জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ভিন্নমত
Published: 30th, April 2025 GMT
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন কয়েকটি রাজনৈতিক দলের নেতারা। কেউ কেউ স্থানীয় নির্বাচন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে করার পক্ষে। আবার কারও মতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা কঠিন হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণ ও জন–আকাঙ্ক্ষার আলোকে স্থানীয় সরকার সংস্কার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা তাদের মতামত তুলে ধরেন। ‘গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরাম’ এ সভার আয়োজন করে।
সভায় স্থানীয় সরকার সংস্কার বিষয়ে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সমন্বয়কারী এবং ওয়েভ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মহসিন আলী। তিনি ফোরামের সংস্কার প্রস্তাবের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে জেলার সামগ্রিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান এবং জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও সেবাদানকারী দপ্তরগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের উদ্দেশ্যে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়কে ‘জেলা পরিষদ কার্যালয়ে রূপান্তর’ করা। এ ক্ষেত্রে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বা জেলা পরিষদকে সাচিবিক সহায়তা দেবেন একজন জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
সভায় উপস্থিত অধিকাংশ রাজনীতিবিদ এ প্রস্তাব সমর্থন করেন। গভর্ন্যান্স অ্যাডভোকেসি ফোরামের সদস্য ও এনআরডিএসের নির্বাহী পরিচালক আবদুল আউয়াল সভা সঞ্চালনা করেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রয়োজন। অতীতে দলীয় সরকারের প্রভাবমুক্ত কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন কঠিন হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে প্রাদেশিক সরকারব্যবস্থার আদলে জেলা সরকারকে কীভাবে শক্তিশালী করা যায়, এখন তা ভাবতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘ঔপনিবেশিক সংস্কৃতি থেকে আমরা এখনো বের হতে পারিনি। ফলে ডিসি, ইউএনওদের আমরা “স্যার” ডাকি। আমাদের দলের পক্ষ থেকে যে ১৬ দফা সুপারিশ দেওয়া হয়েছে কমিশনের কাছে, সেখানেও জেলা পরিষদকে শক্তিশালী করার কথা বলেছি আমরা। প্রতীক ও দলীয় নির্বাচন থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় এবি পার্টির মজিবুর রহমান (মঞ্জু) বলেন, ‘আমাদের সংস্কার যেমন প্রয়োজন, তেমনি মানসিকভাবে পরিবর্তন আনতে হবে স্থানীয় সরকার সংস্কারের ক্ষেত্রেও। আমাদের সংস্কারও লাগবে, পাশাপাশি যোগ্য লোকদের যোগ্য জায়গায় বসানোর কাজও করতে হবে।’
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের কিছু প্রস্তাব জটিলতা বাড়াচ্ছে। সেখানে কাউন্সিলরদের ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে এখানে আরও অনিয়ম বাড়বে। রাজনৈতিক দলগুলো তড়িঘড়ি করে সংস্কার করে ‘জুলাই চার্টার’ দিয়ে নির্বাচনের দিকে যেতে চায়, তারা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার প্রস্তাবগুলো নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী নয় বলে মনে হচ্ছে।
বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি দলীয় প্রভাবমুক্ত হয়ে তাদের কার্যক্রমের বাস্তবায়ন করতে পারলে স্থানীয় পরিষেবা প্রাপ্তিতে নাগরিক অন্তর্ভুক্তি বাড়বে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা বলেন, রাষ্ট্রব্যবস্থায় নারীরা এখনো পিছিয়ে আছেন। তাঁরা মূলধারায় এখনো পৌঁছাননি। সংরক্ষণের মাধ্যমে রূপক অর্থে নারীদের না রেখে, তাঁদের কার্যকর ক্ষমতায়ন কীভাবে করা যায়, তা ভাবতে হবে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বিএনপির প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা, বাসদের সহকারী সাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন, সিপিবির প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স থ ন য় সরক র স স ক র প রস ত ব আম দ র র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।
‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’
আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’
গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।
জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।
বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’
গণজমায়েতে র্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।