নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলা যুবলীগের এক নেতাকে তুলে নিয়ে হত্যার পর পাশের বেগমগঞ্জ উপজেলার একটি খালে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। এ সময় স্থানীয় লোকজন অটোরিকশাটি ধাওয়া করে চালকসহ দুই ব্যক্তিকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন। নিহত যুবলীগ নেতা মো. জাকির হোসেন (৪২) হত্যাসহ ১১টি মামলার আসামি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার বিকেল চারটার দিকে বেগমগঞ্জ উপজেলার পালোয়ানের পোল নামক স্থানে খাল থেকে জাকির হোসেনের লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত জাকির হোসেনের গ্রামের বাড়ি সোনাপুর ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মৃত রফিক উল্যাহ। নিহত জাকির যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

পুলিশ জানায়, জাকিরকে হত্যার পর একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা থেকে লাশ খালে ফেলে পালিয়ে যাওয়ার সময় আশপাশের মানুষজন ধাওয়া করে দুজনকে আটক করে। তাঁরা হলেন সোনাপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের মো.

বাবু (৩৩) ও অটোরিকশাচালক নোয়াখালী সদরের মাইজচরা গ্রামের আনোয়ার হোসেন (৩৫)। স্থানীয় লোকজন তাঁদের গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের হস্তান্তর করেন।

সোনাপুর এলাকার একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর জাকির হোসেন কয়েক মাস এলাকায় ছিলেন না। সম্প্রতি এলাকায় ফিরে মাটির ব্যবসা শুরু করেন তিনি। ব্যবসার জন্য নিজে একটি মাটি কাটার যন্ত্র সংগ্রহ করেন তিনি। ওই ব্যবসা নিয়ে স্থানীয় আরেকটি পক্ষের সঙ্গে তাঁর বিরোধ দেখা দেয়। বিরোধের জের ধরে গতকাল সোমবার তাঁর মাটি কাটার যন্ত্র আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। তার একদিন পর আজ দুপুরে জাকিরকে এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বেগমগঞ্জ উপজেলায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। এই ঘটনার সঙ্গে মাটির ব্যবসার বিরোধের সম্পর্ক থাকতে পারে বলে ধারণা স্থানীয়দের।

বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিটন দেওয়ান প্রথম আলোকে বলেন, সোনাইমুড়ী উপজেলার বাসিন্দা জাকির হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে মেরে একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশাযোগে বেগমগঞ্জ উপজেলার পালোয়ানের পোল এলাকায় খালে ফেলে যাওয়া হয়। পরে তাঁরা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ওসি জানান, একই ঘটনায় জড়িত দুই ব্যক্তিকে গণপিটুনি দিয়ে জনগণ পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে।

এদিকে নিহত জাকিরের স্ত্রী ফাতেমা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, কারা তাঁর স্বামীকে হত্যা করেছে, কোথায় থেকে ধরে নিয়েছে, সে সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। খবর পেয়ে হাসপাতালে এসে লাশ দেখেছেন।

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, থানায় একটি হত্যা, দুটি অস্ত্র ও একাধিক ডাকাতির মামলাসহ ১১ মামলার আসামি জাকিরকে তুলে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব গমগঞ জ উপজ ল উপজ ল র য বল গ ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

১৩ মামলার আসামি যুবলীগকর্মীকে হত্যা, আটক ২  

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় মাটি বিক্রি নিয়ে দ্বন্দ্বে জাকির হোসেন (৪০) নামে একজনকে হত্যা করা হয়েছে। নিহত জাকির ১৩ মামলার আসামি এবং যুবলীগ কর্মী। পুলিশ বলছে, তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে।  

মঙ্গলবার (১৩ মে) উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের কোটবাড়িয়া এলাকায় তাকে হত্যা করা হয়। 

নিহত জাকির সোনাইমুড়ী উপজেলা ৮নং সোনাপুর ইউনিয়নের হাসানপুর গ্রামের দুর্গা পাটোয়ারী বাড়ির রফিক মিয়ার ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

আরো পড়ুন:

প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে মেয়েকে হত্যা, বাবা-মা গ্রেপ্তার

জমি নিয়ে বিরোধে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার ৭

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাকির আওয়ামী লীগ ক্ষমতার আমলে প্রভাবশালী যুবলীগ কর্মী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ১৩টি মামলা রয়েছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর তিনি তাবলিগে চলে যান। মুখে দাঁড়ি রেখে তাবলিগ শেষে কয়েক মাস আগে সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে এলাকায় ঢোকেন। এরপর তিনি এলাকায় মাটির ব্যবসা শুরু করেন। জাকির প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি করেন ১২০০ টাকা। একই এলাকার ল্যাংড়া নজরুল, তুহিন, সাদ্দামসহ ১০-১২ জন প্রতি গাড়ি মাটি বিক্রি করেন ১৬০০ টাকায়। এ নিয়ে গত ৮-১০ দিন আগে প্রতিপক্ষের লোকজনের সঙ্গে তার বিরোধ তীব্র হয়। গত দুই দিন আগে জাকিরের মাটি কাটার ভেকু মেশিন পুড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এরপর মঙ্গলবার (১৩ মে) দুপুরের দিকে মাটির দাম নিয়ে দ্বন্দ্বের জের ধরে তাকে তুলে নিয়ে যায় উপজেলার কোটবাড়িয়া এলাকায়। সেখানে তাকে হত্যা করা হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে সেখান থেকে পাঁচজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা যোগে লাশ পাশের বেগমগঞ্জ উপজেলায় এলাকায় নিয়ে যায়। পরে একটি খালের পাড়ে ফেলে পালানোর সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিয়ে দুই জনকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। 

নিহতের স্ত্রী ফাতিমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বিএনপি ও জামায়াতের লোকজন জাকিরকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানতে পারি আমার স্বামী মারা গেছে। আমি হত্যার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।’’

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহবুব আলমগীর আলো বলেন, ‘‘বিএনপি কোনো নির্যাতন, হত্যাকাণ্ড সমর্থন করে না।’’ নোয়াখালী জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা ইসহাক খন্দকারের মুঠোফোনে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।    

বেগমগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান বলেন, গণপিটুনিতে আহত দুইজনকে পুলিশ উদ্ধার করে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী হাসপাতালে ভর্তি করেছে। জাকিরের লাশ একই হাসপাতালের মর্গে রাখা আছে।   

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম বলেন, জাকির চিহিৃত সন্ত্রাসী ছিলেন। তার বিরুদ্ধে সোনাইমুড়ী থানায় ডাকাতি, নারী ও শিশু নির্যাতনসহ ১১টি মামলা রয়েছে। এছাড়া বেগমগঞ্জ মডেল থানায় ডাকাতি, ছিনতাইসহ দুটি মামলা রয়েছে।

ঢাকা/সুজন/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যুবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা, বস্তাবন্দি লাশ ফেলে যাওয়ার সময় আটক ২
  • ১৩ মামলার আসামি যুবলীগকর্মীকে হত্যা, আটক ২