নিরাপদ গণপরিবহনব্যবস্থা হিসেবে পরিচিত হলেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রেন দুর্ঘটনা উদ্বেগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অব্যবস্থাপনা, সিগন্যাল না মানা, দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলা—এগুলোই ট্রেন দুর্ঘটনার মূল কারণ। সেটা সবার জানা থাকলেও এ থেকে উত্তরণে রেলওয়ের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। প্রতিবারই দুর্ঘটনার পর ট্রেন পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত নিম্নস্তরের কর্মীরা শাস্তির আওতায় আসেন। কিন্তু ঊর্ধ্বতনেরা জবাবদিহির বাইরে থাকায় প্রকৃতপক্ষে একই ভুলের পুনরাবৃত্তি ঘটে। ফলে কিছুদিন পরপরই একেকটা ট্রেন দুর্ঘটনা একেকটা অন্তহীন ট্র্যাজেডির জন্ম দেয়।
এবার ঈদুল আজহার আগে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সাতটি গাড়িতে ধাক্কা দেয় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেস। এতে দুই বছরের শিশুসহ দুজন নিহত হন, আহত হন ১৬ জন। সেই দুর্ঘটনায় নিহত শিশুটিকে কোলে নিয়ে বাবার আর্তনাদের ভিডিও আমাদের সবাইকে অশ্রুসিক্ত করেছে। রেলওয়ের প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, ট্রেনটি সেতুতে ওঠার নিয়ম না মেনে সংকেত অমান্য করে দ্রুতগতিতে ঢুকে পড়ে। প্রাথমিক তদন্তের ওপর ভিত্তি করে ট্রেনটির লোকোমাস্টারসহ চারজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে ও দায় নিরূপণ করতে রেলওয়ে তাদের কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তদন্ত কমিটি কি ভবিষ্যতে যাতে আর এ ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটে, সেটা মাথায় রেখে পক্ষপাতমুক্তভাবে তদন্ত করতে পারবে? রেলওয়ের ঐতিহ্য কিন্তু সেটা বলছে না।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, ছয় বছরে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে ছয়টি বড় ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে অন্তত ৫৩ জনের। আহত হয়েছেন শতাধিক যাত্রী। এসব ঘটনায় রেলওয়ের তদন্ত কমিটি প্রতিবারই দায় চাপিয়েছে ট্রেনচালক, সহকারী চালক, গার্ড ও গেটম্যানদের ওপর।
দেখা যাচ্ছে যে ট্রেন দুর্ঘটনা তদন্তে গঠিত তদন্ত দল দুর্ঘটনার পেছনে উচ্চপর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের অবহেলার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া হয়। এ রকম পূর্বনির্ধারিত ও পক্ষপাতদুষ্ট তদন্ত কি পরবর্তী দুর্ঘটনা রোধে আদৌ কোনো ভূমিকা রাখতে পারে? এ কারণে পরিবহনবিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরেই রেলওয়ের তদন্ত কমিটিতে নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছেন। আমরা মনে করি, পরিবহনবিশেষজ্ঞ মো.
ট্রেন দুর্ঘটনায় যাঁদের অবহেলা ও গাফিলতি থাকবে, তাঁদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কিন্তু শুধু নিম্নস্তরের কর্মীদের শাস্তি দিয়ে ট্রেন দুর্ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব নয়। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমেই বের করা প্রয়োজন ঊর্ধ্বতন ও অধস্তন, কার দায় কতটা।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট র ন দ র ঘটন দ র ঘটন র তদন ত ক র লওয় র ঘটন য়
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক