কনস্টেবল নিয়োগে দালাল ও প্রতারকের ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক। গতকাল রোববার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান।

পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক বলেন, ‘লিখিত পরীক্ষায় বাছাই হওয়া ২৮৫ জন অংশ নেবে। প্রতি ৬-৭ জনের মধ্যে একজনের নিয়োগ হবে। প্রত্যেক প্রার্থীকে আমার ফোন নম্বর দিয়ে দিয়েছি। তাদের বলেছি, যদি কেউ টাকা চায়, তাহলে যেন আমাকে ফোন করে বলে আমি টাকাটা পাব কি না। আমি আমার জায়গা থেকে স্বচ্ছতার বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছি। আমি চাচ্ছি শতভাগ স্বচ্ছ একটা নিয়োগ হোক। টাকা দিলেই নিয়োগ দিয়ে দেবে—এমন ফাঁদে যেন কেউ পা না দেয়। আর যদি কেউ প্রতারণা বা দালাল চক্রের খপ্পরে পড়েন, পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে এহতেশামুল হক বলেন, ‘আমার বিবেক দংশন হচ্ছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ দেব আমি, আর দালালেরা কৌশলে টাকা নিয়ে যাবে। এটা কোনোভাবেই হতে পারে না। অস্বচ্ছতার কোনো জায়গা হবে না। এদের রোধ করা লাগবে।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ গ্রামের মো.

মিলন মিয়া (২৯) প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। তিনি নিজেকে সরকারি কর্মচারী পরিচয় দিয়ে পুলিশ কনস্টেবল পদের প্রার্থীদের চাকরি দেওয়ার কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেছেন বলে পুলিশের নজরে আসে। মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এহতেশামুল হক আরও বলেন, নিয়োগের জন্য শারীরিক বাছাই প্রক্রিয়ায় শতভাগ স্বচ্ছতা বজায় রাখা হয়েছে। প্রত্যেকের পরীক্ষার ভিডিও সংরক্ষণ করা আছে। অনেকে রিভিউ হিসেবে দেখতে এসে লজ্জিত হয়ে ফিরে গেছেন। তাঁরা বুঝতে পেরেছেন, কেন উত্তীর্ণ হতে পারেননি। তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষার সবকিছু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে হবে। লিখিত পরীক্ষার প্রশ্ন পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আসবে।

অংশগ্রহকারীদের খাতা সিলগালা করে পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো হবে। ৬০ নম্বরের মধ্যে ২২ দশমিক ৫০ প্রাপ্তরা লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হিসেবে গণ্য হবেন। মৌখিক পরীক্ষায় উপস্থিত হলেই ১৫ এর মধ্যে ৮ নম্বর পাবেন। অর্থাৎ কেউ ফেল করবেন না। যাঁরা ভালো করবেন, তাঁদের সর্বোচ্চ ১২ নম্বর দেওয়া হবে। দালালের মাধ্যমে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কনস্টেবল নিয়োগে আবেদন করেছেন ৫৮৭ জন। শারীরিক সক্ষমতা যাচাই পরীক্ষায় ৪১৭ জন অংশ নিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ২৮৭ জন। দুজন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফি জমা দিতে পারেননি। লিখিত পরীক্ষার জন্য মনোনীত হয়েছেন ২৮৫ জন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল খ ত পর ক ষ পর ক ষ র পর ক ষ য়

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ