জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। কেউ কেউ স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে করার পক্ষে। আবার কারও মতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা কঠিন হবে।

মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জন–আকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। ‘গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম’ এ সভার আয়োজন করে।

সভায় স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। তিনি ফোরামের সংস্কার প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে জেলার সামগ্রিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান এবং জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও সেবাদানকারী দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে ‘জেলা পরিষদ কার্যালয়ে রূপান্তর’ করা। এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা জেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন একজন জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সভায় উপস্থিত অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সদস্য ও এনআরডিএসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল সভা সঞ্চালনা করেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজন। অতীতে দলীয় সরকারের প্রভাবমুক্ত কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কঠিন হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থার আদলে জেলা সরকারকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, এখন তা ভাবতে হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। ফলে ডিসি, ইউএনওদের আমরা “স্যার” ডাকি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে ১৬ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের কাছে, সেখানেও জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার কথা বলেছি আমরা। প্রতীক ও দলীয় নির্বাচন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় এবি পার্টির মজিবুর রহমান (মঞ্জু) বলেন, ‘আমাদের সংস্কার যেমন প্রয়োজন, তেমনি মানসিকভাবে পরিবর্তন আনতে হবে স্থানীয় সরকার সংস্কারের ক্ষেত্রেও। আমাদের সংস্কারও লাগবে, পাশাপাশি যোগ্য লোকদের যোগ্য জায়গায় বসানোর কাজও করতে হবে।’

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব জটিলতা বাড়াচ্ছে। সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে এখানে আরও অনিয়ম বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলো তড়িঘড়ি করে সংস্কার করে ‘জুলাই চার্টার’ দিয়ে নির্বাচনের দিকে যেতে চায়, তারা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয় বলে মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করতে পারলে স্থানীয় পরিষেবা প্রাপ্তিতে নাগরিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন। তাঁরা মূলধারায় এখনো পৌঁছাননি। সংরক্ষণের মাধ্যমে রূপক অর্থে নারীদের না রেখে, তাঁদের কার্যকর ক্ষমতায়ন কীভাবে করা যায়, তা ভাবতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন প্রমুখ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র স স ক র প রস ত ব আম দ র র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিকে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষার শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ

দুই মাসের মধ্যে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা’ পরিবর্তন করল সরকার। সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার সংশোধিত বিধিমালা গেজেটে প্রকাশ করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এর আগে গত ২৮ আগস্ট ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫’ -এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল। এতে অন্যান্য বিষয়বস্তুর পাশাপাশি সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল।

এরপর ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বিভিন্ন সভা, সেমিনার, বিক্ষোভ সমাবেশে সংগীত শিক্ষকের বদলে ধর্ম শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার দাবি করেন। সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিল করা না হলে তাঁরা আন্দোলনেরও হুমকি দেন।

আরও পড়ুনপ্রাথমিকে কেন সংগীত শিক্ষক, বিরোধিতায় কারা, কী বলছেন শিক্ষকেরা২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

গত আগস্টে জারি করা বিধিমালায় চার ধরনের শিক্ষকের কথা বলা ছিল। সেগুলো ছিল প্রধানশিক্ষক, সহকারী শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক (সংগীত) ও সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা)। সংশোধিত বিধিমালায় কেবল প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের কথা বলা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ