পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকা মহানগরীতে ১১৮টি ঈদগাহ ও ১,৬২১টি মসজিদসহ মোট ১,৭৩৯টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের আবহ বজায় রাখতে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) নিয়েছে সমন্বিত, সুদৃঢ় ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

শনিবার (৭ জুন) সকালে জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শনের সময় ডিএমপি কমিশনার শেখ মো.

সাজ্জাত আলী বলেন, “নাগরিকদের নিরাপত্তা ও নির্বিঘ্নে ঈদ উদযাপনই আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। আমাদের সদস্যরা ঈদের দিনও মাঠে আছেন, যাতে কেউ কোনো ধরনের ভোগান্তিতে না পড়েন। ধর্মীয় উৎসব শান্তিপূর্ণভাবে পালনের জন্য আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতায় আছি।”

ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা
ঈদের সময় রাজধানীর যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ট্রাফিক বিভাগ বিশেষ পরিকল্পনা নেয়। কোরবানির পশুবাহী ট্রাক ঢাকায় প্রবেশের ক্ষেত্রে নির্ধারিত রুট ও সময় অনুসরণ নিশ্চিত করতে সড়কে মোতায়েন ছিল অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ।

আরো পড়ুন:

মোটরসাইকেলে মাইক্রোবাসের ধাক্কা, নিহত ২

মুন্সীগঞ্জে নসিমন-অটোরিকশা সংঘর্ষে নিহত ১

ট্রাফিক দক্ষিণ বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আনিসুর রহমান বলেন, “কোরবানির পশুবাহী যান চলাচলের জন্য আলাদা রুট ম্যাপ প্রকাশ করা হয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক দলও কাজ করেছে যানজট এড়াতে।”

ঈদে মানবিক পুলিশ
পুলিশ সদস্যদের অনেকেই ঈদের দিন পরিবার থেকে দূরে থাকলেও দায়িত্ব পালনে ছিলেন অটল। গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করা, ঈদগাহের চারপাশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অথবা নাগরিকের পথ নির্দেশনা সবখানেই দেখা গেছে পুলিশের সক্রিয় ভূমিকা।

পল্টন থানা এলাকার কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল কবির বলেন, “পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে না পারলেও এই শহরের মানুষের নিরাপত্তা দিতে পেরে গর্ব হয়। ওদের হাসিমুখই আমাদের আনন্দ।”

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রযুক্তির ব্যবহার
এ বছর ঈদের জামাত ঘিরে নিরাপত্তায় ব্যবহার হয়েছে প্রযুক্তি। অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ ঈদগাহে স্থাপন করা হয় সিসি ক্যামেরা। ছিল আর্চওয়ে ডিটেক্টর ও হ্যান্ডহেল্ড মেটাল ডিটেক্টরের ব্যবস্থাও। প্রতিটি জামাতস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন পোশাক ও সাদা পোশাকে।

পল্টনে এসআই হোসেন আলী বলেন,“জাতীয় ঈদগাহ, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ধানমন্ডি ঈদগাহসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ জামাতস্থলে তিন স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছিল। পর্যাপ্ত ফোর্স মোতায়েন ছিল এবং কোনো ধরনের অঘটন ছাড়াই ঈদ জামাত সম্পন্ন হয়েছে।”

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা আবদুল কাদের বলেন, “প্রতিবার ঈদের দিনে আশপাশে বিশৃঙ্খলা থাকত, এবার অনেক গোছানো ও নিরাপদ মনে হয়েছে। পুলিশের উপস্থিতি দেখে আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম।”

ঈদের দিন গুলিস্তানের ফুটওভার ব্রিজে দেখা যায় এক পুলিশ সদস্য পানি বিতরণ করছেন পথচারীদের মাঝে। “এই গরমে অনেকেই জগে পানি নিতে পারেন না। তাই একটু সহায়তা করছি,” বললেন ওই সদস্য।

ঢাকা/এএএম/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ র দ ন ঈদগ হ সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।

সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।

ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’

হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’

কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।

এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিডনিতে ড্র অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের কেউ না থাকায় হতাশ প্রবাসীরা
  • ‘মুক্তির উৎসব’ করতে সহযোগিতা চেয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাবেক সমন্বয়কের আবেদন
  • এবার পরিবার নিয়ে ঘরে বসেই ‘উৎসব’
  • খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ