বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের ফলে দেশের বেশিরভাগ জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এতে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের ছয় জেলা— ফেনী, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।
আজ বৃহস্পতিবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বুলেটিনে জানিয়েছে, আগামী দুই দিন ফেনীর মুহুরী নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরির ঝুঁকি রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলেছে, ভারি বৃষ্টির প্রভাবে চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী নদীর পানি বাড়তে পারে। আর মুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। পরের এক দিনে এসব নদীর পানি কমে যাওয়ার আভাসও দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
বুলেটিনে বলা হয়েছে, আগামী ২ দিন চট্টগ্রাম বিভাগের গোমতী, মুহুরী ও ফেনী ইত্যাদি নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। এই সময়ে মুহুরী নদীর পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে ফেণী জেলার মুহুরী নদীর সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যাপরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরবর্তী একদিন নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
বন্যার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগের সারিগোয়াইন, যাদুকাটা, মনু, ধলাই, খোয়াই ও সোমেশ্বরী নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং এই সময়ে নদীসমূহের পানি সমতল বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এই সময়ে সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলায় উক্ত নদীসমূহের সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
বুলেটিনে আরও বলা হয়েছে, রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৩ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে; এবং তিস্তা নদী সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড আরও জানিয়েছে, আগামী ২ দিন পর্যন্ত বরিশাল, খুলনা ও চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় নদীসমূহে স্বাভাবিক অপেক্ষা অধিক উচ্চতার জোয়ার পরিলক্ষিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, যা আগামী ৩ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদ-নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ১ দিন স্থিতিশীল ও পরবর্তী ৪ দিন বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচে দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, নদীসমূহের পানি সমতল আগামী ৫ দিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আজ ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসতে পারে; বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হতে পারে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বেলা ১টার মধ্যে দেশের ছয় অঞ্চলে ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসাথে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএ জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে লঞ্চ চলাচল পুনরায় শুরু হবে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সকাল থেকে বরিশাল নদী বন্দরে একটিও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দমকা বাতাস, বৃষ্টি এবং নদী কিছুটা উত্তাল থাকায় বরিশাল নৌবন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। তবে এ সময়, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক আছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন য ব পৎস ম র ন চ বর শ ল ন পর স থ ত নদ র প ন সমতল ব সতর ক
এছাড়াও পড়ুন:
৯ অঞ্চলে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ের আভাস
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ায় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এ কারণে সব সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে ঢাকাসহ নয়টি অঞ্চলে সন্ধ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে বলে আভাস দেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা থেকে দুপুর একটা এবং সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য দেয়া আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, ঢাকা, ফরিদপুর, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম/উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় বেলা ১টার মধ্যে দেশের ছয় অঞ্চলে ঝড়ের আশঙ্কা রয়েছে। এসব অঞ্চলের নদীবন্দরগুলোকে দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
এদিকে সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ১২০ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়া ও বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারী ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রাও সামান্য কমতে পারে।
অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ: বৈরী আবহাওয়ার কারণে বরিশাল নদী বন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ নৌপথের সব লঞ্চ চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসাথে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে লঞ্চ চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বিআইডব্লিউটিএ জানায়, পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকবে। আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হলে লঞ্চ চলাচল পুনরায় শুরু হবে। বৃহস্পতিবার সকালে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সকাল থেকে বরিশাল নদী বন্দরে একটিও লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বলে জানিয়েছেন বরিশাল নৌবন্দর কর্মকর্তা মোহাম্মদ সেলিম রেজা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দমকা বাতাস, বৃষ্টি এবং নদী কিছুটা উত্তাল থাকায় বরিশাল নৌবন্দরকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় লঞ্চ চলাচল শুরু হবে। তবে এ সময়, ফেরি চলাচল স্বাভাবিক আছে।
বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ নিম্নচাপে পরিণত: বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় সাগর ও নদী উত্তাল রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার আপডেটে পায়রা সমুদ্র বন্দরকে তিন নম্বর সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া সুস্পষ্ট লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরের দিকে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। আর এর প্রভাবেই এ বৃষ্টি থাকতে পারে সারাদিন। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি আজ থাকতে পারে সারাদিন। আগামীকালও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের চার বিভাগেই বর্ষণের সতর্কবার্তা ইতিমধ্যেই দিয়ে রেখেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ইতিমধ্যে দেশের চার সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার পাহাড়ি এলাকার ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। ভারী বৃষ্টির প্রভাবে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের চার বিভাগের নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। আগামী শনিবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বেশ খানিকটা কমে আসতে পারে; বিশেষ করে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে অপেক্ষাকৃত কম বৃষ্টি হতে পারে।