আগামী বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পঞ্চম সমাবর্তন। চবির সবচেয়ে বড় এই সমাবর্তন উপলক্ষে ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ডি-লিট ডিগ্রি প্রদান করা হবে। তার উপস্থিতি ঘিরে নেওয়া হয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা। ক্যাম্পাসে চলছে নানা সংস্কারকাজ। এবারের সমাবর্তনে খরচ হতে পারে ১৪ কোটি টাকা। ব্যয়ের সবচেয়ে বড় খাত হলো তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল। বাজেটের ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা আয় হবে সমাবর্তীদের অংশগ্রহণ ফি থেকে। বাকি ৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা চেয়ে ইউজিসিকে চিঠি দেওয়া হলেও কোনো উত্তর মেলেনি।
৯ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে লক্ষ্য করা গেছে বাড়তি নিরাপত্তা ও সাজসজ্জা। সমাবর্তীদের উপহার, গাউন, প্যান্ডেল, সনদ প্রস্তুত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড.

মো. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী বলেন, ‘এবারের সমাবর্তনের আনুমানিক বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ১৪ কোটি টাকা। সমাবর্তীদের অংশগ্রহণ ফি থেকে আয় হবে প্রায় ৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।  ইউজিসির কাছে আর্থিক সহায়তা চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। ফলে ঘাটতি মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফান্ড ব্যবহার করা হবে।’
তিন কোটি টাকার প্যান্ডেল : সমাবর্তনের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নির্মিত হচ্ছে ব্যতিক্রমধর্মী একটি মঞ্চ ও প্যান্ডেল। বিশেষ এই প্যান্ডেলের নির্মাণ ব্যয় প্রায় তিন কোটি টাকা। সমাবর্তন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব ড. মো. এনায়েত উল্যা পাটোয়ারী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সরেজমিন দেখা যায়, স্টিলের পাত দিয়ে শক্ত ভিত তৈরি করে ওপরে দৃষ্টিনন্দন প্লাস্টিক দিয়ে মোড়ানো হচ্ছে প্যান্ডেল। প্যান্ডেলে যাতে বৃষ্টির পানি না পড়ে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গরমের কথা চিন্তা করে থাকছে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। রয়েছে আইসিইউ সুবিধা, শৌচাগার এবং জরুরি প্রয়োজনের ফুড কোর্ট। প্রযুক্তি ও সুরক্ষার সমন্বয়ে নির্মিত এই মঞ্চে অতিথিদের জন্য সব ধরনের আরামদায়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হচ্ছে। পুরো আয়োজনটি বাস্তবায়নে কাজ করছে দেশের খ্যাতনামা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান থ্রি ই সল্যুশন। মঞ্চ ও আসন বিন্যাস উপকমিটির দায়িত্বে রয়েছেন জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন, অধ্যাপক গোলাম কিবরিয়া। 
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ইয়াহইয়া আখতার সমকালকে বলেন, ‘আমরা এমন একটি সমাবর্তন আয়োজন করতে চাই, যা শিক্ষার্থীদের সারাজীবনের স্মৃতিতে জায়গা করে নেবে। এটি শুধু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যতিক্রমধর্মী ও বিশাল পরিসরের সমাবর্তন হতে যাচ্ছে। আমরা ড. ইউনূসকে ডিলিট উপাধি দিচ্ছি, যেটি আমাদের জন্য গর্বের বিষয়।’
সমাবর্তনের বিশেষ আকর্ষণ: এবারের সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ২২ হাজার ৬০০ জন শিক্ষার্থী।  কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ থেকে ৪ হাজার ৯৮৭ জন, জীববিদ্যা  অনুষদের ১ হাজার ৬৮৯ জন, বিবিএ অনুষদের ৪ হাজার ৫৯৬ জন,সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ৪ হাজার ১৫৮, আইন অনুষদের ৭০৩ জন, বিজ্ঞান অনুষদের ২ হাজার ৭৮৭ জন, শিক্ষা অনুষদের ৩১৬ জন, ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ৭৯৮ জন, মেরিন সায়েন্সেস অনুষদের ২৮৪ জন ও চিকিৎসা অনুষদের ২ হাজার ২৯৯ জন সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া, ২২ জন পিএইচডি ও ১৭ জনকে এম ফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।
এদিকে, সমাবর্তন ঘিরে সংস্কার করা হয়েছে ছয় বছর বন্ধ থাকা ঝুলন্ত সেতু। আলোক সজ্জা ও রঙিন করা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে। ২ নম্বর গেট এলাকাযর রাস্তা নতুনভাবে তৈরি করা হচ্ছে, জিরো পয়েন্টে খাওয়ার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহীদ মিনারের স্তম্ভে নতুন রঙ করা হচ্ছে। 
ভাষা ও ভাষাতত্ত্ব বিভাগের সমাবর্তী শিক্ষার্থী ফাহিম আলম বলেন, ‘পড়াশোনা শেষ করে যখন ক্যাম্পাস ছেড়ে চলে যাই, তখন মনে ছিল সবুজ চবির প্রতি ভালোবাসা। সমাবর্তন আবার আমাদের ক্যাম্পাসে ফেরাবে। সমাবর্তন ঘিরে ক্যাম্পাসে চোখে পড়ার মতো পরিবর্তন এসেছে। দীর্ঘদিন পর প্রিয় ক্যাম্পাসের ফিরে এই রূপ দেখে মনটা আনন্দে নাচছে।’
সমাবর্তনে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজসহ আরও ৪ জন উপদেষ্টার অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে।
অনুষ্ঠানেসূচি : সমাবর্তনে অতিথিদের আসন গ্রহণ শুরু হবে দুপুর দেড়টায়। ১ টা ৪৫ মিনিটে হবে সমাবর্তন শোভাযাত্রা। তবে এতে কোনো গ্র্যাজুয়েট অংশ নিতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০০ জন শিক্ষক এতে  অংশ নেবেন। পরে বেলা ২ টায় জাতীয় সংগীতের মধ্যে দিয়ে মূল অনুষ্ঠান শুরু হবে। অনুষ্ঠান শেষ হবে বিকেল চারটায়।
লোগো নিয়ে সমালোচনা : সমাবর্তন ঘিরে কিছু সমালোচনাও উঠে এসেছে। অনেক সমাবর্তী শিক্ষার্থীর অভিযোগ, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও আয়োজনে কিছু গাফিলতি রয়েছে। অর্থনীতি বিভাগের সমাবর্তী শিক্ষার্থী তন্ময় হোসেন সমকালকে বলেন, ‘এই সমাবর্তনের অপেক্ষায় দীর্ঘ ৯ বছর কাটিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের মন ভেঙে দিয়েছে। সমাবর্তনের  লোগো অত্যন্ত নিম্নমানের হয়েছে, যা দেখে আমি ব্যথিত। দীর্ঘদিন পর সমাবর্তন আয়োজন করা হচ্ছে, প্রশাসনের উচিত ছিল লোগোর মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আরও যত্নশীল হওয়া। কারণ, সমাবর্তনের অন্যতম আকর্ষণই থাকে লোগো।'
এছাড়াও গ্রীষ্মে সমাবর্তনের তারিখ, আবেদনের প্রক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান না থাকা নিয়ে ক্ষুব্ধ অংশগ্রহণকারীরা।
যা ছিল চতুর্থ সমাবর্তনে: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৯৪ সালে প্রথম সমাবর্তন, ১৯৯৯ সালে দ্বিতীয়, ২০০৮ সালে তৃতীয় এবং সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। চতুর্থ সমাবর্তনে তখনকার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আব্দুল হামিদ সভাপতিত্ব করেন। সেবার কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে সমাবর্তনে অংশ নেন ৭ হাজার ১৯৪ জন গ্র্যাজুয়েট। নয়জন শিক্ষার্থী পান চ্যান্সেলর পদক,  ২৫ জন পিএইচডি ও ১৩ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেওয়া হয়। সমাবর্তন বক্তা ছিলেন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন ব যবস থ গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

চ্যাটজিপিটির জিপিটি ৫ মডেল কতটা উন্নত, নতুন কী সুবিধা পাওয়া যাবে

নিজেদের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটি’র জন্য তৈরি নতুন ‘জিপিটি ৫’ মডেল আগের সব সংস্করণের তুলনায় শক্তিশালী, বুদ্ধিমান ও নিরাপদ বলে জানিয়েছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ওপেনএআই। শুধু তা–ই নয়, নতুন মডেলটি পিএইচডি স্তরের সমান দক্ষ বলেও দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) স্যাম অল্টম্যান নতুন মডেলটিকে চ্যাটজিপিটির নতুন যুগের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাঁর ভাষ্যে, নতুন মডেলটি আগের মডেলগুলোর তুলনায় আরও স্মার্ট, দ্রুত ও কার্যকর।

জিপিটি ৫ মডেল এরই মধ্যে প্রযুক্তিবিশ্বে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, জিপিটি ৫ মডেলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলো ভুয়া তথ্য শনাক্তকরণের দক্ষতা। ব্যবহারকারীদের সঙ্গে আগের মডেলগুলোর তুলনায় যোগাযোগের সক্ষমতাও বেশি রয়েছে মডেলটির। ওপেনএআইয়ের তথ্যমতে, চ্যাটজিপিটি ৫ তিনটি সংস্করণে ব্যবহার করা যাবে। জিপিটি ৫, জিপিটি ৫ মিনি ও জিপিটি ৫ ন্যানো। ব্যবহারকারীরা জিপিটি ৫ ও মিনি সংস্করণ বিনা মূল্যে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে জিপিটি ৫ প্রো সংস্করণের জন্য মাসে ২০০ ডলার খরচ করতে হবে। নতুন মডেলটি ওপেনএআইয়ের সব সেবায় একীভূত করা হয়েছে। ফলে যুক্তি বিশ্লেষণ, ছবি তৈরি, ওয়েব ব্রাউজ বা ভয়েস মোডসহ সব কাজেই মডেলটি কাজ করবে।

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটির সঙ্গে কথোপকথনের তথ্য ফাঁস, দেখা যাচ্ছে অনলাইনে০৩ আগস্ট ২০২৫

ওপেনএআইয়ের দাবি, জিপিটি ৫ মডেলের মাধ্যমে কোডিং ও লেখার সময় পিএইচডি স্তরের দক্ষতা দেখা যাবে। এরই মধ্যে কোডিংয়ের ক্ষেত্রে জিপিটি ৫ আগের সব মডেলের তুলনায় ভালো ফল করেছে। শুধু তা–ই নয়, যুক্তি বিশ্লেষণ ও ত্রুটি সমাধানেও দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। এ ছাড়া টেক্সট প্রম্পট দিয়ে এক মিনিটের মধ্যে একটি ইন্টারঅ্যাকটিভ অ্যাপ তৈরি করতে পারে জিপিটি ৫।

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটিকে যে কাজে ব্যবহার করলে তথ্যের গোপনীয়তা না–ও থাকতে পারে২৮ জুলাই ২০২৫

আগের জিপিটি সংস্করণগুলোয় ভুল তথ্য তৈরির (হ্যালুসিনেশন) প্রবণতা নিয়ে সমালোচনা ছিল। ওপেনএআই দাবি করছে, জিপিটি ৫ মডেলে এই সমস্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। নতুন মডেলের ত্রুটির হার ‘ওথ্রি’ সংস্করণের তুলনায় ৬৫ শতাংশ এবং জিপিটি ৪ও–এর তুলনায় ২৬ শতাংশ কম। পাঁচ হাজার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বাইরের বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা চালিয়ে এর নির্ভরযোগ্যতা ও স্থায়িত্ব বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে কোনো বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য জানা না থাকলে অযৌক্তিক কোনো উত্তর দেবে না জিপিটি ৫।

আরও পড়ুনচ্যাটজিপিটির তথ্য সংগ্রহ বন্ধ করবেন যেভাবে২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এরই মধ্যে নিজেদের বিভিন্ন সেবায় জিপিটি ৫ মডেল যুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছে মাইক্রোসফট। গুগলের বিভিন্ন সেবাও কয়েক দিনের মধ্যে নতুন মডেল সমর্থন করবে। জিপিটি ৫ প্রো সংস্করণেই জিমেইল, গুগল সার্চ, ক্যালেন্ডারসহ অন্যান্য সেবা সরাসরি ব্যবহার করা যাবে। ওপেনএআই জানিয়েছে, ভবিষ্যতে এই সুবিধা অন্যান্য সংস্করণেও উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র: নিউজ১৮, বিবিসি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সহযোগী ও সহকারী অধ্যাপক নিয়োগ, আবেদন ফি ৫০০ টাকা
  • চ্যাটজিপিটির জিপিটি ৫ মডেল কতটা উন্নত, নতুন কী সুবিধা পাওয়া যাবে
  • প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়: অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদে শিক্ষক নিয়োগ