Prothomalo:
2025-11-02@11:11:03 GMT

৫১% মেয়ের বিয়ে আঠারোর আগেই

Published: 12th, June 2025 GMT

দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা।

বাল্যবিবাহ ও কম বয়সী মেয়েদের সন্তান জন্ম দেওয়ার এই তথ্য উঠে এসেছে জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনে। গত মঙ্গলবার ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫ বিষয়ক এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এ বছরের প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাপী প্রজননবিষয়ক সমস্যার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর জনমিতিক ও প্রজনন স্বাস্থ্যসম্পর্কিত পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী লাখ লাখ মানুষ এখনো তাদের প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার ভোগ করতে এবং পছন্দের বিষয়গুলো চর্চা করতে পারে না। জনসংখ্যা বেশি বা জনসংখ্যা কম—এই বিতর্কের চেয়ে একজন ব্যক্তি তাঁর নিজের প্রজনন লক্ষ্য পূরণ করতে পারছেন কি না, সেটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি মূলত প্রজনন সমস্যা। এই সমস্যা সব ক্ষেত্রে দেখা যায়।

জনসংখ্যাবিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পাওয়ার অর্থ অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ বেড়ে যাওয়া। এটি নারীস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ধূসর চিত্র

দেশে মাতৃ ও প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ে কিছু পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে। দেশের ১০ শতাংশ দম্পতি প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী হাতের কাছে পায় না। জনসংখ্যাবিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী না পাওয়ার অর্থ অনিচ্ছাকৃত গর্ভধারণ বেড়ে যাওয়া। এটি নারীস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।

ইউএনএফপিএ বলছে, দেশে ৭০ শতাংশ নারী সন্তান জন্ম দেওয়ার সময় দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মীর সহায়তা পায়। অর্থাৎ ৩০ শতাংশ প্রসবের সময় কোনো দক্ষ স্বাস্থ্যকর্মী উপস্থিত থাকেন না। এসব প্রসব হয় অদক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে।

দেশে মোট প্রজনন হার কমে আসা একটি দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য। কিন্তু এ কথাও তো ঠিক যে প্রতিবছর শ্রমবাজারে ঢোকার মতো উপযুক্ত বয়স হচ্ছে ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষের। কিন্তু তাঁদের মধ্যে খুব কম মানুষকে আমরা কাজ দিতে পারছি। মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম, জনসংখ্যাবিশেষজ্ঞ

দেশে মাতৃমৃত্যুর যে চিত্র ইউএনএফপিএ দিয়েছে, তা–ও হতাশাজনক। তারা বলছে, বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার ১১৫। অর্থাৎ এক লাখ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে ১১৫ জন মায়ের মৃত্যু হচ্ছে। বিশ্বে অনেক দেশ আছে, যেখানে সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে লাখে একজন বা দুজন মায়ের মৃত্যু হয়।

নারী অধিকারের আরেকটি তথ্য প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ নারীর এক বছরের মধ্যে তার স্বামীর হাতে মারধর বা নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।

সফলতার গল্প

বাংলাদেশে বাল্যবিবাহের হার অনেক বেশি। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই। বাল্যবিবাহ বেশি হওয়ার কারণে কিশোরীদের গর্ভধারণ বাড়ে। কিশোরী মা হলে তার মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে, সন্তানের মৃত্যু বা অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে। বাংলাদেশ বাল্যবিবাহ ও কিশোরী মায়ের এই দুষ্ট চক্র থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। তবে ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে এমন চক্র থেকে বের হয়ে আসার গল্প আছে।

গল্পটি মধ্য আমেরিকার দেশ ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের। ২০১৩ সালে দেশটিতে প্রতি হাজার কিশোরীর মধ্যে গর্ভধারণ করত ৯০ জন। ২০১৯ সালে তা কমে হয় ৭৭। বর্তমান পরিসংখ্যান না থাকলেও ইউএনএফপিএ বলছে, তা ২০১৯ সালের চেয়ে কম।

প্রতিবেদনে ওই দেশে একজন নারী, একজন নার্সসহ বাল্যবিবাহ কমাতে কে কী ভূমিকা নিয়েছেন, তার উল্লেখ আছে। বাল্যবিবাহের পক্ষে থাকা সামাজিক প্রথার বিরুদ্ধে ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে, বিনিয়োগ করেছে। সেখানে নানা উদ্যোগে সহায়তা করেছে ইউএনএফপিএ। এখন মেয়েদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বা উচ্চশিক্ষার হার বেড়েছে, প্রয়োজনের সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী পাওয়া সহজ হয়েছে। দেশটির মানুষের মানসিকতায় পরিবর্তন এসেছে, এমন কথাই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নারী অধিকারের আরেকটি তথ্য প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ২৩ শতাংশ নারীর এক বছরের মধ্যে তার স্বামীর হাতে মারধর বা নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।

বয়স যেন বোঝা না হয়

ইউএনএফপিএ বলছে, এখন থেকে ৫০ বছর আগে বৈশ্বিকভাবে মানুষের গড় আয়ু ছিল ৫৯ বছর। এখন বৈশ্বিক গড় আয়ু ৭৩ বছর।

বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু বৈশ্বিকভাবে গড়ের চেয়ে বেশি। প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশের পুরুষের গড় আয়ু ৭৪ বছর, নারীর ৭৭ বছর। অর্থাৎ পুরুষের চেয়ে নারীর গড় আয়ু ৩ বছর বেশি। আরও বলা হয়েছে, দেশের ৭ শতাংশ মানুষের বয়স ৬৫ বছরের বেশি। এদের প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২৩ লাখ, যা পৃথিবীর অনেক দেশের মোট জনসংখ্যার চেয়ে বেশি।

দেশে এই বয়সী জনসংখ্যা বাড়ছে। এই বয়সী জনসংখ্যার বড় অংশ পুরোপুরি অন্যের আয়ের ওপর নির্ভরশীল। তার চেয়ে বড় কথা, এই বয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদ্‌রোগ, ক্যানসার বা দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ বেশি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বেশ কিছু স্থানে বয়স্ক মানুষের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য বিশেষ পণ্যসামগ্রী, বিশেষ সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, থাইল্যান্ড, ব্রাজিলের উদ্যোগের নাম উল্লেখ করা আছে।

গল্পটি মধ্য আমেরিকার দেশ ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের। ২০১৩ সালে দেশটিতে প্রতি হাজার কিশোরীর মধ্যে গর্ভধারণ করত ৯০ জন। ২০১৯ সালে তা কমে হয় ৭৭। বর্তমান পরিসংখ্যান না থাকলেও ইউএনএফপিএ বলছে, তা ২০১৯ সালের চেয়ে কম।

ইতিহাস পাঠ থেকে শিক্ষা

প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে মোট প্রজনন হার এখন ২ দশমিক ১। অর্থাৎ একজন বিবাহিত প্রজননক্ষম নারী সারা জীবনে দুটি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। কিন্তু এখান থেকে ৫০ বছর আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন একজন নারী গড়ে পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিতেন। ওই সময় বাংলাদেশকে বলা হতো ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণের’ দেশ।

ইউএনএফপিএ বলছে, সময় পাল্টেছে। জনসংখ্যা বিস্ফোরণ (পপুলেশন একপ্লোশান) থেকে বিশ্ব এখন জনসংখ্যা পতনের (পপুলেশন কলাপ্স) দিকে। অনেক দেশে মোট প্রজনন হার ২ দশমিক ১–এ চলে এসেছে। একে বলা হয় প্রতিস্থাপন পর্যায়ের প্রজনন হার। এর অর্থ এই হার বজায় থাকলে জনসংখ্যা স্থির থাকে; বাড়েও না, কমেও না। সমান্তরালভাবে দেখা যাচ্ছে, অনেক দেশে বয়স্ক মানুষ অনেক বেশি। ইতালিতে প্রতি চারজনের একজনের বয়স ৬৫ বছরের বেশি।

প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে মোট প্রজনন হার এখন ২ দশমিক ১। অর্থাৎ একজন বিবাহিত প্রজননক্ষম নারী সারা জীবনে দুটি সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন। কিন্তু এখান থেকে ৫০ বছর আগে পরিস্থিতি এমন ছিল না। তখন একজন নারী গড়ে পাঁচটি সন্তানের জন্ম দিতেন। ওই সময় বাংলাদেশকে বলা হতো ‘জনসংখ্যা বিস্ফোরণের’ দেশ।

প্রতিবেদনে তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের তরুণ জনগোষ্ঠী একচেটিয়াভাবে দুশ্চিন্তার কথা বলে, তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। অনেকে মনে করেন, তাঁদের মা–বাবার চেয়ে তাঁদের অভিজ্ঞতা আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। অনেক তরুণ মনে করেন, তাঁরা প্রতারিত, তাঁদের স্বপ্ন ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব ব্যাপারে নীতিনির্ধারক ও রাজনীতিবিদদের মনোযোগী হতে বলার ইঙ্গিত আছে প্রতিবেদনে।

জনসংখ্যাবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দেশে মোট প্রজনন হার কমে আসা একটি দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য। কিন্তু এ কথাও তো ঠিক যে প্রতিবছর শ্রমবাজারে ঢোকার মতো উপযুক্ত বয়স হচ্ছে ২০ থেকে ২২ লাখ মানুষের। কিন্তু তাঁদের মধ্যে খুব কম মানুষকে আমরা কাজ দিতে পারছি। আমাদের দেশে বেকারত্বের হার প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে বেশি। সমৃদ্ধির পথে হাঁটতে হলে যুব জনগোষ্ঠীর মানসম্পন্ন শিক্ষা, দক্ষতা ও সুস্বাস্থ্যে জোর দেওয়া জরুরি।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ট প রজনন হ র পর স খ য ন ২০১৯ স ল একজন ন র প রজনন স অন ক দ শ জন ম দ ত পর স থ ত একজন ব অর থ ৎ ব শ বব বছর র হওয় র

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে এবার এক নতুন আলোচনায় এসেছে গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনা। রাজনৈতিক দলগুলোর নানামুখী প্রস্তাব ও অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত বিবেচনায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলেছে, সরকার যদি চায় তাহলে সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে একযোগে বা আলাদা দিনেও গণভোট আয়োজন সম্ভব। এজন্যই কমিশন সরকারের ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে আগাম প্রস্তুত থাকতে নির্দেশ দিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে এই আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, আইন, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, স্থানীয় সরকার, তথ্য, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহনসহ ৩১টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব উপস্থিত ছিলেন।

ইসির কর্মকর্তারা জানান, বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ছিল- একদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতি পর্যালোচনা, অন্যদিকে গণভোট আয়োজনের সম্ভাব্য পরিস্থিতি বিবেচনায় আগাম পরিকল্পনা গ্রহণ।

গণভোটের প্রস্তুতি নির্দেশনা
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতেই সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, “গণভোট নিয়ে নানা আলোচনা চলছে। তবে এটি হবে কি না, কবে হবে তা নির্ধারণ করবে সরকার। আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে, যদি গণভোট আয়োজনের নির্দেশ আসে, তাহলে যেন তা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করা যায় সে জন্য প্রস্তুতি রাখা।”

নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সভায় বলেন, “সংসদ নির্বাচন ও গণভোট একসঙ্গে হলে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়বে। সেক্ষেত্রে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন তারা আগে থেকেই বিদ্যালয়গুলো প্রস্তুত রাখে।”

সভায় আরো জানানো হয়, দুটি ভোট একসঙ্গে হলে ব্যয় বৃদ্ধি পাবে, এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। ইসি ইতোমধ্যে খসড়া ভোটকেন্দ্র তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকা অনুযায়ী কেন্দ্রগুলোর রাস্তা, বিদ্যুৎ সংযোগ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়।

ভোটকেন্দ্র, অবকাঠামো ও লজিস্টিক প্রস্তুতি
সভায় আলোচনা হয়, দেশের ৪২ হাজারের বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের প্রস্তুতি নিতে হবে। যেসব স্থানে ভবন সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, স্থানীয় সরকার ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে দ্রুত সংস্কার সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে।

ইসির নির্দেশে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে, প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে যাতায়াতের রাস্তা যেন ভোটের আগে মেরামত ও প্রবেশযোগ্য হয়। দূরবর্তী ও দুর্গম এলাকায় হেলিপ্যাড সংস্কারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রয়োজনে জরুরি পরিবহন বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলাচলে সমস্যা না হয়।

এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সিসি ক্যামেরা সচল রাখা, ভোটের দিন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং নির্বাচনি কর্মকর্তাদের লজিস্টিক সহায়তা ও যানবাহন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

মেডিকেল টিম ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা
সভায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা জানান, নির্বাচনের দিন প্রতিটি উপজেলায় একটি মেডিকেল টিম গঠন করা হবে। প্রতিটি টিমে একজন চিকিৎসক, একজন নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ থাকবে। দুর্গম এলাকায় ইউনিয়নভিত্তিক সহায়ক টিমও থাকবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও র‌্যাবকে যৌথভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে অন্তত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন, যিনি আচরণবিধি প্রতিপালন তদারকি করবেন।

প্রযুক্তি ও নজরদারি ব্যবস্থা
ইসি জানিয়েছে, ভোটগ্রহণ ও ফলাফল প্রেরণে এবার সর্বাধুনিক ডিজিটাল ভোট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (ডিভিএমএস) ব্যবহার করা হবে। এতে কেন্দ্র থেকে সরাসরি ফলাফল জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পাঠানো সম্ভব হবে।

ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “আমরা চাই ফলাফল যেন দ্রুত ও নির্ভুলভাবে ঘোষণা করা যায়। সেই জন্যই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে।”

তিনি আরো জানান, ভুয়া খবর ও বিভ্রান্তি রোধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক একটি মনিটরিং সেল গঠন করা হচ্ছে, যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভ্রান্ত তথ্য ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেবে।

গণভোটের সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশের সংবিধানে ১৪২(১)-এর উপধারায় বলা আছে যদি সংবিধান সংশোধন বা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জনমত জানতে হয়, তবে গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।

সরকার ও রাজনৈতিক মহলে সম্প্রতি সংবিধানের কিছু অনুচ্ছেদে সংস্কার এবং ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। সেই সূত্রেই গণভোটের বিষয়টি সামনে এসেছে।

তবে রাজনৈতিকভাবে বিষয়টি সংবেদনশীল। কিছু দল মনে করছে, একই সঙ্গে নির্বাচন ও গণভোট আয়োজন করলে প্রশাসনিক চাপ বেড়ে যাবে; আবার কেউ কেউ বলছে, এতে ব্যয় কমবে ও জনসম্পৃক্ততা বাড়বে।

একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, “ইসি প্রস্তুতি নিচ্ছে এমনভাবে, যেন সরকার যেদিন গণভোটের সিদ্ধান্ত দেবে, সেদিনই কাজ শুরু করা যায়।”

অর্থনৈতিক প্রস্তুতি ও বাজেট বরাদ্দ
ইসি সূত্রে জানা গেছে, সংসদ নির্বাচন একা আয়োজনের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে তা প্রায় ৮,২০০ কোটি টাকা। কিন্তু গণভোট যুক্ত হলে ব্যয় আরো ৩,০০০ থেকে ৩,৫০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে।

অর্থ বিভাগের সচিব বৈঠকে জানান, বাজেট সংস্থান বিষয়ে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে এবং ব্যয় সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপ্রয়োজনীয় খরচ না করে শুধু অপরিহার্য খাতে অর্থ ব্যয় করতে বলা হয়েছে।

ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণ পরিকল্পনা
ইসি সচিব বলেন, “আমরা প্রিজাইডিং, সহকারী প্রিজাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের একটি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল তৈরি করছি। শিক্ষক, সরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা ও অন্যান্য দপ্তরের কর্মচারীরা এতে থাকবেন।”

ইসি চায়, ভোটগ্রহণে যেন নিরপেক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করেন। এজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিরপেক্ষ শিক্ষকদের তালিকা দিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

তথ্য মন্ত্রণালয় ও প্রচার কৌশল
ভোটার সচেতনতা বাড়াতে ইসি সংসদ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) এয়ারটাইম ব্যবহার করবে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভোটাধিকার ও আচরণবিধি বিষয়ে সচেতনতামূলক ভিডিও প্রচার করা হবে। তথ্য মন্ত্রণালয় ও ইসি যৌথভাবে এই প্রচার অভিযান পরিচালনা করবে।

বিদেশি পর্যবেক্ষক ও প্রবাসী ভোটার
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা ও অনুমতি প্রক্রিয়া দ্রুত করা হবে। একই সঙ্গে ইসি প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটারদের জন্য ডিজিটাল পোস্টাল ব্যালট সিস্টেম চালু করছে। আগামী ১৬ নভেম্বর এর ট্রায়াল অ্যাপ উদ্বোধন হবে বলে জানিয়েছেন সচিব আখতার আহমেদ।

সরকারি সফরে সচিবদের দায়িত্ব স্মরণ করিয়ে দিল ইসি
বৈঠকে সিইসি কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা সরকারি সফরে দেশের যেখানেই যান না কেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেবেন। এটি আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।”

তিনি আরো বলেন, “নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতিতে সরকারের পূর্ণ সহায়তা চায়। কারণ নির্বাচন কমিশন একা এই বিশাল আয়োজন করতে পারে না, সব মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় জরুরি।”

সাবেক নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও ঢাকা-১৪ আসনের ভোটার তৌহিদুর রহমান বলেন, “সব মিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের এই বৈঠক শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ইঙ্গিত দেয় যে সরকার গণভোটের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছে এবং ইসি চাইছে আগেভাগে প্রস্তুত থাকতে যাতে কোনো অঘটন বা বিলম্ব না ঘটে।”

তিনি বলেন, “এখন অপেক্ষা সরকারের সিদ্ধান্তের। সংসদ নির্বাচন ও গণভোট কি একসঙ্গে হবে, নাকি আলাদা দিনে। যেভাবেই হোক, নির্বাচন কমিশনের এই আগাম প্রস্তুতি বাংলাদেশের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে আরো সংগঠিত ও প্রযুক্তিনির্ভর হবে।”

ঢাকা/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ফতুল্লায় দুই ট্রাকের মাঝে পড়ে যুবকের মৃত্যু
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ২০ মামলার আসামি নিহত, গুলিবিদ্ধ ৩
  • নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
  • তানজানিয়ার বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ফের বিজয়ী সামিয়া
  • আমার স্ত্রী খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করছেন না: জেডি ভ্যান্স
  • একা বাস করতে পারে যে পাখি
  • সুন্দরবনের বড় গেছো প্যাঁচা
  • নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের ৩১ বিভাগকে প্রস্তুতির নির্দেশ ইসির
  • ‘নারীর স্বাস্থ্য ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিতেই টেকসই উন্নয়ন সম্ভব’
  • স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত না হলে নারীর ক্ষমতায়ন সম্পূর্ণ হয় না: উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান