কমিশনারসহ ইসির কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্তে কমিটি গঠনের নির্দেশ
Published: 16th, June 2025 GMT
বিতর্কিত তিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে জড়িত সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনারগণ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবদের ভূমিকা তদন্তে অবিলম্বে একটি কমিটি গঠনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এক বৈঠকে এ সংক্রান্ত আলোচনা শেষে এ নির্দেশ দেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন প্রধান প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। আজ এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড.
বৈঠকে কমিশন সদস্যরা জুলাই সনদ তৈরির কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। কমিশনের সহ-সভাপতি প্রফেসর আলী রীয়াজ বলেন, ‘বেশকিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে। খুব শিগগিরই সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সনদ চূড়ান্ত করে ফেলা সম্ভব হবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সবাই জুলাই সনদের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। আমি আশা করি আগামী জুলাই মাসের মধ্যে আমরা এটি জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারব।’
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা তাঁর লন্ডন সফরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ‘লন্ডনে বাংলাদেশি কমিউনিটির যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে তারা সংস্কার নিয়ে জানতে চেয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা খুব আগ্রহী। তারা বিস্তারিতভাবে ঐকমত্য কমিশনের কাজ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেছে, মতামত দিয়েছে। যেখানেই গেছি সেখানকার প্রবাসী বাংলাদেশিরা আমাকে জিজ্ঞেস করছেন, ‘আমরা আগামী নির্বাচনে ভোট দিতে পারব তো?’ আমাদের প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিতের জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। পোস্টাল ব্যালট এবং আর কী কী অপশন আছে সেগুলো নিয়ে ভাবতে হবে, সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনায় বসতে হবে।’
বৈঠকে নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিশন প্রধান বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘সকল রাজনৈতিক একমত হয়েছে যে, অতীতের তিনটি বিতর্কিত নির্বাচন আয়োজনে কর্মকর্তাদের ভূমিকা তদন্ত ও জবাবদিহিতার আওতায় আনা প্রয়োজন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঐকমত য
এছাড়াও পড়ুন:
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে একমত হলেও বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় এনসিপি
সংসদের উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির (পিআর) বিষয়ে একমত পোষণ করলেও এটি বাস্তবায়নের সুস্পষ্ট রূপরেখা চায় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ঐকমত্যের বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন, যার পদ্ধতি এখনো সুনির্দিষ্টভাবে বলা হয়নি। ফলে একটি অস্পষ্টতা থেকেই গেছে।’
আজ বৃহস্পতিবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের সংলাপের ২৩তম দিনের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন আখতার হোসেন।
উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি কীভাবে বাস্তবায়িত হবে সেই রূপরেখা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনকে কার্যকর আলোচনা জন্য আহ্বান জানান আখতার হোসেন। তিনি বলেন, এনসিপির পক্ষ থেকে উচ্চকক্ষে সংবিধান সংশোধনের জন্য ‘টু-থার্ডস মেজরিটি’ বাধ্যতামূলক করার দাবি জানানো হয়। পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিতরা নির্বাচিত প্রতিনিধি নন—এমন কথা বলা হলেও, বিশ্বজুড়ে এফপিটিপি (যিনি সবচেয়ে বেশি ভোট পান) ও পিআর উভয় পদ্ধতিতেই বৈধতা রয়েছে। পিআর পদ্ধতিতেও জনগণের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত হয়।
কমিশনের প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন সময়সীমাকে এনসিপি প্রত্যাখ্যান করেছে বলে জানান দলটির সদস্যসচিব। তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, সিদ্ধান্তগুলো তৎক্ষণাৎ কার্যকর হোক।’ তিনি বলেন, ‘১ শতাংশ ভোট পেলেও যেন একটি দল একজন করে প্রতিনিধি উচ্চকক্ষে পাঠাতে পারে—এটি বহু মতের ও বহু দলের গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করবে। আইন পাসের আগে যদি উচ্চকক্ষে আলোচনা হয়, তাহলে ভুলত্রুটি ধরার সুযোগ তৈরি হবে এবং সংসদের বাইরে জনপরিসরেও আইন নিয়ে আলোচনা গড়ে উঠবে।’
‘বর্তমানে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যেভাবে দলগুলো সংবিধান সংশোধন করে, সেটা যেন না হয়’ উল্লেখ করে আখতার হোসেন বলেন, ‘পিআর পদ্ধতিতে বিভিন্ন দলের প্রতিনিধিত্ব থাকলে, সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রেও জনগণের বৃহত্তর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে।’
উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা নিয়ে বিতর্ক প্রসঙ্গে আখতার হোসেন বলেন, ‘অনেকে বলছেন, পিআর পদ্ধতিতে হলে তাঁরা উচ্চকক্ষ চান না। তাহলে প্রশ্ন ওঠে—তাঁরা আদৌ উচ্চকক্ষ চান কি না। আমরা বিশ্বাস করি, ১০০ আসনের এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশ একদল বা দুই দলের কর্তৃত্ব থেকে বেরিয়ে বহু দলের অংশগ্রহণে পরিচালিত হবে। এতে গণতন্ত্রচর্চার নতুন সংস্কৃতি গড়ে উঠবে।’
আলোচনার সময় সরকারি কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক নিয়োগ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান আখতার হোসেন। যদিও কিছু দল ভিন্নমত পোষণ করেছে, তবে সার্বিকভাবে একটি ঐকমত্যের জায়গায় কমিশন পৌঁছেছে বলেও তিনি দাবি করেন।
আলোচনার শেষভাগে উচ্চকক্ষ গঠন নিয়ে কমিশনের প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। সেখানে বলা হয়, ১০০ আসনের একটি উচ্চকক্ষ গঠিত হবে, যেখানে প্রতিনিধিরা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচিত হবেন। এ কক্ষে নিম্নকক্ষ থেকে পাঠানো বিল সর্বোচ্চ দুই মাস আটকে রাখা যাবে এবং সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে ‘সিম্পল মেজরিটি’র কথা বলা হয়েছে।