১৪ কোটি টাকার আয়োজনে তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল
Published: 10th, May 2025 GMT
আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন। চবির সবচেয়ে বড় এই সমাবর্তন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তার উপস্থিতি ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ক্যাম্পাসে চলছে নানা সংস্কারকাজ। এবারের সমাবর্তনে খরচ হতে পারে ১৪ কোটি টাকা। ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল। বাজেটের ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আয় হবে সমাবর্তীদের অংশগ্রহণ ফি থেকে। বাকি ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা চেয়ে ইউজিসিকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে লক্ষ্য করা গেছে বাড়তি নিরাপত্তা ও সাজসজ্জা। সমাবর্তীদের উপহার, গাউন, প্যান্ডেল, সনদ প্রস্তুত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড.
তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল : সমাবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নির্মিত হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী একটি মঞ্চ ও প্যান্ডেল। বিশেষ এই প্যান্ডেলের নির্মাণ ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা। সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সরেজমিন দেখা যায়, স্টিলের পাত দিয়ে শক্ত ভিত তৈরি করে ওপরে দৃষ্টিনন্দন প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো হচ্ছে প্যান্ডেল। প্যান্ডেলে যাতে বৃষ্টির পানি না পড়ে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গরমের কথা চিন্তা করে থাকছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। রয়েছে আইসিইউ সুবিধা, শৌচাগার এবং জরুরি প্রয়োজনের ফুড কোর্ট। প্রযুক্তি ও সুরক্ষার সমন্বয়ে নির্মিত এই মঞ্চে অতিথিদের জন্য সব ধরনের আরামদায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পুরো আয়োজনটি বাস্তবায়নে কাজ করছে দেশের খ্যাতনামা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান থ্রি ই সল্যুশন। মঞ্চ ও আসন বিন্যাস উপকমিটির দায়িত্বে রয়েছেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইয়াহইয়া আখতার সমকালকে বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাবর্তন আয়োজন করতে চাই, যা শিক্ষার্থীদের সারাজীবনের স্মৃতিতে জায়গা করে নেবে। এটি শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ও বিশাল পরিসরের সমাবর্তন হতে যাচ্ছে। আমরা ড. ইউনূসকে ডিলিট উপাধি দিচ্ছি, যেটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’
সমাবর্তনের বিশেষ আকর্ষণ: এবারের সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ থেকে ৪ হাজার ৯৮৭ জন, জীববিদ্যা অনুষদের ১ হাজার ৬৮৯ জন, বিবিএ অনুষদের ৪ হাজার ৫৯৬ জন,সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪ হাজার ১৫৮, আইন অনুষদের ৭০৩ জন, বিজ্ঞান অনুষদের ২ হাজার ৭৮৭ জন, শিক্ষা অনুষদের ৩১৬ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৭৯৮ জন, মেরিন সায়েন্সেস অনুষদের ২৮৪ জন ও চিকিৎসা অনুষদের ২ হাজার ২৯৯ জন সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া, ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
এদিকে, সমাবর্তন ঘিরে সংস্কার করা হয়েছে ছয় বছর বন্ধ থাকা ঝুলন্ত সেতু। আলোক সজ্জা ও রঙিন করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। ২ নম্বর গেট এলাকাযর রাস্তা নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, জিরো পয়েন্টে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহীদ মিনারের স্তম্ভে নতুন রঙ করা হচ্ছে।
ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব বিভাগের সমাবর্তী শিক্ষার্থী ফাহিম আলম বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাই, তখন মনে ছিল সবুজ চবির প্রতি ভালোবাসা। সমাবর্তন আবার আমাদের ক্যাম্পাসে ফেরাবে। সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসের ফিরে এই রূপ দেখে মনটা আনন্দে নাচছে।’
সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজসহ আরও ৪ জন উপদেষ্টার অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানেসূচি : সমাবর্তনে অতিথিদের আসন গ্রহণ শুরু হবে দুপুর দেড়টায়। ১ টা ৪৫ মিনিটে হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা। তবে এতে কোনো গ্র্যাজুয়েট অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষক এতে অংশ নেবেন। পরে বেলা ২ টায় জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠান শেষ হবে বিকেল চারটায়।
লোগো নিয়ে সমালোচনা : সমাবর্তন ঘিরে কিছু সমালোচনাও উঠে এসেছে। অনেক সমাবর্তী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও আয়োজনে কিছু গাফিলতি রয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের সমাবর্তী শিক্ষার্থী তন্ময় হোসেন সমকালকে বলেন, ‘এই সমাবর্তনের অপেক্ষায় দীর্ঘ ৯ বছর কাটিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের মন ভেঙে দিয়েছে। সমাবর্তনের লোগো অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে, যা দেখে আমি ব্যথিত। দীর্ঘদিন পর সমাবর্তন আয়োজন করা হচ্ছে, প্রশাসনের উচিত ছিল লোগোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া। কারণ, সমাবর্তনের অন্যতম আকর্ষণই থাকে লোগো।'
এছাড়াও গ্রীষ্মে সমাবর্তনের তারিখ, আবেদনের প্রক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না থাকা নিয়ে ক্ষুব্ধ অংশগ্রহণকারীরা।
যা ছিল চতুর্থ সমাবর্তনে: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৪ সালে প্রথম সমাবর্তন, ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সমাবর্তনে তখনকার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। সেবার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তনে অংশ নেন ৭ হাজার ১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েট। নয়জন শিক্ষার্থী পান চ্যান্সেলর পদক, ২৫ জন পিএইচডি ও ১৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ব যবস থ গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
আধুনিক টিভির যত আধুনিক সুবিধা
টেলিভিশনকে বাংলায় বলা হয় ‘দূরদর্শন’। মাত্র কয়েক বছর আগেও এটি সত্যিই ছিল দূরদর্শনের মাধ্যম—দূরের কোনো ঘটনা চোখের সামনে এনে দেওয়ার একটি যন্ত্র। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে টিভির সংজ্ঞা, উদ্দেশ্য ও ব্যবহার। প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতিতে আজকাল টিভি হয়ে উঠেছে একটি ‘স্মার্ট হাব’, যেখানে সিনেমা দেখা, গেম খেলা, ভিডিও কল করা, এমনকি বাড়ির অন্যান্য স্মার্ট ডিভাইসও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। আধুনিক টিভিগুলোর সুবিধা কেবল ছবি বা সাউন্ডে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এখন ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স।
স্মার্ট অপারেটিং সিস্টেমবর্তমান প্রজন্মের টিভিগুলো শুধু নাটক কিংবা সিনেমা দেখার একটি স্ক্রিন নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ স্মার্ট ডিভাইস। স্মার্ট টিভিতে অপারেটিং সিস্টেম (ওএস) হিসেবে টাইজেন, অ্যান্ড্রয়েড টিভি, রোকু টিভি এবং ওয়েবওএস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এই সিস্টেমগুলোর মাধ্যমেই বর্তমান যুগের টিভিগুলো হয়ে উঠছে আধুনিক থেকে আধুনিকতর। ব্যবহারকারীরা এখন চাইলেই স্মার্ট টিভিগুলোতে নেটফ্লিক্স, ইউটিউব, স্পটিফাই, অ্যামাজন প্রাইম কিংবা যেকোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মও সরাসরি উপভোগ করতে পারেন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ‘অ্যাপ স্টোর ইন্টিগ্রেশন’। টিভিতেই এখন মোবাইলের মতো অ্যাপ ডাউনলোড করে ব্যবহার করা যায়। ওয়েদার অ্যাপ, গেমস, নিউজ—এমনকি ভিডিও কনফারেন্সিং অ্যাপও ব্যবহার করা যায় টিভির বড় স্ক্রিনে।
ভয়েস কন্ট্রোল: কথা বলেই নিয়ন্ত্রণরিমোট খোঁজার ঝামেলা এখন যেন অতীত। আগে টিভির সবকিছু রিমোট দ্বারা পরিচালিত হলেও এখনকার আধুনিক টিভিগুলোতে আছে ভয়েস কন্ট্রোল—যেখানে ব্যবহারকারীর ভয়েস দ্বারাই টিভি নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এই প্রযুক্তি বিক্সবি, গুগল অ্যাসিস্ট্যান্ট, অ্যালেক্সার মতো ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টের মাধ্যমে কাজ করে। এর পাশাপাশি কিছু হাই-এন্ড মডেলে রয়েছে জেসচার কন্ট্রোল—যেখানে হাত নাড়লেই টিভি রেসপন্স করে। টিভি চালু-বন্ধ করা, চ্যানেল পরিবর্তন—এমনকি ভলিউম বাড়ানো-কমানোর মতো কাজও করা যায় হাতের ইশারায়। এ ক্ষেত্রে গ্যালাক্সি ওয়াচের কথা বলা যায়। এটি হাতের নড়াচড়াকে শনাক্ত করে এসব কমান্ড কার্যকর করে।
মাল্টি-ডিভাইস কানেকটিভিটি: এক স্ক্রিনে সব সংযোগবর্তমানে টিভি শুধু সম্প্রচার মাধ্যম নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল ইউনিট। মোবাইল ফোন, স্পিকার, ল্যাপটপ, গেমিং কনসোল—সব ডিভাইস এখন টিভির সঙ্গে সহজেই সংযুক্ত করা যায়।
বেশির ভাগ স্মার্ট টিভিতে রয়েছে ওয়াই-ফাই, ব্লুটুথ, এইচডিএমআই এআরসি, এয়ার প্লে, মিরাকাস্টসহ বিভিন্ন সুবিধা। ফলে ব্যবহারকারী চাইলে নিজের ফোনের ছবি, ভিডিও বা প্রেজেন্টেশন মুহূর্তেই বড় স্ক্রিনে শেয়ার করতে পারেন। সেই সঙ্গে আধুনিক টিভিগুলোতে রয়েছে গেমারদের জন্য এইচডিএমআই ২.১ পোর্ট এবং কম ইনপুট ল্যাগযুক্ত ডিসপ্লে, যা গেমিং এক্সপেরিয়েন্সকে করে তোলে আরও স্মুথ।
আধুনিক টিভিগুলো ব্যবহারকারীদের এনে দিয়েছে একসঙ্গে বিনোদন, সংযোগ, যোগাযোগ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন এক এক্সপেরিয়েন্স