বিএনপির জেষ্ঠ্য যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, লামিয়ার উপর অত্যাচার এবং নির্যাতনের যে হুমকি এসেছিল, তিনি যে বিচার চাচ্ছিলেন, সেই সময় বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত হলে হয়ত আজকে তাকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হতো না। 

ঢাকায় পুলিশের গুলিতে নিহত পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়ার জানাজায় অংশ নেন তিনি। এর আগে রবিবার (২৭ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৭টায় তিনি এ কথা বলেন। 

এ সময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘‘আয়না ঘর থেকে বিচার বহির্ভূত হত্যার যে ভয়াবহ পরিস্থিতি আমরা দেখেছি, সেখান থেকে মুক্তির জন্য সর্বশেষ যে পৃথিবী কাঁপানো অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেখানে লামিয়ার পরিবারের প্রধান ব্যক্তি অংশ নিয়ে জীবন দিয়েছেন। তার অবদানের মধ্যে দিয়ে গোটা জাতি নিষ্কৃতি পেয়েছে। লামিয়ার বাবা জসিম উদ্দিনসহ অনেকের আত্মদানের মাধ্যমে আজ আপনাদের মাঝে কথা বলার সাহস পেয়েছি, মুক্ত পরিবেশ পেয়েছি।’’

আরো পড়ুন:

জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা

বরগুনায় দুই শিশুকে কুপিয়ে হত্যায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড

তিনি বলেন, ‘‘আদালত হচ্ছে বিচারের সর্বশ্রেষ্ঠ জায়গা। যেখান থেকে যদি মানুষ বিচ্যুতি হয়, বঞ্চিত হয়; সেই সমাজে নৈরাজ্যের কালো অন্ধকার নেমে আসে, সেই সমাজের মধ্যে পরিব্যক্ত হয় এক ভয়ঙ্কর হতাশা।  ফ্যাসিবাদের পতনের পরে এখনো কেন সেই পরিস্থিতি বিরাজ করছে।’’

গত ১৮ মার্চ পটুয়াখালী দুমকি উপজেলার পাংগাশিয়া ইউনিয়নে নিজ বাড়ি থেকে নানা বাড়ি যাওয়ার পথে শহীদ জসিম উদ্দিনের কন্যা লামিয়া সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর নিজেই থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করে। বাবার মৃত্যু এবং ধর্ষণের ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত লামিয়া শনিবার (২৬ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শেখেরটেক এলাকার ৬ নম্বর রোডের ভাড়া বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

লামিয়ার পরিবারকে সান্ত্বনা দিতে রুহুল কবির রিজভী শহীদ জসিম উদ্দিনের গ্রামের বাড়িতে আসেন। এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম জানাজায় অংশ নেন। 

গত ১৯ জুলাই ঢাকার মোহাম্মদপুরে জুলাই অভ্যুত্থানে পুলিশ গুলিতে জসিম উদ্দিন শহীদ হন।

ঢাকা/ইমরান/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর হত য

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ