পুঁজিবাজারের সদস‌্যভুক্ত সাতটি ব্রোকারেজ হাউজ ও দুইটি মার্চেন্ট ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রম খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ‌্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এ লক্ষ্যে তিন সদস‌্য বিশিষ্ট পৃথক নয়টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ‌্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন বিএসইসিতে দাখিল করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ব্রোকারেজ হাউজগুলোর নাম হলো- সিটি ব্রোকারেজ, শান্তা সিকিউরিটিজ, জয়তুন সিকিউরিটিজ, ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ, কেএইচবি সিকিউরিটিজ, কর্ডিয়াল সিকিউরিটিজ ও ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ।

আর মার্চেন্ট ব্যাংক দুটি হলো- আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট ও প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট।

সম্প্রতি বিএসইসির মার্কেট ইন্টেলিজেন্স অ‌্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন থেকে এ সংক্রান্ত আদেশগুলো জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। বিএসইসির জারি করা আদেশ সাতটি ব্রোকারেজ হাউজ ও দুইটি মার্চেন্ট ব্যাংকের ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে পাঠানো হয়েছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, গঠিত তদন্ত কমিটি স্টক-ব্রোকার এবং স্টক-ডিলারের সামগ্রিক কার্যক্রম তদন্ত করবে। সেই সঙ্গে সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে কি-না, তা যাচাই করে দেখা হবে। এছাড়া ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি।

একইসঙ্গে মার্জিন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেগেটিভ ইক্যুইটিসহ বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের সংখ্যা, নেতিবাচক ইক্যুইটি, প্রভিশনস (মার্জিন অ্যাকাউন্টের বিপরীতে রক্ষিত তহবিল), প্রভিশনসের ঘাটতি, অনুমোদন ছাড়া লেনদেনসহ আরো বিভিন্ন বিষয় খতিয়ে দেখবে তারা।

এদিকে, মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে সার্বিক কার্যক্রম তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটিকে। সেই সঙ্গে বড় গ্রাহক, ব্লক ও একই গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন, নগদ ও ব্যাংক হিসাব এবং প্রতিষ্ঠানের এমডি, সিইওসহ অন্যান্যদের ভূমিকাসহ সার্বিক বিষয়ে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।

বিগত সরকারের আমলে আইন লঙ্ঘন করা ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর বিরুদ্ধে তেমন কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন নতুন কমিশন ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারীর ব্যবস্থা নিয়েছে।

গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- জয়তুন সিকিউরিটিজ এর জন্য বিএসইসির যুগ্ম-পরিচালক সুলতানা পারভীন, সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও লামিয়া আখতার; সিটি ব্রোকারেজ এর জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক আব্দুস সেলিম, সহকারী পরিচালক মো.

শাকিল আহমেদ ও মো.  ফয়সাল ইসলাম; ন্যাশনাল সিকিউরিটিজ এর জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক এস এম আহসানুল কবির , সহকারী পরিচালক মো. আজিজুর রহমান ও সারা তাসনুভা।

এছাড়া, শান্তা সিকিউরিটিজ এর জন্য বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, সহকারী পরিচালক মিথুন চন্দ্র নাথ ও শাকিলা সুলতানা; কেএইচবি সিকিউরিটিজ এর জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল, সহকারী পরিচালক মো. সাইদুল ইসলাম ও মো. কামাল হোসেন; কর্ডিয়াল সিকিউরিটিজ এর জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মো. আব্দুস সেলিম, সহকারী পরিচালক মো. ফয়সাল ইসলাম ও মো. হাসান; ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজ এর জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক সানজিদা রহমান ও মাহমুদুর রহমান; আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট এর জন্য বিএসইসির যুগ্ম পরিচালক অনু দে, সহকারী পরিচালক সৌভর মল্লিক ও ফারহান ওয়ালিজা; প্রাইম ব্যাংক ইনভেস্টমেন্ট এর জন্য বিএসইসির ডেপুটি পরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান, সহকারী পরিচালক রানা দাস ও শাকিলা সুলতানা।  

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অফিস আদেশে জানিয়েছে, পুঁজিবাজার এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বৃহত্তর স্বার্থে উল্লেখিত ব্রোকার ও মার্চেন্ট ব্যাংকের সার্বিক কার্যক্রমতদন্ত করা প্রয়োজন। তাই, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ রুলস, ২০২০ এর রুল ১৭ এবং সিকিউরিটিজ অ‌্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০ এর বিধি ১৫ ও ১৬ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন উল্লিখিত ব্রোকারেজ হাউজ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা, ১৯৯৬ এর বিধি ৩২ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে কমিশন উল্লিখিত মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর জন্য পৃথক পৃথক তিনজন করে কর্মকর্তাকে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নিয়োগ দেওয়া হলো।

কর্মকর্তারা এই আদেশ জারির তারিখ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্ন করবেন এবং কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবেন। একইসঙ্গে তদন্ত প্রতিবেদনের দুইটি হার্ড কপি এবং একটি সফট কপি কমিশনে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হলো।

গঠিত তদন্ত কমিটি ব্রোকারেজ হাউজগুলোর স্টক-ব্রোকার এবং স্টক-ডিলারের সামগ্রিক কার্যাবলী খতিয়ে দেখবে। সেখানে কোনো অসঙ্গতি ঘটেছে কি-না তা যাচাই-বাছাই করবে। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালনা করা হয়েছে কি-না তা খতিয়ে দেখবে তদন্ত কমিটি। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অন্য কোনো প্রাসঙ্গিক সমস্যা থাকলে সেটাও চিহ্নিত করবে গঠিত তদন্ত কমিটি।

এছাড়া মার্চেন্ট ব্যাংকারের সামগ্রিক কার্যাবলী পরীক্ষা (মার্চেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম, হিসাব বই, রেকর্ড, অভিযোগ ইত্যাদি); মার্চেন্ট ব্যাংকারে শীর্ষ ক্লায়েন্টদের লেনদেন, ব্লক ট্রেড, সম্পর্কিত পক্ষের লেনদেন, নগদ এবং ব্যাংক লেনদেন পরীক্ষা; মার্চেন্ট ব্যাংকারের পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং কমপ্লায়েন্স অফিসারের ভূমিকা এবং কার্যকারিতা মূল্যায়নসহ এর সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে।

একইসঙ্গে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা, ২০১৯ অনুযায়ী গঠিত তদন্ত কমিটি ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত শেষ হওয়া সময়ের জন্য ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর এএমএল/সিএফটি (অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং/কাউন্টার-টেরোরিজম ফাইন্যান্সিং) সিস্টেম চেক করবে।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রম সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী সঠিকভাবে পরিপালন করছে কি-না খতিয়ে দেখার জন্য তদন্ত কমিসটি গঠন করা হয়েছে। এ তদন্ত কার্যক্রমে কোনো অসঙ্গতি পাওয়া গেলে কমিশন আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

ঢাকা/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র ক র জ হ উজগ ল র কর মকর ত তদন ত কর ক উন ট র ব যবস থ ইনভ স ট ল ইসল ম ল নদ ন রহম ন সহক র

এছাড়াও পড়ুন:

নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্রতিটি কোম্পানিতে এক-পঞ্চমাংশ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এর মধ্যে কমপক্ষে একজন নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বেধে দিয়েছিল বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে অনেক কোম্পানি ব্যর্থ হওয়ায় এবং ওইসব কোম্পানির আবেদনের আলোকে সময়সীমা বাড়িয়েছে বিএসইসি।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এ সংক্রান্ত একটি চিঠি ইস্যু করা হয়েছে বলে বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৪ সালের ২৯ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে এক বছর সময় দিয়ে গত ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিটি তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে কমপক্ষে এক জন করে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের জন্য সময়সীমা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অনেক কোম্পানি এ শর্ত পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। ওইসব কোম্পানি থেকে সময় বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। যার আলোকে নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসইসির কমিশনার হিসেবে সাইফুদ্দিনের যোগদান
  • নেগেটিভ ইক্যুইটি বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার সময় বাড়াল বিএসইসি
  • নারী স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে সময় বাড়াল বিএসইসি
  • সালমান, শিবলী ও সায়ান পুঁজিবাজারে ‘আজীবন অবাঞ্ছিত’
  • সালমানকে ১০০ কোটি, সায়ানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা
  • বিএসইসির নতুন কমিশনার সাইফুদ্দিন
  • পুঁজিবাজারে বড়-মাঝারি বিনিয়োগকারী বেড়েছে : বিএসইসি
  • ‘পুঁজিবাজারে ভালো কোম্পানি তালিকাভুক্তিতে কাজ করছি’
  • বিএসইসি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করছে: ডিবিএ সভাপতি