নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই ছিটকে গেলেন রুডিগার
Published: 29th, April 2025 GMT
আন্তোনিও রুডিগার কয় ম্যাচ নিষিদ্ধ হবেন—এটাই ছিল আলোচনা। কিন্তু সেই আলোচনার ভেতরেই ভেসে এল নতুন খবর। মঙ্গলবার হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করানোর পর মৌসুমই শেষ হয়ে গেছে রিয়াল মাদ্রিদের এই জার্মান সেন্টারব্যাকের।
রুডিগারের নিষিদ্ধ হওয়ার আলোচনার কারণ গত শনিবারের কোপা দেল রে ফাইনাল, যেখানে বার্সেলোনার কাছে ৩–২ গোলে হারে রিয়াল। শেষ বাঁশি বাজার মিনিট দেড়েক আগে রেফারির সিদ্ধান্ত পছন্দ না হওয়ায় বেঞ্চ থেকে তেড়ে গিয়েছিলেন রুডিগার। সতীর্থরা তাঁকে টেনে ধরে থামান। তখন রিয়ালের বেঞ্চ থেকে রেফারি রিকার্দো দে বুর্গোস বেনগোচেয়ার প্রতি কিছু একটা ছুড়ে মারা হয়। বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এক টুকরা বরফ ছুড়ে মারা হয়েছিল রেফারির প্রতি এবং এই কাজটি রুডিগারই করেছেন।
আরও পড়ুনচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরও লিভারপুলের কোন খেলোয়াড়েরা পদক পাবেন না৬ ঘণ্টা আগেতখনই আলোচনা শুরু হয়, এমন কাজের জন্য বড় ধরনের শাস্তি পেতে পারেন রুডিগার। স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশনের (আরএফইফ) আচরণবিধির ১০১ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রেফারিকে কোনো কিছু দিয়ে আঘাত করার সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে ১২ ম্যাচের নিষেধাজ্ঞাও পেতে পারেন তিনি। বিবিসি জানিয়েছে, তাঁর এই আচরণকে আরও মারাত্মক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হলে তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ এক বছরও নিষিদ্ধ হতে পারেন রুডিগার। আগামী কিছুদিনের মধ্যে এ বিষয়ে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানাবে আরএফইফের শৃঙ্খলা কমিটি।
রুডিগার অবশ্য নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চেয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে। কিন্তু তাতেও তাঁর শাস্তি না–ও কমতে পারে। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ৪ থেকে সর্বোচ্চ ১২ ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন রুডিগার।
কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞার খড়্গ নেমে আসার আগেই রুডিগার মাঠ থেকেই ছিটকে পড়লেন। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বাঁ হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করানোয় ছয় থেকে সর্বোচ্চ আট সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে তাঁকে। যদিও রিয়ালের বিবৃতিতে রুডিগারকে কত দিন মাঠের বাইরে থাকতে হবে তা জানানো হয়নি, ‘বাঁ হাঁটুর বাইরের অংশের মেনিসকাস ছিঁড়ে যাওয়ায় রুডিগারের আজ অস্ত্রোপচার করানো হয়।’
আরও পড়ুনযে দুটি দলের কোচ হওয়া ক্লপের স্বপ্ন৮ ঘণ্টা আগেইএসপিনকে সূত্র জানিয়েছে, রুডিগারকে দুই মাস কিংবা আট সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে। এর অর্থ হলো লা লিগায় তাঁর মৌসুম শেষ হয়ে গেছে এবং ১৪ জুন থেকে যুক্তরাস্ট্রে শুরু হতে যাওয়া ক্লাব বিশ্বকাপেও খেলতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। লা লিগা পয়েন্ট টেবিলে ৩৩ ম্যাচে ৭৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে থাকা বার্সেলোনার সঙ্গে ৪ পয়েন্টের ব্যবধানে পিছিয়ে দুইয়ে আছে রিয়াল। ৩৩ ম্যাচে রিয়ালের সংগ্রহ ৭২ পয়েন্ট। দুই দলই আর ৫টি করে ম্যাচ খেলবে।
সূত্র ইএসপিএনকে জানিয়েছে, রিয়াল চায় আগামী প্রাক্–মৌসুমে রুডিগারকে ফিট অবস্থায় পেতে। তার আগে তাঁকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না রিয়াল। যদিও রুডিগার ইনস্টাগ্রামে জানিয়েছেন, ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়ালের হয়ে এবং নেশনস লিগে জার্মানির হয়ে খেলতে তিনি ‘সবকিছুই করবেন’।
চলতি মৌসুমে রিয়ালের জন্য অপরিহার্য ছিলেন রুডিগার। একাডেমি থেকে আসা রাউল আসেনসিও ছাড়া রিয়াল কোচ কার্লো আনচেলত্তির হাতে সেন্টারব্যাক হিসেবে শুধু রুডিগারই ছিলেন। কতটা অপরিহার্য ছিলেন রুডিগার সেটা জানাচ্ছে ট্রান্সফারমার্কেট। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে রিয়ালের হয়ে রুডিগারের (৪১০১ মিনিট) চেয়ে শুধু ফেদে ভালভের্দেই বেশি সময় মাঠে ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।