‘হঠাৎ কইর্যা খোলা থিক্যা খালি কালা ধুমা বাইরালো, সব শ্যাষ অইয়্যা গেল’
Published: 3rd, May 2025 GMT
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তিনটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় ১৫ একর জমির ধানসহ বিভিন্ন সবজি ও ফল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। ওই ভাটাগুলো উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে অবস্থিত।
অনুমোদনহীন ওই ভাটাগুলো হলো নিউ রমিজ ব্রিকস (আরবিসি), এমএসবি ব্রিকস ও বাটা ব্রিকস। ভাটাগুলো বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে চারবার অভিযান চালিয়েছে। ওই অভিযানের সময় ভাটার কিলন, চিমনি ও কাঁচা ইট ধ্বংস এবং জরিমানাও আদায় করা হয়। এরপরও ভাটার মালিকেরা আইন না মেনে ড্রাম্প শিটের চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করেন।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, পৌর এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা থেকে ন্যূনতম এক কিলোমিটার ও সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার, পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে আধা কিলোমিটার, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।
গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমওএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। ওই সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে দেশে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন।
তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে ওই ভাটাগুলো চালু হয়। অনুমোদনহীন ওই তিনটি ভাটা বন্ধ করতে টাঙ্গাইলের পরিবেশ অধিদপ্তর প্রথম অভিযান চালিয়ে প্রতিটি ভাটাকে ৪ লাখ টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা জরিমানা করে। একই সঙ্গে ভাটা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে ভাটা চালু রাখায় আরও তিনবার অভিযান চালিয়ে ভাটার কিলন, চিমনি ও কাঁচা ইট ধ্বংস করা হয়। এরপরও ভাটা চালু রাখায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার সূত্রধর বাদী হয়ে ভাটাগুলোর নামে গত ১৭ মার্চ মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।
থানায় মামলা দায়েরের পরও ভাটার মালিকেরা থেমে যাননি। তাঁরা ভাটায় ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো অব্যাহত রাখেন। তবে ১০ দিন আগে এমএসবি ব্রিকস, পাঁচ দিন আগে নিউ রমিজ ব্রিকস ও বাটা ব্রিকস ভাটার আগুন নেভানোর জন্য বিষাক্ত গ্যাস ছাড়ে। এতে ভাটাসংলগ্ন জমির ধান, সবজি, গাছের আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফল নষ্ট হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই তিনটি ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় ১৫ এর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ নিয়ে ভাটার মালিকেরা তেমন কোনো কথা বলছেন না। কোনো ক্ষতিপূরণও দেননি।
বহুরিয়া গ্রামের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা মো.
গৃহবধূ শিরিন সুলতানা বলেন, ‘কয় দিন আগে হঠাৎ কইর্যা খোলা থিক্যা খালি কালা ধুমা বাইরালো। শেষ আগুন ছাড়ল। বাড়িঘর, তরিতরকারি সব শ্যাষ অইয়্যা গেল। এই বিল্লালের খোলায় (নিউ রমিজ ব্রিকস) এই কামগুলা করছে।’
আরেক গৃহবধূ রাজিয়া বেগম বলেন, ‘বিষাক্ত গ্যাসে তাঁদের জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক ধান নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে।’
জানতে চাইলে মুঠোফোনে রমিজ ব্রিকসের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, তাঁর ভাটার গ্যাসে অন্য কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি যে জমি বর্গা নিয়ে ধানের আবাদ করেছিলেন, সেই জমির ধান কিছুটা নষ্ট হয়েছে।
এমএসবি ব্রিকসের মালিক ফরিদ হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের শতাংশপ্রতি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন জানান, ভাটাগুলো স্থাপনের বিষয়ে কৃষি বিভাগ কোনো ছাড়পত্র দেয়নি। ধান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইটভ ট
এছাড়াও পড়ুন:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তরুণ গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে মো. রাব্বি মিয়া (২০) নামের এক তরুণ আহত হওয়ার ঘটনায় ১০ জনের নামে মামলা হয়েছে। গুলির ঘটনায় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শনিবার সকালে আহত রাব্বির মা জোহরা খাতুন বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
গুলিবিদ্ধ রাব্বি উপজেলার শাহবাজপুর গ্রামের হেলাল মিয়ার ছেলে। বর্তমানে রাব্বি পরিবারের সঙ্গে নবীনগর পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝিকাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন। তিনি পেশায় একজন অ্যাম্বুলেন্সচালক।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন নবীনগর উপজেলার টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. আতাউর রহমান (৪৮), জাহিদ মিয়া (১৯), জুবায়েদ মুন্সী (১৯), মো. আহসান উল্লাহ (৪৪) ও মো. জসিম উদ্দিন (৪৪)। তাঁরা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মো. খুরশিদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ নভেম্বর টিঅ্যান্ডটিপাড়ার বাসিন্দা মো. সানি (২০) ও একই পাড়ার মো. জিসানের মধ্যে কথা–কাটাকাটি ও তর্ক হয়। একপর্যায়ে ঝগড়ার সময় সানি জিসানকে ছুরিকাঘাত করেন। এ ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ সালিস ডাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে নবীনগর পৌর এলাকার কালীবাড়ি মোড়ের জমিদারবাড়ির মাঠে সানিসহ তাঁর লোকজন ও জিসানসহ তাঁর লোকজন সালিসে বসেন।
গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত রাব্বি সানির পক্ষের সমর্থক। তবে সালিসের রায়ে সানি ও তাঁর লোকজন সম্মত হননি। সালিস ছেড়ে ওঠার সময় জিসানসহ তাঁর লোকজন সানির লোকজনের ওপর হামলা চালান। একপর্যায়ে জিসান বন্দুক বের করে গুলি করেন। এতে রাব্বি গুলিবিদ্ধ হন এবং প্রতিপক্ষের হামলায় সানি আহত হন।
গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় লোকজন রাব্বিকে উদ্ধার করে নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
নবীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, তরুণের বুকের বাঁ পাশের পাঁজরে গুলি লেগেছে।
নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল মধ্যরাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে গুলির ঘটনার সঙ্গে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।