পরিবার বোঝে আমি কেমন ছেলে, সুতরাং চাপ নেই: শামীম হাসান
Published: 7th, May 2025 GMT
ছোট পর্দার অভিনেতা শামীম হাসান সরকার। গতকাল তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের হুমকি, গায়ে হাত তোলা ও মাদক সেবনের অভিযোগ করেছেন অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে।
অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা আপনার বিরুদ্ধে ধর্ষণের হুমকিসহ আরও কয়েকটি অভিযোগ তুলেছেন?
দেখুন, বিষয়টি নিয়ে আমি গতকালই কিছু কথা বলেছে। তিনি যে বিষয়টি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন তার সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তার বক্তব্য শুনেই সবাই বুঝতে পাবে।
ঘটনার সূত্রপাতটা আসলে কোথায়?
এখানে সূত্রপাত বলতে কিছু নেই। আমার তিনি আগেও অভিনয় করেছেন। নতুন একটি নাটকে তিনি আমার সঙ্গে কাজ করছেন। এই নাটকে শুটিংয়ের দুদিন আগেও ছিল। তিনি সেটে এসে শুধু রিলস ও টিকটক নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। শেষ দিন হয়ত তিনি সেটা নিতে পারেন নি।
ধর্ষণের হুমকি, গায়ে হাত তোলা ও মাদক সেবনের বিষয়টা পরিষ্কার করবেন.
..
আমি তাকে কখনোই ধর্ষণের হুমকি দেইনি। তবে বকাবকি করেছি। কারণ, শুটিংয়ের সময় তিনি রিলস ও টিকটক নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। এতে করে আমাদের সবার অসুবিধা হচ্ছিল। তাই অনেকটা রাগ করেই কিছু ভাষা ব্যবহার করেছি বলেছি, যদি রিলস বানাতেই হয় তাহলে বাইরে গিয়ে কারো, শুটিং সেটে এসব চলবে না।এছাড়া মাদক সেবনের অভিযোগ আরও গুরুতর। আমাদের শুটিং হাউজের সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে। সেটা দেখলেই সবাই বুঝতে পারবে। আর আমার অভিনয় জীবনের ১০ বছর চলছে। প্রিয়াঙ্কা তো দূরের কথা এ জীবনে আমি কারও ওপর হাত তুলিনি। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে আমি মিডিয়া ছেড়ে দেব।
এই ধরনের অভিযোগ উঠলে সাধারণত পরিবার থেকে একটা চাপ আসে...
প্রশ্নই আসে না। কারণ, আমার পরিবার তো জানে আমি কেমন। আমার পরিবার শিক্ষিত। তারা বোঝে। আমি অন্য বিষয়ে দুষ্টুমি করতে পারি কিন্তু মেয়েলি বিষয় আমার কোনো রিপোর্ট নেই। এছাড়া মাস দেড়েক আগে আমি বিয়ে করেছি। আমার স্ত্রী জেনেশুনেই আমাকে বিয়ে করেছে। পরিবার থেকে কোনো চাপ নেই। তারা আমার সঙ্গেই আছেন।
অভিযোগটা গুরুতর। এ বিষয়ে শিল্পী-সংগঠনগুলোর সঙ্গে আপনার কথা হয়েছে?
ব্যক্তিগতভাবে কয়েক জনের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কিন্তু সাংগঠনিকভাবে হয়নি। এখনে যদি ভুল বোঝাবোঝির বিষয় থাকতে তাহলে সংগঠনের সঙ্গে আলোচনার বিষয় থাকতো। কিন্তু মেয়েটা তো সেটা চায়নি। সরাসরি টিভিতে গিয়ে অভিযোগ করেছে।
অভিযোগ যদি মিথ্যা হয় তাহলে কি কোনো ব্যবস্থা নেবেন?
আমি জানি না তার মটিভটা কি। তবে ভিডিও দেখে বেশিরভাগ মানুষ বলছে তিনি কারও প্ররোচিত হয়ে এগুলো করেছে। যেহেতু তিনি আমার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। আমারও তো পরিবার আছে। মানসম্মান আছে। যদি প্রয়োজন হয় তাহলে আমি অবশ্যই আইনি ব্যাবস্থা নেবো।
এবার কাজে আসি। ঈদের কাজে কেমন সাড়া পেলেন?
সত্যি কথা বলতে, দুই-চারটা বাদে ঈদের নাটকে সবাই সাড়া কম পেয়েছে। কারণ, অনেকদিন পর ঈদে ভালো সিনেমা এসেছে। তার মধ্যেও যেকয়টা নাটক গেয়ে সবগুলোই মোটামোটি ভালো গেছে।
ইদানীং পারিবারিক গল্পে আপনাকে কম দেখা যায়...
এটা সবচেয়ে ভালো বলতে পারবে পরিচালক-প্রযোজকরা। কারণ, তারাই তো শিল্পী বাছাই করে, আর অর্থ লগ্নি করে। এখানে আমার কিছু করার নেই। তবে আমার আগ্রহ আছে সব ধরণের গল্পে অভিনয় করার। ব্যাটে বলে মিলে গেলে অবশ্যই করবো।
ঈদুল আজহার প্ল্যান?
সামনে ঈদের জন্য প্রায় ৬/৭টি নাটকে কাজ করবো। এরই মধ্যে কাজ তিনটির কাজ শেষ করেছি। আর কয়েকটা কাজ হাতে আছে সেগুলো টানা করে ফেলবো।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ম ম হ স ন সরক র অভ য গ পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে বিদেশে খেলতে যায়’
দারিদ্র্য, সামাজিক বাধা ও চারপাশের কটূ কথা—সবকিছুকে হারিয়ে দিয়েছেন অদম্য ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। পঞ্চগড়ের প্রত্যন্ত গ্রামের ভ্যানচালক বাবার এই মেয়ে এখন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলের গোলরক্ষক।
অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বের খেলা শেষে লাওস থেকে দেশে ফিরেই এই ফুটবলকন্যা ছুটে এসেছেন জন্মভিটায়। দীর্ঘদিন পর মেয়েকে কাছে পেয়ে আনন্দে আপ্লুত বাবা ফারুক ইসলাম। গর্বের সুরে তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেছেন, “আমি ভ্যান চালাই, আমার মেয়ে বিমানে চড়ে দেশ-বিদেশে খেলতে যায়।”
সোনালী বেড়ে উঠেছেন পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের বনগ্রামে। বাবা ফারুক ইসলাম পেশায় ভ্যানচালক। মা মেরিনা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সোনালী বড়। অভাবের সংসারে খেলাধুলা চালিয়ে যাওয়া ছিল দুঃসাধ্য, কিন্তু ফুটবলকে ভালোবেসে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
শুক্রবার (১৫ আগস্ট) বিকেলে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে এসেছেন ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের বাড়ি পর্যন্ত বাবার ভ্যানেই যান তিনি। সোনালী বাড়িতে পা রাখতেই জড়ো হতে থাকেন স্থানীয়রা। মেয়ের সাফল্যে বাবা ফারুক ইসলাম মিষ্টি খাওয়ান সবাইকে।
ফারুক ইসলাম জানান, সম্পদ বলতে তার আছে বসতভিটার ৭ শতক জমি। উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম ব্যাটারিচালিত একটি ভ্যান। এই ভ্যান চালিয়ে সংসার চালালেও মেয়ের স্বপ্ন পূরণে কখনো পিছপা হননি তিনি। অভাব-অনটনের সংসারে মেয়ের ফুটবল খেলা ছিল একসময় প্রতিবেশীদের কটাক্ষের কারণ। বাঁকা চোখে তাকাতেন গ্রামের মানুষজন, শোনাতেন কটূ কথা। তবে, কোনো বাধাই সোনালীর মনোবল ভাঙতে পারেনি।
সোনালীর বয়স এখন ১৮ বছর। ফুটবলের প্রতি তার আগ্রহ শুরু হয় স্থানীয় গইচপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময়। সেখান থেকেই অংশ নেন বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায়। পরে ভর্তি হন হাড়িভাসা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয়ের হয়ে অংশ নেন আন্তঃবিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্টে। তখনই পঞ্চগড়ের টুকু ফুটবল একাডেমিতে শুরু করেন প্রাতিষ্ঠানিক অনুশীলন।
২০২৩ সালে তার ফুটবল প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ সুযোগ মেলে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ভর্তি হওয়ার। বর্তমানে তিনি নবম শ্রেণিতে পড়াশোনার পাশাপাশি বিকেএসপিতে গোলরক্ষক হিসেবে কঠোর প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।
ফেরদৌসি আক্তার সোনালী বলেছেন, “বিকেএসপিতে পড়াকালীন বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ মেলে। এরপর সিনিয়র টিমের সঙ্গে জর্ডানে খেলতে যাই। সেখানে বাংলাদেশ দল চ্যাম্পিয়ন হয়। এরপর সাফ অনূর্ধ্ব-২০ চ্যাম্পিয়নশিপের টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হই আমরা। সর্বশেষ এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে লাওসে খেলতে যাই। সেখানে রানার্স-আপ হয়েছি।”
বাবা ফারুক ইসলাম বলেন, “ছোটবেলা থেকেই সোনালীর ফুটবলের প্রতি আগ্রহ ছিল। অনেকেই নানা কথা বলত। আমার মেয়ে এসবে পাত্তা দিত না। অনেক সময় আমিও নিষেধ করতাম। তারপরও সে ফুটবল নিয়েই পড়ে থাকত। টানাপোড়নের সংসারে তাকে সেভাবে সাপোর্ট দিতে পারিনি। খেয়ে না খেয়ে অনুশীলনে যেত সোনালী। আজ আমার মেয়ে জাতীয় দলে জায়গা পেয়েছে, দেশের হয়ে বিদেশে খেলছে— এটা আমার গর্ব।”
সোনালীর মা মেরিনা বেগম বলেছেন, “ফুটবল খেলে আমার মেয়ে অনেক পুরস্কার এনেছে। তার স্বপ্ন ছিল ফুটবলে ভালো কিছু করার। অনেক কষ্ট করে মেয়ে অনুশীলনে যেত। অনেক সময় টাকার অভাবে অনুশীলনে যেতে পারত না। মাঝে-মধ্যে আমরা নিষেধও করেছি, কিন্তু শোনেনি। এখন জাতীয় দলে ডাক পেয়েছে। আমার বিশ্বাস, সোনালী দেশের ফুটবলকে ভালো কিছু উপহার দেবে।”
সোনালী অনুশীলন করতেন পঞ্চগড় টুকু ফুটবল একাডেমিতে। একাডেমির পরিচালক টুকু রেহমান বলেছেন, “সোনালী দারুন সম্ভাবনাময় মেয়ে। ফুটবলে সফলতা পেতে অনেক কষ্ট করেছে সে। আমি তাকে নিয়ে বেশ আশাবাদী ছিলাম। সে আমার আশা পূর্ণ করেছে। সোনালীর মতো আরো অনেকেই এভাবে উঠে আসুক, এই প্রত্যাশা আমার।”
হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র রায় বলেছেন, “আমাদের ইউনিয়নের মেয়ে ফেরদৌসি আক্তার সোনালী। হতদরিদ্র পরিবারে বেড়ে ওঠা এই ফুটবলার আমাদেরও গর্বের। আমরা তার সাফল্য কামনা করি। সোনালী এবং তার দরিদ্র পরিবারের প্রতি প্রশাসন যেন সুদৃষ্টি রাখে, সে অনুরোধ জানাচ্ছি।”
উল্লেখ্য, জাতীয় নারী ফুটবল দলের আরেক গোলরক্ষক ইয়ারজান বেগমেরও বাড়ি পঞ্চগড়ের হাড়িভাসা ইউনিয়নের খোপড়াবান্দি গ্রামে। তারা দুজন পাশাপাশি গ্রামের বাসিন্দা। ইয়ারজানও অনুশীলন করেছেন টুকু ফুটবল একাডেমিতে।
ঢাকা/রফিক