হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জিতলেন ৪২ বছর বয়সী নাওরোকি
Published: 2nd, June 2025 GMT
পোল্যান্ডের নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ৪২ বছর বয়সী কারোল নাওরোকি। অতি অল্প ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন তিনি। সোমবার দেশটির নির্বাচন কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত ফল অনুযায়ী, নাওরোকি পেয়েছেন ৫০.৮৯ শতাংশ ভোট। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ারশ শহরের উদারপন্থী মেয়র রাফায়েল ত্রাশকোভস্কি পেয়েছেন ৪৯.১১ শতাংশ।
ইতিহাসবিদ, প্রাক্তন অপেশাদার বক্সার ও ‘জাতীয়তাবাদী’ হিসেবে পরিচিতি নাওরোকি ডানপন্থী ল অ্যান্ড জাস্টিস (পিআইএস) দলের প্রার্থী ছিলেন। পিআইএস ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেছে। খবর-এএফপি
নাওরোকি নির্বাচনি প্রচারে বারবার বলেন, ‘সামাজিক সুবিধা পাবে পোল্যান্ডবাসী আগে’ এবং হাসপাতালে কিংবা ক্লিনিকে চিকিৎসার ক্ষেত্রে পোল্যান্ডের নাগরিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। এপ্রিলের এক প্রচারণায় তিনি বলেন, 'সামাজিক সুবিধা হবে সর্বাগ্রে পোল্যান্ডবাসীর জন্য।’ মে মাসে তিনি ইউক্রেনের প্রতি পোল্যান্ডের সাহায্যের বিনিময়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করার অভিযোগ তোলেন এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ‘দাম্ভিক’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ প্রার্থিতার বিরোধিতাও করেন।
নাওরোকি মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ এবং ইউরোপ-আমেরিকা সম্পর্ক পুনর্গঠনে পোল্যান্ডের নেতৃত্ব দাবি করেন। মে মাসে হোয়াইট হাউসে ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি বলেন, ট্রাম্প তাকে জানিয়েছেন- ‘তুমি জিতবে’। হোয়াইট হাউসের প্রকাশিত ছবিতে দু’জনকে থাম্বস আপ দিতে দেখা যায়।
সরকারি জোটের কিছু সদস্য একে নির্বাচনে হস্তক্ষেপ বলে উল্লেখ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েমও পোল্যান্ডে এক রক্ষণশীল সম্মেলনে এসে নাওরোকিকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, ‘তারই পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হওয়া উচিত।’
বাল্টিক বন্দর নগরী গদানস্কে জন্ম নেওয়া নাওরোকি শৈশবে বক্সিং ও ফুটবলে আগ্রহী ছিলেন। পরবর্তীতে ইতিহাসে পিএইচডি এবং এমবিএ করেন। ২০১৭ থেকে ২০২১ পর্যন্ত গদানস্কের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জাদুঘরের পরিচালক ছিলেন। এরপর থেকে ‘ইনস্টিটিউট অব ন্যাশনাল রিমেমব্রান্স’-এর নেতৃত্বে আছেন। তার গবেষণার ক্ষেত্র মূলত কমিউনিস্ট আমলের অপরাধ, পোল্যান্ডের প্রতিরোধ আন্দোলন ও ক্রীড়া ইতিহাস। রাশিয়া ২০২৪ সালে পোল্যান্ডে সোভিয়েত স্মৃতিস্তম্ভ অপসারণে ভূমিকার কারণে নাওরোকিকে তাদের ‘ওয়ান্টেড লিস্টে’ রাখে।
২০১৮ সালে কমিউনিস্ট আমলের অপরাধজগতের কুখ্যাত চরিত্র নিকোডেম স্কোতারচাককে নিয়ে তিনি ছদ্মনামে (তাদেউস্ বাতির) একটি বই লেখেন। সে বছরই রাষ্ট্রীয় টিভিতে একজন ছদ্মবেশী ‘বাতির’ হাজির হন, যিনি দাবি করেন নাওরোকিই তাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। পরে জানা যায়, বাতির ও নাওরোকি একই ব্যক্তি। বিরোধীরা বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ওর ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের পরবর্তী শুনানি বুধবার
রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ‘ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স’ নিয়ে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের (রিভিউ) ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামীকাল বুধবার দিন রেখেছেন আপিল বিভাগ। আজ মঙ্গলবার শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের বেঞ্চ পরবর্তী ওই দিন ধার্য করেন।
এর আগে গত ১৮ মে শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন। ধার্য তারিখে বিষয়টি শুনানির জন্য রিভিউ আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবীর সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আপিল বিভাগ ১৫ জুলাই পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন। আজ বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স সংশোধন করে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। পরে ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে রাষ্ট্রের সাংবিধানিক পদধারীদের পদক্রম ওপরের দিকে রাখা ও অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা বলা হয়। পাশাপাশি জেলা জজদের পদক্রম আট ধাপ উন্নীত করে সচিবদের সমান করা হয়।
আপিল বিভাগের রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতির পদক্রম এক ধাপ উন্নীত করে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমান এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের (স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক ও মহান স্বাধীনতাসংগ্রামে অংশগ্রহণ করে যে মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম খেতাব পেয়েছেন) পদক্রমে যথাযথভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত বলে উল্লেখ করা হয়।
ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) তৎকালীন চেয়ারম্যান ২০১৭ সালে পৃথক আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রের ৯০ জন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল পক্ষভুক্ত হন। পুনর্বিবেচনা চেয়ে করা আবেদনের ওপর গত ২৭ এপ্রিল শুনানি শুরু হয়।
আজ আদালতে রিভিউ আবেদনকারী মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সালাহ উদ্দিন দোলন শুনানি করেন। রিট আবেদনকারী পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেলদের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম শুনানিতে অংশ নেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরি করে। রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর একই বছরের ১১ সেপ্টেম্বর তা জারি করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে তা সংশোধন করা হয়।
সর্বশেষ সংশোধন করা হয় ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে। সংশোধিত এই ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স তৈরির ক্ষেত্রে সাংবিধানিক পদ, সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত ও সংজ্ঞায়িত পদগুলো প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিচের ক্রমিকে রাখা হয়েছে—এমন উল্লেখ করে এর বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের তৎকালীন মহাসচিব মো. আতাউর রহমান ২০০৬ সালে রিট করেন।
রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০১০ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট আট দফা নির্দেশনাসহ ১৯৮৬ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স (সংশোধিত) অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ ২০১১ সালে আপিল করে। এ আপিলের ওপর শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১১ জানুয়ারি আপিল বিভাগ রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে ২০১৭ সালে করা আবেদনের ওপর শুনানি চলছে।