‘মানবিক করিডর’ নিয়ে উদ্বিগ্ন বিএনপি, সরকারের কাছে জানতে চাইবে
Published: 29th, April 2025 GMT
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারের রাখাইনে সহায়তা পাঠানোর জন্য ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনে অন্তর্বর্তী সরকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে মর্মে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে খুব উদ্বিগ্ন বিএনপি। দলের স্থায়ী কমিটির সভায় এ উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এ বিষয়ে আসলে কী হয়েছে, তা সরকারের কাছে জানতে চাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে গতকাল সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির এই সভায়।
বিএনপির চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত স্থায়ী কমিটির সভায় নেতাদের কেউ কেউ ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হন বলে জানা গেছে।
সভাসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থায়ী কমিটির এই সভায় কক্সবাজার হয়ে রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডর’ স্থাপনে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের যে খবর বের হয়েছে, সে বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ বিষয়ে শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে দলীয় প্রতিক্রিয়া জানানোর সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্ষদ স্থায়ী কমিটির সদস্যরা মনে করেন, গৃহযুদ্ধে জর্জর মিয়ানমারের রাখাইনে ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর জন্য ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত কোনো অনির্বাচিত সরকার নিতে পারে না। এর সঙ্গে দেশের নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং ভৌগোলিক অখণ্ডতার প্রশ্ন জড়িত। তাই এ ধরনের স্পর্শকাতর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোসহ জাতীয় নিরাপত্তাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরকারের আলোচনা করা উচিত। সেটা হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, এই ইস্যুতে সরকারকে চিঠি দেবে বিএনপি। প্রয়োজনে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। সরকারকে এমন পরিকল্পনা থেকে সরিয়ে আনতে প্রয়োজনে রাজনৈতিক চাপ তৈরি করবে। বিএনপি সরকারকে সতর্ক করবে যে এমন পদক্ষেপ বাংলাদেশকে ফিলিস্তিনের মতো যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করতে পারে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘জনগণকে অন্ধকারে রেখে এমন সিদ্ধান্ত অনভিপ্রেত। যদি বিষয়টি একান্তই জরুরি হতো, তাহলে সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত।’
এর আগে গত রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে শর্ত সাপেক্ষে মিয়ানমারের বেসামরিক লোকজনের জন্য করিডর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তিনি বলেন, ‘এতটুকু আপনাদের বলতে পারি, নীতিগতভাবে আমরা এতে সম্মত। কারণ, এটি একটি হিউম্যানিটেরিয়ান প্যাসেজ (ত্রাণসহায়তা পৌঁছানোর জন্য মানবিক করিডর) হবে। কিন্তু আমাদের কিছু শর্ত রয়েছে, সেই বিস্তারিততে যাচ্ছি না। সেই শর্তাবলি যদি পালিত হয়, আমরা অবশ্যই জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
এ খবর প্রকাশের পরদিন গতকাল সন্ধ্যায় নিজ জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে দলীয় এক কর্মসূচিতে এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানান বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আজ একটা খবর দেখে চিন্তিত হলাম। বাংলাদেশের যে বৈদেশিক উপদেষ্টা তৌহিদ সাহেব বলেছেন, ‘‘আরাকানদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য আমরা একটা হিউম্যানিটরিয়ান প্যাসেজ, মানবিক একটা প্যাসেজ দিতে চাচ্ছি।” অনেক কঠিন কথা, বোঝানো মুশকিল হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম মনে করেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যোগাযোগের জন্য ‘মানবিক করিডর’ দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। কারণ, এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের শান্তিশৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা জড়িত।
অবশ্য প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আজ মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা বাসসকে বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে জানাতে চাই, সরকার তথাকথিত মানবিক করিডর নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো সংস্থার সঙ্গে কোনো আলোচনা করেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের অবস্থান হলো জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে যদি মানবিক সহায়তা প্রদান করা হয়, তবে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে আগ্রহী থাকবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ত গত স দ ধ ন ত ন র জন য র জন ত ক ব এনপ র সরক র র র খ ইন কম ট র
এছাড়াও পড়ুন:
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু এ বছরই: রুশ রাষ্ট্রদূত
চলতি বছরের শেষ নাগাদ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেক্সান্ডার ম্যান্টিতস্কি। রোববার রাশিয়া দিবস উপলক্ষে ঢাকায় আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ বছর রাশিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ের ৮০ বছর উদযাপন করছে। একইসঙ্গে সোভিয়েত পারমাণবিক শিল্প প্রতিষ্ঠারও ৮০ বছর। এই গৌরবময় সময়ে রূপপুর প্রকল্পের অগ্রগতি আমাদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।’ তিনি জানান, রুশ ও বাংলাদেশি প্রকৌশলীদের যৌথ প্রচেষ্টায় রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে এবং প্রথম ইউনিট উদ্বোধনের সব প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
রাষ্ট্রদূত বলেন, রূপপুর প্রকল্প শুধু প্রযুক্তিগত নয়, রাশিয়া-বাংলাদেশ কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক অংশীদারত্বের একটি উজ্জ্বল নিদর্শন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ জ্বালানি খাতে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক সংস্থা ‘রোসাটম’ এর সহায়তায় নির্মিত হচ্ছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার প্রতিটি ইউনিটের উৎপাদনক্ষমতা ১২০০ মেগাওয়াট। ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্মাণকাজ শুরু হয় এবং বর্তমানে প্রকল্পের প্রথম ইউনিট পরীক্ষামূলক চালুর প্রস্তুতিতে রয়েছে।
উল্লেখ্য, রূপপুর প্রকল্প বাস্তবায়নে রাশিয়ার প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন রয়েছে। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহত্তম অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর অন্যতম।