আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না: মির্জা ফখরুল
Published: 28th, April 2025 GMT
মায়ানমারের বেসামরিক লোকজনের কাছে মানবিক করিডোর দেয়ার ব্যাপারে রাজনীতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিষয়টিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একক সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছেন তিনি।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে শেখ বাজার এলাকায় গণসংযোগের সময় বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
মানবিক করিডোর সম্পর্কে জনগণকে বোঝাতে গিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘‘গাজাতে এখন যুদ্ধ চলছে। সেখানে যাওয়া যায় না৷ কিন্তু জাতিসংঘ থেকে সেখানে খাবার ওষুধ পাঠাতে হলে জর্ডান থেকে অথবা মিশর থেকে রাস্তা তৈরি করে ওদিক দিয়ে গাজাতে পাঠানো হচ্ছে। ভালো কথা মানবিকতার দরকার আছে। আমার কথা হচ্ছে আজকে বাংলাদেশকে ওই জায়গাতে পৌঁছাতে হলো। যে বাংলাদেশকে একটা হিউম্যান পেসেজ (মানবিক করিডোর) দিতে হচ্ছে। এটা অনেক বড় সিদ্ধান্ত। এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমাদের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা জড়িত আছে। সরকারের উচিত ছিল বিষয়টি নিয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে কথা বলা। তারা এটা না করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে হিউম্যান পেসেজ দিচ্ছে।’’
মহাসচিব আরও বলেন, ‘‘আমাদের মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে কোনো আপত্তি নাই। জাতিগতভাবে সাহায্য করতে আমাদের আপত্তি নাই। কিন্তু এটা হতে হবে সকল মানুষের সমর্থনে। আমরা আরেকটা গাজায় পরিণত হতে চাই না। আমরা যুদ্ধের মধ্যে জড়াতে চাই না। এখানে এসে অন্য কেউ গোলমাল করুক আমরা চাই না। একে তো রোহিঙ্গাকে নিয়ে আমরা সমস্যায় আছি। আবার মানবিক করিডোর দিয়ে কোন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হোক সেগুলো আলোচনা করে দেয়া উচিত ছিলো বলে আমরা মনে করি।’’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘আমি আজ এখানে ভোট চাইতে আসিনি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যে আহ্বান প্রতিশোধ পরায়ণ না হয়ে সকলে মিলে ভালোবাসা দিয়ে দেশ গড়ার সে কথা বলতে এসেছি। আসুন আমরা সকলে মিলে একটা ভালোবাসার দেশ গড়ি।’’
এ সময় জেলা ও উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন।
হিমেল//
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আসামিকে বাদ দিতে হলফনামা, বাদী কৃষক দল নেতাকে শোকজ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় জুলাই আন্দোলনে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় পাঁচ আসামির নাম বাদ দিতে আদালতে দুটি হলফনামা দিয়েছেন বাদী কৃষক দল নেতা শাহ আলম পাঠান। টাকার বিনিময়ে তিনি হলফনামা দিয়েছেন, এমন অভিযোগ ওঠার পর তাঁকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ দিয়েছে জেলা কৃষক দল।
শাহ আলম পাঠান নাসিরনগর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব। ৪ জুন পাঁচজনের নাম মামলা থেকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেন শাহ আলম। সম্প্রতি বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা তৈরি হয়।
যে পাঁচজনকে বাদ দিতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে, তাঁরা হলেন উপজেলার নূরপুর গ্রামের মো. মাসুদ, গোকর্ণ গ্রামের শেখ মো. জোবায়ের হাসান, বেনিপাড়ার মামুন মিয়া, টেকানগরের জসিম উদ্দিন কায়কোবাদ ও নূরপুর গ্রামের শামসুল আরেফিন মিঞা। তাঁরা যথাক্রমে মামলার ৯৭, ৭৯, ৯১, ১০৫ ও ৮৭ নম্বর আসামি। তাঁরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করলেও কোনো পদ–পদবি ছিল না।
হলফনামা দেওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর গত শুক্রবার রাতে জেলা কৃষক দলের দপ্তরে দায়িত্বে থাকা যুগ্ম আহ্বায়ক মো. আল আমিন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শাহ আলমকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। সাত দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয় জেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক আবু শামীম মো. আরিফ ও সদস্যসচিব জিল্লুর রহমান এক যৌথ বিবৃতিতে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে শাহ আলম পাঠানের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা আগামী সাত দিনের মধ্যে জেলার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের কাছে সশরীর হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৪ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ের সামনের সড়কে সরকার পতনের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে জড়ো হন। তখন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় শাহ আলম ১১৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৩০০ জনকে আসামি করে আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে এজাহারটি মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করতে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন। গত ২ নভেম্বর মামলাটি থানায় নথিভুক্ত হয়। ওই মামলার পাঁচ আসামিকে বাদ দিতে আদালতে হলফনামা দেওয়া হয়েছে।
একটি হলফনামায় বাদী উল্লেখ করেন, লিখিত এজাহারে মাসুদ, জোবায়ের, মামুন ও জসিম উদ্দিনের নাম আসামির শ্রেণিভুক্ত ছিল না। অসাবধানতার কারণে চারজনের নাম আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাঁদের চারজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না, জানেন না। খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, তাঁরা কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন।
আরেকটি হলফনামায় বলা হয়, আসামি শামসুল আরেফিন মিয়া ২০১৪ সালে উপজেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি, সাবেক সদস্যসচিব ও ২০০৩ সালের উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য ছিলেন। অসাবধানতাবশত ভুলের জন্য তিনি (শাহ আলম) অনুতপ্ত এবং অনুশোচনা প্রকাশ করছেন।
তবে বিষয়টি জানাজানির পর সমালোচনামুখর হন বিএনপি ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতা। তাঁরা বলেন, শাহ আলম ২০২০ সালে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেনের সঙ্গে কেক কেটে মুজিব বর্ষ পালন করেন। তাঁর বাবা মো. ইয়াছিন পাঠান উপজেলার চাতলপাড় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
নাসিরনগর সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সাবেক আহ্বায়ক ইয়াছিন মাহমুদ ফেসবুক পোস্টে লেখেন, শাহ আলম মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে হলফনামা দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় যাঁরা ছিলেন, এখন তাঁরাই আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনে লিপ্ত।
তবে কৃষক দলের সদস্যসচিব শাহ আলম পাঠান বলেন, ‘পাঁচজনকে মামলায় ভুলবশত সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাই হলফনামা দিয়েছি। জেলা কৃষক দলের কাছে তথ্য গিয়েছে যে আমি টাকার বিনিময়ে এমন করেছি, যা মোটেও সত্য নয়। স্থানীয় বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’
নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, মূল ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।