সুনেরাহ বিনতে কামাল। অভিনেত্রী ও মডেল। মডেলিংয়ের মাধ্যমে তাঁর শুরুটা হলেও বর্তমানে তিনি অভিনয়ে নিজের আলাদা জায়গা তৈরি করেছেন। ঈদে মুক্তি পেয়েছে তাঁর অভিনীত নতুন সিনেমা ‘দাগি’। এই সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন বাকপ্রতিবন্ধী লিখন চরিত্রে। এ চরিত্রে অভিনয় আর অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তাঁর সঙ্গে–

‘দাগি’ সিনেমায় ‘লিখন’ চরিত্রে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
লিখন চরিত্রটি আমার জন্য খুবই আলাদা। কারণ, সে একদিকে প্রতিবাদী, আবার অন্যদিকে তার ভেতরে গভীর এক অনুভূতির টানাপোড়েন আছে। চরিত্রটা শুধু প্রেমিকা নয়–সে একটি গল্প, একটি যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি। এই দ্বৈততা আমাকে খুব টেনেছিল। এই চরিত্র আমাকে ভেতর থেকে নাড়া দিয়েছে। কথা বলতে না পারার যন্ত্রণাটা বোঝাতে গিয়ে, আমাকে শব্দহীন আবেগে ডুবে যেতে হয়েছে। লিখনের প্রতিটি অনুভূতি, প্রতিটি অভিব্যক্তি সবকিছুর প্রকাশ ছিল শুধুই দৃষ্টি, অঙ্গভঙ্গি আর হৃদয়ের স্পর্শে। লিখন আমাকে শিখিয়েছে, শব্দের চেয়েও গভীর একটি ভাষা আছে, অনুভবের ভাষা। 

লিখনের মধ্যে কী ছিল, যা আপনাকে আকর্ষণ করেছিল?
লিখনের নীরব পৃথিবী আমাকে মানুষের ভেতরের নীরব কান্না, লুকানো সাহস আর নিঃশব্দ ভালোবাসাকে নতুন করে চিনতে সাহায্য করেছে। তার সাহসী মনোভাব আমাকে দারুণ আকর্ষণ করেছে। প্রত্যেক মানুষের একটি না বলা গল্প থাকে। লিখন সেই সব ‘চুপ থাকা’ মেয়েদের প্রতিনিধি, যাদের কণ্ঠ নেই, কিন্তু হৃদয়ে ঝড় বইছে। সে আমাকে শিখিয়েছে, কখনও কখনও নীরবতা সবচেয়ে গভীর ভাষা। এ চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে সূক্ষ্ম আবেগের স্তরগুলো ধরতে হয়েছে, এজন্য আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয়েছিল।

সিনেমাটি নিয়ে দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন দেখছেন?
কথা বলতে না পারা চরিত্রটি নিয়ে দর্শক বেশ পছন্দ করেছেন। এটি আমার জন্য অনেক বেশি আনন্দের। সিনেমাটি যারা দেখেছেন তাদের প্রায় প্রত্যেকেই লিখনকে অনুভব করতে পেরেছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরিত্রটি নিয়ে লিখছেন, চরিত্রটির মায়ায় পড়ে গেছেন তারা। সিনেমা হলে গিয়ে ‘দাগি’ দেখেছি। খুব কাছ থেকে দর্শকের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করেছি। স্ক্রিনের দিকে তাকিয়েছি, আরেকবার দর্শকের দিকে। দেখেছি আমার চরিত্রটির সঙ্গে দর্শকরা নিজেদের মেলাতে পারছেন। লিখনের সুখে হেসেছেন, তার দুঃখে; কখনও হাসিয়েছেন, কখনও ভাবিয়েছেন। সত্যি বলতে কী, যখন কাজটি করছিলাম, তখন মনে হয়েছিল দর্শকরা চরিত্রটি পছন্দ করবেন। দর্শকদের এতটা পছন্দ হবে ভাবিনি। 

দর্শকরা লিখন চরিত্র থেকে কী শিখতে পারেন বলে আপনি মনে করেন?
প্রত্যেক মানুষের একটা না বলা গল্প থাকে। অনেক সময় যারা কম কথা বলেন, আমরা তাদের অনুভব করি না। লিখন সেই ‘চুপ থাকা’ মেয়েদের প্রতিনিধি, যাদের কণ্ঠ নেই, কিন্তু হৃদয়ে ঝড় বইছে। লিখন আমাকে এমন এক ‘চুপ থাকা’ মেয়ের চোখে পৃথিবী দেখতে শিখিয়েছে, যে শব্দ না করে অনেক কিছু বলে দেয়।
 সত্যি বলতে কী, আমরা যারা অভিনয়শিল্পী, তাদের বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। তবে সবার অভিনয় জীবনে এক্সপেরিমেন্টাল ধরনের কাজ খুব কমই আসে জীবনে। যেসব চরিত্রে শুধু অভিনয় নয়, একটা অনুভবের জগতে নিয়ে যায়।

‘ন ডরাই’-এর আয়েশা, ‘অন্তর্জাল’-এ প্রিয়াম, ‘দাগি’তে লিখন চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কোন চরিত্রটি আপনার কাছে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং ছিল?
আমি বলব ন ডরাই সিনেমার আয়েশার কথা। কারণ এ আয়েশা দিয়ে আমার বড়পর্দায় অভিষেক হয়। আয়েশা শুধু একটি চরিত্র ছিল না, ছিল প্রতিবাদের প্রতীক। এ চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে আমাকে সার্ফিং শিখতে হয়েছিল, সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছিল, যেমন আয়েশাকে নিজের জীবনের প্রতিটি বাঁকে যুদ্ধ করতে হয়। এ চরিত্র আমাকে সাহসী করেছে, আমাকে শিখিয়েছে নিজের স্বপ্নের জন্য দাঁড়াতে হয়, কথা বলতে হয়, কখনও কখনও নীরব থেকেও প্রতিবাদ করতে হয়। 

আপনাকে হাতে গোনা কয়েকটি চলচ্চিত্রে পাওয়া গেছে। সিনেমা কম করার কারণ…
আমি সংখ্যার চেয়ে মানের ওপর বিশ্বাসী। সব প্রস্তাবে কাজ করতে চাই না। নিজের মনের সঙ্গে যেখানে সংযোগ তৈরি হয়, গল্প আর চরিত্র যেখানে সত্যিকার অর্থে আমাকে নাড়া দেয়, কেবল সেখানে নিজেকে নিঃশর্তভাবে উজাড় করে দিতে চাই। তাই সময় নিয়ে বেছে কাজ করি। ভালো গল্পের অপেক্ষায় থাকতে হয়। অনেক সময় হয়তো কাজের প্রস্তাব আসে, কিন্তু নিজের মন থেকে ‘হ্যাঁ’ বলা হয়ে ওঠে না। আমি চাই, যখন কোনো চরিত্র করব, সেটি যেন শুধু পর্দায় নয়, দর্শকের মনেও রেশ ফেলে যায়। 

অভিনয় নিয়ে স্বপ্নটা কেমন?
আমার কাছে অভিনয় মানে শুধু ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো নয়– এটি একটা ভ্রমণ। আমি চাই চরিত্রের ভেতর পুরোপুরি হারিয়ে যেতে, এমনভাবে যে দর্শকরা আমাকে না দেখে কেবল সে চরিত্রকেই অনুভব করে। স্বপ্ন দেখি এমন সব গল্পের অংশ হতে, যেগুলো মানুষের মন ছুঁয়ে যাবে, যেগুলো দেখার পর কেউ হয়তো একটু ভিন্নভাবে জীবনকে দেখবে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজের ইচ্ছে আছে। তার চেয়েও বড় স্বপ্ন হলো–নিজের প্রতিটি চরিত্রের মধ্যে সততা আর আবেগ নিয়ে বাঁচা। অভিনয় আমার কাছে শিল্পের সবচেয়ে মানবিক প্রকাশ। এই পথচলায় আমি শিখতে চাই, ভাঙতে চাই, আবার নিজেকে নতুন করে গড়তে চাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ন র হ ব নত ক ম ল এ চর ত র ন চর ত র কর ছ ন হয় ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত

বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ। 

সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।

আরো পড়ুন:

একা বাস করতে পারে যে পাখি

কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?

সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।

তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না। 

এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।

বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস। 

তিনি জানেন,  প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে।  বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।

সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন। 

একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।

সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।

চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।

গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কারা বেশি কাঁদেন? 
  • বর্তমান সংকটের জন্য সরকার দায়ী, দলগুলোর চাপে সিদ্ধান্ত বদল
  • প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত