বিজয়ী হয়েও পাননি পুরস্কার, প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন
Published: 27th, April 2025 GMT
ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া শিক্ষার্থী সূর্য আলী। সদ্য প্রাথমিকের গন্ডি পেরিয়ে নতুন উচ্ছাস নিয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। বই ও ক্লাস পায়নি সময় মতো। ভর্তি হওয়ার পর ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখে বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার তিনটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে সূর্য আলী। সব ইভেন্টে প্রথম স্থান অধিকার করলেও পুরষ্কার পায়নি একটিতেও। তাই বাধ্য হয়ে পুরস্কার চেয়ে প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদন করেছে সূর্য।
এ ঘটনা ঘটেছে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত আমদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থী সূর্য পুরাতন আমদহ গ্রামের ছাবদেল আলীর ছেলে।
জানা গেছে, প্রতিযোগিতা শেষে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বাসায় নিয়ে গিয়েছেন। পরে সেগুলো আর বিদ্যালয়ে ফেরত আনেননি। এ ঘটনায় এলাকায় নানা আলোচনা চলছে।
প্রধান শিক্ষক বরাবর আবেদনে সূর্য লিখেছে, বিষয়: বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার দেওয়ার জন্য আবেদন। জনাব, আমি গত ২৫ ফেব্রুয়ারি বিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ‘সি’ গ্রুপ থেকে ১০০ মিটার দৌড়, মোরগ লড়াই, দীর্ঘ লাফ এই তিনটি ইভেন্টে অংশগ্রহণ করি। সবগুলোতেই প্রথম স্থান অধিকার করেছি। কিন্তু খেলা শেষে বিকেল ৩টার পর আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। এমতাবস্থায় ওইদিন বিকেলে পুরস্কার বিতরণীর সময় উপস্থিত হতে পারিনি। এমতাবস্থায় উপরোক্ত বিষয় বিবেচনা করে আমাকে পুরস্কার দিতে আপনার দরদি আত্মা মর্জি হয়। ইতি মো.
বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক জানান, প্রতিটি ইভেন্টের জন্য পুরস্কার কেনা হয়েছে। প্রতিযোগিতা শেষে পুরস্কার বিতরণের সময় যারা উপস্থিত ছিল; তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। যারা উপস্থিত ছিল না তাদের পুরস্কার বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। পরে বিতরণ না হওয়া পুরস্কারগুলো প্রধান শিক্ষককের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় চলাকালীন সময় সেগুলো বিতরণ করবেন বলে সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু তিনি কেন পুরস্কারগুলো বিতরণ করেননি; তা তাদের জানা নেই।
শিক্ষার্থী সূর্য জানায়, রোজার ছুটির পর স্কুল চালুর পর প্রধান শিক্ষকের কাছে একাধিকবার যাওয়ার পরও তিনি কোনো পুরস্কার দেননি। পরে লিখিত আবেদন করেছি।
আমদহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, যেসব শিক্ষার্থী পুরস্কার পায়নি তারা কেউ আমার কাছে আসেনি। পুরস্কার চেয়ে করা আবেদনের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমি একটি দরখাস্ত পেয়েছি। এ বিষয়ে পরবর্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব’
ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর ২টা ২০ মিনিট। মাথার ওপর প্রখর রোদের উত্তাপ। প্রচণ্ড গরমে ত্রাহি অবস্থায় একটু বিশ্রাম নিতে গাছের ছায়ার খোঁজে ক্লান্ত পথিক। এমন সময় ঘর্মাক্ত শরীরে একটি ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা গেল কয়েকজন শ্রমিককে। তাদের একজন তোঁতা মিয়া, অপরজন হাবিবুল।
হাবিবুল পাথর ভরেই যাচ্ছেন, তোঁতা মিয়া সেগুলো মাথায় করে একের পর এক টুড়ি ছাদ ঢালাইয়ের জন্য পৌঁছে দিচ্ছেন নির্দিষ্ট স্থানে। সেখানেও বালু-পাথরের মিশ্রণ করছেন আরও কয়েকজন। তাদের কর্মযজ্ঞের এক ফাঁকে কথা হয় তোঁতা মিয়ার সঙ্গে।
আলাপকালে তোঁতা মিয়া বলেন, ‘সারাদিন কাম (কাজ) কইরা ৫০০ ট্যাহা (টাকা) হাজিরা পাই। এইডি দিয়া কোনোমতে বউ-পুলাপান নিয়া দিন পার করতাছি। মে দিবস-টিবস কী কইতারতাম না। আমরার মতো গরিব মানুষ কাম না করলে পেডে ভাত জুটতো না এইডাই কইতারবাম।’
গতকাল বুধবার ঈশ্বরগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ করার সময় এসব কথা বলেন তোঁতা মিয়া (৪৫)। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার আকুয়া এলাকায়। এ সময় কথা হয় আরেক নির্মাণ শ্রমিক একাদুল মিয়ার সঙ্গে। একাদুলও জানেন না মে দিবস কী। তিনি বলেন, ‘এই কাম কইরা খাইয়া-না খাইয়া বউ-পুলাপান লইয়া কোনোরহমে দিন পার করতাছি। বর্তমান বাজারো জিনিসপাতির দাম বাড়লেও আমরার মজুরি বাড়ে না। পাঁচ বছর আগেও যা পাইতাম, অহনও তাই পাই।’ তিনি বলেন, ‘কয়েক ট্যাহা সঞ্চয় করবাম এই বাও (উপায়) নাই। অসুখ অইয়া চার দিন ঘরে পইড়া থাকলে না খাইয়া থাহন লাগব। আমরার এইতা দিবস-টিবস দিয়া কী অইব?’
আজ বৃহস্পতিবার মহান মে দিবস। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের এই দিনটি সারাবিশ্বের শ্রমিক শ্রেণির কাছে গুরুত্বপূর্ণ। বহির্বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয় নানা আয়োজনে। কিন্তু যাদের অধিকার আদায়ের জন্য এ দিনটি পালন করা হয়– তারাই জানেন না দিবসটি সম্পর্কে। তাদের আরেকজন দিনমজুর রাজন মিয়া। রাজন জানান, এসব দিবসে তাদের মতো গরিব মানুষের কোনো লাভ-লোকসান নেই।