাৎ, অতিরিক্ত পরিশ্রম করেছেন), আর এখন আপনার ভেতরের শক্তিভাণ্ডার প্রায় শূন্য।
এই ধরনের আলস্য আসলে আপনার ফিতরাত বা প্রাকৃতিক প্রবণতা। এটি আপনাকে মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম থেকে রক্ষা করে এবং শরীরকে পুনরুদ্ধার হওয়ার সুযোগ দেয়। এক রাতের ভালো ঘুম বা স্বল্প সময়ের বিশ্রামেই এই আলস্য দূর হতে পারে।
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, “নিশ্চয় তোমার শরীরের তোমার ওপর অধিকার রয়েছে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৯৬৮)
এই হাদিসটি স্পষ্টভাবে নির্দেশ করে যে, পরিশ্রমের মধ্যে বিশ্রাম নেওয়া এবং শরীরের যত্ন নেওয়া ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা।
২. এটি কি গভীর ক্লান্তি (বার্নআউট)
যদি আপনার আলস্য সপ্তাহের পর সপ্তাহ বা মাসের পর মাস ধরে চলতে থাকে, তবে আপনি সম্ভবত সম্পূর্ণ অবসাদ (Burnout) বা গভীর ক্লান্তির শিকার। এই ধরনের ক্লান্তি কেবল এক রাতের ঘুমে দূর হয় না। এর জন্য প্রয়োজন হয় আপনার দৈনন্দিন রুটিন, অগ্রাধিকার এবং সম্ভবত আপনার পরিবেশের একটি মৌলিক ও সামগ্রিক পরিবর্তন।
গভীর ক্লান্তির আরেকটি মূল কারণ হলো, জীবনের চালকশক্তি হিসেবে সুস্পষ্ট মহৎ উদ্দেশ্য না থাকা। যখন আপনার কোনো বড়, অর্থপূর্ণ লক্ষ্য থাকে না যা আপনাকে বিছানা থেকে ওঠাবে, তখন মস্তিষ্ক সহজেই আলস্যকে গ্রহণ করে নেয়। জীবনের উদ্দেশ্য অস্পষ্ট হলে, শক্তি হারিয়ে যাওয়া স্বাভাবিক।
আরও পড়ুনশত্রুদের বিবরণ আছে সুরা মুনাফিকুনে ০৮ অক্টোবর ২০২৪৩. এটি কি আধ্যাত্মিক
আলস্যের মূল কখনও কখনও আমাদের ধারণার চেয়েও গভীরে প্রোথিত থাকে। স্বয়ং নবী মুহাম্মদ (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন,
“যখন তোমাদের কেউ ঘুমিয়ে পড়ে, শয়তান তার মাথার পেছনে তিনটি গিঁট দেয়। প্রতি গিঁটে সে বলে, তোমার রাত অনেক দীর্ঘ, সুতরাং ঘুমাও। অতঃপর যদি সে ঘুম থেকে জেগে আল্লাহকে স্মরণ করে, তবে একটি গিঁট খুলে যায়; যদি সে অজু করে, তবে দু’টি গিঁট খুলে যায়; আর যদি সে নামাজ আদায় করে, তবে সব গিঁট খুলে যায়। এভাবে সে সকালে প্রফুল্ল মন ও সতেজ শরীর নিয়ে ওঠে; অন্যথায় সে সকালে খারাপ মন ও অলসতা নিয়ে ওঠে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৭৭৬)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, আমাদের আলস্য অনেক সময় আধ্যাত্মিক গিঁটের ফল হতে পারে, যা জিকির (আল্লাহর স্মরণ), অজু এবং নামাজের মাধ্যমে খোলা হয়নি।
তবে অলসতার আরও একটি সূক্ষ্ম আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে। আপনি কি কখনও লক্ষ্য করেছেন, যখনই আপনি কোনো অর্থপূর্ণ কাজ শুরু করতে যান—যেমন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শুরু করা, কোরআন মুখস্থ করা বা কোনো সামাজিক উদ্যোগ নেওয়া—ঠিক তখনই আলস্য যেন সবচেয়ে কঠিনভাবে আঘাত করে? এটি কোনো কাকতালীয় ঘটনা নয়।
শয়তানের সবচেয়ে কার্যকর হাতিয়ার সবসময় প্রলোভন নয়; কখনও কখনও এটি নিছক আলস্যের মাধ্যমে কাজকে স্থগিত করে দেওয়া বা শিথিলতা ঘটানো। আপনি যত বড় ও অর্থপূর্ণ কাজের কাছাকাছি পৌঁছান, এই আধ্যাত্মিক প্রতিরোধ তত শক্তিশালী হয়। মনে হয় যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি আপনার ভালো উদ্দেশ্যগুলোর বিরুদ্ধে কাজ করছে, যার ফলে সামান্য কাজও পাহাড়ের মতো কঠিন মনে হচ্ছে।
অলসতা মোকাবিলার কৌশলঅলসতার উৎস যেটাই হোক না কেন, এটিকে স্থায়ী হতে দেওয়া চলবে না। এর মোকাবিলায় কিছু সুনির্দিষ্ট কৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে:
১. বিশ্রামের মাধ্যমে সাময়িক আলস্য দূর করা
যদি আপনার অলসতা সাময়িক হয় এবং আপনি দীর্ঘ সময় ধরে পরিশ্রম করে থাকেন, তবে শক্তিশালীভাবে ফিরে আসার অভিপ্রায় নিয়ে একটি বিরতি নিন। আপনার এই বিশ্রাম যেন ফলপ্রসূ হয়: পর্যাপ্ত ঘুমান, পুষ্টিকর খাবার খান এবং পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে মানসম্পন্ন সময় কাটান। একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করুন এবং তারপর আবার খেলায় ফিরে আসুন।
বস্তুত, বিশ্রাম একটি শক্তি সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া, আলস্যকে লালন করার অজুহাত নয়। (দেখুন: আল-গাজালি, ইহয়াউ উলুমিদ্দিন, ৪/৩৫১, দারুল ফিকর, বৈরুত, ১৯৯৬)
২. নামাজের মাধ্যমে আলস্যের ধারা ভেঙে দেওয়া
যখন আপনি আলস্যের চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছেন বলে মনে হয়, তখন নামাজের মাধ্যমে সেই চক্রটি ভেঙে দিন। উপরে বর্ণিত তিনটি গিঁটের হাদিসটি মনে করুন। ইবাদতের প্রতিটি কাজ (জিকির, অজু, নামাজ) আপনাকে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে সতেজ করবে এবং আলস্য মোকাবিলায় সাহায্য করবে। নামাজ হলো আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি সংযোগ, যা মন ও আত্মাকে তাৎক্ষণিক শক্তি ও নির্দেশনা দেয়।
আরও পড়ুনঅলসতা দূর করার জন্য নবীজির শেখানো দোয়া২১ অক্টোবর ২০২৫৩. পরিবেশ পরিবর্তন করা
আপনি যদি ডেস্কে বসে জড়তা অনুভব করেন, তবে আপনার কাজের স্থান পরিবর্তন করুন। কাজ নিয়ে কোনো কফি শপ বা লাইব্রেরিতে যান। কখনও কখনও পরিবেশের একটি সাধারণ পরিবর্তন অলসতার চক্রটি ভেঙে দিতে পারে। নতুন পরিবেশ মস্তিষ্কে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করে, যা আলস্যকে পিছনে ফেলে কাজ শুরু করতে সাহায্য করে।
৪. সামাজিক শক্তি কাজে লাগানো
আমরা যখন অলস অনুভব করি, তখন প্রায়শই একা থাকতে পছন্দ করি। কিন্তু সামাজিক শক্তি হলো সেই অনন্য শক্তি, যা অন্যের উপস্থিতির মাধ্যমে জন্ম নেয়। আপনার দলের সদস্যদের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত হোন, একজন জবাবদিহি সঙ্গী (Accountability Partner) খুঁজুন বা মসজিদে গিয়ে অন্যদের সঙ্গে মিলিত হোন। আপনি ব্যক্তিগতভাবে যে শক্তির অভাব বোধ করছেন, তা অনেক সময় সামষ্টিক চেতনায় (Collective Spirit) মধ্য দিয়ে ফিরে আসতে পারে। এটি মানুষকে দায়িত্বশীল ও সক্রিয় থাকতে সাহায্য করে।
৫. আল্লাহর সাহায্য চাওয়া
কাসালের বিরুদ্ধে সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো সেই দোয়াটি, যা মহানবী (সা.) আমাদের শিখিয়েছেন, “হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই উদ্বেগ ও পেরেশানি থেকে, অক্ষমতা ও আলস্য থেকে, ভীরুতা ও কৃপণতা থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের চাপ থেকে।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩৬৮)
তবে কেবল যান্ত্রিকভাবে এই দোয়াটি পাঠ করবেন না। যখন আপনি বলেন, “আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও আলস্য থেকে”, তখন নিজেকে এই সমস্ত বন্ধন থেকে মুক্ত হচ্ছেন বলে কল্পনা করুন। আপনার ওপর থেকে আলস্যের ভার সরে যাচ্ছে—তা অনুভব করুন।
বিশ্বাস রাখুন যে আল্লাহ আপনাকে এমনভাবে সতেজ করতে পারেন, যা পৃথিবীর অন্য কোনো উদ্দীপক (যেমন কফি) দিতে পারে না। দোয়া হলো আলস্যকে আল্লাহর কাছে হস্তান্তর করে তাঁর শক্তিকে নিজের মধ্যে আনার প্রক্রিয়া।
আলস্য সর্বদা খারাপ নয়। কখনও কখনও এটি একটি সংকেত, কখনও কখনও এটি মানবীয় প্রকৃতির অংশ। আবার কখনও কখনও এটি একটি আধ্যাত্মিক আক্রমণ, যার চিকিৎসা প্রয়োজন। গুরুত্বপূর্ণ হলো আলস্যকে আপনার জীবনের স্থায়ী অংশ হতে না দেওয়া। এর উৎস কোথায় তা বুঝুন, মূল কারণকে মোকাবিলা করুন এবং আল্লাহর সাহায্যে এটিকে জয় করুন।
আল্লাহ আমাদের সকলকে অলসতা থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
আরও পড়ুনইসলামে কলবের মর্যাদা ও গুরুত্ব১২ নভেম্বর ২০২৫