Risingbd:
2025-07-30@11:16:35 GMT

ঈদ আনন্দের রীতি ও পদ্ধতি

Published: 7th, June 2025 GMT

ঈদ আনন্দের রীতি ও পদ্ধতি

ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মুসলমানদের প্রধান দুই ধর্মীয় উৎসব। ইসলামে উৎসব ও আনন্দের উপলক্ষ হিসেবেই দুই ঈদের প্রবর্তন ঘটেছে। আনাস বিন মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে দেখেন মদিনাবাসী নির্দিষ্ট দুটি দিনে খেলাধুলা ও আনন্দ করে থাকে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, এ দুটি দিন কিসের? সবাই বলল, জাহেলি যুগে আমরা এই দুই দিন খেলাধুলা করতাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, মহান আল্লাহ তোমাদের এ দুই দিনের পরিবর্তে উত্তম দুটি দিন দান করেছেন। তা হলো, ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিন। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ১১৩৪)

দুই ঈদের ভেতর ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ বিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য বহন করে থাকে। কেননা আদম (আ.

) থেকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পর্যন্ত সব নবী-রাসুলের শরিয়তে কোরবানির প্রচলন ছিল। যেমন-আদম (আ.)-এর দুই ছেলের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, “যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হলো এবং অন্যজনের কবুল হলো না।” (সুরা মায়িদা, আয়াত : ২৭)

তবে কোরবানির ক্ষেত্রে মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর ত্যাগ ও স্মৃতির সবচেয়ে প্রজ্জ্বোল। কেননা তিনি নিজের কলিজার টুকরা সন্তানকে পর্যন্ত কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন। কিন্তু আল্লাহ তার সন্তান ইসমাইল (আ.)-কে রক্ষা করেন এবং বিপরীতে পশু কোরবানির বিধান করেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, “আমি তাকে মুক্ত করলাম এক কোরবানির বিনিময়ে।” (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০৭)

আরো পড়ুন:

কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের ঈদ জামাত  

শোলাকিয়ায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় ঈদের নামাজ আদায়

আত্মোৎসর্গ ও আত্মত্যাগের এই নির্মল সুখকে আল্লাহ উৎসবের মর্যাদা দিয়ে তার সঙ্গে ‘ঈদ’ যুক্ত করেছেন। ফলে মুসলমান ঈদ উদযাপন করে থাকে আল্লাহর আনুগত্য ও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অনুসরণের মাধ্যমে। 

ঈদে আনন্দের রীতি ও পদ্ধতি

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিম্নোক্ত কাজগুলোর মাধ্যমে ঈদে আনন্দ প্রকাশের নির্দেশ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে- 

১. তাকবির পাঠ করা : ঈদের দিন তাকবির পাঠ করার মাধ্যমে মুসলিমরা আনন্দ প্রকাশ করবে। ঈদুল আজহার সময় ৯ জিলহজ ফজর থেকে ১৩ জিলহজ আসর পর্যন্ত পাঠ করবে। সন্তান ইসমাইল (আ.)-এর জীবন রক্ষা পেলে ইবরাহিম (আ.) তাকবিরে তাশরিক পাঠ করেছিলেন। তা হলো,‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ।’

২. গোসল ও পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা : ঈদের আনন্দ প্রকাশের একটি মাধ্যম হলো গোসল করা এবং অন্যান্য শারীরিক বিষয় থেকে পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা। বিষয়টি বিপুল সংখ্যক সাহাবির আমলের মাধ্যমে প্রমাণিত। যেমন-আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এই দুই দিনে গোসল করতেন। (মুয়াত্তায়ে মালিক : ১/১৪৬)

৩. উত্তম পোশাক পরিধান করা : নিজের সামর্থ্য ও শরিয়তের সীমার মধ্যে থেকে ঈদের দিন উত্তম পোশাক পরিধান করা উচিত। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘বাজারে বিক্রি হচ্ছিল এমন একটি রেশমি জুব্বা নিয়ে ওমর (রা.) আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আপনি এটি ক্রয় করে নিন। ঈদের সময় এবং প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এটি দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করবেন। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বললেন, এটি তো তার পোশাক যার পরকালে কল্যাণের কোনো অংশ নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৯৪৮)

এই হাদিসের মাধ্যমে বোঝা যায়, পোশাক গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তি নিজের সামর্থ্য ও শরিয়তের বিধি-বিধান অনুসরণ করবে।

৪. সুগন্ধি ব্যবহার করা : সুগন্ধি এবং সাজসজ্জা গ্রহণ করা মুস্তাহাব। ইমাম মালিক (রহ.) বলেন, ‘আমি জ্ঞানীদের বলতে শুনেছি, প্রত্যেক ঈদে সুগন্ধি ও সাজসজ্জা গ্রহণ করা মুস্তাহাব।’(আল মুগনি : ৫/২৫৮)

৫. পরস্পরকে অভিনন্দন জানানো : ঈদের দিন সাহাবায়ে কেরাম (রা.) পরস্পরকে এভাবে অভিনন্দন জানাতেন-, ‘আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের পক্ষ থেকে গ্রহণ করুন।’ (ফাতহুল কাদির : ২/৫১৭)

৬. আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে দেখা করা : এটি সারা বছরের সুন্নত। তবে এই দিনে বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে। মুসলিম সমাজে এর সাধারণ প্রচলন আছে।

৭. ভালো খাবার গ্রহণ করা : ঈদ উৎসবের অনুষঙ্গ হলেও ইসলাম খাদ্যের কোনো সুনির্দিষ্ট তালিকা প্রদান করেনি। বরং উত্তম খাবার গ্রহণে উৎসাহিত করেছে, যেন প্রত্যেক মুসলমান নিজের সামর্থ্য, স্থানীয় রীতি-সংস্কৃতি ও খাদ্যাভ্যাসের আলোকে তা গ্রহণ করতে পারে। তবে শর্ত হলো, এসব খাবার হালাল ও স্বাস্থ্যকর হতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আরাফার দিন, কোরবানির দিন ও আইয়ামে তাশরিক মুসলমানের ঈদের দিন। এগুলো খাওয়া ও পান করার দিন।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩০০৪)

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর অভ্যাস ছিল তিনি কোরবানির দিন সর্বপ্রথম কোরবানির পশুর গোশত খেতেন। 

৮. বৈধ খেলাধুলা : ঈদের দিন বৈধ খেলাধূলা করা জায়েজ। হাদিসে এসেছে, ঈদের দিন মসজিদে নববীর আঙিনায় হাবশি বালকরা তীর নিক্ষেপের প্রতিযোগিতা করছিল এবং আয়েশা (রা.)-এর ঘরে বালিকারা গান গাইছিল। (সহিহ বুখারি)

৯. কোরবানি করা : কোরবানির দিন সামর্থ্যবান ব্যক্তিরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য অর্থ-সম্পদ ও পশুর মায়া ত্যাগ করার মাধ্যমে আত্মত্যাগের উৎসবে শামিল হয়। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করেন। তিনি প্রত্যেক বছর কোরবানি করেন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ১৫০৭)

১০. গোশত খাওয়া ও অন্যকে খাওয়ানো : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার পরিবারকে কোরবানির এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন, প্রতিবেশীদের এক-তৃতীয়াংশ আহার করাতেন আর ভিক্ষুকদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সদকা করতেন।’ (আল-মুগনি : ৯/৪৪৯)

আল্লাহ সবাইকে সঠিকভাবে দ্বীন পালনের তাওফিক দিন। আমিন।

লেখক: মুহাদ্দিস, সাঈদিয়া উম্মেহানী মহিলা মাদরাসা, ভাটারা, ঢাকা

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ আবদ ল ল হ ইবন ঈদ ল আজহ ঈদ র দ ন ম সলম ন রব ন র প ঠ কর আল ল হ আকব র আনন দ

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তাহলে তো স্পন্সর নিয়ে প্রোগ্রাম করলেই চাঁদাবাজি: সালাউদ্দিন
  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’
  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ