পবিত্র কোরবানির ঈদের ১০ দিনের সরকারি ছুটি শেষ হয়েছে। কিন্তু রাজধানীর সড়কে এখনো সেই ব্যস্ততা ফেরেনি। এদিকে দীর্ঘ ছুটিতে ভাড়ায় চালিত বাইকচালকদের আয় নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চালকেরা বাইক নিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় বসে থাকলেও সেভাবে ভাড়া মিলছে না। রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকা, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার মোড় ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগতে পারে, বলে জানান চালকেরা। বিভিন্ন রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। তারা জানাচ্ছে, ঈদের ছুটিতে যাত্রীসেবা কমেছে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।

ছুটিতে আয় কমার বিষয়ে বাইকচালকেরা জানান, স্বাভাবিক সময়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা আয় হলেও ঈদের ছুটিতে তা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে। আবার প্রধান সড়কগুলোয় অটোরিকশা চলাচল করছে, যা বাইকের যাত্রী হ্রাসে ভূমিকা রাখছে।

খরচের হিসাব দিয়ে বাইকচালক মাকসুদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দিনে গড়ে ৩০০ টাকার তেল লাগে। খাওয়া খরচ আছে ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে ৫০০ টাকার বেশি খরচ আছে। ২ দিন ধরে খরচ বাদে ৫০০ টাকার মতো থাকছে। অন্য সময়ে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা থাকে। কারওয়ান বাজারের মেট্রো স্টেশনের নিচে এই চালকের সঙ্গে কথা হয়।

প্রধান সড়কে অটোরিকশা দেখিয়ে পুরান ঢাকার এই বাসিন্দা বলেন, ‘রিকশা প্রধান সড়কে উঠছে। এতে আমরা মাইর খেয়ে যাই। সিএনজি এবং প্যাডেল রিকশাও যাত্রী পায় না।’ ফার্মগেট, খামারবাড়ি ও আড়ং মোড়ে বাইকচালকদের সঙ্গে কথা বলে একই চিত্র দেখা যায়।

দুই বছর ধরে রাজধানীতে রাইড শেয়ার করছেন কুড়িগ্রামের মিজানুল করিম। গতকাল রোববার সকালে বের হয়ে কারওয়ান বাজার ও ফার্মগেট ঘুরে বেলা দুইটা নাগাদ খামারবাড়ি মোড়ে বসে ছিলেন। দেড় ঘণ্টা অপেক্ষার পর বনানী পর্যন্ত যাওয়ার একজন যাত্রী পান ১০০ টাকা ভাড়ায়। মিরপুরের এই বাসিন্দা প্রথম আলোকে জানান, এ মাসটা হয়তো এভাবেই কেটে যাবে। যাঁরা বাড়ি গেছেন, তাঁরা ধীরে ধীরে ফিরবেন। আবার মাস শেষে বেতন না পেলে যাত্রীরা বাইকে উঠতে চাইবেন না।

ফার্মগেট মোড়ে কথা হয় আরেক চালক আরাফাত টিপুর সঙ্গে। গত বৃহস্পতিবার তিনি সকাল ও বিকেল মিলিয়ে মাত্র ৩০০ টাকা ভাড়া পেয়েছেন। একই স্থানে যাত্রীর অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন আবদুস সাত্তার। সকাল ১০টায় বের হয়ে বেলা ৩টা নাগাদ তিনি মাত্র ২০০ টাকার ভাড়া পেয়েছেন। এক ঘণ্টা ধরে অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এখন রাস্তায় অনেক বাইক। ১০০ টাকা পেলেই যাত্রী নিয়ে চলে যাচ্ছে। এক বছর আগেও দিনে দুই হাজার টাকা আয় করা যেত। কিন্তু এখন সেটা কমে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় নেমে এসেছে।’ তবে স্বাধীন মতো চালানো যায়, তাই ছাত্রসহ অনেকে বাইক চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে টানা ১০ দিন ছুটির পর গতকাল সরকারি অফিস ও ব্যাকগুলো খুলেছে। তবে ব্যাংকগুলোয় তেমন ভিড় দেখা যায়নি। দেশে এখন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ। ছুটি শেষ হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে যাত্রী নিয়ে রাজধানীর টার্মিনালগুলোয় ঢুকছে বাস। ব্যক্তিগত গাড়িও বেশি প্রবেশ করছে ঢাকায়। রাজধানীমুখী ট্রেন ও লঞ্চে যাত্রীদের চাপ ছিল।

রাজশাহীর সাবিদুল ইসলাম গতকাল ৩০০ টাকা ভাড়া পেয়েছেন বাইক চালিয়ে। গতকালও সকাল থেকে দুপুর নাগাদ একই পরিমাণ ভাড়া পেয়েছেন বলে জানান। কারওয়ান বাজার মোড়ে কথা হয় মগবাজারে ভাড়া বাসায় থাকা এই চালকের সঙ্গে। তিনি জানান, তাঁর স্ত্রী একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন। তাই তাঁকে ঢাকায় থাকতে হয়। কিন্তু বাধ্য হয়ে রাস্তায় নেমেছেন। আগে একটি কোচিং সেন্টারে দুই মাস কাজ করলেও বেতন নিয়ে সমস্যা হওয়ায় তা ছেড়েছেন। পরে মোবাইলের যন্ত্রাংশ বিক্রির একটি কোম্পানিতে কাজ করেন। কিন্তু মাসে চার লাখ টাকার বিক্রির টার্গেট পূরণ করতে না পেরে এখন বাইক চালাচ্ছেন। তবে সরকার পতনের পর থেকে ইনকাম ভালো হচ্ছে না বলে জানান তিনি।

বাইকের মতো রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার যাত্রীও কম। রাইড শেয়ার প্রতিষ্ঠান ‘ওভাই’ কোম্পানির তথ্যমতে, ঈদের ছুটিতে তাদের যাত্রীসেবা কমেছে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ। একই সময়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। তবে যাত্রী পরিবহন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে আরও দুই সপ্তাহ লাগতে পারে বলে মনে করছে কোম্পানিটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক রওয় ন ব জ র ৫০০ ট ক চ লক র র ২০০ গতক ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাক্তন স্ত্রী দেবশ্রীর সঙ্গে প্রেমের সিনেমা করতে চান প্রসেনজিৎ

ভারতীয় বাংলা সিনেমার তারকা জুটি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও দেবশ্রী রায়। পর্দায় এ জুটির রোমান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। রুপালি পর্দার রোমান্স ব্যক্তিগত জীবনেও গড়ায়। ভালোবেসে দেবশ্রী রায়কে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু কয়েক বছর পরই এ বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়। 

সংসার ভাঙার পাশাপাশি দর্শক হারান রুপালি পর্দার জনপ্রিয় এই জুটিকে। এরপর আর কোনো সিনেমায় একসঙ্গে দেখা যায়নি তাদের। অবশেষে দূরত্ব কমিয়ে দেবশ্রীর সঙ্গে সিনেমা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন প্রসেনজিৎ।  

আরো পড়ুন:

নিজেকে তৈরি করে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করব: স্বস্তিকা

ছেলের বন্ধুরা ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী

কিছুদিন আগে ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছিলেন—“দেব-শুভশ্রী জুটির পর আমি চাই আবার প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী জুটি ফিরুক, এই জুটিটা ফেরার অত্যন্ত প্রয়োজন।” ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য প্রসেনজিৎকে জানানো হয়। 

এ বিষয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “আমি তো চাই দীপকদা একটা স্ক্রিপ্ট লিখুক আমাদের জন্য, আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এবং আমি অনেকবার দীপকদাকে বলেছি যে, আমি তোমার পরিচালনায় একটা কাজ করতে চাই। দীপকদা, আমাদের জন্য যদি পরিচালনা করেন তাহলে অবশ্যই আমি সিনেমা করতে চাই। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেবশ্রীর সঙ্গে আবারো একটা পরিণত প্রেমের সিনেমা করতে চাই।” 

তাহলে কী পুরোনো তিক্ততা ভুলে গেছেন প্রসেনজিৎ? জবাবে এই নায়ক বলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো তিক্ততা নেই। যে আমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলবে, আমি সব সময় তাদের জন্য আছি। আর কোনো তিক্ততা নিয়ে বাঁচতে চাই না, যে কটা দিন আছি সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নিয়েই থাকতে চাই।” 

এক সময় দেবশ্রীকে নিয়ে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না প্রসেনজিৎ। তবে অভিমান ভুলে কাজের ক্ষেত্রে আবার এক হওয়ার কথা বললেন তিনি। বর্তমানকে ভালোবেসে যেমন এগিয়ে যান, ঠিক তেমনই কি অতীতকেও আঁকড়ে বাঁচেন?  

এ প্রশ্নের জবাবে প্রসেনজিৎ বলেন, “নিজের অতীতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না। মাঝেমাঝেই আমি আমার অতীতে ফিরে যাই; সেই সময়গুলোর জন্যই আজকের আমি। অতীত আমাকে অনেক ভালোবাসা, রাগ-দুঃখ-ক্ষোভ দিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে যেটা অল্প কিন্তু তবু আছে সেটা হলো—ঘৃণা। সেটাও পেয়েছি, তবে অতীত যেমনই হোক না কেন, তাকে কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। আমরা সবাই মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যাই।” 

সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেও দ্বিধাবোধ করেন না প্রসেনজিৎ।তার ভাষায়—“এই বদলগুলোকে মেনে না নিলে আমাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমি প্রচুর বদল দেখেছি, তবে যেই সময় যেটা এসেছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, এটাই তো করা উচিত। না হলে বর্তমান প্রজন্ম থেকে দূরে সরে যেতে হবে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ