টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলায় তিন ফসলি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা তিনটি ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় ১৫ একর জমির ধানসহ বিভিন্ন সবজি ও ফল নষ্ট হয়ে গেছে। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। ওই ভাটাগুলো উপজেলার বহুরিয়া ইউনিয়নের বহুরিয়া গ্রামে অবস্থিত।

অনুমোদনহীন ওই ভাটাগুলো হলো নিউ রমিজ ব্রিকস (আরবিসি), এমএসবি ব্রিকস ও বাটা ব্রিকস। ভাটাগুলো বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তর ইতিমধ্যে চারবার অভিযান চালিয়েছে। ওই অভিযানের সময় ভাটার কিলন, চিমনি ও কাঁচা ইট ধ্বংস এবং জরিমানাও আদায় করা হয়। এরপরও ভাটার মালিকেরা আইন না মেনে ড্রাম্প শিটের চিমনি দিয়ে ইট পোড়ানোর কাজ করেন।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩–এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে, আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, পৌর এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, বাগান বা জলাভূমি, কৃষিজমি, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা থেকে ন্যূনতম এক কিলোমিটার ও সরকারি বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার, পাহাড় বা টিলার পাদদেশ থেকে আধা কিলোমিটার, রেলপথ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ।

গত বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ ব্রিকস ম্যানুফ্যাকচারিং ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিবিএমওএ) নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা হয়। ওই সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ইটভাটাজনিত বায়ুদূষণ রোধে দেশে আর কোনো নতুন ইটভাটার ছাড়পত্র দেওয়া হবে না বলে উল্লেখ করেন।

তবে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও গত বছরের নভেম্বরের শুরুতে ওই ভাটাগুলো চালু হয়। অনুমোদনহীন ওই তিনটি ভাটা বন্ধ করতে টাঙ্গাইলের পরিবেশ অধিদপ্তর প্রথম অভিযান চালিয়ে প্রতিটি ভাটাকে ৪ লাখ টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা জরিমানা করে। একই সঙ্গে ভাটা বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে ভাটা চালু রাখায় আরও তিনবার অভিযান চালিয়ে ভাটার কিলন, চিমনি ও কাঁচা ইট ধ্বংস করা হয়। এরপরও ভাটা চালু রাখায় পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক বিপ্লব কুমার সূত্রধর বাদী হয়ে ভাটাগুলোর নামে গত ১৭ মার্চ মির্জাপুর থানায় মামলা করেন।

থানায় মামলা দায়েরের পরও ভাটার মালিকেরা থেমে যাননি। তাঁরা ভাটায় ইট প্রস্তুত ও পোড়ানো অব্যাহত রাখেন। তবে ১০ দিন আগে এমএসবি ব্রিকস, পাঁচ দিন আগে নিউ রমিজ ব্রিকস ও বাটা ব্রিকস ভাটার আগুন নেভানোর জন্য বিষাক্ত গ্যাস ছাড়ে। এতে ভাটাসংলগ্ন জমির ধান, সবজি, গাছের আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফল নষ্ট হয়ে যায়।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে এলাকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওই তিনটি ভাটার বিষাক্ত গ্যাসে প্রায় ১৫ এর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এ নিয়ে ভাটার মালিকেরা তেমন কোনো কথা বলছেন না। কোনো ক্ষতিপূরণও দেননি।

বহুরিয়া গ্রামের পূর্ব পাড়ার বাসিন্দা মো.

শান্তি মিয়া বলেন, ‘সরকার থিক্যা চিমনি ভাইঙ্গা ফালাইছিল। নিয়মের বাইরে টিনের চুঙ্গি দিয়্যা ইট পুড়াইছে। এইসব খোলার কারণে আমাগো গাছপালা যা আছে, বাড়ির টিন সব মনে হয় পুইড়্যা যাইতাছে।’

গৃহবধূ শিরিন সুলতানা বলেন, ‘কয় দিন আগে হঠাৎ কইর‌্যা খোলা থিক্যা খালি কালা ধুমা বাইরালো। শেষ আগুন ছাড়ল। বাড়িঘর, তরিতরকারি সব শ্যাষ অইয়্যা গেল। এই বিল্লালের খোলায় (নিউ রমিজ ব্রিকস) এই কামগুলা করছে।’

আরেক গৃহবধূ রাজিয়া বেগম বলেন, ‘বিষাক্ত গ্যাসে তাঁদের জমির ধান পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। আবার অনেক ধান নষ্ট হয়ে চিটা হয়ে গেছে।’

জানতে চাইলে মুঠোফোনে রমিজ ব্রিকসের মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, তাঁর ভাটার গ্যাসে অন্য কারও কোনো ক্ষতি হয়নি। তিনি যে জমি বর্গা নিয়ে ধানের আবাদ করেছিলেন, সেই জমির ধান কিছুটা নষ্ট হয়েছে।

এমএসবি ব্রিকসের মালিক ফরিদ হোসেন বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের শতাংশপ্রতি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা ও সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা হিসেবে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাহমুদা খাতুন জানান, ভাটাগুলো স্থাপনের বিষয়ে কৃষি বিভাগ কোনো ছাড়পত্র দেয়নি। ধান নষ্ট হওয়ার বিষয়টি তিনি জানেন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইটভ ট

এছাড়াও পড়ুন:

নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া জেনারেটর উদ্ধার, যুবক গ্রেপ্তার

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরাল পাগলার দরবার থেকে চুরি হওয়া একটি জেনারেটর উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় মো. মিজানুর রহমান (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়।

গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নে অভিযান চালিয়ে মিজানুরকে গ্রেপ্তার করে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও গোয়ালন্দ ঘাট থানা-পুলিশ। মিজানুরের বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার লক্ষ্মীকোল সোনাকান্দর গ্রামে।

আরও পড়ুননিহতের বাবার মামলায় গ্রেপ্তার আরও ২, দেড় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির দাবি১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

এ নিয়ে দুই মামলায় মোট ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. শরীফ আল রাজীব।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ৫ সেপ্টেম্বর গোয়ালন্দের নুরাল পাগলার দরবারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মিজানুর রহমান জেনারেটর চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন—এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। পরে ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে মিজানুরকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। মিজানুরকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো ও হত্যার ঘটনায় হওয়া মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তাঁকে রাজবাড়ীর আদালতে সোপর্দ করার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুননুরাল পাগলার দরবারে হামলায় হত্যা মামলা, মসজিদের ইমামসহ চারজন গ্রেপ্তার০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ওই দিন পুলিশের ওপর হামলা ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় উপপরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করে ৬ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। এই মামলায় মোট ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে দরবারে হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, হত্যা ও কবর থেকে লাশ তুলে মহাসড়কে পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় নিহত ভক্ত রাসেল মোল্লার বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে ৮ সেপ্টেম্বর মামলা করেন। ওই মামলায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় এখন পর্যন্ত মিজানুরসহ নয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ