বগুড়ার শেরপুরে মামলা তুলে না নেওয়ায় কলেজছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগ
Published: 13th, May 2025 GMT
বগুড়ার শেরপুরে আদালতে বিচারাধীন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলা তুলে নিতে এক কলেজছাত্রীকে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গতকাল সোমবার রাতে একটি মামলা করেছেন।
ভুক্তভোগী একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের বাড়ি উপজেলার গাড়িদহ ইউনিয়নে। মামলায় মাহমুদুল হাসান (২১) নামের এক তরুণকে প্রধান আসামি করে মোট আটজনকে আসামি করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত সবার বাড়ি উপজেলার মহিপুর কলোনি গ্রামে। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাতনামা আরও পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি মাহমুদুল হাসান দীর্ঘদিন ধরে ওই ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ছাত্রীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। পরে পুলিশ আদালতে অভিযোগপত্রও দেয়। পরে জামিনে মুক্ত হয়ে আসামিরা ভুক্তভোগী ছাত্রী ও তার পরিবারকে মামলা তুলে নিতে চাপ দিতে থাকে। গত শনিবার সকালে ওই ছাত্রী কোচিং শেষে বাড়ি ফেরার পথে গাড়িদহ ইউনিয়নের একটি সেতুর কাছে পৌঁছালে তাকে মামলার প্রধান আসামিসহ কয়েকজন একটি অটোরিকশায় তুলে নেয়। এরপর ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে তার মুখ বেঁধে নির্যাতন করে মুঠোফোন, স্কুলব্যাগ, শরীরে থাকা স্বর্ণালংকার ও কিছু টাকা ছিনিয়ে নেয়। এরপর তাকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরানো হয় এবং সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে ওই মাইক্রোবাস শেরপুরের মহাসড়কের মহিপুর এলাকায় একটি হোটেলের সামনে থামালে ওই ছাত্রী চিৎকার শুরু করে। এ সময় স্থানীয় লোকজন এগিয়ে গেলে অপহরণে জড়িত ব্যক্তিরা দ্রুত পালিয়ে যান।
ওই ছাত্রীর স্বজনেরা জানান, অপহরণের খবর পেয়ে মহিপুরের ওই হোটেলের সামনে গিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেন। সেখানে চিকিৎসক তাঁর প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেন।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার রাতে অপহরণের ঘটনায় থানায় মামলা করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওই ছ ত র
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল, আছে ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’ও
রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই–বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্তত ২২টি দল উত্তীর্ণ হয়েছে। দ্রুত এসব দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠানো হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। এরপর নিবন্ধনের জন্য ইসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
আজ সোমবার ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে গতকাল রোববার মাঠপর্যায়ের যাচাই–বাছাই শেষে তদন্তের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬টি দলের তালিকা করে কমিশন। আরও একদিনের যাচাইয়ে সোমবার এ সংখ্যা বেড়ে ২২টি হয়েছে।
গত ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করে দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সবগুলো দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত এনসিপিসহ ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।
যাচাই–বাছাই শেষে উত্তীর্ণ হওয়া ২২টি দল হলো– ‘ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘১৪৩টির মধ্যে ৮৪টি দল তথ্য ঘাটতি পূরণ করে জমা দেয়, ৫৯টি দল কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি। এ ৮৪টি দলের মধ্যে ২২টি দলের তথ্য সঠিক রয়েছে বলে আপাতত পাওয়া গেছে। যেগুলোর মাঠ পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের (যাচাই-বাছাই) জন্য চলে যাবে। বাকি ১২১টি দল অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। তাদেরকে কারণ দর্শানো নোটিশসহ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে।’
আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল ইসির নিবন্ধন পেতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি, দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ জন ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এ ছাড়া কোনো দলের কেউ অতীতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। প্রধান এ শর্তগুলো ছাড়াও বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয় দলগুলোকে।
নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর প্রাথমিক বাছাই করে কমিশন। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলি মাঠপর্যায়ে সরেজমিন তদন্ত শেষে কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন যদি নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কারও দাবি বা আপত্তি আছে কি না, সে জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দলের পক্ষে নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ থাকে না। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এই নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগসহ)।
আরও পড়ুন‘বাংলাদেশ বেকার সমাজের’ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছেলের বাসার ‘ড্রয়িংরুম’২৪ জুন ২০২৫