‘আমরা বসেছিলাম বাসটির সামনে থেকে দুই সিট পড়ে। যতটুকু মনে পড়ে, সামনে একটি মোটরসাইকেল বেপরোয়াভাবেই চলছিল। ডানে-বাঁয়ে বারবার কাত হচ্ছিল সেটি। মোটরসাইকেলটিকে অতিক্রম করতে গিয়ে বাসটির সঙ্গে একটি ট্রাকের ধাক্কা লাগে, এরপর আর কিছু মনে নেই। হুঁশ আসার পর নিজেকে ঝোপঝাড়ের মধ্যে পাই। তখন স্ত্রী আর ছেলে কোথায় আছে, সে চিন্তা হচ্ছিল বারবার।’

কিছুটা দম নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিজয় কুমার দেব। গতকাল রোববার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। গতকাল সন্ধ্যায় সীতাকুণ্ড পৌর সদরের পন্থিছিলা বটতল এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন পাঁচজন। এ ছাড়া আহত হয়েছেন ২১ জন, যাঁদের মধ্যে বিজয় কুমার দেব ও তাঁর স্ত্রী-সন্তান রয়েছেন। রাতে হাসপাতালে যখন বিজয় কুমারের সঙ্গে কথা হচ্ছিল, তখন সবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর শার্টের এক পাশে রক্তের দাগ স্পষ্ট।

বিজয় কুমার দেব সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক। চার দিন আগে তাঁর শাশুড়ি মারা যান। সে কারণে স্ত্রী কণিকা চৌধুরী ও ছেলে অর্ণব দেবকে নিয়ে মিরসরাই উপজেলার বারইয়ারহাট এলাকায় গিয়েছিলেন তিনি। কণিকা চৌধুরী বাঁশবাড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ও অর্ণব দেব আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

বিজয় কুমার দেব জানান, বারইয়ারহাট থেকে সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড এলাকায় ফিরছিলেন সিডিএম নামের বাসে করে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী যেখানে বসেছিলেন এর দুই আসন পড়ে ছিল তাঁদের ছেলে। দুর্ঘটনায় তিনি গুরুতর আহত না হলেও স্ত্রী মাথায় আঘাত পেয়েছেন। সেখানে সেলাই দেওয়া হয়েছে। তবে ছেলের অবস্থা গুরুতর। তাঁর হাত ভেঙেছে এবং মুখ ও মাথায় আঘাত রয়েছে।

দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই চারজন নিহত হন। এরপর ঘটনাস্থল থেকে আরও ২১ জনকে উদ্ধার করে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান আরও একজন।

সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো.

বেলাল হোসেন বলেন, বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি গাছে ধাক্কা দেয়। এরপর খাদে পড়ে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তাঁরা চারজনের লাশ উদ্ধার করেছেন। আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ি ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রাত ১১টা পর্যন্ত ১৬ জনকে চিকিৎসার জন্য আনা হয়। তাঁদের মধ্যে ১০ জনকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে এবং ১ জনকে ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ২ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে।

হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার উপল চৌধুরী বলেন, ‘পাঁচজনকে ক্যাজুয়ালটিতে আনা হয়েছিল। এর মধ্যে দুজনকে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে পাঠানো হয়েছে। একজনের বুকে আঘাত রয়েছে। তাঁকে অস্ত্রোপচার শেষে ক্যাজুয়ালটিতে ভর্তি করা হয়েছে। দুজন পর্যবেক্ষণে আছেন। প্রয়োজন হলে ভর্তি নেওয়া হবে।’

সাধারণত মাথায় আঘাত থাকলে নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সীতাকুণ্ডের দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ওয়ার্ডটিতে ভর্তি থাকা ১০ জনের মধ্যে ৫ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। রেজিস্ট্রি খাতার তথ্য অনুযায়ী, নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি থাকা ব্যক্তিরা হলেন অর্ণব দেব (২৩), জমির হোসেন (৩০), মোজাম্মেল হক (৬০), রিজভী (৩২), শিখা (৪৫), অর্ণব (৬), রিংকু দাশ (৪০), নিশান দাশ (১৫), ইমন (১৯) এবং আরেকজন অজ্ঞাতপরিচয় তরুণ (২৫)। তাঁদের প্রত্যেকের মাথায় ও হাত-পায়ে আঘাত রয়েছে।

হাসপাতালের নিউরোসার্জারি ওয়ার্ডে দেখা গেছে, সেখানে রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন চিকিৎসক ও নার্সেরা। আহত ব্যক্তিদের কারও হাতে, কারও পায়ে ব্যান্ডেজ। প্রায় সবার মাথায় সেলাই ও ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে। কথা বলতে এগিয়ে গেলেও তাঁরা কথা বলতে পারছেন না। ইশারায় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলছেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার খোরশেদ আনোয়ার বলেন, ভর্তি থাকা ১০ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিবারের খোঁজ পাওয়া যায়নি। ৫ জনের অবস্থা গুরুতর। সার্জারির প্রয়োজন হতে পারে। তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব জয় ক ম র দ ব ন উর স র জ র দ র ঘটন য় র সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

বন্ধুকে আসামি করে মামলা করলেন নিহতের বোন

রংপুরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হক। তিন দিন আগে বন্ধু জরেজ মিয়ার সঙ্গে ঢাকা আসেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহের সামনে দুটি নীল রঙের ড্রাম থেকে আশরাফুলের ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহত আশরাফুলের বন্ধু মো. জরেজকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেছে নিহতের পরিবার।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) নিহতের ছোট বোন মোছা. আনজিরা বেগম শাহবাগ থানায় বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন।

তিনি জানান, নিহত আশরাফুলের বন্ধু জরেজকে প্রধান আসামি করে এজাহার দায়ের করেছেন আনজিরা বেগম। হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্ত চলছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এজাহারে আনজিরা বেগম লিখেছেন, তার বড় ভাই আশরাফুল হক দিনাজপুরের হিলি বন্দর থেকে সারা দেশে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, আলুসহ কাঁচামাল সরবরাহ করতেন।

গত মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে আসামি জরেজকে নিয়ে ঢাকায় আসেন তিনি। এরপর থেকে আশরাফুলের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। স্বজনদের সন্দেহ, আসামি জরেজ তার সহযোগী অজ্ঞাতনামা আসামিদের সহযোগিতায় গত ১১ নভেম্বর রাত থেকে ১৩ নভেম্বর রাতের মধ্যে যে কোনো সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আশরাফুলকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। হত্যার পর মরদেহ মোট ২৬টি খণ্ডে খণ্ডিত করে গুম করার উদ্দেশ্যে দুটি নীল রঙের ড্রামের ভেতর ভরে রেখে অজ্ঞাতস্থানে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা।

নিহত জাকিরের বোনের স্বামী জাকির হোসেন বলেন, “১১ নভেম্বর রাতে একসঙ্গে রংপুর থেকে ঢাকায় আসেন আশরাফুল ও জরেজ। এরপর থেকে জরেজকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আশরাফুল ও জরেজ বন্ধু। তারা একসঙ্গে ব্যবসা করতেন।”

জরেজের কাছে নিহত আশরাফুল টাকা পেতেন কি-না জানতে চাইলে জাকির বলেন, “টাকা-পয়সার বিষয়টি এখনো জানি না। আমরা হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।”

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে পুলিশ এসে ড্রাম দুটি খুলে অজ্ঞাতপরিচয় এক পুরুষের খণ্ডিত মরদেহ দেখতে পায়। তখন মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছিল। পরে দুটি নীল রঙের ড্রাম থেকে মরদেহ বের করা হয়। ড্রামের মধ্যে চাল ছিল এবং কালো পলিথিন দিয়ে মোড়ানো ছিল মরদেহের খণ্ডিত অংশগুলো।

ঢাকা/এমআর/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রেলের ৭ লাখ টাকার যন্ত্র ২৭ হাজারে বানালেন তিনি
  • রাতে এক ঘণ্টার ব্যবধানে সাভার-ধামরাইয়ে দুই বাসে আগুন
  • জনস্বাস্থ্য নিয়ে গবেষণাই তাঁর নেশা 
  • ইডেনে স্পিন বিষ, ১৫ উইকেটের দিনে উড়ছে ভারত
  • বিচারকের ছেলে হত্যা মামলার আসামি লিমন পাঁচ দিনের রিমান্ডে
  • বিচারকের ছেলে হত্যা: লিমন ৫ দিনের রিমান্ডে
  • ‘তোকে গুলি করে মারব না, ব্লেড দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মারব’
  • ৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
  • বন্ধুকে আসামি করে মামলা করলেন নিহতের বোন